13/12/2023
কুয়েট সেন্ট্রাল মসজিদের খতিব মাগরিবের নামাযে সূরা ফাতিহা পড়ার সময় আটকে গেলেন। “مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ” বলার পর আর আগাতে পারছেন না। তার কান্নার দমক থামছে না।
হঠাৎ সুফিয়ান আস সাওরী (রহঃ) এর কথা মনে পড়ল। তাঁর ও একই অবস্থা হয়েছিল। কোন এক মাগরিবের নামাযে তিনি إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ বলার পর আর আগাতে পারছিলেন না। “আমরা কেবল তোমার ইবাদত করি, আর তোমার সাহায্য প্রার্থনা করি”- নামাযে বলা এই লাইনটার সাথে তিনি তাঁর বাস্তব জীবনকে মিলাতে পারছিলেন না। আমি কোন আম-জনতার কথা বলছি না। বলছি সুফিয়ান আস সাওরী (রহঃ) এর কথা ! যিনি যদি কারো সামনে হক্ক কথা বলতে না পারতেন, তবে তার যন্ত্রণায় রক্ত-প্রসাব করতেন।
সূরা ফাতিহা তো আমিও পড়ি। কম করে হলেও দিনে ১৭ বার। ২২ বছর হয়ে গেল। কই কোনদিন তো চোখে পানি আসেনি, কান্নার দমকে থমকে যাইনি। প্রথমে ভাবতাম আরবী না জানার কারণে হয়তো এমনটা হয়েছে। এখন তো ছোট ছোট সূরার আরবী বললে সরাসরি বুঝতে পারি। তাও তো সেই আগের মতই অবস্থা!
কে জানি বলল “পড়ো” বইটাতে খুব সুন্দর করে সূরা ফাতিহার অর্থ বুঝানো হয়েছে। মন দিয়ে পড়লাম। কিন্তু অবস্থার উন্নতি নেই। অথচ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুর’আনে বলে দিয়েছেন,
“যদি আমি এই কোরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি দেখতে যে, পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহ তা’আলার ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে।”[৫৯;২১]
যে কুর’আনের ভয়ে পাহাড় বিদীর্ণ হয়ে যেত, সেই একই কুর’আন আমাদের হৃদয়কে একটুও নাড়া দেয় না। একটিবারের জন্যও থমকে যাই না। অন্তরটা কি পাহাড়ের চেয়েও শক্ত হয়ে গেছে?
কিন্তু কেন?
উত্তরটা দিয়েছেন ইমাম ইবনুল কায়্যিম আল জাওযিয়্যাহ (রহঃ), তাঁর বিখ্যাত পত্র “আল জওয়াব আল-কাফি” তে। আর আমার ধারণা একটু চিন্তা করলে আমরা নিজেরাও এর উত্তর পাব। জানেন এটা কিসের ফলাফল?
এটা আমাদের পাপের ফলাফল।
“ বরং তাদের অন্তরের (পাপ ও কুকর্মের কারণে আস্তরণ) পড়েছে তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ”। [৮৩;১৪]
© শিহাব আহমেদ তুহিন