24/09/2025
নিউজিল্যান্ডের একটা ঘটনা। খুব খেয়াল করে দেখেন, পড়েন। লিংক দিয়েছি। কিছু কি মিল পান?
আসলে গত কয়েক মাসে,মা তার সন্তানকে মেরে ফেলেছেন এমন অনেকগুলো নিউজ পড়েছি,আপনারা ও পড়েছেন। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, যখন মায়েরা ছোট শিশুদের মেরে ফেলে তখন নারীদের একটা গ্রুপকে সেই মায়ের প্রতিই প্রচন্ড সংবেদনশীল দেখা যায়। সেই সব নারীরা কাহিনী পড়েই নিশ্চিত হয়ে যান , সেই মা'টি পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশনে আছেন,এবং তারা এ-ও বলেন মহিলাটি অনেক কষ্টে আছেন বা ছিলেন,সেই থেকে ডিপ্রেশনে গিয়ে বাচ্চা মেরে ফেলেছে,আর তারা নিজেরা ও সেই সব সময় পার করেছেন বলেন। আমি গত কয়েকটা নিউজ এবং তার আপডেট মনোযোগ দিয়ে ফলো করেছি,মনোযোগ দিয়ে কমেন্টগুলো পড়েছি,দেখেছি সেই সব নারীদের মধ্যে হতভাগ্য বাচ্চাটার জন্য তেমন কোনো দু:খবোধ নেই,তাদের বেদনা সব হত্যাকারী মহিলার জন্য এবং তাদের কমেন্টে মনে হয় যেন ডিপ্রেশনে মহিলাটি বাচ্চাকে মারতেই পারেন!!! এবং এটাই নরমাল!!
এই সোশ্যাল মিডিয়া মানুষকে শেষ করে দিচ্ছে! সাধু থেকে শয়তান,অশিক্ষিত থেকে উচ্চশিক্ষিত সবাই ফেইসবুকে নিজের মতামত জাহির করতে ব্যস্ত।সেই মতের সাথে কতটা বাস্তবতা বা সত্য আছে তা পুরোটাই প্রশ্ন সাপেক্ষ।
২/৩ মাস আগে অনলাইন পোর্টালে পড়লাম,এক মহিলা বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে যায়,তারপর খালি হাতে আসে আর বলে কে জানি চোখে স্প্রে মেরে বাচ্চা নিয়ে গেছে। শুনে খুব খারাপ লেগেছিলো,অসহায় বাবার বাচ্চার ছবি দেখিয়ে কান্নার দৃশ্য ও চোখে ভাসছে। অথচ মাত্র দু'দিন পরই জানা গেলো বাচ্চাটিকে মা নিজেই পানিতে ফেলে দিয়ে এসে গল্প ফেঁদেছে। তারপর এক গ্রুপ নারী মহল সেই মহিলাকে পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন বলে ডায়াগনোসিস করেন এবং লেখালেখি করেন মহিলাটি সাংসারিক চাপে ছিলো বলে ডিপ্রেশনে গিয়ে বাচ্চাকে মেরে ফেলেছে!!
যে মা তার বাচ্চাকে মেরে এসে মিথ্যা গল্প ফেঁদে পরিবার ও দেশ বাসীকে বোকা বানাতে পারেন,সে কিভাবে ডিপ্রেশনে আমি সত্যি জানিনা। নিশ্চয়ই আইন সেটা বুঝবেন, আর সাইকিয়াট্রিক এসেসমেন্টে সাইকিয়াট্রিস্টরা বুঝবেন,আর সেই সব নারী মহলদের ধরে এনে সেই উত্তর চাওয়া হোক।
এবার আসুন,নিউজিল্যান্ডের খবরে।মহিলার স্বামী কয়েকমাস আগে মারা গিয়েছেন,তারপর সে বাচ্চাদের মে'রেছে। বাংলাদেশ হলে আইনের বিচারের আগেই সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়ালেই হয়তো পাব্লিক মহিলার ডিপ্রেশন ডায়াগনোসিস করে এতোবড় হত্যাকে জাস্টিফাই করে ফেলতে চাইতো। ধন্যবাদ জানাই নিউজিল্যান্ডের আইনকে।
আমি পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন নিয়ে লিখবো কিছুদিনের মধ্যে।আমি জানি বেশিরভাগই পড়বেন না,তারপরও লিখবো,দায়িত্ববোধ থেকে। পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন থেকে হোমিসাইড বা হত্যা একেবারেই যে রেয়ার তা নয়,হয়,বাট কিছু ক্ষেত্রে এবং সেটা খুবই সামান্য।
এখন আপনারা যদি প্রত্যেক হত্যাকারী মায়ের হত্যাকে জাস্টিফাই করার জন্য তাদের পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন বানিয়ে ফেলেন,সাইকিয়াট্রিস্ট এর এসেসমেন্ট এর আগেই,বিচার কার্য শুরু হওয়ার আগেই!!
তাহলে,এদেশ বাচ্চাদের জন্য আসলেই নিরাপদ থাকবে না ভবিষ্যতে। ভবিষ্যতে যে কেউ বাচ্চাকে মেরে ডিপ্রেশনের দোহাই দিতে চাইবে। কে জানে,এর পরবর্তী টার্গেট হয়তো আপনার ঘরেই আছে!
Assistant Professor
Psychiatry