14/11/2024
অব্সেসিভ কম্পালসিভ ডিস্অর্ডার (ওসিডি)বা চিন্তাবাতিক ও বাধ্যতাধর্মী আচরণ একটি উদ্বেগ জনিত রোগ। সারাবিশ্বে প্রতি ১০০ জনের ১ জনের এ রোগটি হয়। পুরুষ ও নারী উভয়েই এ রোগে সমান হারে ভোগে। সাধারণত ১৮-২৯ বছরের মানুষেরা রোগটিতে ভুগে থাকেন। তবে শিশু ও বয়স্কদের মাঝেও এ রোগটি বিদ্যমান। বাংলাদেশে প্রতি ১০০০ জনে ৪ জনের মাঝে রোগটি বিদ্যমান। তবে সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের উপর একটি জরিপে প্রতি ২ জনের ১ জনের মধ্যে রোগটির উপসর্গ এবং প্রতি ৭ জনের ১ জনে ওসিডি পাওয়া গিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপ এবং করোনাকালীন মানসিক চাপের প্রভাবে এ রোগের আধিক্য বৃদ্ধি পেয়েছে ভয়ংকর হারে!
***ওসিডি কি?
এটা এমন ধরণের রোগ, যাতে অবসেশন অথবা কমপালশন বা উভয়টিই থাকতে পারে।
অবসেশন কি?-এটা এক ধরনের মর্মপীড়াদায়ক চিন্তা, দৃশ্য কল্পনা যা মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মাথায় আসে।
কমপালশন কি?-অবসেশন দ্বারা তাড়িত/বাধ্য হয়ে এবং অস্বস্তি ও উদ্বেগ কমানোর জন্য যে কাজ করা হয় তাকে কমপালশন বলে,যেমন-বারবার হাত ধোয়া, গণনা করা,বারবার যাছাই করা,গুছিয়ে রাখা এবং একি কথা বারবার বলা,ইত্যাদি।
*** উপসর্গ:
১) শরীর , কাপড়চোপড় বা আসবাবপত্রে জীবাণু বা ময়লা লেগে আছে এমন চিন্তা বারবার আসা ও
অতিরিক্ত ধোয়া মোছা করা
২) অনাকাঙ্খিত, নিষিদ্ধ বা বিকৃত যৌন চিন্তা, দৃশ্য কল্পনা বা আবেগ, সৃষ্টিকর্তা বা ধর্মগ্রন্থ নিয়ে অবিশ্বাস, দ্বিধা ও নেতিবাচক চিন্ত এবং বারবার ক্ষমা চাওয়া, তওবা করা, এমনকি ভয়ে ধর্মীয় কর্মকান্ড থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
৩) আসবাব পত্র, বইখাতা, কাপোড়চোপড় অথবা যে কোন জিনিস নির্দিষ্ট ছকে গুছিয়ে রাখাএ প্রবণতা।
৪) কোন কাজ বুঝি ঠিক মত হয়নি মনে করে বার বার চেক করা, অপ্রয়োজনীয় জিনিস জমা করা, নির্দিষ্ট ছকে বারবার গণনা করা, ইত্যাদি
*** প্রকারভেদ :
অবসেশনের প্রকার:
১) সংক্রমণ জনিত অবসেশন
২) ধর্মীয় অবসেশন
৩) যৌনচিন্তা বিষয়ক অবসেশন
৪) অবসেশনাল দ্বিধা
৫) আগ্রাসী অবসেশন
৬) অন্যান্য
কমপালশনের প্রকারঃ
১) পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন/ধোয়া বিষয়ক কমপালশন
২) পরীক্ষা বা চেক করা বিষয়ক কমপালশন
৩) চিন্তা আসলে বার বার তওবা করা, মাফ চাওয়া
৪) ধর্মীয় কমপালশন
৫) নির্দিষ্ট নিয়মে গুছিয়ে রাখা, গোনা
৬) অন্যান্য
*** চিকিৎসা :
অন্যান্য শারীরিক রোগ যেমন – ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ যেমন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তেমনি রুটিন মাফিক জীবন যাপন, নিয়মিত ওষুধ সেবন এবং সাইকোথেরাপীতে শিখিয়ে দেয়া পদ্ধতির সমন্বয়ে ওসিডি নিয়ন্ত্রণে এনে স্বাভাবিক কর্ম ও ব্যক্তিজীবনে ফেরা সম্ভব ।
১।ওষুধ ঃ
এস এস আর আই, টিসিএ ও অন্যান্য
২) সাইকোএডুকেশন ঃ
রোগী ও পরিবারকে রোগ সম্পর্কে জানানো ও চিকিৎসা নিতে উদ্বুদ্ধ করা
৩) সাইকোথেরাপীঃ
এক্সপোজার এন্ড রেসপন্স প্রিভেনশন থেরাপী
রিলাক্সেশন, মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন
কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপী, গ্রুপ থেরাপী ইত্যাদি
৪) রুটিন, নিয়ম মাফিক জীবন যাপন ও খাদ্যাভ্যাসে সুষম খাবার খাওয়া ও ফাস্ট ফুড, প্রিজার্ভেটিভ দেয়া খাবার ও ধূমপান মদ্যপান ত্যাগ
**** আপনি কি অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজর্ডারে ভুগছেন???
১)আপনি কি অতিরিক্ত ধোয়া-মোছা করেন অথবা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন?
২)আপনি কি কোন কিছু অতিরিক্ত চেক/ যাচাই-বাছাই করন?
৩)আপনার মধ্যে কি আসবাবপত্র,বই-খাতা, কাপড়-চোপড় অথবা যে কোনো জিনিস নির্দিষ্ট ছকে গুছিয়ে রাখার প্রবণতা আছে?
৪)আপনার মাথায় কি অযাচিত ভাবে এমন কোনো চিন্তা,কল্পনা বা ছবি আসে যা আপনি চাইলেও মাথা থেকে সহজে বের করতে পারেন না?
৫)আপনার দৈনন্দিন কাজ শেষ করতে কি অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়?
একটি প্রশ্নের উত্তর হ্যা হলে দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ (সাইকিয়াট্রিস্ট) এর শরণাপন্ন হোন..
Dr Imdadul Magfur
Psychiatrist & Psychotherapist