
20/02/2023
আজকে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন একটি টপিক নিয়ে আলোচনা করবো ।
ব্রেইন স্ট্রোক
ব্রেইন স্ট্রোক হলো একটি স্নায়বিক অবস্থা যেখানে রোগী একটি কেন্দ্রীয় ঘাটতি যেমন শরীরের অর্ধাংশের দুর্বলতার, জড়ানো কথা অথবা হঠাৎ চেতনা হারানোর মতো ঘটনা ঘটে।
স্ট্রোক তিন ধরনের হয়ে থাকে।
১. মাইল্ড স্ট্রোক
২. ইসকেমিক স্ট্রোক
৩. হেমোরেজিক স্ট্রোক।
মাইল্ড স্ট্রোকে রোগীর মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ সাময়িক বন্ধ হয়ে আবারও চালু হয়। এটি মূলত বড় ধরণের স্ট্রোকের পূর্ব লক্ষণ।
ইসকেমিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কের ও শরীরের অন্যান্য স্থানের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধে।
হেমোরেজিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কের মধ্যে অথবা আশেপাশে রক্তপাত। মস্তিষ্কের কোষগুলি মারা যায়, যখন তারা আর অক্সিজেন পায় না এবং রক্ত থেকে পুষ্টি হয় না অথবা সেখানে মস্তিষ্কের মধ্যে অথবা আশেপাশে হঠাৎ রক্তপাত শুরু হয়।
ব্রেইন স্ট্রোকের উপসর্গগুলি কী কী?
১. হাত, পা অথবা মুখের – বিশেষ করে শরীরের একটি দিকের হঠাৎ দুর্বলতা অথবা অসাড় হওয়া।
২. হঠাৎ বিভ্রান্তি, বুঝতে অথবা কথা বলতে অসুবিধা।
৩. হঠাৎ উভয় অথবা একটি চোখে দেখতে অসুবিধা।
৪. হঠাৎ মাথা ঘোরা, হাঁটতে অসুবিধা, ভারসাম্য অথবা সমন্বয় রাখতে অসুবিধা।
৫. হঠাৎ অজানা কারণে গুরুতর মাথা যন্ত্রণা।
[স্ট্রোক মস্তিস্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তাই, ব্যক্তি হয়তো তার নিজের সমস্যাটি চিনতে পারেন না। সাধারণ মানুষ অথবা পথচারীর কাছে, স্ট্রোকের রোগীকে হয়তো অজ্ঞাত অথবা বিভ্রান্ত মনে হতে পারে, যেহেতু স্ট্রোক, বিপথগামীতা, অনুধাবন ক্ষমতা এবং চেতনা হারানো রুপে আসতে পারে]
স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণগুলি কী কী?
১. রক্তে কোলেস্টোরেলের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হলে।
২. উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলে। হৃদরোগ থাকলে।
৩. মানসিক চাপ, অতিরিক্ত টেনশন, প্রিয়জনের থেকে পাওয়া কস্ট, অবসাদের মতো মানসিক সমস্যা থাকলে ।
৪. সারাদিন শুয়ে বসে থাকলে, কায়িক পরিশ্রম না করলে, ওজন অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে। আবার অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে, পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিলে ।
৫. অস্বাস্থ্যকর অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস। বিশেষত অতিরিক্ত তেল ও চিনিযুক্ত, ভাজাপোড়া খাবার ও পানীয় খেলে।
৬. ধূমপান, তামাক-জর্দা বা অন্যান্য মাদক সেবন, মদপান। ইত্যাদি কারন হতে পারে ।
[ বিশ্বব্যাপী, 4 জন ব্যক্তির মধ্যে 1 জন ব্যক্তির সারাজীবনে ব্রেইন স্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে ]
কিভাবে স্ট্রোক প্রতিরোধ করবো?
১. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ : অর্ধেকেরও বেশি স্ট্রোক উচ্চ রক্তচাপের সাথে জড়িত। রক্তচাপ জানা এবং জীবনযাত্রা পরিবর্তনের সাথে অথবা ঔষধের সাথে সেটি নিয়ন্ত্রণ করা, আপনার স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে।
২. প্রতি সপ্তাহে 5 বার ব্যায়াম : সমস্ত স্ট্রোক এক তৃতীয়াংশের বেশি সেই ব্যক্তিদের ঘটে যারা যথেষ্ট ব্যায়াম করেন না – প্রতি সপ্তাহে 20-30 মিনিট ব্যায়াম আপনার স্ট্রোকের হার হ্রাস করে।
৩. কোলেস্টেরল হ্রাস করা : 4 টি স্ট্রোকের 1 টি “খারাপ” এল ডি এল কোলেস্টেরলের উচ্চ স্তরের সাথে জড়িত। সম্পৃক্ত চর্বি কম খাওয়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা এবং ব্যায়াম আপনার ঝুঁকি কমাতে পারে। যদি আপনি সুস্থ কোলেস্টেরল স্তর, জীবনযাত্রা পরিবর্তন বজায় রাখতে পারেন, আপনার ডাক্তার হয়তো আপনাকে সাহায্যের জন্য ঔষধ দিতে পারেন।
৪. সুস্থ ওজন বজায় রাখা : 5 টি স্ট্রোকের মধ্যে প্রায় 1 টি স্ট্রোক স্থূলতা অথবা অতিরিক্ত ওজনের সাথে জড়িত। সুস্থ দেহ ভর একক (বিএমআই) বজায় রাখা অথবা নিতম্ব – কোমর অনুপাত বজায় রাখা আপনার স্ট্রোকের ঝুঁকির হার হ্রাস করতে পারে।
৫. ধূমপান বন্ধ রাখা অথবা ধোঁয়াটে পরিবেশ এড়িয়ে চলা: প্রায় 10 টি স্ট্রোকের 1 টি স্ট্রোক ধূমপানের সাথে জড়িত। ধূমপান বন্ধ করলে আপনার স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পাবে এবং আপনার পাশাপাশি বাস করা মানুষজনের ঝুঁকি হ্রাস পাবে। ধূমপান ছাড়ার জন্য সাহায্য নিন। এটি আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।
৬. আপনার মদ্যপনের সময় কমান : 1 লাখের ও বেশি স্ট্রোক অতিরিক্ত মদ্যপানের সাথে জড়িত। যদি আপনি মদ্যপান করেন, এক দিনে 1-2 এককের মধ্যে রাখুন।
৭. অলিন্দের ফাইব্রিলেশন চিহ্নিত এবং চিকিৎসা করুন:
অলিন্দের ফাইব্রিলেশন থাকা ব্যক্তিদের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা সাধারণ জনগণের তুলনায় 5 গুন বেশি। যদি আপনার বয়স 50 এর বেশি হয়, আপনার ডাক্তারকে এ এফ স্ক্রিনিং এর ব্যাপারে কথা বলুন এবং সচেতন থাকুন যে চিকিৎসা আপনার ঝুঁকি কমাবে।
৮. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন : যদি আপনি মধুমেহ রোগী হন, আপনার স্ট্রোক হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। মধুমেহ এবং স্ট্রোক ছাড়াও খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়ামের ঝুঁকি রয়েছে। যদি আপনার মধুমেহ রোগ থাকে, আপনার ডাক্তারের সাথে স্ট্রোকের সম্ভাবনা হ্রাস করার ব্যাপারে কথা বলুন।
৯. মানসিক চাপ এবং বিষণ্ণতা নিয়ন্ত্রণে রাখুন : আমাদের ব্রেন স্ট্রোকের মধ্যে অন্যতম একটি কারন হলো মানসিক চাপ । পৃথিবীর স্ট্রোক রোগীদের ৬০ ভাগ এই মানসিক চাপের কারনে আক্রান্ত ।
তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা, বিষণ্ণতা, ক্রোধ এবং চিন্তা এই সবগুলি স্ট্রোক এর ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
স্ট্রোক হয়ে গেলে কিভাবে নিয়ন্ত্রনে রাখবেন ? প্রতিকারঃ
১. উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে ।
২. অতিরিক্ত তেলচর্বি ও চিনি-লবনযুক্ত খাবার, ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড এড়িয়ে পুষ্টিকর ডায়েট মেনে চলতে হবে।
৩. ধূমপান, জর্দা-তামাক, মাদক সেবন, মদপান এড়িয়ে চলতে হবে।
৪. প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমাতে হবে।
৫. শরীরচর্চা বা নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। ওজন ঠিক রাখতে হবে।
৬. প্রতি ছয়মাস অন্তর অবশ্যই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে, এবং চিকিতসকের পরামর্শ নিতে হবে ।
পরবর্তীতে কোন টপিকে আমার কাছে সল্প ধারনা নিতে চান অবশ্যই জানাবেন।
My Quote: ঔষধ/মেডিসিন এক ধরনের মাদক/পয়জন । প্রয়োজন ছাড়া ঔষধ সেবন থেকে বিরত থাকুন । নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমেই পৃথিবীর ৯৫ ভাগ রোগ সারিয়ে তোলা সম্ভব । ধন্যবাদ ।
নাজনিন ফেরদৌস
এমবিবিএস, ৪র্থ বর্ষ
কিলে ইউনিভার্সিটি, ইংল্যান্ড