11/05/2025
#মা_কন্যা_বউ_শ্বাশুড়ি : সম্পর্কের বদল! নাকি সম্পর্কের চক্র?
আমার আম্মু বলতেন,আব্বু বাসায় আসার পর আমরা যেন চুপ থাকি,হৈ হুল্লোড় না করি...একটা মানুষ সারাদিন বাইরে থেকে অফিস-জ্যাম-শব্দ-ধুলোময়লা -ক্ষুধা নিয়ে ঘরে আসার পর মনে হয় মনটা এবার একটু প্রশান্ত হোক!!! তাকে সেই প্রশান্তি টুকু দেয়া ঘরের মানুষদের দায়িত্ব।তাদেরকে ভালো রাখতেই তার বাইরে এতো পরিশ্রম। অথচ পুলিশ ভদ্রলোকটি কি সেই প্রশান্তি পেয়েছিলো?
যার কথা বলছিলাম। সম্প্রতি একজন ঊর্ধ্বতন সরকারী কর্মকর্তা, যেখানে পৌঁছানো লাখো মানুষের স্বপ্ন থাকে,যেখানে পৌঁছাতে হাজার হাজার বিনিদ্র রাত জেগে পড়ার পরিশ্রম করতে হয়,পরিবারের ও এক দীর্ঘ স্যাক্রিফাইস করতে হয় সন্তানকে ঐ নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দিতে... সেই মানুষটিকে নিজেকে শেষ করে দিতে হলো পরিবারের বউ শ্বাশুড়ির দ্বন্দ্বে। ক্যান য়ু ইমাজিন!!!
মা,বউ,কন্যা,শ্বাশুড়ি.. এই সম্পর্কগুলো ভীষণভাবে এক সুতোয় গাঁথা। প্রায় শতভাগ নারীই তার জীবনে এই চারটা স্টেজ পার করেন। আজ মা দিবসে এই মা'দের নিয়ে কথা বলি। পড়ার ধৈর্য আছে?
একজন মেন্টাল হেলথ প্রফেশনাল হিসাবে আমাকে প্রতিনিয়ত মানুষের মন নিয়ে ডিল করতে হয়। মানুষের জীবন সম্পর্কে জানা ও আমাদের চিকিৎসার একটা পার্ট। অদ্ভূত এক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে সম্পর্কগুলো পার হচ্ছে।কারো প্রতি কারো বিশ্বাস নেই,কেউ কাউকে দেখতে-সহ্য করতে পারেনা।সবাই শুধু নিজেকেই ভালোবাসে আর নিজেকেই একদম সঠিক মনে করে।
📌মেয়ে, বড় আদরের সন্তান বাপ মায়ের। সেই মেয়ের যখন ২৫/২৬ বছর বয়স পার হতে থাকে,সেই আদরের মেয়ের উপর প্রেশার ক্রিয়েট হয় বিয়ের জন্য। আর ২৮/৩০ পার করলে তো বাপ মাই বোঝা মনে করেন মেয়েকে। আমি তো জেনে বলছি,আপনি বিশ্বাস না করলে বিভিন্ন নারী,ফিমেল গ্রুপে ঢুকুন,দেখুন।
--আবার সেই অতি আদরের মেয়েটি যদি ডিভোর্সড হয়ে বাপের বাড়ি ফিরে আসে,তাহলে তো রক্ষা নেই! এই মেয়ে সবচেয়ে নাজেহাল আর লাঞ্ছিত হয় তার পরিবার দ্বারাই।মেয়েকে তার পরিবারেই তখন আশ্রিতা হিসাবে থাকতে হয় বাপ-মা-ভাইয়ের গলগ্রহ হয়ে।আবার মেয়ে শ্বশুরবাড়ি থাকলে অনেক মেয়ের সংসারই মেয়ের মা কণ্ট্রোল করেন।
তাহলে বুঝা গেলো,যত আদরের মেয়েই হোক,সময়ের সাথে সাথে তার স্ট্যাটাস চেঞ্জ হয়,সে সবসময় আদরের রাজকন্যা হয়ে থাকে না।
📌এবার আসি শ্বাশুড়ির বিষয় এবং ছেলেদের নিয়ে।সাউথ এশিয়ান দেশগুলোতে ছেলে সন্তানের গুরুত্ব অনেক।এখন সময় বদলেছে,গুরুত্ব আগের মতো না দেখালেও একেবারে কম না। কারন একটা ছেলে মানে, সে ভবিষ্যতে বাবা-মা-পরিবারকে দেখবে,সম্পত্তিগুলোর মালিক হবে,ফলে সম্পত্তি বেহাত হবে না ইত্যাদি।
ছেলে বড় হলে মা বাবা অধীর হয়ে পুত্র বধুঁ খুঁজতে থাকেন,সেই আদরের পুত্র বঁধুকে ঘরে আনার পর অনেকেই আর দেখতে পারে না।মনে করে,বউ তার পুত্রকে নিয়ে গেলো,যে পুত্র বিয়ের আগের দিন পর্যন্ত মায়ের আচঁল ধরে থেকেছে,ছেলের ফার্স্ট প্রায়োরিটি ওলঅয়েজ ছিলো যে মা,কিভাবে মা সহ্য করবে প্রায়োরিটি চেঞ্জ হয়ে যাওয়াটা।বিন্দু বিন্দু করে গড়ে তোলা সংসার,যেখানে পুরোটাই তার নির্দেশে চলেছে,সেখানে আরেকজনের অনুপ্রবেশ কিংবা অধিকার সেটা মেনে নেয়ার চাপ অনেক মা-ই সামলাতে পারেন না।অনেক শ্বাশুড়ি আবার থাকেন ছেলেকে মিথ্যা মন্ত্রনা দিতে,চান ছেলে ও বউ আলাদা থাকুক।তখন দ্বন্দ্ব শুরু হয় বউয়ের সাথে ছেলেকে কন্ট্রোলের রিমোট কার হাতে থাকবে এটা নিয়ে,সাথে ছেলের ভূমিকা সাপেক্ষে সে শত্রু কি মিত্র চিহ্নিত করা হয়।
আবার ছেলে বউ ছেলেকে যন্ত্রনা দিচ্ছে,সংসারে অশান্তি করছে, আলাদা হতে চাপ দিচ্ছে... অনেক শ্বাশুড়ি ছেলের এই কষ্ট সহ্য করতে পারেন না,আলাদা করে দেন ছেলেকে,এমনটা ও আছে পরিবার গুলোতে।
যদিও এখানে ছেলের একটা ইম্পর্ট্যান্ট ভূমিকা থাকে,বেশিরভাগ ছেলেরা সেই ভূমিকাটা পালন করতে পারেনা,সম্পর্কের ব্যালেন্স করতে পারেনা।তাই সমস্যাটা আরো বাড়ে।
📌 শ্বশুর বাড়ি আসার পর যে মেয়েটি শ্বাশুড়িকে প্রতিপক্ষ ভেবে কিংবা নেগেটিভ আচরনে কিংবা এম্নিই নিজের প্রাইভেসি চেয়ে শ্বশুর বাড়ি-শ্বাশুড়ি ভালো লাগে না বলে স্বামী নিয়ে আলাদা হতে চায়,সেই মেয়েটি যখন সন্তানের মা হয়,তখন সে বুঝে, বাচ্চা পালতে এতো কষ্ট,একা পালা কত কষ্ট!! তখন সে বুঝে সন্তান কি জিনিস,কি সাধনার ধন।
📌মেয়েটির ভাই বিয়ে করে যখন,যখন দেখে ভাইয়ের বউ তার মাকে বাবাকে যথেষ্ট করছে না,সেই মেয়েটিই ফুঁসলে উঠে, তার বাপ মায়ের কষ্টে তার অন্তর পুড়তে থাকে। মেয়ের বিয়ের পর মেয়ের শ্বাশুড়িকে আলাদা করে দেয়ার মন্ত্রনা দেয় যে মেয়ের মা,সেই মা-ই আবার ছেলের বিয়ের পর বউয়ের আলাদা হয়ে যাওয়া বা এডজাস্ট না হওয়া নিয়ে কষ্ট বোধ করেন।
এতটুকু পড়তে পারলে একটু দেখুন,কিভাবে একই সম্পর্ক সময়ের সাথে সাথে বারবার বদলে যায়,সম্পর্কের আবেগগুলো ও বদলে যায়। আসলে কখনো সম্পর্ক বদলে যায় এক নিমিষেই।
এখানে ভূমিকা কার, কোথায়,কতটুকু রাখতে হবে সেটা জানা জরুরী। সম্পর্কের বাউন্ডারী কতটুকু সেটা জানতে হবে।আর থাকতে হবে সহনশীলতা, এডজাস্টমেন্ট করার মানসিকতা, কিছু ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ করার মানসিকতা।
এটা মেনে নিতে হবে,মেয়ে বিয়ে দিয়ে অন্য পরিবারে যায়,ছেলে বিয়ে করে বউ তার পরিবারে আনে।এখানে সমাজ ও আইনে কিভাবে সম্পর্ক সেইম থাকবে? এখানে একপক্ষের এডজাস্টমেন্ট নিশ্চিতভাবেই বেশি। আর আরেক পক্ষের মেনে নেয়ার,স্পেস দেয়ার মানসিকতার জরুরি বেশি।
বিয়ে মানে শুধু স্বামী না,স্বামীর পরিবারেই আপনি আসবেন,তাই আপনাকে সবার সাথে মিশে চলার মানসিকতা নিয়েই বিয়ে বসতে হবে। নতুবা ঘর জামাই করে নিজের মায়ের বাসায় স্বামীকে রাখতে হবে,বা এতিম ছেলে বিয়ে করতে হবে।
একটা ছেলে বিয়ে করে স্ত্রীর সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেয়,তাই বউয়েরা মুখ বড় করে বলে,'আমার টাকা আমার টাকা,জামাইর টাকা ও আমার টাকা"!
এটা বলতে কম শোনা যায় তখন,আমার মা আমার মা,জামাইর মা ও আমার মা। তুমি কিন্তু কেউ ছিলে না,শুধুমাত্র আইনের অধিকারে তুমি স্বামীর সম্পত্তি আত্মা সব কিছুর অধিকার পেয়ে গেলে!! আর যে মা জন্ম দিলো,পেলে বড় করলো,তুমি বলছো সে কেন অন্য কোথাও গিয়ে থাকে না?
আশ্চর্য!
পলাশ সাহার ঘটনায় নারীরা এসব কথা বলছেন,
"মা কেন সব ছেলের বাসায় পালাক্রমে থাকেনা"?
" মা কেন পড়ে আছে ছেলের সংসারে"
"মা নাকি বউয়ের প্রতি সেক্সুয়াল জেলাসি ফীল করে"!
এসব নারীরা কোন পরিবারে কি শিক্ষা পেয়ে বড় হয়েছে আমার জানতে ইচ্ছে করে।মা কি জলে ভাসা পদ্ম? যাযাবর? মা তার ঘর সংসার থেকে, তার ছেলের ঘর থেকে সে বের হয়ে যাবেন,কারন বউয়ের সাথে বনিবনা হয়নি তাই!!!
শেষ কথা:
যে কোনো সম্পর্ক তৈরী করতে সময় দিতে হয়। বাসে ট্রেনে কোথাও গেলে আপনার পাশে সিটে বসা যাত্রীর সাথে কয়েক ঘন্টার জার্নিতেও তো আপনার কিছুটা এডজাস্ট করে নিতে হয়,আর হোষ্টেলে থাকলে রূম মেটের সাথে।
তাহলে স্বামী-স্ত্রী, বউ-শ্বাশুড়ির মতো দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কে সময়,এফোর্ট,সহনশীলতা, এডজাস্টমেন্ট, কিছু কম্প্রোমাইজ কেন আমরা একেবারেই করতে চাই না?
বিয়ের পর ছেলেকে মা খাইয়ে দিলে আপনার মনে হয় আদিক্ষ্যেতা! অথচ নিজে মায়ের বাড়ি বেড়াতে গেলে মা মুখে তুলে খাইয়ে দিলে ইমোশনাল ভিডিও দেন।
আপনি বিয়ের পর থেকেই স্বামীকে নিজের সম্পত্তি ভেবে নেন,ভেবে নেন স্বামীর টাকা পয়সা সব আপনার, আর কারো কোনো অধিকার নেই!
আবার অনেক শ্বাশুড়ি ভাবেন বউ বিনে পয়সার কাজের বুয়া।
ভুলে যান,তিনিও বউ ছিলেন।
উপরের এই দুই মেন্টালিটিই জঘন্য ও নোংরা।
সম্পর্ক গড়ুন। সম্পর্ক ভাঙার জন্য নতুন সম্পর্কে যাবেন না। কারন আজ আপনি মেয়ে,কাল বউ,পরশু সেই আপনি ই কিন্তু শ্বাশুড়ি। একই রোল সবাইকেই প্লে করতে হয়,হবে।এটা মনে রাখলেই হয়তো ভালো থাকবেন।
আর মা'কে মা'দের নিয়ে এতটা খারাপ কথা বলবেন না,এতটা পঁচাবেন না। পৃথিবীতে এখনো একমাত্র নি:স্বার্থ সম্পর্ক হচ্ছে মায়ের সাথেই।একজন মা শ্বাশুড়ি হিসাবে আজ কাঠগড়ায়, কিন্তু তালি কি এক হাতে বেজেছিলো?
#মা_কন্যা_বউ_শ্বাশুড়ি : সম্পর্কের বদল! নাকি সম্পর্কের চক্র?
Assistant Professor
Psychiatry
* এই বিখ্যাত পরিবারে বউ শ্বাশুড়ি ননদের বিতর্কিত সম্পর্কের কথা সবাই জানে।তাই লেখার টপিক বুঝাতে এই ছবি দেয়া।
#মা_দিবস ্বাশুড়ির_যুদ্ধ