26/04/2025
"জন্মগত বাকা পা" এর চিকিৎসা পদ্ধতি:
লিখেছেন জনাব ডাক্তার আওলাদ হোসেন রিপন, সিনিয়র কনসালটেন্ট, ঢাকা পঙ্গু হাসপাতাল।
ইংরেজিতে Club Foot (বাংলায় একে বলে মুগর পা বা জন্মগত বাঁকা পা বা ট্যলিপেজ ইকুইনোভ্যারাস) হলো একটি জন্মগত অস্থি ও পেশীর বিকৃতি জনিত সমস্যা বা রোগ। যার ফলে নবজাতকের পা বা পায়ের পাতা ভেতরের দিকে বাঁকানো থাকে। এটি শিশুর এক বা উভয় পায়ে হতে পারে।
Club Foot বা Talipes Equinovarus (TEV) হলো একটি জন্মগত বিকৃতি যাতে পায়ের পাতা নিচের দিকে ও ভিতরের দিকে বাঁকা হয়ে থাকে।
➡️ Club Foot এর শ্রেণিবিন্যাস
১. Congenital Club Foot – জন্মের সময় থেকেই থাকে (সবচেয়ে সাধারণ ধরন)।
২. Acquired Club Foot – জন্মের পরে ঘটে, যেমন পোলিও বা ট্রমার কারণে।
৩. Positional Club Foot – ভ্রূণের অস্বাভাবিক অবস্থানজনিত কারণে হয় যা হালকা এবং সাধারণত শুধুমাত্র ম্যানিপুলেশনে সেরে যায়।
৪. Syndromic Club Foot – অন্যান্য জন্মগত রোগ যেমন arthrogryposis বা spina bifida এর সাথে যুক্ত
প্রচলন (Incidence):
প্রতি ১,০০০ নবজাতকের মধ্যে প্রায় ১টি শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়। ছেলে শিশুদের মধ্যে এটি মেয়েদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি দেখা যায়। প্রায় ৫০% ক্ষেত্রে এটি উভয় পায়ে হয় (bilateral)।
➡️ Club Foot এর কারণসমূহ (Etiology):
Club foot এর নির্দিষ্ট কারণ সম্পূর্ণরূপে জানা না গেলেও কিছু কারণ নিচে দেওয়া হলো:
** জেনেটিক ফ্যাক্টর (বংশগতির ভূমিকা)
** ভ্রূণ অবস্থায় অস্বাভাবিক পজিশন
** নিউরোমাসকুলার ডিজঅর্ডার
** অস্থি ও লিগামেন্টের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি
➡️ClubFoot এর অ্যানাটমিক বৈশিষ্ট্য (Anatomical Features):
★★পায়ের পাতা ভেতরের দিকে ঘোরানো (varus deformity)
★★ গোড়ালি নিচের দিকে বাঁকা (equinus deformity)
★★ মধ্যপায়ের কাঠামো বাঁকা (cavus deformity)
★★ পায়ের পাতা ঘুরে যায় (adduction of forefoot)
➡️ লক্ষণ ও উপসর্গ (Clinical Features):
★★পায়ের পাতা "C"-আকৃতির
গোড়ালি উঁচু এবং পায়ের পাতা ভেতরের দিকে
হাঁটার সময় শিশু পায়ের বাইরের দিকে ভর দেয় (untreated case)
★★চলাফেরায় সমস্যা হয়
➡️ নির্ণয় (Diagnosis):
★★শারীরিক পরীক্ষা – জন্মের সময়ই দেখা যায়
★★এক্স-রে (X-ray) – অস্থির কাঠামোগত সমস্যা বুঝতে
Prenatal Ultrasound – গর্ভাবস্থায় নির্ণয় সম্ভব হতে পারে
➡️ চিকিৎসা (Treatment):
লক্ষ্য:
★★সম্পূর্ণ স্বাভাবিক কার্যকরী, বেদনাহীন পা তৈরি করা।
★★অ-সার্জিকাল পদ্ধতি:
★★ Ponseti Method (সর্বাধিক ব্যবহৃত):
সিরিয়াল কাস্টিং প্রতি সপ্তাহে পায়ের অবস্থান ঠিক করে
৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
শেষে একবার ছোট অস্ত্রোপচার (Achilles tenotomy)
এরপর bracing (Foot Abduction Brace), ২-৪ বছর ব্যবহার।
★★ French Functional Method:
দৈনিক ম্যানিপুলেশন, স্ট্রেচিং ও টেপিং
অভিজ্ঞ থেরাপিস্ট প্রয়োজন।
★★সার্জিকাল পদ্ধতি (যদি কনজারভেটিভ ট্রিটমেন্টে কাজ না করে):
Soft tissue release
Osteotomy
Tendon transfer
Triple arthrodesis (বড়দের ক্ষেত্রে)
★★পুনর্বাসন (Rehabilitation):
ব্রেস ব্যবহার বাধ্যতামূলক
নিয়মিত ফলোআপ
ফিজিওথেরাপি ও পায়ের পেশী মজবুত করার ব্যায়াম
➡️ জটিলতা (Complications):
★★deformity recurrence (পুনরায় বাঁকা হয়ে যাওয়া)
★★overcorrection (পায়ের বিপরীত দিকে বাঁকা হওয়া)
★★চলাফেরার অসুবিধা
★★অস্বাভাবিক গেইট
➡️বিশেষ দ্রষ্টব্য:
যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু হবে, তত ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।জন্মের ১-২ সপ্তাহের মধ্যে Ponseti পদ্ধতি শুরু করা শ্রেয়। অনেক ক্ষেত্রে ৯৫% পর্যন্ত শিশুরা সার্জারি ছাড়া ভালো হয়।
➡️ Ponseti Method (পনসেটি পদ্ধতি) হলো Congenital Clubfoot চিকিৎসার সবচেয়ে কার্যকর ও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত অ-সার্জিকাল পদ্ধতি। এটি ড. ইগনাসিও পনসেটি (Dr. Ignacio Ponseti) ১৯৫০ সালে উদ্ভাবন করেন।
এই পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো – শিশুর বাঁকা পা-কে ধাপে ধাপে সঠিক জায়গায় আনা, যতটা সম্ভব কম হস্তক্ষেপে।
◾ Ponseti Method এর ধাপসমূহ:
1. ✅ Serial Manipulation & Casting (সিরিয়াল কাস্টিং)
শিশুর পায়ের অবস্থান প্রতিবার ধীরে ধীরে ঠিক করে Plaster Cast দেওয়া হয়।
প্রতি সপ্তাহে একবার করে কাস্ট পরিবর্তন করা হয়।
প্রতিটি কাস্টের মাধ্যমে deformity ধীরে ধীরে ঠিক করা হয়।
সাধারণত ৫-৮টি কাস্ট লাগতে পারে।
ধাপে ধাপে যেভাবে deformity ঠিক করা হয়:
Cavus Correction – প্রথমে পায়ের পাতার খাঁজ ঠিক করা হয়।
Adduction ও Varus Correction – পায়ের ভেতরের দিকের বাঁকানো ঠিক করা হয়।
Equinus Correction – গোড়ালির নিচের দিকে বাঁকা থাকা ঠিক করা হয়।
ধৈর্য ও সঠিক কৌশল খুব গুরুত্বপূর্ণ।
2. Percutaneous Achilles Tenotomy (PAT)
৮০-৯০% ক্ষেত্রে Achilles tendon খুব টাইট থাকে, ফলে গোড়ালি নিচে থাকে (equinus deformity)।
এটি একটি ছোট অস্ত্রোপচার, যেখানে ছোট ছিদ্র করে টেন্ডন কাটা হয়।
তারপর একটি কাস্ট দেওয়া হয়, যা ৩ সপ্তাহ রাখা হয়।
3. Foot Abduction Brace (FAB) বা Dennis Browne Bar ব্যবহার
কাস্ট শেষ হওয়ার পর deformity যেন আবার না ফিরে আসে, তাই ব্রেস ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
ব্যবহারের নিয়ম:
প্রথম ৩ মাস: দিনে ২৩ ঘণ্টা
পরবর্তী ৩ বছর পর্যন্ত: রাতে ও ঘুমের সময় (১২–১৪ ঘণ্টা)
নিয়ম না মানলে deformity পুনরায় ফিরে আসার ঝুঁকি থাকে (relapse)।
🟥 Ponseti Method এর সুবিধা:
সুবিধা
🔴 অ-সার্জিকাল: জটিল অস্ত্রোপচারের দরকার পড়ে না অধিকাংশ ক্ষেত্রে।
🔴 কার্যকারিতার সম্ভাবতা : ৯৫% ক্ষেত্রে deformity সম্পূর্ণভাবে ঠিক হয়।
🔴 খরচ কম :
অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় সাশ্রয়ী
🔴 শিশুর স্বাভাবিক হাঁটা ও গতি বজায় থাকে
🟪🟪পুরো চিকিতসা পুনরায় পা বাকা হয়ে গেলে কী করা হয়:
▶️পুনরায় কাস্টিং শুরু করা হয়
▶️কখনো কখনো tendon transfer surgery করা হয়
➡️সারসংক্ষেপ:
🔷🔷সিরিয়াল কাস্টিং: প্রতি সপ্তাহে, মোট ৫–৮ সপ্তাহ
🔷🔷অ্যাকিলিস টেনোটমি: শেষ কাস্টের আগে।
🔷🔷ব্রেস পরা: ৩–৪ বছর পর্যন্ত ঘুমের সময়।
নরসিংদীতে এ চিকিৎসার জন্য যোগাযোগ করুন
ডা: মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন রিপন
সিনিয়র কনসালট্যান্ট অর্থোপেডিক
পঙ্গু হাসপাতাল, ঢাকা।
চেম্বার : নরসিংদী জেনারেল ও ডেন্টাল হাসপাতাল
জেলখানা মোড় ভেলানগর নরসিংদী।
ফোন 01846366556