29/06/2025
যাদের এনাটমি ও ফিজিওলজি সম্পর্কে সাধারন জ্ঞান খুবই কম তাদের জন্য মানবদেহের বিভিন্ন সিস্টেম এবং তাদের কাজগুলো নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো: (নীচে পিডিএফ ফাইল লিংক দেওয়া হলো)
১. পরিপাকতন্ত্র: খাদ্য গ্রহণ, হজম এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান শোষণে সহায়তা করে। এই তন্ত্রে মুখ, খাদ্যনালী, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র, যকৃত, অগ্ন্যাশয় এবং পিত্তথলি অন্তর্ভুক্ত।
২. সংবহনতন্ত্র: হৃদপিণ্ড, রক্তনালী (ধমনী, শিরা, কৈশিক জালিকা) এবং রক্তের সমন্বয়ে গঠিত। এটি শরীরের চারপাশে অক্সিজেন, পুষ্টি, হরমোন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করে এবং বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করে।
৩. শ্বাসতন্ত্র: ফুসফুস, শ্বাসনালী, এবং বায়ুপথের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ এবং কার্বন ডাই অক্সাইড (বর্জ্য গ্যাস) অপসারণ করে।
৪. স্নায়ুতন্ত্র: মস্তিষ্ক, সুষুম্নাকাণ্ড এবং স্নায়ুর সমন্বয়ে গঠিত। এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে এবং সংবেদী অঙ্গ থেকে আসা সংকেত গ্রহণ ও প্রেরণ করে।
৫. রেচনতন্ত্র: কিডনি, মূত্রথলি, এবং মূত্রনালীর সমন্বয়ে গঠিত। এটি শরীরের বর্জ্য পদার্থ (যেমন: মূত্র) নিষ্কাশনে সহায়তা করে।
৬. অন্তঃস্রাবী তন্ত্র: হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এই তন্ত্রে গ্রন্থি (যেমন: পিটুইটারি, থাইরয়েড, অ্যাড্রেনাল) অন্তর্ভুক্ত।
৭. কঙ্কালতন্ত্র: হাড়, তরুণাস্থি, এবং লিগামেন্ট দ্বারা গঠিত। এটি শরীরের কাঠামো গঠন করে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সুরক্ষা দেয় এবং নড়াচড়ায় সহায়তা করে।
৮. পেশীতন্ত্র: পেশী দ্বারা গঠিত, যা নড়াচড়া, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনে সহায়তা করে এবং শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
৯. প্রজননতন্ত্র: পুরুষ এবং মহিলার প্রজনন অঙ্গ নিয়ে গঠিত, যা বংশবৃদ্ধি এবং প্রজননে সহায়তা করে।
১০. ত্বক তন্ত্র: ত্বক শরীরের বাইরের আবরণ তৈরি করে যা বাইরের পরিবেশ থেকে রক্ষা করে।
১১. লসিকা তন্ত্র: লসিকা তন্ত্র শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই প্রতিটি তন্ত্র একে অপরের সাথে সম্পর্কিত এবং শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে একসাথে কাজ করে।
---------------------------------------
১. পরিপাকতন্ত্রের প্রধান অঙ্গগুলি হলো মুখ, খাদ্যনালী, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্র, এবং মলদ্বার। এছাড়াও, যকৃত, অগ্ন্যাশয় ও পিত্তথলি পরিপাক কার্যে সহায়তা করে।
পরিপাকতন্ত্রের অঙ্গসমূহ:
মুখ ও মুখবিবর: খাদ্য গ্রহণ ও চর্বণ করা হয় এখানে। লালা গ্রন্থি থেকে লালা নিঃসৃত হয়ে খাদ্যকে ভিজিয়ে নরম করে এবং কিছু খাদ্য উপাদান হজম হতে শুরু করে।
অন্ননালী: মুখ থেকে খাদ্য পাকস্থলীতে পৌঁছানোর পথ।
পাকস্থলী: খাদ্য জমা থাকে এবং এখানে খাদ্য আরও হজম হয়। এখানে অ্যাসিড ও এনজাইম খাদ্যকে ভেঙে তরল অবস্থায় নিয়ে যায়।
ক্ষুদ্রান্ত্র: এখানে হজম প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় এবং খাদ্য থেকে পুষ্টি উপাদান শোষিত হয়। ক্ষুদ্রান্ত্রের তিনটি অংশ রয়েছে: ডিওডেনাম, জেজুনাম এবং ইলিয়াম।
বৃহদন্ত্র: এখানে পানি ও কিছু পুষ্টি উপাদান শোষিত হয় এবং মল তৈরি হয়।
মলদ্বার: মলের নিঃসরণের স্থান।
যকৃত, অগ্ন্যাশয় ও পিত্তথলি: এগুলো পরিপাকতন্ত্রের আনুষঙ্গিক অঙ্গ। যকৃত পিত্তরস তৈরি করে যা চর্বি হজমে সাহায্য করে। অগ্ন্যাশয় বিভিন্ন পাচক রস তৈরি করে। পিত্তথলি পিত্তরস জমা রাখে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ক্ষুদ্রান্তে সরবরাহ করে।
---------------------------------------------------------
২. সংবহনতন্ত্রের প্রধান অঙ্গগুলো হলো হৃৎপিণ্ড, রক্তনালী (ধমনী, শিরা, কৈশিক জালিকা) এবং রক্ত। এই অঙ্গগুলো সম্মিলিতভাবে শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন, পুষ্টি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করে এবং বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করে।
সংক্ষেপে, সংবহনতন্ত্রের প্রধান অঙ্গগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
হৃৎপিণ্ড: এটি সংবহনতন্ত্রের পাম্পিং যন্ত্র, যা রক্তকে পাম্প করে শরীরের বিভিন্ন অংশে পাঠায়।
রক্তনালী: ধমনী: হৃৎপিণ্ড থেকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত বহন করে নিয়ে যায়।
শিরা: শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে রক্তকে হৃৎপিণ্ডে ফিরিয়ে আনে।
কৈশিক জালিকা: ধমনী ও শিরার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এবং টিস্যুগুলোর চারপাশে জাল তৈরি করে, যেখানে গ্যাস, পুষ্টি এবং বর্জ্য পদার্থের আদান-প্রদান ঘটে।
রক্ত: এটি একটি তরল মাধ্যম যা পুষ্টি, অক্সিজেন, হরমোন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদার্থ বহন করে এবং বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করে।
এছাড়াও, সংবহনতন্ত্রের সাথে লসিকা সংবহনতন্ত্রও জড়িত, যা লসিকা, লসিকা নালী এবং ল্যাকটিয়াল নিয়ে গঠিত। এটি ইমিউন সিস্টেমের সাথেও সম্পর্কিত।
----------------------------------------------------
৩. শ্বাসতন্ত্রের প্রধান অঙ্গগুলি হলো: নাক (নাসারন্ধ্র ও নাসাপথ), গলবিল (ফ্যারিংক্স), স্বরযন্ত্র (লারিংস), শ্বাসনালী (ট্রাকিয়া), ব্রঙ্কাস, ব্রঙ্কিওল এবং ফুসফুস। এছাড়াও, মধ্যচ্ছদা (ডায়াফ্রাম) শ্বাসকার্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই অঙ্গগুলির বিবরণ নিচে দেওয়া হলো:
নাক (নাসারন্ধ্র ও নাসাপথ): বাতাস ফুসফুসে প্রবেশের প্রধান পথ। এটি বাতাসকে ফিল্টার করে, গরম করে এবং আর্দ্র করে।
গলবিল (ফ্যারিংক্স): এটি খাদ্যনালী এবং শ্বাসনালীর একটি সাধারণ পথ।
স্বরযন্ত্র (লারিংস): এটি "ভয়েস বক্স" নামেও পরিচিত, যা শব্দ উৎপাদনে সহায়তা করে।
শ্বাসনালী (ট্রাকিয়া): এটি একটি লম্বা নালী যা স্বরযন্ত্র থেকে ফুসফুস পর্যন্ত বিস্তৃত।
ব্রঙ্কাস: শ্বাসনালী দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত হয়ে ডান এবং বাম ফুসফুসে প্রবেশ করে।
ব্রঙ্কিওল: ব্রঙ্কাস আরও ছোট ছোট শাখায় বিভক্ত হয়ে ফুসফুসের ভেতরে প্রবেশ করে, এগুলোকে ব্রঙ্কিওল বলে।
ফুসফুস: এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রধান অঙ্গ, যেখানে গ্যাস বিনিময় (অক্সিজেন গ্রহণ এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ) ঘটে।
মধ্যচ্ছদা (ডায়াফ্রাম): এটি একটি প্রধান শ্বাস-প্রশ্বাসের পেশী যা বক্ষ গহ্বর এবং পেটের গহ্বরকে পৃথক করে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় এটি সংকুচিত এবং প্রসারিত হয়ে ফুসফুসের আয়তন পরিবর্তনে সাহায্য করে।
------------------------------------------------------------
৪. স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান অঙ্গগুলো হলো মস্তিষ্ক, সুষুম্নাকাণ্ড, এবং স্নায়ু। এই অঙ্গগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ করে শরীরের বিভিন্ন কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে এবং পরিবেশের সাথে সংযোগ স্থাপন করে।
মস্তিষ্ক: এটি স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান অঙ্গ এবং শরীরের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এটি স্মৃতি, বুদ্ধি, ভাষা এবং অন্যান্য মানসিক কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে।
সুষুম্নাকাণ্ড: এটি মস্তিষ্ক থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে বার্তা প্রেরণ করে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।
স্নায়ু: স্নায়ু হলো স্নায়ুতন্ত্রের মৌলিক উপাদান, যা মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকাণ্ড থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে বার্তা বহন করে। স্নায়ু প্রধানত দুই প্রকার: করোটি স্নায়ু এবং মেরুরজ্জুর স্নায়ু।
এছাড়াও, স্নায়ুতন্ত্রকে দুটি প্রধান অংশে ভাগ করা যায়:
১) কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (Central Nervous System): এটি মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকাণ্ড নিয়ে গঠিত।
২) প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র (Peripheral Nervous System): এটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বাইরে অবস্থিত স্নায়ু এবং গ্যাংলিয়া নিয়ে গঠিত, যা শরীরের বিভিন্ন অংশের সাথে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সংযোগ স্থাপন করে।
-------------------------------------------------------------------
৫. মানবদেহের রেচনতন্ত্রের প্রধান অঙ্গগুলো হলো: বৃক্ক (কিডনি), ইউরেটার (সংগ্রহী নালী), মূত্রথলি (ইউরিনারি ব্লাডার) এবং মূত্রনালী (ইউরেথ্রা)। এই অঙ্গগুলো একসাথে কাজ করে শরীরের বর্জ্য পদার্থ (যেমন: ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড) নিষ্কাশনে সাহায্য করে।
রেচনতন্ত্রের প্রধান অঙ্গসমূহ:
বৃক্ক (Kidney): এটি প্রধান রেচন অঙ্গ, যা রক্ত পরিশোধন করে এবং মূত্র তৈরি করে।
ইউরেটার (Ureter): এটি বৃক্ক থেকে মূত্রথলিতে মূত্র বয়ে নিয়ে যায়।
মূত্রথলি (Urinary Bladder): এটি মূত্র জমা করে রাখে।
মূত্রনালী (Urethra): এটি মূত্রথলি থেকে মূত্র শরীরের বাইরে বের করে দেয়।
--------------------------------------------------------------------
৬. অন্তঃস্রাবী তন্ত্রের প্রধান অঙ্গগুলো হলো: হাইপোথ্যালামাস, পিটুইটারি গ্রন্থি, পাইনাল গ্রন্থি, থাইরয়েড গ্রন্থি, প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি, থাইমাস গ্রন্থি, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি এবং অগ্ন্যাশয়। এই অঙ্গগুলো হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।
এখানে প্রধান অঙ্গগুলির একটি তালিকা দেওয়া হলো:
1. হাইপোথ্যালামাস (Hypothalamus): মস্তিষ্কের একটি অংশ যা পিটুইটারি গ্রন্থিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম, যেমন ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘুম এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
2. পিটুইটারি গ্রন্থি (Pituitary Gland): একে মাস্টার গ্রন্থি বলা হয়, যা অন্যান্য গ্রন্থিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরের বৃদ্ধি, প্রজনন এবং বিপাক সহ বিভিন্ন কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে।
3. পাইনাল গ্রন্থি (Pineal Gland): মস্তিষ্কের একটি ছোট গ্রন্থি যা মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণ করে, যা ঘুম এবং জাগ্রত হওয়ার চক্র নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
4. থাইরয়েড গ্রন্থি (Thyroid Gland): ঘাড়ে অবস্থিত একটি গ্রন্থি যা থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ করে, যা বিপাক এবং শরীরের অন্যান্য কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
5. প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি (Parathyroid Glands): থাইরয়েড গ্রন্থির সাথে সংযুক্ত ছোট গ্রন্থি যা প্যারাথাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ করে, যা ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
6. থাইমাস গ্রন্থি (Thymus Gland): বুকের মধ্যে অবস্থিত একটি গ্রন্থি যা শ্বেত রক্তকণিকা (টি-কোষ) তৈরিতে সহায়তা করে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ।
7. অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি (Adrenal Glands): কিডনির উপরে অবস্থিত গ্রন্থি যা অ্যাড্রেনালিন এবং কর্টিসলের মতো বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণ করে, যা স্ট্রেস মোকাবেলা, বিপাক এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
8. অগ্ন্যাশয় (Pancreas): এটি একটি মিশ্র গ্রন্থি যা হজমে সহায়তা করার জন্য এনজাইম এবং ইনসুলিন ও গ্লুকাগন এর মতো হরমোন নিঃসরণ করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
এই গ্রন্থিগুলো শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন বৃদ্ধি, প্রজনন, বিপাক, মানসিক এবং শারীরিক চাপ মোকাবেলা, ঘুম, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহায়তা করে।
-------------------------------------------------------------------
৭. মানব কঙ্কালতন্ত্রের প্রধান অঙ্গগুলো হলো অস্থি (হাড়), তরুণাস্থি (cartilage), এবং লিগামেন্ট। কঙ্কালতন্ত্রের প্রধান কাজগুলো হলো দেহের কাঠামো তৈরি করা, অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া, এবং নড়াচড়া করতে সহায়তা করা।
কঙ্কালতন্ত্রের প্রধান অঙ্গগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
অস্থি (Bone): মানবদেহের মূল কাঠামো তৈরি করে এবং বিভিন্ন অঙ্গকে সুরক্ষা দেয়।
তরুণাস্থি (Cartilage): অস্থিসন্ধিগুলোতে থাকে এবং ঘর্ষণ কমিয়ে নড়াচড়া সহজ করে।
লিগামেন্ট (Ligament): অস্থিসন্ধিগুলোকে একসাথে ধরে রাখে এবং অস্থির নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
অস্থিসন্ধি (Joint): যেখানে দুটি বা তার বেশি অস্থির মিলন ঘটে, সেগুলোকে অস্থিসন্ধি বলে।
কঙ্কালতন্ত্রকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়:
1. অক্ষীয় কঙ্কাল (Axial Skeleton): করোটি, মেরুদণ্ড, এবং বক্ষপিঞ্জর নিয়ে গঠিত।
2. উপাঙ্গীয় কঙ্কাল (Appendicular Skeleton): হাত, পা, এবং এদের সাথে সংশ্লিষ্ট অস্থিচক্র (যেমন: স্ক্যাপুলা, কলারবোন, পেলভিস) নিয়ে গঠিত।
কঙ্কালতন্ত্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ:
করোটি (Skull): মস্তিষ্ককে রক্ষা করে।
মেরুদণ্ড (Vertebral column): দেহের মূল কাঠামো তৈরি করে এবং স্নায়ুকে সুরক্ষা দেয়।
বক্ষপিঞ্জর (Rib cage): হৃদপিণ্ড এবং ফুসফুসকে রক্ষা করে।
হাত ও পায়ের অস্থি (Bones of limbs): অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনে সাহায্য করে।
পেলভিস (Pelvis): শরীরের নিচের অংশকে সমর্থন করে এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে রক্ষা করে।
কঙ্কালতন্ত্রের বিভিন্ন অঙ্গের কাজ:
কঙ্কালতন্ত্র শরীরের কাঠামো তৈরি করে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সঠিক অবস্থানে রাখে।
পেশী এবং অস্থির সংযোগের মাধ্যমে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনে সাহায্য করে।
গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে রক্ষা করা:-করোটি মস্তিষ্ককে, বক্ষপিঞ্জর হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসকে রক্ষা করে।
রক্তকণিকা উৎপাদন করা:
কিছু অস্থির মধ্যে অস্থিমজ্জা লোহিত রক্তকণিকা এবং শ্বেত রক্তকণিকা তৈরি করে।
-------------------------------------------------------
৮. পেশীতন্ত্রের প্রধান অঙ্গগুলো হলো কঙ্কালের পেশী, হৃদপেশী এবং মসৃণ পেশী। এই অঙ্গগুলো শরীরের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করে, যেমন নড়াচড়া, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালন, এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গের কার্যক্রম।
পেশীতন্ত্রের অঙ্গসমূহ:
কঙ্কালের পেশী: এগুলি হাড়ের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং স্বেচ্ছায় নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। যেমন, হাত ও পায়ের পেশী।
হৃদপেশী: হৃদপিণ্ডের প্রাচীরে অবস্থিত এই পেশী হৃদযন্ত্রকে সংকুচিত ও প্রসারিত করে রক্ত পাম্প করতে সাহায্য করে।
মসৃণ পেশী: খাদ্যনালী, পাকস্থলী, অন্ত্র, মূত্রাশয় এবং রক্তনালীর মতো অঙ্গের প্রাচীরে মসৃণ পেশী পাওয়া যায়। এগুলি অনৈচ্ছিক নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে, যেমন পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে খাদ্যবস্তু সঞ্চালন।
পেশীতন্ত্রের কাজ:
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনে সহায়তা করা।
শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করা।
রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করা।
পরিপাক, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা।
দেহের গঠন এবং সুরক্ষা প্রদান করা।
পেশী বিভিন্নভাবে কাজ করে, যেমন:
ঐচ্ছিক পেশী (যেমন কঙ্কালের পেশী) আমাদের ইচ্ছানুযায়ী নড়াচড়া করতে সাহায্য করে।
অনৈচ্ছিক পেশী (যেমন হৃদপেশী এবং মসৃণ পেশী) আমাদের ইচ্ছার বাইরে স্বাধীনভাবে কাজ করে।
পেশী ও কঙ্কালতন্ত্র একসাথে কাজ করে দেহের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে।
--------------------------------------------------------------
৯. প্রজননতন্ত্র মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। এটি প্রধানত দুই প্রকার: পুরুষ প্রজননতন্ত্র এবং স্ত্রী প্রজননতন্ত্র। উভয় প্রজননতন্ত্রেই কিছু প্রধান অঙ্গ এবং সহযোগী অঙ্গ থাকে।
প্রজননতন্ত্রের প্রকারভেদ:
পুরুষ প্রজননতন্ত্র: এটি শুক্রাণু তৈরি, পরিবহন এবং যৌন মিলনের জন্য দায়ী।
স্ত্রী প্রজননতন্ত্র: এটি ডিম্বাণু তৈরি, নিষেক, ভ্রূণের বিকাশ এবং প্রসবের জন্য দায়ী।
এই অঙ্গগুলো একে অপরের সাথে মিলিতভাবে কাজ করে এবং প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
পুরুষ প্রজননতন্ত্রের অঙ্গসমূহ:
শুক্রাশয় (Te**es): এখানে শুক্রাণু তৈরি হয়।
এপিডিডাইমিস (Epididymis): এখানে শুক্রাণু জমা ও পরিপক্ব হয়।
শুক্রনালী (Vas deferens): শুক্রাণু এখান থেকে শরীরের বাইরে বের হয়ে আসে।
পুরুষাঙ্গ (P***s): যৌন মিলনের সময় সঙ্গমের জন্য ব্যবহৃত হয়।
শুক্রথলি (Seminal vesicles): গ্রন্থি যা বীর্য তৈরিতে সাহায্য করে।
প্রোস্টেট গ্রন্থি (Prostate gland): গ্রন্থি যা বীর্য তৈরিতে সাহায্য করে।
কাওপার্স গ্রন্থি (Cowper's gland): গ্রন্থি যা সঙ্গমের সময় পিচ্ছিল পদার্থ ক্ষরণ করে।
স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের অঙ্গসমূহ:
ডিম্বাশয় (O***y): ডিম্বাণু তৈরি হয়।
ডিম্বনালী (Fallopian tube/Oviduct): ডিম্বাণু ডিম্বাশয় থেকে জরায়ুতে যায়।
জরায়ু (Uterus): এখানে ভ্রূণ বৃদ্ধি পায়।
যোনি (Va**na): যৌন মিলন এবং প্রসবের পথ।
সহযোগী অঙ্গ:
ভালভা (V***a): বাইরের অঙ্গ, যার মধ্যে রয়েছে মনস পিউবিস, ল্যাবিয়া মেজোরা, ল্যাবিয়া মাইনোরা, ক্লিটোরিস ইত্যাদি।
স্তন (Breasts): যা সন্তান জন্মের পর দুধ তৈরি করে।
-------------------------------------------------------------
১০. ত্বক (Skin) মানবদেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ এবং এটি আচ্ছাদন তন্ত্রের একটি অংশ। ত্বক প্রধানত তিনটি স্তরে গঠিত: এপিডার্মিস, ডার্মিস এবং হাইপোডার্মিস। এই স্তরগুলো ছাড়াও, ত্বকের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য অঙ্গ যেমন - চুল, নখ, এবং বিভিন্ন গ্রন্থি (যেমন ঘর্মগ্রন্থি ও তৈলগ্রন্থি) রয়েছে।
ত্বক তন্ত্রের অঙ্গসমূহ:
ত্বক (Skin): মানবদেহের বৃহত্তম অঙ্গ, যা বাহ্যিক পরিবেশ থেকে অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে রক্ষা করে।
এপিডার্মিস (Epidermis): ত্বকের সবচেয়ে বাইরের স্তর, যা সুরক্ষা প্রদান করে এবং ত্বকের রঙ নির্ধারণে সাহায্য করে।
ডার্মিস (Dermis): এপিডার্মিসের নিচে অবস্থিত স্তর, যা চুলের গোড়া ধারণ করে এবং এপিডার্মিসে পুষ্টি সরবরাহ করে।
হাইপোডার্মিস (Hypodermis): ত্বকের সবচেয়ে ভেতরের স্তর, যা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে।
চুল (Hair): ত্বক থেকে উৎপন্ন এক ধরনের আঁশযুক্ত পদার্থ, যা ত্বককে উত্তাপ থেকে রক্ষা করে এবং সংবেদনশীলতা প্রদান করে।
নখ (Nails): হাতের আঙুল এবং পায়ের আঙুলের ডগায় অবস্থিত শক্ত প্লেট যা আঙুলকে রক্ষা করে।
গ্রন্থি (Glands): ত্বকের গ্রন্থিগুলির মধ্যে
১) ঘর্মগ্রন্থি (sweat glands) : ঘর্মগ্রন্থি ঘাম নিঃসরণের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
২) তৈলগ্রন্থি (sebaceous glands) : তৈলগ্রন্থি তেল নিঃসরণের মাধ্যমে ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে।
এই অঙ্গগুলো সম্মিলিতভাবে ত্বক তন্ত্র গঠন করে এবং শরীরের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
--------------------------------------------------------------
১১. লসিকা তন্ত্রের প্রধান অঙ্গগুলো হলো লসিকা, লসিকা বাহ, এবং লসিকা গ্রন্থি। এছাড়াও, টনসিল, থাইমাস, প্লীহা, অস্থিমজ্জা এবং কিছু নির্দিষ্ট টিস্যু লসিকা তন্ত্রের অংশ হিসেবে কাজ করে।
লসিকা তন্ত্রের প্রধান অঙ্গগুলো হলো:
লসিকা (Lymph): এটি এক ধরনের স্বচ্ছ তরল যা রক্ত থেকে উৎপন্ন হয় এবং টিস্যু থেকে বর্জ্য পদার্থ এবং রোগ প্রতিরোধকারী কোষ বহন করে।
লসিকা বাহ (Lymph vessels): এগুলি লসিকা বহনকারী নালী যা সারা শরীরে জালকের মতো বিস্তৃত।
লসিকা গ্রন্থি (Lymph nodes): এগুলি ছোট ছোট বিন্যাস্ত গ্রন্থি যা লসিকা নালীর পথে অবস্থিত এবং লসিকা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
টনসিল (Tonsils): এটি হল গ্রন্থি যা মুখ ও গলার পেছনের দিকে থাকে এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
থাইমাস (Thymus): এটি বুকের মধ্যে অবস্থিত একটি গ্রন্থি যা লিম্ফোসাইট (এক ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা) তৈরিতে সাহায্য করে।
প্লীহা (Spleen): এটি পেটের বাম দিকে অবস্থিত একটি অঙ্গ যা রক্ত পরিশোধন করে এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
অস্থিমজ্জা (Bone marrow): এটি হাড়ের ভিতরে অবস্থিত একটি নরম টিস্যু যা লিম্ফোসাইট সহ বিভিন্ন ধরণের রক্তকণিকা তৈরি করে।
কিছু নির্দিষ্ট টিস্যু (Certain tissues): অন্ত্রের (intestine) লসিকা কলা- যা MALT (mucosa-associated lymphoid tissue) নামে পরিচিত, এরাও লসিকা তন্ত্রের অংশ।
এই অঙ্গগুলো collectively, লসিকা তন্ত্র গঠন করে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ এবং তরল ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(ছবিগুলো অনলাইন থেকে সংগৃহীত)
পিডিএফ ফাইল-৩এমবি
https://drive.google.com/file/d/1WTyry7S47D_Yxy2NX9oIne7LEfX3Z5YT/view?usp=sharing
ডাঃ মোঃ ফারুক আহমেদ
{{{সিরাজগঞ্জ অনলাইন হোমিওপ্যাথিক স্কুল}}}