
14/04/2024
গরুর জায়গা দখল করে নিচ্ছে উট দুধ উৎপাদনের জন্য স্থাপন করা হচ্ছে মেগাফার্ম পুষ্টিগুণের দিক থেকেও গরুর দুধের চেয়ে উটের দুধ অনেক আলাদা। উটের দুধে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি-এর পরিমাণ অনেক বেশি এবং এতে চিনি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম থাকে।
ডেইরি ফার্মের কথা চিন্তা করলে আমাদের চোখে কী ভাসে? খামারে রাখা সারি সারি গরু কিংবা ভেড়া, খামারি হয়ত গরু থেকে দুধ দোয়াচ্ছেন বা তাদের দেখভাল করছেন। কিন্তু কখনও কি উটের খামারের কথা মাথায় এসেছে? বলা হচ্ছে ডেইরি ফার্মগুলোতে দুধের জোগানদাতা হিসেবে গরুর জায়গা আস্তে আস্তে দখল করে নিবে মরুভূমির উষ্ণ পরিবেশে বেঁচে থাকা এ প্রাণীটি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এখন হাজার হাজার উট থেকে মেশিনের মাধ্যমে দুধ দোয়ানো হচ্ছে , আর সেই দুধ বাজারজাত হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে গ্রাহকের কাছে। হাজার হাজার বছর ধরে প্রাচীন যাযাবর ও পশুপালক শ্রেণীর মানুষদের সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে আছে উটের দুধ। এমনকি দূর-দূরান্তের মরুভূমিতে পশু চরানোর সময় কয়েক সপ্তাহ শুধুমাত্র উটের দুধের ওপর ভরসা করে বেঁচে থাকত তারা। মরুভূমিতে দিনের প্রচন্ড গরম কিংবা ঠান্ডা রাতের সাথে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারে উট, প্রতিকূল পরিবেশের সাথে তাদের জীবন হয়েছে আবর্তিত। অল্প কিছু জল বা গাছপালা দিয়ে টানা কয়েক দিন কাটিয়ে দিতে পারে। গরু, ভেড়া এবং অন্যান্য গবাদি পশুর চেয়ে মিথেনও অনেক কম মাত্রায় উৎপাদন করে।
এই বৈশিষ্ট্যগুলো উটকে জলবায়ু পরিবর্তনের মাঝে অনন্য ও মূল্যবান করে তোলে। এ কারণে, তারা পরিবর্তিত জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে, বিশেষত মরুভূমি এবং অন্যান্য শুষ্ক অঞ্চলে খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
যাইহোক, এই একই গুণাবলী তাদের খামারিদের কাছেও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। বড় কর্পোরেশনগুলো জলবায়ু উদ্বেগ মোকাবেলার সুযোগে উট চাষ করে মুনাফা অর্জন করছে এবং উট শিল্প প্রসারিত হচ্ছে। তবে উদ্বেগের ব্যাপার এই যে শিল্পায়িত উট পালনের এ পরিবর্তন কেবল পরিবেশের জন্যই ক্ষতিকর হবে না, গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যগত জ্ঞান এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও হারিয়ে যাবে। 'মরুভূমির জাহাজ' নামে পরিচিত এ প্রাণীগুলোর জীবন যদি খামারের ছোট ছোট ঘেরেই শেষ হয় তাহলে তা আমাদের জন্য হবে লজ্জাজনক । গরু, ভেড়া এবং ছাগলের দুধের বিকল্প হিসেবে উটের দুধের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বের নানা প্রান্তে যেমন— মঙ্গোলিয়ার গোবি মরুভূমি বা ওমানের মরুভূমিতে উটের দুধ এবং এ দুধের চা খাওয়া হয়। এটি থেকে লাবান, মাঠা বা দইও তৈরি করা হয়। খামারিদের উৎপাদিত উটের দুধে একটি মৃদু স্বাদ রয়েছে, মৌসুম ভেদে কখনও এটি কিছুটা মিষ্টিও হয়। শুষ্ক অঞ্চলের পশুপালকরা সর্বদা উটের দুধ খেয়ে থাকে, তবে বাজারজাত করা দুধের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা তার হালকা স্বাদ, নিম্ন ল্যাকটোজ এবং পুষ্টি মানের কারণে।
আর গরুর ডেইরি খামারের তুলনায় এটি পরিবেশবান্ধবও বটে। এছাড়া পুষ্টিগুণের দিক থেকেও গরুর দুধের চেয়ে উটের দুধ অনেক আলাদা। উটের দুধে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি-এর পরিমাণ অনেক বেশি এবং এতে চিনি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম থাকে। গরুর দুধের মিল্ক ফ্যাটের তুলনায় মহিষ, ভেড়ির দুধ ও উটের দুধে লিনেওলিক এসিড বেশি থাকে যা শরীরের জন্য বিভিন্নভাবে উপকারী। সেই সাথে উটের দুধে ল্যাক্টিক এসিড ব্যাক্টেরিয়ার ১২০ স্ট্রেইন উপস্থিত থাকে যা অন্ত্রের পরিপাকে সাহায্য করে। এছাড়া, উটের দুধের মধ্যে প্রোবায়োটিক উপাদানও থাকে প্রচুর।
তবে উটের দুধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, এর মধ্যে ল্যাক্টোজ অসহিষ্ণু মানুষদের ক্ষতির কারণ হওয়ার মতো উপাদান, বি-ল্যাক্টোগ্লোবুলিন থাকে না। এই উপাদান না থাকার ফলে সব শ্রেণীর মানুষই উটের দুধ খেতে পারেন। তরল ও গুঁড়ো উটের দুধের চাহিদার কারণে বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট উটের খামার গড়ে উঠছে। যেমন– অ্যামিশ এবং সৌদিরা মিলে যুক্তরাষ্ট্রেও অনেকগুলো উটের খামার গড়ে তুলেছে। উদ্যোক্তারা এখন দুগ্ধবতী গাভীর মতো বেশি দুধ উৎপাদন করে এমন উট পালনের দিকে বেশি ঝুঁকছেন।