06/02/2019
ফ্যাটি লিভার, লিভারের একটি খুব সাধারণ রোগ। পশ্চিমা বিশ্বে এর প্রাদুর্ভাব খুব বেশি। শতকরা প্রায় ২০ ভাগ আমেরিকান ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। জাপান ও ইতালিতে মোট জনসংখ্যার ৩০% থেকে ৫৮%-এর ফ্যাটি লিভার রয়েছে।আমাদের দেশেও এই চিত্রটি বিশেষ করে শহর এলাকায়, খুব একটা অন্যরকম নয়। এ দেশের ঠিক কত শতাংশ লোক ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত সে সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত আমাদের হাতে না থাকলেও এ কথা সত্য যে, আমরা প্রায়ই ফ্যাটি লিভারের রোগীদের দেখে থাকি।
যেসব কারণে ফ্যাটি লিভার হয়-
পাশ্চাত্যে ফ্যাটি লিভারের মুল কারণ এ্যলকোহল। তবে আমাদের মতো দেশগুলোতে মেদ-ভুরি, ডায়াবেটিস, ডিজলিপিডেমিয়া বা রক্তে অতিরিক্ত চর্বি, হাইপারটেনশন বা অতিরিক্ত রক্তচাপ আর হাইপোথাইরয়েডিজমই ফ্যাটি লিভারের মুল কারণ।
বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের এরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি খুবই বেশী। আমেরিকায় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ৩৩% ডায়াবেটিস রোগীর ফ্যাটি লিভার রয়েছে।
অন্যদিকে ৪৯% ভারতীয় যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তারা পাশাপাশি ফ্যাটি লিভারেও আক্রান্ত। হেপাটাইটিস ভাইরাসগুলোর মধ্যে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস আনেক সময়ই ফ্যাটি লিভার করে থাকে।
কর্টিকোস্টেরয়েড, টেমোক্সিফেন ইত্যাদি ঔষধ দীর্ঘদিন সেবনেও ফ্যাটি লিভার হতে পারে। ফ্যাটি লিভারের আরেকটি বড় কারণ খাদ্যাভাস ও লাইফ স্টাইল। সিডেন্টারি বা আয়েশি জীবন-যাপন আর অতিরিক্ত ফ্যাট বা কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খেলে লিভারে চর্বি জমতেই পারে। আমাদের দেশে ইদানিংকার খুবই জনপ্রিয় ’ফাস্ট-ফুড’ কালচার এদেশে ফ্যাটি লিভারের বাড়তি প্রাদুর্ভাবের সম্ভবত একটি বড় কারণ।
রোগের লক্ষণ ও রোগ নির্র্ণয় অন্যান্য বেশিরভাগ ক্রনিক লিভার ডিজিজ রোগীদের মত ফ্যাটি লিভারের রোগীদেরও প্রায়ই কোন লক্ষন থাকে না। এদের কেউ কেউ পেটের ডান পাশে উপরের দিকে ব্যাথা, ভার-ভার ভাব বা অস্বস্তি, দুর্বলতা কিংবা খুব অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পরার কথা বলে থাকেন।
শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এসব রোগীদের প্রায় ৫০%-এর লিভার বড় পাওয়া যায়। রক্ত পরীক্ষায় সিরাম ট্রান্স-এমাইনেজ বেশি থাকতে পারে। তবে এটি স্বাভাবিক থাকলেই যে লিভারে হেপাটাইটিস নেই একথা বলা যায় না।
ফ্যাটি লিভার নির্ণয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পরীক্ষাটি হচ্ছে আল্ট্রাসনোগ্রাম, যদিও সিটি স্ক্যান বা এমআরআই এক্ষেত্রে বেশি নির্ভরযোগ্য। পাশাপাশি ফ্যাটি লিভারের অধিকাংশ রোগীরই রক্তে সুগার, কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকে।
ফ্যাটি লিভারের রোগীদের রোগ নির্ণয়ের জন্য ইদানিংকালে খুবই উপকারি পরীক্ষা হচ্ছে ফাইব্রোস্ক্যান। পরীক্ষাটি অনেকটা আল্ট্রাসনোগ্রামের মত হলেও এটি আসলে আল্ট্রাসনোগ্রাম নয়। এই মেশিনের সাহায্যে খুব সহজেই লিভারে ফাইব্রোসিস বা স্থায়ী ক্ষতির মাত্রা জানা যায়। অর্থাৎ জানা যায় লিভারে সিরোসিস হবার ঝুকি কতখানি। আর এটিই একমাত্র পরীক্ষা যা দিয়ে লিভারে চর্বির পরিমাণও পরিমাপ করা যায়।
তবে নিশ্চিত করে ফ্যাটি লিভার নির্ণয়ের পরীক্ষাটি হচ্ছে লিভার বায়োপসি। এতে একদিকে যেমন নির্ভুলভাবে ফ্যাটি লিভার ডায়াগনোসিস করা যায়, তেমনি পাশাপাশি লিভারে স্টিয়াটো হেপাটাইটিস এবং সিরোসিসের উপস্থিতি সম্বন্ধেও একমাত্র এই পরীক্ষাটির মাধ্যমেই শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়।
ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা
বাজারে এমন বেশ কিছু ঔষধ আছে যা ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসায় উপকারী বলে প্রমাণিত। আর এর বেশিরভাগই বাংলাদেশেও পাওয়া যায়।এসব ঔষধের মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, ইনসুলিন সেন্সেটাইজারস, আরসোডিঅক্সিকলিক এসিড, প্রোবায়োটিক্স, ভিটামিন-ই, এন্টি-অক্সিডেন্ট ইত্যাদি।
শেষ কথা
একটা সময় ছিল যখন ধারণা করা হত হার্ট বা ব্রেনে চর্বি জমে হার্ট-এ্যাটাক বা স্ট্রোকের মত মারাত্বক রোগের সৃষ্টি করলেও লিভারের ক্ষেত্রে বিষয়টি তেমন নয়।কিন্তু বিগত দশকে সেই ধারনার আমুল পরিবর্তন এসেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এটি আজ প্রমাণিত যে ফ্যাটি লিভার, লিভারের অন্যতম প্রধান রোগ।