08/12/2025
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।কোন জটিলতা না থাকলে নরমাল ডেলিভারি করাই সবচে ভালো । কেননা স্বাভাবিক ডেলিভারি অর্থাৎ যোনিপথে শিশুর জন্ম মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপকারী।
স্বাভাবিক ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিলে মায়ের শরীরে বুকের দুধ তৈরি সাধারণত দ্রুত ও সহজে শুরু হয়। অন্যদিকে সিজারিয়ান ডেলিভারির পর অনেক মায়ের ক্ষেত্রে দুধ আসতে দেরি হয় বা পর্যাপ্ত দুধ না হওয়ার অভিযোগ দেখা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে ফর্মুলা দুধের ওপর নির্ভর করতে হয়। তবে যেসব ক্ষেত্রে মা বা শিশুর জীবনের ঝুঁকি থাকে, সেখানে সিজারিয়ান অপারেশন করাই সবচেয়ে নিরাপদ সিদ্ধান্ত—এতে ভয় বা দ্বিধার কোনো কারণ নেই। শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রসবের সময় মা ও শিশুর সুস্থতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
স্বাস্থ্যবিষয়ক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ৩৩ শতাংশ গর্ভবতী নারী সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করেন। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে স্বাভাবিক ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়ানো যায় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ কম রাখা জরুরি। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা অকাল প্রসব এবং কম ওজনের শিশুর ঝুঁকি বাড়ায়। এজন্য নেতিবাচক পরিবেশ এড়িয়ে চলা, মেডিটেশন ও হালকা যোগব্যায়াম উপকারী।
খাদ্যাভ্যাসের দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত ফল, শাকসবজি, শস্য, লিন প্রোটিন ও দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া উচিত। গাঢ় সবুজ শাকসবজি যেমন—পালং, ব্রকলি, কেল, ব্লুবেরি, পেঁপে এবং লেবু জাতীয় ফল বেশি করে খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি আয়রনসমৃদ্ধ খাবার এবং প্রেনাটাল ভিটামিন গ্রহণেরও পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। অতিরিক্ত চিনি, অর্গান মিট, কিছু সামুদ্রিক খাবার ও রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে।
নিয়মিত হালকা ব্যায়ামের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এতে শরীরের সহনশীলতা বাড়ে, পেশি শক্তিশালী হয় এবং শিশুর সঠিক অবস্থান নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। নিয়মিত হাঁটা ও হালকা শরীরচর্চা চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
প্রসব বিষয়ে আগে থেকেই ধারণা রাখা প্রয়োজন বলেও মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বই পড়া, প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং ভয়ানক অভিজ্ঞতার গল্প এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কোনো উদ্বেগ থাকলে তা চিকিৎসকের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে বলা হয়েছে।
পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করার কথাও বলেছেন চিকিৎসকরা। বাম কাতে শোয়া, বালিশ ব্যবহার, কম আলো ব্যবহার এবং ঘুমের আগে মোবাইল ফোন ব্যবহার কমিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি পরিবার ও জীবনসঙ্গীর সহযোগিতা নিশ্চিত করাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রসবের সময় মানসিকভাবে শক্ত থাকার জন্য কাছের মানুষদের উপস্থিতি সহায়ক ভূমিকা রাখে।
চিকিৎসকের সঙ্গে আগেভাগেই খোলামেলা আলোচনা করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নিজের পছন্দ ও জন্মপরিকল্পনার বিষয়গুলো চিকিৎসককে জানালে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয় বলে তারা মত দিয়েছেন।
পর্যাপ্ত পানি পান করাও জরুরি। প্রতিদিন ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় কম পান করার কথাও বলা হয়েছে।
গর্ভাবস্থায় সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে স্বাভাবিক ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়ে। তবে যেকোনো পরিস্থিতিতে শেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হওয়া উচিত মা ও শিশুর নিরাপদ ও সুস্থ জন্ম।
#মাতৃত্ব
#বাংলাদেশ