09/09/2020
ব্রেস্ট ক্যান্সার
আমাদের দেহে সর্বদায় স্বাভাবিক নিয়মে নতুন নতুন কোষ সৃষ্টি হয়, স্তনও এর বাইরে নয়। যদি কোনো কারণে অপ্রয়োজনীয় নতুন কোষ ব্রেস্টে সৃষ্টি হয় আর স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি ঘটতে থাকে এবং চাকা অথবা পিণ্ড আকার ধারণ করতে থাকে তবে একে স্তন টিউমার বলা হয়। এ টিউমারটি যদি স্বাভাবিক কোষ দ্বারা হয়ে থাকে তবে তাকে অক্ষতিকারক বা বিনাইন টিউমার বলে যা ক্যান্সার নয়। আর যদি অস্বাভাবিক কোষ ধারা তৈরি হয়ে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটতে থাকে তবেই তাকে ক্যান্সার বা ম্যালিগন্যান্ট বলা হয়। এর সূত্রপাত কোষে হয়ে গ্ল্যানডিউলার টিস্যুসহ স্তনের সবকটি লোবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে ডাক্টস এবং লবিউলসে।
স্তন ক্যান্সারের কারণ সমূহ
স্তন ক্যান্সারের এবং যেকোনো ক্যান্সারেরই প্রকৃত কারণ কারো জানা নেই। তবে কিছু কিছু ফ্যাক্টরকে জোরালোভাবে দায়ী করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে যেমন ৪০ ঊর্ধ্ব বয়সে এর ঝুঁকি বা প্রবণতা অধিক হয়ে থাকে। তবে এটি কম বয়সেও হতে পারে।
বংশানুক্রমেঃ
পারিবারিক ইতিহাস পর্যালোচনায়, মায়ের ক্যান্সার আছে বা মৃত্যু হয়েছে, অথবা বংশে কারো আছে, যেমনঃ মা, বোন, খালা, ফুফুদের থাকলে ঝুঁকিটা বেড়ে যায়। রক্তের সম্পর্কিত কোনো পুরুষের ক্যান্সার থাকলেও ওই মহিলার ঝুঁকি থাকে।
ফ্যামিলিয়াল বা জেনিটিকঃ
ব্রেস্ট ক্যান্সার জিন বিআরসিএ-১ বা বিআরসিএ-২ যেকোনোটা বহন করলে ঝুঁকি থাকে।
মা হওয়ার বয়সঃ
৩০ বছরের বেশি বয়সে যদি কেউ মা হয় তবে তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
মদ্যপানঃ
মদ্যপান স্তন ক্যান্সার, মুখ, গলাসহ অন্যান্য অর্গানের ক্যান্সার ঝুঁকি বাড়ায়।
ধূমপানঃ
যে মায়েরা ধূমপানের সাথে জড়িত বা যাদের ঘরে ধূমপায়ী আছে, তাদের থেকেও আক্রান্ত হতে পারেন।
সাদাপাতা, জর্দা বা পানমশলাঃ
এক গবেষণায় দেখা গেছে, সুপারি তা বাড়িয়ে দিতে পারে। আর ধূমপানের চেয়ে সাদা জর্দা বেশি ক্ষতি করতে পারে।
অতিরিক্ত ওজনঃ যাদের শারীরিক ওজন বেশি থাকে, তাদের ঝুঁকি বেশি।
অতিরিক্ত ফেটি খাবারঃ
যাদের অভ্যাস আছে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খাওয়া, উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাদ্য বেশি খাওয়া, যারা শাকজাতীয় খাবার কম খায়, গোশতজাতীয় খাবার বেশি খায়।
অতিরিক্ত রেডিয়েশনঃ
যাদের শরীরে খুব বেশি এক্স-রে করা হয়েছে, যারা খুব বেশি রেডিয়েশন চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের এ ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে অন্যদের তুলনায়।
ওষুধের অপব্যবহারঃ
ওষুধের অপব্যবহারে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধও এমনটি করতে পারে। ফলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন ঠিক নয়।
মেনোপজঃ
দেরিতে মেনোপজ হলেও ঝুঁকি আছে। আবার কেউ মনে করে, মেনোপজ আসা মানে যৌন জীবনের পরিসমাপ্তি। তাই হরমোন জাতীয় ওষুধ খেয়ে মাসিক স্রাব দীর্ঘায়িত করতে চান। যা স্তন ক্যান্সারসহ অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়িকেও এভাবে দায়ী করা হয়ে থাকে।
স্তন সিস্ট বা চাকাঃ
দীর্ঘ দিন স্তনে সিস্ট থাকলে, যদি বড় হয়ে যায় সাথে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি থাকে। স্তনের চাকা বা বিনাইন টিউমার যদি এমনি বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং পাশাপাশি অস্বাভাবিক থাকে।
স্তন ক্যান্সার বুঝার উপায়
যে কোনো স্তনে প্রথমে এক বা একাধিক ছোট আকারে টিউমার বা চাকা বা ছোট গোটা আকারে দেখা দেয়।
* মাসিক ঋতু স্রাবের সময় বেশি অনুভব হতে থাকে।
* স্তনের বোঁটা হতে রস নিঃসৃত হতে পারে, তা পরিষ্কার বা রক্তের মতো হতে পারে।
* প্রথমপর্যায়ে স্থানীয় লসিকা গ্রন্থিতে থাকে তেমন বেদনা থাকে না।
* চাকা বা গুঁটি নড়াচড়া করানো যায়।
* পরবর্তীতে নড়াচড়া না করে স্থির থাকে।
* ব্যথা-বেদনা হতে থাকে। ব্যথার ধরন বিভিন্ন রকম হতে পারে। চিড়িক মারা ব্যথা, ঝিমধরা ব্যথা বা সর্বদায় ব্যথা থাকা।
* অস্বাবধানতায় চাপে, রিকশার ঝাঁকিতে ব্যথা হতে পারে।
* ব্রেস্টের আকার-আকৃতির পরিবর্তন হতে পারে।
* স্তনের ত্বকের কালার পরিবর্তন হতে পারে।
* যেকোনো এক স্তনের ক্যান্সার পরবর্তীতে উভয় স্তনে, বুকের হাড়ে, গলার নিচে, পরবর্তীতে হাড়ে শিরদাঁড়ায় এবং শরীরে অন্যান্য অর্গানে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
স্তন ক্যান্সারের স্টেজঃ
স্টেজ-১ঃ স্তন ক্যান্সারের তীব্রতা অনুযায়ী ১ ইঞ্চির কম স্থানে কোথাও না ছড়িয়ে সীমাবদ্ধ থাকলে।
স্টেজ-২ঃ ১ ইঞ্চির কম বটে কিন্তু লসিকা গ্রস্থিতে ছড়িয়েছে বা দুই ইঞ্চি পরিমাণে কিন্তু কোথাও ছড়ায়নি।
স্টেজ-৩ঃ টিউমারের আকার দুই ইঞ্চির বেশি হলে এবং লসিকা গ্রন্থিতে ছড়িয়ে পড়লে বা যেকোনো আকারের টিউমার গ্রন্থিগুলোর একে অপরের সাথে লেগে গেলে।
স্টেজ-৩/বিঃ যেকোনো আকারের টিউমার, ত্বকে, স্তনের নিচে, বুকে ছড়িয়ে পড়লে বা ইন্টারনাল মেমারি লসিকা গ্রন্থিতে অবস্থান করে।
স্টেজ-৪ঃ এ অবস্থায় ক্যান্সার আর স্তনে সীমাবদ্ধ না থেকে দূরবর্তী স্থানে যেমনÑ দূরবর্তী লসিকা গ্রন্থি, ফুসফুস, বুকে, হাড়ে ছড়িয়ে যায়।
স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ঃ
আপনি নিজেই আপনার স্তন পরীক্ষা করে দেখেন কোনো রকম অসাধারণতা পরিলক্ষিত হয় কি না এবং আজকের লিখিত উপসর্গের কোনোটা উপস্থিত আছে কি না। শুধু টিউমার হলেই ক্যান্সার নয়। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এ ব্যাপারে। আক্রান্ত ব্রেস্টের এক্স-রে করে আলট্রাসনোগ্রাফি করে, মেমোগ্রাফি করে, এফএনএসি করে, বায়োপসি করে জানতে পারেন কোন অবস্থায় বা কোন স্টেজে আছে।
স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়ঃ
০১. যত তাড়াতাড়ি আপনার রোগ ধরা পড়বে তত তাড়াতাড়ি সুচিকিৎসা সম্ভব।
০২. স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে।
০৩. অতি লজ্জা চেপে যাওয়া থেকে বিরত হয়ে গার্ডিয়ান বা চিকিৎসককে বিস্তারিত জানাতে হবে।
০৪. বয়সন্ধিকাল শুরু থেকে নিয়মিত নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করতে হবে।
০৫. প্রতি বছর চিকিৎসক দ্বারা আলট্রাসনোগ্রাফ বা মেমোগ্রাফি করানো উচিত।
০৬. ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের প্রতি বছর একবার মেমোগ্রাফি করানো ভালো।
০৭. যাদের বংশে আছে তাদের অতি সচেতন হতে হবে।
০৮. যাদের নিজ পরিবারে বোন, মা,খালা, ফুফুর থাকলে অতিসত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ, পরীক্ষা সব বিষয়ে যতœবান হতে হবে।
০৯. যেহেতু সুনির্ধারিত কোনো কারণ জানা নেই, সেহেতু সম্ভাব্য ফ্যাক্টরগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
১০. পানের সাথে জর্দা, সাদা পাতা, পানমশলা পরিত্যাগ করা।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় যে কোন রোগই নিমূল করা সম্ভব। কাজেই সমস্যা বেশী মনে হলে গাফলতি না করে নিদ্বিধায় অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা নিন। আশা করা যায়, অতি সহজেই নিশ্চিত আরোগ্য বা সুস্থতা লাভ করা যেতে পারে।
ডা: আহমদ ইমতিয়াজ
ডি এইচ এম এস, বি এইচ এম সি (ঢাকা)
ফার্মাসিস্ট ও হোমিওপ্যাখ
বিসমিল্লাহ্ হোমিও ফার্মেসী
৬৫, আর. কে. মিশন রোড, জজ গলি, গোপীবাগ, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল: ০১৯১৪৪৪০৪৩০ ই-মেইল: drahmadimtiaj@gmail.com