17/06/2025
হিট স্ট্রোক :
আমাদের শরীরের একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা রয়েছে যেমন ৯৮.৪° ফারেনহাইট এবং ৩৬° সে.। অত্যাধিক গরমে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪° ফারেনহাইট বা ৪০° সে. এর বেশী হলে হিট স্ট্রোক দেখা দেয়।
হিট স্ট্রোক দুই প্রকার :
১. পরিশ্রমী হিট স্ট্রোক - যা ব্যায়াম ও অত্যাধিক পরিশ্রমের ফলে হয়।
২. অ -শ্রমী হিট স্ট্রোক - যা প্রচন্ড গরম বা আদ্র আবহাওয়ার সংস্পর্শে হয়।
হিট স্ট্রোক এর কারণ :
* সাধারণত হাইপোথ্যালামাস শরীরের তাপমাত্রা ৯৮.৬° ফারেনহাইট ঠিক রাখে। অত্যাধিক গরমে শরীর তার প্রাকৃতিক থার্মরেগুলেটরি সিস্টেমের(হাইপোথ্যালামাস) মাধ্যমে নিজেকে ঠান্ডা রাখতে পারেনা তখন হিট স্ট্রোক হয়।
* বয়স একটা বড় ফ্যাক্টর, শিশু এবং বয়স্করা তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা ফলে তাদের হিট স্ট্রোক হতে পারে।
* বিভিন্ন অসুস্থতা - উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ স্থুলতা,অ্যাজমা বা ফুসফুসের রোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগের কারণে।
* মেডিকেশন- অ্যান্টিহিস্টামিন, ডাইইউরেটিক, ইত্যাদি শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় হস্তক্ষেপ করার কারণে হিট স্ট্রোক হতে পারে।
* গরমে দীর্ঘক্ষন কাজ করা এবং পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ না করা।
*অতিরিক্ত পোশাক পড়া বা গরমে মোটা কাপড় পড়া।
অ্যালকোহল বা এ জাতীয় তরল গ্রহণ
কঠোর শারীরিক পরিশ্রম।
* ড্রাগ ব্যাবহার ইত্যাদি কারণে হিট স্ট্রোক হতে পারে।
হিট স্ট্রোক এর লক্ষ্মণ :
* অত্যাধিক পানি পিপাসা।
*ত্বক লাল হয়ে যায় এবং লাল লাল ফোস্কা পড়ে।
* মাথা ঘোরা, মাথা ব্যাথা।
* বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া।
* দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস নেয়া,বা হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি।
* বিভ্রান্তিমুলক আচরণ এবং সাথে হাইপোথার্মিয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।
হিট স্ট্রোক এর জটিলতা :
হিট স্ট্রোক এর ফলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংগগুলোর ক্ষতি হতে পারে এবং অন্যান্য অঙ্গগুলো ফুলে যেতে ট্রিগার করতে পারে।
হিট স্ট্রোক থেকে সুস্থ হতে ২৪ ঘন্টা থেকে ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়:
*গরমে কিছুক্ষন পরপর পানি বা তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করা।
*পরিচ্ছন্ন, হালকা , ঢিলেঢালা, সুতী নরম পোশাক পরিধান করা।
* গাঢ় রং এর পোশাক (যেমন কালো) ইত্যাদি না পড়ে হালকা রং এর পোশাক পরিধান করা।
* সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যখন, যেমন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ঘরের বাইরে না যাওয়া বা যেতে হলেও প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করা।
অত্যাধিক গরমের কাজের ফাঁকে বিরতি দিয়ে ছায়ায় অবস্থান করা।
*রোদের তাপ থেকে রক্ষা পেতে সানগ্লাস এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করা।
* প্রতিদিন গোসল করা এবং প্রয়োজনে দিনে দুবার গোসল করতে হবে।
* অতিরিক্ত ঠান্ডা পানীয় যেমন আইসক্রিম, ড্রিংকস গ্রহণ না করা, কারণ এসব গ্রহণের শরীর আরও হিট হয়ে যায়।
* অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার না খাওয়া এবং গুরুপাক খাদ্য যেমন বিরিয়ানি, পোলাও, কোর্মা, মশলাযুক্ত রান্না খাবার বাদ দিতে হবে। অন্যদিকে হালকামশলা দিয়ে রান্না করা ঝোল তরকারি খেতে হবে।
হিট স্ট্রোক এর প্রতিকার :
* কারও হিট স্ট্রোক হয়ে গেলে তাকে দ্রুত ছায়াযুক্ত ঠান্ডা স্হানে নিয়ে আসতে হবে।
*যেকোনো অপ্রয়োজনীয় পোশাক খুলে ফেলতে হবে।
* ব্যাক্তির শরীর ঠান্ডা করতে শীতল স্থান, ফ্যান, ঝর্ণা,বা ঠান্ডা পানি স্প্রে করা হবে অথবা বরফকুচি কাপড়ের ভিতর নিয়ে সেটা দিয়ে সারা শরীর মুছে দিতে হবে।
* শরীরকে রিহাইড্রেট করার জন্য প্রচুর তরল পদার্থ খেতে দিতে হবে।
* প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দ্রুত হসপিটালে ভর্তি করত হবে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের তাপমাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের গৃহের ফাঁকা জায়গা , লন, বারান্দা, ছাদ, ব্যালকনিতে গাছ লাগিয়ে বাড়ির পরিবেশ ঠান্ডা রাখতে পারি, এছাড়া ব্যাপক বনায়নের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি আবহাওয়া ঠান্ডা রাখতে পারি।