27/08/2023
৫কোমরের ব্যথা কমবেশি সব মানুষের হয়। এই ব্যথা যুবক থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সেই হতে পারে। গবেষণায় বলা হয়, বিশ্বের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক লোক জীবনে কখনও না কখনও এ ব্যথায় আক্রান্ত হয়। শুরু থেকে কোমরের ব্যথা নির্মূল করতে না পারলে রোগীকে ভবিষ্যতে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।
মূলত কয়েকটি কারণে কোমর ব্যথা হয়। যেমন:
�১। ওজন উচ্চতা অনুযায়ী বেশি হলে।�২। ভারী বস্তু তোলার কাজ করলে।�৩। কোমরে চোট পেলে।�৪। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে কাজ করলে।�৫। পা পিছে কোথাও পড়ে গেলে।�৬। নিয়মিত গাড়ি চালালে।�৭। সাধারণত কুঁজো হয়ে হাঁটলে বা বসলে।�৮। গর্ভধারণ সময়ে।�৯। হঠাৎ কোনো কারণে হাড়, মাংসপেশি, স্নায়ু—এই তিনটি উপাদানের সামঞ্জস্য নষ্ট হলে।
উপসর্গ
* প্রথমে কোমরে অল্প ব্যথা থাকলেও ধীরে ধীরে ব্যথা বাড়তে থাকে
* অনেক সময় হয়তো রোগী হাঁটতেই পারে না
* ব্যথা কখনও কখনও কোমর থেকে পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
* পায়ে ঝিনঝিন ধরে থাকে
* অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে এ ব্যথা কিছুটা কমে আসে
* কোমরে সামান্য নড়াচড়া হলেই এ ব্যথা বেড়ে যায়
* সকালে ঘুম থেকে উঠে পা ফেলতে সমস্যা হতে পারে
* হাঁটতে গেলে পা খিঁচে আসে বা আটকে যেতে পারে
* ব্যথা দুই পায়ে বা যেকোনো এক পায়ে নামতে পারে
* কোমরের মাংসপেশি কামড়ানো ও শক্ত ভাব হয়ে যাওয়া
* পা অবশ ও ভারী হয়ে যায়, পায়ের শক্তি কমে যায়
* প্রাত্যহিক কাজে, যেমন- নামাজ পড়া, তোলা পানিতে গোসল করা, হাঁটাহাঁটি করা ইত্যাদিতে কোমরে ব্যথা হওয়া
কোমর ব্যথায় ঘরোয়া চিকিৎসা
* সেঁক দিন: কোমরের যে জায়গায় ব্যথা সেখানে সেঁক দিলে যন্ত্রণা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যাবে।
* আদা: আদাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। এই পটাশিয়ামের অভাবের ফলে নার্ভের সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিদিন নিয়ম মেনে আদা খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
* হলুদ: দুধের সঙ্গে নিয়ম করে হলুদ খেলে কোমরের ব্যথা অনেকটাই কমতে পারে।
* মেথি বীজ: গুড়াঁ দুধের সঙ্গে মেথি বীজের মিশ্রণ তৈরি করে ব্যথার জায়গায় ম্যাসাজ করলে উপকার পাবেন।
* লেবুর শরবত: লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি যন্ত্রণা উপশমে খুবই কার্যকারী।
* অ্যালোভেরা: প্রতিদিন নিয়ম করে অ্যালোভেরা শরবত খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
* ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম জাতীয় খাদ্য: প্রতিদিন নিয়ম করে দুধ, ঘি, পনির, ফল, শাকসবজি, বাদাম ইত্যাদি খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আর নিয়মিত শরীরচর্চা করতে ভুলবেন না।
কোমর ব্যথা কমানোর জন্যে কিছু এক্সারসাইজ
১) বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে দুই হাত শরীরের দুই পাশে রেখে দুই পা সোজা করে শুতে হবে। হাঁটু ভাঁজ না করে এক পা ওপরের দিকে তুলুন যত দূর সম্ভব। ১০ সেকেন্ড পা তুলে রাখতে হবে। একইভাবে অপর পা ওপরে তুলুন এবং একই সময় নিন।
২) এবার একইভাবে হাঁটু ভাঁজ না করে একসঙ্গে দুই পা তুলুন এবং একই সময় নিন।
৩) এবার এক হাঁটু ভাঁজ করে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে হাঁটুকে বুকে লাগানোর চেষ্টা করুন। ১০ সেকেন্ড থাকুন। একইভাবে অপর হাঁটু বুকে লাগাতে হবে।
এই এক্সারসাইজ করার পরেও ব্যথা না কমলে সম্পূর্ণ চিকিৎসা পেতে আপনাকে সঠিক মোবিলাইজেশন, ম্যানুপুলেশন, স্ট্রেচিংয়ের মতো চিকিৎসা নিতে হবে। সেক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিবেন। অল্প বয়সেই কোমর ব্যথা কিন্তু অবহেলা করা যাবে না! হাড় ক্ষয় রোধে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খেতে হবে।
কোমর ব্যাথায় হোমিও চিকিৎসাঃ
কোমরের ব্যথায় সুনির্বাচিত হোমিও ঔষধ বেশ ফলপ্রসু -- যা বহুল পরিক্ষিত । লক্ষণসমষ্টি নির্ণয় করে রোগের হ্রাস-বৃদ্ধি ও ধাতুগত দিক বিবেচনায় রেখে নিম্নলিখিত ওষুধগুলো ব্যাবহার করা যেতে পারে।
কোমর ব্যাথার কিছু হোমিও ঔষধঃ
* রাস টক্স: রাস টক্স প্রাথমিক কোমর ব্যথার চমৎকার ঔষধ ভারি কাজ বা একটানা বেশীক্ষণ বসে থাকার কারনে কোমর ব্যথা।
রাসটক্সের রোগী বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারে না কিছুক্ষণ পরেই উঠে দাঁড়িয়ে যায় এবং হাঁটাচলা শুরু করে তাতেই কোমর ব্যথার আরাম হয়।
* ব্রায়োনিয়াঃ তরুন ও পুরাতন কোমর ব্যথায় ব্রায়োনিয়া ব্যবহৃত হয়।
কোমরে সূচ ফোঁটানোর মত ব্যথা, রোগী কোনভাবেই নড়াচড়া করতে চায়না চুপচাপ শুয়ে থাকতে চায়, একটু নড়াচড়া বা হাঁটাচলা করলেই তার কোমর ব্যথা বেড়ে যায়।
* রুটাঃ তরুন কোমর ব্যথার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ হলো রুটা, রুটার রোগীরা হাঁটাচলা বা উঠাবসায় হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার মতো এক শব্দ হয় ।
এবং কোমর ব্যথা ডান পার্শ্বে চাপিয়া শুইলে এবং সোজা হয়ে শুইলে আরামবোধ করে।
* আর্নিকাঃ পড়ে গিয়ে আঘাত পেলে বা যেকোন উপায়ে আঘাত পেয়ে কোমরব্যথা হলে আর্নিকা কার্যকরী।
আর্নিকার রোগীরা শক্ত বিছানায় শুতে পারে না, তাই সবসময় নরম বিছানা চায়।
* লিডামঃ বাত ব্যথা কোমর থেকে উপরের দিকে ধাবিত হয়। বসে থাকলে বা বসা থেকে উঠতে গেলে বৃদ্ধি।
ঠান্ডা পানি বা বরফ লাগালে আরাম।
* কেলকেরিয়া ফ্লোরঃ কোমরের হাড় ক্ষয় হেতু কোমর ব্যথা হলে কেলকেরিয়া ফ্লোর কার্যকরী, সাথে কোমরে শক্তবোধ হয়।
* হাইপেরিকামঃ আঘাত লাগার ফলে সৃষ্ট দীর্ঘদিনের পুরাতন কোমর ব্যথা হলে হাইপেরিকাম কার্যকরী।
* কেলি কার্বঃ পুরাতন কোমর ব্যথার চমৎকার ঔষধ কেলি কার্ব, কোমরে অসহ্য শুচ ফোঁটানো ব্যথা এবং ব্যথা রাতের বেলায় বেশি হয় বিশেষ করে রাত্রি ২-৩টার দিকে।
* কষ্টিকামঃ যে সকল মহিলারা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করে তাদের জন্য কষ্টিকাম অমৃতের মত।
তবে হোমিও চিকিৎসা অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিতে হবে। নাহয় হিতে বিপরীত হতে পারে।
চেম্বার, এ আর হোমিও হল
বাংলাদেশ হোমিও মেডিকেল এর পাশে,টিকাটুলি ঢাকা।