14/09/2025
১৪.০৯.২০২৫
রাত ৩:৩০।
ফোনে ডা. দীপ্ত শর্মা (পিএমসি-১) ভাইয়ের কল।
কল ধরতেই বললেন—❝তাড়াতাড়ি ওটিতে আয়❞
ওটিতে পৌঁছে দেখা গেল, এক রোগী আইসিইউতে, Suspected ruptured ectopic pregnancy,
৫ ব্যাগ ব্লাড লাগবে এখনই। ইমার্জেন্সি ওটি হবে। জীবন আর সময়ের লড়াই শুরু হলো। দীপ্ত ভাই ইনটুবেশন করলেন।
রাতের নিস্তব্ধতায় একে একে ফোন, অনলাইন কল, চেষ্টা, হন্যে খোঁজ।
প্রায় আশা ছাড়তে বসেছি, ঠিক তখনই ফাইনাল প্রফ শেষ করা শরীফুল (পিএমসি-৭) অনলাইনে।
কল দেয়া মাত্র ওর বন্ধু ভূষণকে সঙ্গে নিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যেই চলে এলো।
ব্লাড এখনও আরো ৪ ব্যাগ লাগবে।
এর মধ্যে আমি নিজেই মেডিসিন ডিউটিতে, কিন্তু কোনো কোনো কিছু না ভেবে আরেক জুনিয়র নবাগত মনিরকে (পিএমসি-১২) অনলাইনে পেলাম, সে অনেক চেষ্টা করে ওর এক ব্যাচমেটকে নিয়ে আসলো।
ওটিতে শুরু হয় অবিরাম চেষ্টার লড়াই।
গাইনোকলজিস্ট ডা. হিমাংশু দাস সৌম্য স্যার,
সাথে গাইনী ও অবস বিভাগের সি.এ ডা. তাসনিম আপু,আই এম ও ডা. তান্নি আপু ও ডা.দীপ্ত শর্মা ভাইয়ের বিচক্ষণতায় দ্রুত ওটি শুরু হলো এবং ব্লাড দেওয়া হলো রোগীর শরীরে।
সবার আপ্রাণ চেষ্টা, সৃষ্টিকর্তার কৃপায়—ওটি সাকসেসফুল হয়।
রোগী এখনও আইসিইউতে, আশঙ্কা মুছে যায়নি, তবে রাতের নিস্তব্ধতায় এক প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
রাতের অন্ধকারে, ডাক্তার, মেডিকেল শিক্ষার্থী—
সবাই একতাবদ্ধ। উদ্দেশ্য একটাই—একটি জীবন বাঁচানো।
বাংলাদেশের ডাক্তারদের নিয়ে নেগেটিভ খবর হয়তো প্রচুর, কিন্তু এই নিভু নিভু, অদৃশ্য, জীবনের গল্পগুলো অগোচরে থাকে।
তবু আমাদের তৃপ্তি একটাই—দিনশেষে আমরা সকলেই দিয়েছি সর্বোচ্চ চেষ্টা।
পরিশেষে কৃতজ্ঞতা জানাই আমার স্নেহের জুনিয়রদের প্রতি।
ভূষণ সূত্রধর (পিএমসি-৭) ও শাহিল (পিএমসি-১২),
যারা রাতের গভীরে দ্বিধাহীন হৃদয়ে রক্ত দান করেছে।
শরীফুল, মনির ও জামিল—
আমার কল পেয়ে বিন্দুমাত্র ভেবে না দেখে ছুটে এসেছে,
শুধু একটি জীবন বাঁচানোর আশায়।
তোমাদের এই মানবিকতা, এই অঙ্গীকার
আমাদের পেশার প্রকৃত সৌন্দর্যকে জাগ্রত করে।
ভবিষ্যতেও তোমরা অসংখ্য প্রাণ বাঁচাবে—
এই প্রার্থনাই রইল সৃষ্টিকর্তার কাছে।
©ডা. জাহেদুল ইসলাম
ইন্টার্ন চিকিৎসক
পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট