07/12/2022
খিঁচুনি বা কনভালোশন
খিচুনি আমাদের দেশের শিশুদের খুব পরিচিত সাধারণ রোগ। বিভিন্ন কারণে খিঁচুনি হতে পারে। শিশুদের নান কারণে খিঁচুনি বেশি হলেও বড়দের যে একেবারেই হয় না তা কিন্তু নয়। বড়দের মৃগীরোগ, মস্তিষ্কের টিউমার মস্তিষ্কের ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগে সাধারণত খিঁচুনি হয়।
খিঁচুনি (Convulsion) : খিচুনি হলে রোগীর সমস্ত অঙ্গ প্রতঙ্গে ঝাঁকুনিসহ কাঁপতে থাকে। কখনো কখনো সা শরীরে খিঁচুনি না হলে কোনো একটি বিশেষ অঙ্গে খিঁচুনি হতে পারে। খিঁচুনি হলে রোগীর শরীর শক্ত হয়ে যেতে পারে। খিঁচুনি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন- কয়েক সেকেন্ড থেকে শুরু করে রোগের তীব্রতা ও ধরণের ও ভিত্তি করে কয়েক ঘণ্টা বা দিনে পর্যন্ত খিঁচুনি হতে পারে।
কারণ (Cause) :
* নবজাতকের শ্বাসরুদ্ধতা * শরীরের তাপমাত্রা অত্যন্ত বেড়ে গেলে প্রধানত শিশুদের (জ্বর খিচুনি) সেপটিসেমিয় (সংক্রমণের ফলে রক্ত আক্রান্ত হলে) * মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনকেফালাইটিস) * মস্তিষ্কের আবরক ঝিল্পীর প্রদর (মেনিনজাইটিস) * ধনুষ্টংকার রক্তে শর্করা ও খনিজ লবণের কম-বেশি হওয়া শিশুর নিউমোনিয়া হলে উচ্চ রক্তচাপের কারণে মৃগীরোগ (Epilepsy) মস্তিষ্কে আঘাত মস্তিষ্কের টিউমার।
চিকিৎসা (Treatment) : শিশুর খিঁচুনি হলে অস্থির না হয়ে ঠান্ডামাথায় ব্যবস্থা নিতে হবে। এই ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হবে-
(ক) খিচুনি চলাকালীন সময়ে শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস যেন বাধা প্রাপ্ত না হয়, সে ব্যবস্থা নেয়া। দাঁত দিয়ে যেন জিহ্ব না কাটে এবং শ্বাস নেয়ার সুবিধার্থে এয়ারওয়ে টিউব মুখে দেয়া যেতে পারে।
(খ) যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি খিঁচুনি বন্ধ করা। (গ) খিঁচুনির কারণ উদঘাটন করে যথাযথ চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা হাসপাতালে প্রেরণ ।
শিশুর খিঁচুনির সময় যা করা উচিত : * শিশুর গায়ের কাপড় ঢিলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা হাসপাতালে প্রেরণ। শিশুর খিঁচুনির সময় যা করা উচিত : * শিশুর গায়ের কাপড় ঢিলা করতে হবে * শিশুকে একপাশে কাৎ করে শোয়ানো উচিত, * শিশুর নাক ও মুখ উন্মুক্ত রাখা যাতে সহজে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে ও মুখের লালা বা বমি ইত্যাদি বেরিয়ে আসতে পারে * প্রয়োজনবোধে শিশুর নাক-মুখ থেকে বেরিয়ে আসা শ্লেষ্মা মুছে দিতে হবে * শিশুর খিঁচুনি বন্ধের জন্য তার মলদ্বারে ডায়াজিপাম ইনজেকশন (০.৫ মিঃগ্রাম/প্রতি কেজি হিসেবে) বাটারফ্লাই নিডল সেটের প্লাস্টিকের টিউবের সাহায্যে দেয়া জ্বর থাকলে কুসুম গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শিশুর সারা শরীর। স্পঞ্জ করা * শিশুকে নিকটস্থ হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নেয়ার ব্যবস্থা করা।
শিশুর খিচুনির সময় যা করা নিষেধ : দাঁতে দাঁতে খিচুনি কমানোর জন্য শিশুকে চেপে ধরা যাবে না শিশু পা ধরে মাথা নিচু করে ঝুলিয়ে রাখা যাবে না দাঁতে দাঁতে বাড়ি খাওয়া বা জিহ্বা কামড়ানো বন্ধ করার জন্য দুপাটি দাঁতের ফাঁকে চামচের ডাঁট, কাঠ বা বাঁশের কাঠি ঢুকিয়ে রাখা যাবে না। কেননা এতে কোন লাভ হয় না। বরং ক্ষতি হয় বাচ্চাকে কোন কিছু খেতে দেবেন না বা খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না, তা ঔষধ, পানীয় বা খাদ্য যাই হোক না কেন। এমতাবস্থায় শিশুকে খেতে দিলে মারাত্মক অবস্থান হতে পারে শিশুকে নাকে মুখে কিছু শুকতে দেয়া যাবে না। অনেকেই লোহা, ফুল, সাবান, ধূপ-ধূনা, জুতো-স্যান্ডেল এসময় শুঁকতে দিয়ে থাকেন, এটা খিঁচুনি থামাতে কোন উপকারই করে না। খিচুনি তার স্বাভাবিক নিয়মেই কিছুক্ষণ পর থামে আর কৃতিত্বটা পায় সেই জুতো-স্যান্ডেল।
খিচুনি সম্পর্কে সতর্কতা : * শিশুর খিঁচুনিকে কখনোই আলগা বাতাস, উপরি আছর, ভূত-প্রেতের নজর, কৃমির উস্কানী, নতুন দাঁত ওঠা, পেটের ব্যথা, রাগ বা জেদ মনে করা যাবে না। কারণ এসব কারণে কখনোই শিশুদের খিঁচুনি হয় না শিশুর খিঁচুনি কে সর্বদা গুরুতর রোগ মনে করতে হবে শিশুর খিঁচুনি যতই ক্ষীণ বা ক্ষনিকের হয়ে থাকুক না কেন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এক বছর বয়সের কম বয়সী শিশুর জীবনের প্রথম খিঁচুনিতে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করতে হবে অনেকক্ষণ ধরে খিঁচুনি হলে মস্তিস্কের ক্ষতি হতে পারে, তাই শিশুকে খিঁচুনি মুক্ত করতে তাড়াতাড়ি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
জটিলতা (Complication) : খিঁচুনি দীর্ঘদিন চলতে থাকলে তা থেকে মস্তিষ্কের ক্ষতি পরে যা শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি এবং মেধার বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে। ধীরে ধীরে এ থেকে মৃগীরোগ হতে পারে ।