21/11/2023
বাতজ্বর বা রিউম্যাটিক ফিভার শব্দটি আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত হলেও এটি নিয়ে সাধারনের মানুষের মাঝে রয়েছে দারুণ ভুল ধারনা।আবার এই বাতজ্বরকে কেন্দ্র করে গ্রামাঞ্চলে কোয়াকদের রয়েছে অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের হিড়িক।
চেম্বারে প্রায় রোগী পাই যাদের A*O titre নামে একটা পরীক্ষার লেবেল বেশি দেখে তাদেরকে বাতজ্বরের রোগী হিসেবে সনাক্ত করে চিকিৎসা দেয়া হয়। রোগীরাও নিজেকে বাতজ্বরের রোগী মনে করে মানসিক দুশ্চিন্তায় ভোগেন। অথচ এর A*O titre বাতজ্বর ডায়াগনোসিসে তেমন কাজের কিছু না।
বাতজ্বর আসলে কি, কেন হয়?
সাধারণত মনে করা হয় গিরায় গিরায় কিংবা হাড়ে হাড়ে ব্যথা হলে সেটা বাতজ্বরের লক্ষণ। যদিও এটা সবসময় সঠিক নয়।
মানবদেহ একটি বিশেষ ব্যাকটেরিয়া (group A Streptococcus) দ্বারা আক্রান্ত হলে,এটি দিয়ে মানুষের গলায় ইনফেকশন (pharyngitis) হয়।
তখন দেহ রোগ প্রতিরোধ করতে গিয়ে এই দুষ্ট ব্যাকটেরিয়ার বিপক্ষে এন্টিবডি তৈরি করে।এন্টিবডি হচ্ছে রোগের বিরুদ্ধে মানবদেহের তৈরি একটি শক্তিশালী অস্ত্র।
সমস্যা হলো streptococcus জীবানুর প্রোটিনের সঙ্গে হার্টভাল্ব ও গিরার ভিতরে থাকা পাতলা পর্দার প্রোটিনের প্রচুর মিল রয়েছে। ফলে জীবানুর বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া এন্টিবডি জীবানুর বিরুদ্ধে কাজ করার পাশাপাশি অনেকটা আত্মঘাতীভাবে নিজের শরীরের হার্টভাল্ব ও গিরার পর্দার প্রোটিনের বিরুদ্ধে কাজ করা শুরু করে। অনেকটা রাতের অন্ধকারে চোর মনে করে নিরীহ গ্রামবাসীকে পিটানোর মতো।নিজের এন্টিবডিই নিজের হার্ট ও গিরায় আক্রমণ করে,এগুলোর ক্ষতি শুরু করে।ফলে শুরু বাতজ্বরের নামের এক জটিল রোগ।
বাতজ্বর কাদের হয়?
অস্বাস্থ্যকর ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে বসবাসরত শিশুরা এই ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আক্রান্ত হয়ে থাকে।সাধারণত ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের বাতজ্বর হয়ে থাকে। তবে এর পরেও হতে পারে। আমাদের দেশে এক লাখ শিশুর মধ্যে ১০০ জন বাতজ্বরে আক্রান্ত হয়। উন্নত দেশগুলোতে বাতজ্বরের প্রকোপ অনেক কম।অর্থনৈতিক উন্নতি আর চিকিৎসা পদ্ধতির আধুনিকতার সাথে সাথে আমাদের দেশেও এই রোগের হার ক্রমশ কমছে।
বাতজ্বরের লক্ষণ কি?
বাতজ্বরের প্রথম ধাক্কাটা শুরু হয় গলা ব্যথা দিয়ে। প্রথমে কিছুদিন গলা ব্যথা, হালকা কাশি, জ্বর। তারপর ২ থেকে ৩ সপ্তাহ বিরতি।এরপর শুরু হয় গিরায় গিরায় ব্যথা। প্রথমে একটি বড় গিরা (হাঁটু,কনুই,কব্জি,গোড়ালির গিরা ইত্যাদি ) ব্যথা হয়ে ফুলে যাওয়া, কয়েক দিনের মধ্যে সেটি ভাল