16/04/2024
বলা হয় বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষের রক্তের গ্রুপ বি-পজিটিভ৷ কিন্তু বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের রক্তের গ্রুপ জি-পজিটিভ৷ হ্যা, জি-পজিটিভ! আজ হোম পেজে রক্ত লাগবে জানান, উত্তরে ‘জি, আসছি' পাবেনই পাবেন৷
এটা একদিনে সম্ভব হয়ে ওঠেনি৷ মনে আছে ৯০ দশকের দিকে রক্তের চাহিদা মেটানোর জন্য ছিল সন্ধানী, কোয়ান্টাম, বাঁধন, রেড ক্রিসেন্ট ইত্যাদি৷ তারা এখনো আছে৷
২০১৩ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক জরিপে দেখা যায়, আমাদের বছরে রক্ত লাগে প্রায় ৪ লাখ ব্যাগ৷ ২০১৯ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ব্যাগে৷ এই এক দশকেরও কম সময়ে দেখা যাচ্ছে রক্তের চাহিদা বেড়েছে ৩ গুনের বেশি৷
এই অতিরিক্ত চাহিদা খুব সুন্দরভাবেই অনলাইনে ম্যানেজ করা যাচ্ছে৷ রীতিমতো কেসস্টাডি হওয়ার মতো ব্যাপার৷ একটা সময় ছিল রক্ত দান করার ব্যাপারে এই দেশের তরুণদের মাঝে কিছুটা অনীহা ছিল৷ আসলে এই অনীহাটা ছিল ‘জানার গ্যাপের' কারণে৷
সোশাল মিডিয়াতে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা সচেতনতা (যেমন, আমি আজ না এগোলে আমার জন্য সামনে কে এগোবে?) বা নলেজ (যেমন নিয়মিত রক্ত দান করলে শরীর সুস্থ থাকে) বা একনলেজমেন্ট (আমি আজ একজনের প্রাণ বাঁচিয়েছি)... এরকম কাহিনিগুলো ধীরে ধীরে তরুণদের মাথায় গেঁথে যেতে থাকে৷
শুধু তরুণদের মাঝেই নয়, পরিবারগুলোর মাঝেও৷ যে পরিবারের শান্ত ছেলেটা কোনো দিন রাত ১০ টার পর বাড়ির বাইরে থাকেনি, সেই ছেলেটাকেও তাঁর বাবা-মা হাসি মুখে হয়ত রাত ২ টার দিকে বের হতে দিচ্ছেন কারো রক্তের প্রয়োজন মেটাতে৷ গত এক দশকে কোনো সোশাল কজ নিয়ে এরকম প্যারাডাইম শিফট ভাবাই যায় না৷ আসলেই কেসস্টাডি হওয়ার মতো ব্যাপার৷ আশেপাশে হাজার হাজার সাকসেস স্টোরি ছড়িয়ে আছে৷
আমি আমার ক্ষেত্রেই বলি৷ আমার স্ত্রী তখন সন্তানসম্ভবা৷ হুট করে ডেলিভারির ১ দিন আগের রাতে পেইন উঠলো তার৷ হাসপাতালে নেয়ার পর তারা বলল জরুরি রক্ত লাগবে৷
হ্যাঁ, সেই রাতে সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে রক্ত পেয়েছিলাম৷ কিন্তু বেশি যা পেয়েছিলাম, তা হলো, একটা ‘ধারণা'৷ যে পিচ্চি ছেলেটা চোখ কচলাতে কচলাতে সেই রাতে রক্ত দিতে এসেছিল, সে চলে যাওয়ার আগে আমাকে বলল, ‘‘আপনি তো ভাইয়া জানতেন কবে ডেলিভারি৷''
‘‘হ্যাঁ''
‘‘আপনি তো ভাইয়া এটাও জানতেন ভাবির রক্তের গ্রুপ কী৷''
‘‘হ্যাঁ৷''
‘‘তো গত ৯ মাস থেকে কেন সেই রক্তের গ্রুপের ২/১ জনকে আগে থেকে ম্যানেজ করে রাখেননি?''
পিচ্চি ছেলেটা আমার ধারণাই বদলে দিল৷ ঠিকই তো৷ প্রত্যেক স্বামী কিন্তু চাইলেই এটা পারে৷ আমার স্ত্রীর ডেলিভারি আগামী জুন মাসে৷ আমি কেন এখন থেকেই নিজের পরিবারের মাঝে একই রক্তের গ্রুপের কয়েকজনকে প্রস্তুত করে রাখছি না৷
আরিফ আর হোসাইন, অনলাইন অ্যাকটিভিস্টছবি: privat
আমার দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের সময় আমি সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিলাম৷ আমার মতো এরকম হাজারো বাবারা এখন প্রস্তুত৷ এই প্যারাডাইম শিফট একদিনে হয়নি৷
কী না করা হয়েছে সোশাল মিডিয়াতে রক্ত দানকে উৎসাহিত করার জন৷ আমার মনে আছে, এক রোজায় কথা উঠল, রোজা রেখে রক্ত দান করা যায় না৷ সাথে সাথে রোজার মাসে, স্বেচ্ছায় রক্তদানের গ্রাফ গেল নেমে৷ আমরা কয়েকজন গেলাম বায়তুল মোকাররমের খতিবের কাছে৷ উনি বললেন, ‘‘কে বলেছে রোজা রেখে রক্ত দান করা যায় না? মানুষের প্রাণ বাঁচানোর চেয়ে মহৎ কিছু হতে পারে?'' আমরা তাঁর বক্তব্য রেফারেন্সসহ রেকর্ড করে নিয়ে এসে অনলাইনে ছেড়ে দিলাম৷ আবার উঠতে থাকলো স্বেচ্ছায় রক্তদানের গ্রাফ৷
আরো কত রকমের যে সমস্যা৷ মাঝে একবার অভিযোগ এলো, কিছু মানুষ প্রতারিত হচ্ছে৷ এখানে আবার কিভাবে প্রতারণা হবে? ওই যে বললাম, আমাদের ব্রেইন আছে৷ কিছু মানুষ সেটা লাগায় ভালো কাজে, আর কিছু মানুষ তা লাগায় খারাপ কাজে৷
মনে করুন, আপনি রক্ত চেয়ে পোষ্ট দিলেন৷ আপনার কাছে ফোন এলো, ‘‘আমি রক্ত দোবো, কিন্তু আপনার হাসপাতাল তো উত্তরায়৷ আমি থাকি ধানমন্ডিতে৷ কিভাবে যে আসি!'' যাঁর জরুরি রক্ত লাগবে তাঁর এত আশপাশ ভাবার সময় নেই৷ সে উত্তর দিলো, ‘‘ভাইয়া, আমি এখনই আপনাকে ২০০ টাকা ট্যাক্সি ভাড়া দিয়ে দিচ্ছি, তা-ও প্লিজ আসেন৷'' ‘‘দিতে পারবেন? অনেক মেহেরবানি৷ আমি রেডি হচ্ছি৷ আপনি আসা-যাওয়ার ভাড়াটা এই নম্বরে বিকাশ করুন৷ আমি রওনা দিচ্ছি৷''
এই ‘মেহেরবানি ভাই' টাকা পাওয়ার পর থেকে লাপাত্তা৷
মানুষ দেখা গেল এরকম প্রতারণা করে দিব্বি দিন পার করছে৷ প্রতিদিন যেখানে রক্তের চাহিদা প্রায় হাজার খানেক, সেখানে দিনে ৩ জনকে এভাবে ফোন দিয়ে ভাড়া নিলেই তো মাসে তার চলে আসে ১৫/২০ হাজার টাকা৷ এটা বন্ধ করা হলো টেকনিক্যালি (বিকাশের হেল্প নিয়ে ওদের আইনের আওতায় এনে) এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করে (যেমন, রক্ত দান হতে হবে স্বেচ্ছায়, কারো জীবন বাঁচাতে আমরা হেল্প নিই না, স্বেচ্ছায় আসি)৷
এরকম হাজারো গল্প আছে৷ কিছু গল্প আমাদের হাসায়, কিছু ভাবায় আর কিছু গল্প কাঁদায়৷ যেমন, নিজের সদ্য ভূমিষ্ঠ ছেলের জন্য জরুরি রক্ত লাগবে রাত ৪ টায়৷ স্ট্যাটাস দেয়া হলো৷ পৌনে ৪টার দিকে রিকশা করে আসিফ নামের এক ছেলে এসে হাজির হাসপাতালে৷ রক্ত দিয়ে চলে যাওয়ার পর সেই সদ্য ভূমিষ্ঠ ছেলের বাবা-মা খুশি হয়ে তাঁদের পুত্রের নাম রাখলেন আসিফ৷ ফেসবুকের একটা স্ট্যাটাস দাঁড় করিয়ে দিলো একটা সম্পর্ককে৷
এরকম হাজারো সম্পর্ক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে৷ প্রতিদিন বাড়ছে এই সম্পর্কগুলো৷ যেমন, শুধু জরুরি রক্তের প্রয়োজন ছাড়াও এই দেশে থেলাসেমিয়া রোগীরা বেঁচেই আছে অন্যের রক্তের উপর নির্ভর করে৷ বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় সাত ভাগ থেলাসেমিয়া ক্যারিয়ার এবং এদেশে প্রতিদিন প্রায় সাত হাজার শিশু জন্মগ্রহন করছে এই রোগ নিয়েই৷ ভাবা যায়! যাঁদের কিনা প্রতি মাসে ১/২ ব্যাগ রক্ত লাগছেই লাগছে তাঁরা কিন্তু ঠিকই টিকে আছে৷ এই বিপুল পরিমাণ রক্ত আমাদের অনেকেরই অজান্তে ম্যানেজ হয়ে আসছে৷
আমাদের অনেকের অজান্তে কাজটা হলেও এর পিছনে অক্লান্ত শ্রম দিচ্ছে কিছু ‘দেশ-পাগল' যুবক৷ অনলাইনে নিমিষেই রক্ত ম্যানেজ করে দিচ্ছে এরকম শত শত গ্রুপ, পেজ আর সংগঠন৷ আমার পরিচিত সংগঠনই আছে প্রায় ২০০-র অধিক৷ রক্তদানের অপেক্ষায় বাংলাদেশ, ব্লাড ব্যাংকিং খুলনা, কল ফর ব্লাড, জীবনের জন্য রক্ত, চট্টগ্রাম অঞ্চলে রয়েছে সিটিজি ব্লাড ব্যাংক, সিলেটে স্বপ্ন ব্লাড ফাইটার্স ক্লাব, মুন্সিগঞ্জ ব্লাড ডোনার ক্লাব—নাম লিখে শেষ করা যাবে না৷
আমি লিখাটা যখন লিখছি, তখন প্রচণ্ড গর্ব নিয়ে লিখছি৷
এভাবে চলতে থাকলে আমি নিশ্চিত, সামনের দিনে রক্তের চাহিদা থেকে রক্তের ডোনারের সংখ্যা বেশি হয়ে যাবে৷ এবং সেই দিন আর বেশি দূরে নেই৷ আমি তো গতকালও হোম পেজে একটা স্ট্যাটাস দেখলাম, ‘‘আজ আমার জন্মদিন৷ কিছু একটা করে স্মরণীয় করে রাখতে চাই দিনটিকে৷ আমার রক্তের গ্রুপ ও-পজিটিভ৷ আজ ঢাকার যে কোনো প্রান্তে কারো রক্ত লাগলে আমাকে ট্যাগ দেবেন, প্লিজ৷''
রক্তদানের আদ্যোপান্ত
রক্তদান কি কেবল অন্যের জীবন বাঁচায়? না, তা নয়৷ রক্তদাতাও এর মাধ্যমে উপকৃত হন বহুভাবে৷ তবুও চাহিদা অনুযায়ী মিলে না রক্ত৷
যাঁরা রক্ত দিতে পারেন
১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি কোনো মানুষের ওজন অন্তত ৪৫ কেজি হলেই তিনি রক্ত রক্ত দিতে পারেন৷ রক্ত দিতে পারেন তিন মাস পরপর৷ তবে রক্তদানের জন্য ব্যক্তিকে সুস্থ থাকতে হবে৷ দাতার রক্তের স্ক্রিনিং টেস্ট বা রক্ত নিরাপদ কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতে হবে৷ ভরপেট খাওয়ার চার ঘণ্টা পর রক্ত দেওয়া শ্রেয়৷ যাঁদের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তাঁরাও চিকিৎসকের পরামর্শে রক্তদান করতে পারেন৷
যাঁদের রক্ত দিতে মানা
ক্যানসার, হিমোফিলিয়া, ম্যালেরিয়াসহ জীবাণুঘটিত কোনো রোগ, এইচআইভি বা এইডসে আক্রান্ত, মাদক সেবনকারী, হেপাটাইটিস-বি ও সি আক্রান্ত ব্যক্তি ও গর্ভবতী নারীরা রক্ত দিতে পারবেন না৷ যাঁদের অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট আছে এবং যাঁদের শরীরের কোনো স্থানের গ্ল্যান্ড (লিম্ফনোড) ফুলে গেছে, তাঁদেরও রক্ত দেওয়া নিষেধ৷
রক্ত যাঁদের প্রয়োজন
দুর্ঘটনায় আহত, ক্যানসার বা অন্য কোনো জটিল রোগে আক্রান্তদের জন্য, অস্ত্রোপচার কিংবা সন্তান প্রসব অথবা থ্যালাসেমিয়ার মতো বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় রক্তেরপ্রয়োজন হয়৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে আট থেকে নয় লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা রয়েছে৷ এর মধ্যে ছয় থেকে সাড়ে ছয় লাখ ব্যাগ সংগ্রহ হওয়ায় ঘাটতি থাকে তিন লাখ ব্যাগের বেশি৷ এর মধ্যে মাত্র ৩০ শতাংশ আসে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের কাছ থেকে৷
কে কাকে রক্ত দিতে পারেন?
সাধারণত নির্দিষ্ট রক্তের গ্রুপের ব্যক্তি নির্দিষ্ট গ্রুপকে রক্ত দিয়ে থাকে৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক গ্রুপ থেকে অন্য গ্রুপেও রক্ত সঞ্চালন করা যায়৷ এক্ষেত্রে ‘ও-নেগেটিভ’ হলো সর্বজন দাতা এবং ‘এবি-পজেটিভ’ হলো সর্বজন গ্রহীতা৷
কোন রক্ত লাগে বেশি
যদিও ৮টি গ্রুপের রক্তেরই প্রয়োজন পড়ে, তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি লাগে ‘ও পজিটিভ’ রক্ত৷ বিশ্বের ৩৫ শতাংশ মানুষের এই রক্ত রয়েছে৷ এর পরের অবস্থান ‘এ পজিটিভ’-এর – শতকরা ৩০ভাগ৷ সবচেয়ে বিরল রক্তের গ্রুপ ‘ও নেগেটিভ’৷
রক্তদানের পর...
রক্ত দেওয়ার পর একটু মাথা ঘোরানোটা স্বাভাবিক৷ কারণ, এ সময় শরীর থেকে রক্তের পাশাপাশি ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম আয়রনও কমে যায়৷ এ কারণে আয়রন ও প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা৷ এ সময় হাঁটাহাঁটি না করে অন্তত এক থেকে দুই ঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়া দরকার৷ আর রক্তদাতা যদি ঘামতে থাকেন এবং অস্থিরতা হয়, তবে তাঁকে স্যালাইন খাওয়ানোর পরামর্শও দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা৷
রক্তদানের উপকারিতা
রক্তদানে যে কেবল মানুষের জীবন বাঁচে, তা নয়, এর মাধ্যমে রক্তদাতাও উপকৃত হন নানাভাবে৷ এর মধ্যে কয়েকটি হলো– নিয়মিত রক্তদান করলে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে, বছরে তিনবার রক্ত দিলে শরীরে নতুন লোহিত কণিকা তৈরির হার বেড়ে যায়, অস্থি-মজ্জা সক্রিয় থাকে ও দ্রুত রক্ত স্বল্পতা পূরণ হয়৷
হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে
রক্ত দিলে রক্তে কোলেস্টরেলের মাত্রা কমে যায়, এতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি মাসে পিরিয়ড হওয়ার কারণে নারীর হৃদরোগ তুলনামূলকভাবে কম হয়৷ এ কারণে পুরুষদের প্রতি ৩ থেকে ৪ মাস পর পর রক্তদানের পরামর্শ দেন তাঁরা৷
রক্তদান করলে ফ্রি পরীক্ষা
বাংলাদেশে স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে পাঁচটি পরীক্ষা সম্পূর্ণ বিনা খরচে সম্পন্ন হয়ে যায়৷ এর মাধ্যমে জানা যায়, শরীরে অন্য বড় কোনো রোগ যেমন—হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, এইচআইভি (এইডস) প্রভৃতি আছে কিনা৷