01/09/2022                                                                            
                                    
                                                                            
                                            কফের সাথে রক্ত পরলে যা করবেন..!
=============================
অনেকের কাশতে কাশতে কফের সঙ্গে রক্ত বেরিয়ে আসে । আর একে কোনভাবেই অবহেলা করা যাবে না । শীতকাল অনেকের কম-বেশি কাশির সমস্যা হয় । অনেকের আবার কাশতে কাশতে কফের সঙ্গে রক্ত বেরিয়ে আসে । আর একে কোনভাবেই অবহেলা করা যাবে না । সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে এই সমস্যার সমাধান সহজেই কমানো সম্ভব ।
 #রক্তবমি_আর_কফে_রক্ত_আসা_কি_এক ? একেবারেই না ! রক্তবমি আর কফে রক্ত আসা একেবারেই আলাদা ব্যাপার । অনেকে এই দু’টো ব্যাপারকে এক ভেবে থাকেন । কফে রক্ত আসার ক্ষেত্রে মূলত আঠালো কফ ও তাতে রক্তের ছিটাকেই বোঝায় । কখনো এই রক্তের পরিমাণ বেশি হয়ে যায় । রক্তবমির ক্ষেত্রে সমস্যা পাকস্থলীতে হয় । কখনো এই রক্ত কালো হতে পারে, কখনো স্বাভাবিক রঙের হতে পারে । 
সাধারণত, হজমের সমস্যা এবং পাকস্থলীর নানা সমস্যার কারণেই এমনটা হয়ে থাকে । অন্যদিকে কফে রক্ত আসার পেছনে থাকে পুরোপুরি অন্য কারণ ।
 #কাশির_সঙ্গে_রক্ত_কখন_যায় ? মূলত ফুসফুস ও শ্বাসনালির যেকোনো অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হলেই, তা কাশির সঙ্গে কফের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে । কারণ কফের উৎপত্তি হয় এখানে । তাই শুধুমাত্র টিবি বা যক্ষ্মা রোগ নয়, অন্য কারণেও যেকোনো কারণে ফুসফুসের রক্তনালির ক্ষতি হলে তা থেকে রক্ত বের হতে পারে । অন্য যে কারণগুলোতে রক্ত যেতে পারে তা জেনে নিন ।
 #ব্রঙ্কাইটিস : ব্রঙ্কাইটিস হলো শ্বাসনালির প্রদাহ । এটি বেশিরভাগক্ষেত্রে সহজেই সেরে যায় । তবে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া খুবই প্রয়োজন ।
 #ব্রঙ্কিয়েকটেসিস : এই অসুখে শ্বাসনালির স্থায়ী ক্ষতি হয় । এক্ষেত্রে শ্বাসনালির মধ্যে বারবার সংক্রমণ হয় । সেকারণে রোগীকে প্রায় সারাজীবনই কষ্টে ভুগতে হয় ।
 #নিউমোনিয়া : এটি ফুসফুসের একধরণের প্রদাহ ও সংক্রমণ । বিভিন্ন কারণে এই অসুখ হতে পারে । ডায়াবেটিস থাকলে সমস্যা আরো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে ।
 #ফুসফুসের_ক্যান্সার : শুধু ফুসফুসেই যে এই ক্যান্সার হতে পারে এমন নয় । অর্থাৎ শরীরের অন্য কোনো অংশের ক্যান্সারও ফুসফুসে ছড়িয়ে যেতে পারে । এছাড়া হার্টের ভাল্বের কিছু সমস্যা, হার্টের প্রদাহ হলেও কাশির সঙ্গে রক্তপাত হতে পারে ।
 #নারীদের_ক্ষেত্রে : নারীদের ক্ষেত্রে ইউটেরাসের ভিতরের আবরণ মাঝে মাঝে ফুসফুসে চলে আসে । ফলে প্রতিবার স্বাভাবিক মাসিকের সময় হলে সেখান থেকে রক্তপাত হয়, যা কফের সঙ্গে বেরিয়ে আসে ।
 #বিবিধ : আবার অন্ত্রের কৃমি ফুসফুসে গেলেও রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে । হৃদরোগের চিকিৎসায় যারা অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ নিয়মিত দীর্ঘদিন ধরে খেলে শরীরের যেকোন জায়গার পাশাপাশি ফুসফুস থেকেও রক্তপাতের আশঙ্কা বাড়ে । কোকেন জাতীয় মাদক দ্রব্য ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রেও এই একই আশঙ্কা দেখা যায় । এছাড়া আঘাতজনিত কারণেও রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে ।
 #সমস্যাটি_চিহ্নিত_করবেন_কীভাবে ? এগুলোর মধ্যে আপনার কফে রক্ত আসার কারণ কোনটি সেটা জানতে চিকিৎসকেরা- (১)  আপনার পরিবারে এমন সমস্যা আগেও ছিল কি না সেটা জানার চেষ্টা করবেন ।
(২) সমস্যা আরও ভালোভাবে বুঝতে এক্স রে, সিটি স্ক্যান ও ইউরিন টেস্ট করতে হতে পারে ।
(৩) বাড়তি কিছু পরীক্ষা, এই যেমন- ব্রোংকোসকপি ( নাক বা মুখের মধ্য দিয়ে পাইপ প্রবেশ করিয়ে ভেতরটা দেখা হবে, যাতে করে সেখানে কোনো সমস্যা আছে কি না তা বোঝা যায়), পালস অক্সিমেট্রি (শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ বোঝার জন্য), নানারকম রক্তপরীক্ষা ইত্যাদি করবেন ।
(৪) এই সমস্যার প্রতিকার হিসেবে রক্তপাত বন্ধ করতে চিকিৎসকেরা আপনাকে কিছু ওষুধ দিতে পারেন । তবে সবক্ষেত্রে ওষুধ কাজ করবে এমনটা নয় । সেক্ষেত্রে, কেমোথেরাপি বা স্টেরয়েড নেওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে ।
তবে হ্যাঁ, এই সবগুলো পদ্ধতি ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব, যদি আপনি দ্রুত চিকিৎসকের সাথে দেখা করেন । যতটা দেরি করা হবে, এক্ষেত্রে সমস্যা আরও বেশি বাড়বে । তাই, আপনার যদি কফে রক্ত আসার এমন সমস্যা থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন ।
সূত্র : ঢাকা ট্রিবিউন ।
_______________________________
কাশির সঙ্গে রক্ত চিকিৎসা কী ?
===========================
শীতকাল মানেই কমবেশি কাশির উপদ্রব ঘরে ঘরে । অনেক কারণেই কাশতে কাশতে কফের সঙ্গে রক্ত বেরিয়ে আসতে পারে । আর রক্ত ওঠা মানেই, সমস্যাকে একদম অবহেলা নয় । সঠিক সময়ে চিকিৎসার আওতায় এলে এমন বহু সমস্যারই সমাধান সম্ভব । জানাচ্ছেন রায়গঞ্জ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের টিবি ইউনিটের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ দেবব্রত রায় ।
কাশির সঙ্গে রক্ত পড়তে দেখলে ঘাবড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক । কাশি বা কফের সঙ্গে রক্ত—যার পোশাকি নাম হিমোপটিসিস । এই সমস্যা ব্যক্তি জীবনে সত্যিই আতঙ্ক তৈরি করে । পুরানো সাহিত্য ও সিনেমাতে কারও টিবি বা যক্ষ্মা রোগটি হয়েছে, এটা বোঝানোর জন্য কাশতে কাশতে মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে আসছে— এই দৃশ্য দেখানোর চল ছিল । সেই থেকেই শুরু । এরপর আমরা ধরেই নিয়েছি যে কাশিতে রক্ত এসে যাওয়া মানেই টিবি বা যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ । সমস্যাটা সবসময় ওভাবে না দেখলেই ভাল ।
 #কাশির_সঙ্গে_রক্ত_কখন_কেন ? কাশির সঙ্গে রক্ত বের হয় মূলত ফুসফুস এবং শ্বাসনালীর যে কোনও অংশ থেকে । সুতরাং এই অংশগুলোর যে কোনও জায়গা থেকে যে কোনও কারণে রক্তক্ষরণ হলেই, তা কাশির সঙ্গে কফের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে । কারণ, কফের উৎপত্তিস্থলও এই একই অঞ্চল । তাই শুধুমাত্র টিবি বা যক্ষ্মা রোগ নয়, যে কোনও কারণে ফুসফুসের রক্তবাহী জালিকা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা থেকে রক্তপাত ঘটতে পারে ।
উন্নত দেশগুলিতে যেখানে টিবি রোগের প্রকোপ মারাত্মক নয়, সেখানে স্বভাবতই টিবি রোগজনিত কারণে রক্তপাতও কম দেখতে পাওয়া যায় । অন্যদিকে আমাদের দেশে যেখানে টিবি একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা, সেখানে শতকরা ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই টিবি রোগটিই এর জন্য দায়ী । এছাড়াও অন্যান্য অনেক কারণই থাকতে পারে এই রক্তপাতের পিছনে—
 #ব্রঙ্কাইটিস : ব্রঙ্কাইটিস হল শ্বাসনালীর প্রদাহ । এটি একেবারেই সাধারণ অসুখ । বেশিরভাগক্ষেত্রে সহজেই সেরে যায় । তবে এক্ষেত্রেও চিকিৎসকের কাছে যাওয়া বাঞ্ছনীয় ।
 #ব্রঙ্কিয়েকটেসিস : এই অসুখে শ্বাসনালীর স্থায়ী ক্ষতি হয় । এক্ষেত্রে এই জায়গার স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হওয়ার কারণে শ্বাসনালীর মধ্যে মৌচাকের মধুর মতো ক্ষরণ জমতে থাকে এবং তাতে বারে বারে সংক্রমণ হয় । সেই কারণে রোগীকে প্রায় সারাজীবনই ভুগতে হয় ।
 #নিউমোনিয়া : এটি ফুসফুসের একধরনের প্রদাহ এবং সংক্রমণ । বিভিন্ন কারণে এই অসুখ হতে পারে । ডায়াবেটিস থাকলে সমস্যা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করার আশঙ্কা থাকে ।
 #ফুসফুসের_ক্যান্সার : কঠিন এমনকী প্রাণঘাতী অসুখ । এটি ফুসফুসের নিজস্ব ক্যান্সার হতে পারে । আবার শরীরের অন্য কোনও অংশের ক্যান্সারও ফুসফুসে ছড়িয়ে গেলেও হতে পারে । এ তো গেল সরাসরি ফুসফুসের অভ্যন্তরীণ কারণজনিত রক্তপাত । এমনকী হার্টের ভালভের কিছু সমস্যা, হার্টের প্রদাহ হলেও কাশির সঙ্গে রক্তপাত হতে পারে ।
 #মহিলাদের_ক্ষেত্রে : মহিলাদের ক্ষেত্রে পালমোনারি এন্ডোমেট্রিয়োসিস বলে একটি রোগ হয় । এই রোগে ইউটেরাসের ভিতরের আবরণ কোনও না কোনওভাবে ফুসফুসে চলে আসে । ফলে প্রতিবার স্বাভাবিক মেনস্ট্রুয়েশনের সময় হলে সেখান থেকে রক্তপাত হয়, যা কফের সঙ্গে বেরিয়ে আসে । ফুসফুসের কাঠামোগত কিছু বৈচিত্র্যের কারণেও এমনটা ঘটতে পারে । অনেকসময় আবার অন্ত্রের কৃমি কোনওভাবে ফুসফুসে গিয়ে বাসা বাঁধলেও রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে । শরীরের কিছু কিছু প্রতিরোধের কারণেও এমনটা ঘটতে পারে । হৃদরোগের চিকিৎসায় যাঁরা অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ নিয়মিত দীর্ঘদিন ধরে খাচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে যে কোনও জায়গার পাশাপাশি ফুসফুস থেকেও রক্তপাতের আশঙ্কা বাড়ে । কোকেন জাতীয় দ্রব্য ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রেও এই একই আশঙ্কা দেখা যায় । এতসব কারণ ছাড়াও আঘাতজনিত কারণেও রক্তপাতের আশঙ্কা থেকে যায় । আশ্চর্যের ব্যাপার হল, শত পরীক্ষানিরীক্ষা করেও কিছু ক্ষেত্রে এই সমস্যার নির্দিষ্ট কোনও কারণই নির্ণয় করা যায় না ।
 #কোথা_থেকে_রক্ত ? রক্তপাতের ধরন এবং পরিমাণ দেখেই অনেক সময় আন্দাজ করা যায় যে ঠিক কোন জায়গা থেকে এমনটা ঘটছে । কখনও কখনও কফের সঙ্গে মেশানো অবস্থায় কেবলমাত্র ছিটেফোঁটার আকারে রক্ত দেখতে পাওয়া যায় । এটা আসে সামান্য গভীর কোনও জায়গা থেকে । প্রতিদিন যদি ২০০ মিলি-এর কম পরিমাণ রক্ত বের হয়, তবে সেটা আসে অপেক্ষাকৃত গভীরতর এবং বড় কোনও ক্ষত থেকে । ২০০ মিলির বেশি রক্ত এলে বুঝতে হবে সমস্যাটা সত্যিই ভীষণ গভীরে । এক্ষেত্রে কোনও রক্তবাহী নালী ফেটে যাওয়ার ফলেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে । সবচেয়ে ভয় এই তৃতীয় গোত্রের রোগীদের নিয়েই । সঠিকভাবে চিকিৎসা না করালে ৭০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে । তাই কফের সঙ্গে রক্ত কম আসুক বা বেশি, একবারেই অবহেলা করা চলবে না । কেন না ব্রঙ্কাইটিসের মতো আপাতনিরীহ রোগ থেকে ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগও কিন্তু এসবের কারণ হতে পারে । সুতরাং দেরি না করে সত্ত্বর চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন ।
 #রোগনির্ণয় : ডায়াগনোসিসের ক্ষেত্রে কতকগুলি প্রশ্ন ভীষণই প্রাসঙ্গিক—  কত দিন থেকে কাশি চলছে ?
 কত দিন থেকে রক্তপাত হচ্ছে ?
 কতটা পরিমাণ রক্তপাত হচ্ছে ?
 দিনে কতবার এমন হচ্ছে ?
 আগে কখনও এমন হয়েছে কি না ?
 আনুষঙ্গিক অন্যান্য উপসর্গ যেমন— জ্বর, বুকে ব্যথা ইত্যাদি আছে কি না ?
 আগে কোনও দিন টিবি জাতীয় রোগ হয়েছে কি না ?
 ডায়াবেটিস আছে কি না ?
 কোনও কারণে অ্যাসপিরিন বা ক্লোপিটোগ্রেল জাতীয় ওষুধ খাচ্ছেন কি না ?
 ধূমপানের অভ্যেস আছে কি না ? থাকলে তা কতদিনের এবং কী পরিমাণে ?
সঠিকভাবে ইতিহাস বলতে পারলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা তা থেকেই অনেকটা কারণ আন্দাজ করতে পারেন । সাধারণত রোগীর যেসব পরীক্ষা করানো হয়ে থাকে—
 বুকের এক্স-রে
 সিটি স্ক্যান
 ব্রঙ্কোস্কোপি
 ব্রঙ্কোস্কোপি থেকে প্রাপ্ত রসের নানা রকমের পরীক্ষা ।
 কফের পরীক্ষা—টিবি এবং ক্যান্সারের জন্য
 প্রয়োজনে বায়োপ্সি
 এছাড়া রক্তের রুটিন পরীক্ষা তো আছেই
 প্রয়োজনে এন্ডোস্কোপিও করা হয় ।
কাশি ও বমিতে রক্তের পার্থক্য
অনেকক্ষেত্রে কাশির সঙ্গে আসা রক্ত (হাইমোপটিসিস) এবং বমির সঙ্গে আসা রক্তের (হাইমোটেমেসিস) পার্থক্য নির্ণয় করা দুষ্কর হয়ে পড়ে । তবে সতর্কভাবে কিছু নজর রাখলে পার্থক্য বুঝতে অসুবিধে হয় না—
কফে রক্ত
 রক্ত টকটকে লাল ।
 সাধারণত খাবারের কণা মিশ্রিত থাকে না ।
 সঙ্গে থাকে কাশি, বুকের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, জ্বর জাতীয় অন্যান্য উপসর্গ ।
বমিতে রক্ত
 রক্ত মেটে, কফি রঙের হয় ।
 অনেকক্ষেত্রেই খাবারের কণা মিশ্রিত থাকে ।
 সঙ্গে থাকে পেটে ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, বুক জ্বালা, কখনও কালো পায়খানার ইতিহাস ।
তাই সবশেষে বলা, কাশিতে রক্ত বেরলেই ফেলে না রেখে সরাসরি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যান । মনে বিশ্বাস রাখুন, সঠিক চিকিৎসায় সেরে ওঠা যায় ।
সূত্র : বর্তমান পত্রিকা ।