26/08/2025
সার্জারির আগে যা জানা জরুরি এবং কেন ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি ভালো
ভাবুন, আপনার পরিচিত কারও হঠাৎ খুব তীব্র পেটব্যথা শুরু হলো। ব্যথা এতটাই বেশি যে তিনি নড়াচড়া করতেও পারছেন না। হাসপাতালের ডাক্তার বললেন – গলব্লাডারে পাথর হয়েছে, এখনই সার্জারি করতে হবে।
এই কথাটা শোনার পরেই রোগীর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তাঁর মাথায় একসাথে অনেক প্রশ্ন ঘুরতে লাগল—
🔹কেটে-ছেঁড়ে বড় অপারেশন হবে না তো?
🔹অনেকদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে?
🔹বাচ্চাদের কে দেখবে?
🔹আমার তো চাকরি, কাজে ফিরতে পারব কবে?
আসলে এই ভয়গুলোই আমাদের অনেককে সার্জারির নাম শুনলেই আতঙ্কিত করে তোলে। কিন্তু সত্য হলো, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে এমন প্রযুক্তি এসেছে, যা এই ভয় অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। আর সেই প্রযুক্তির নাম হলো ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি।
🏥 সার্জারির আগে রোগীদের জানা উচিত কিছু সাধারণ বিষয়
১. শরীরের প্রস্তুতি:
সার্জারি করার আগে শরীরকে তৈরি করতে হয়। যেমন—
🔹রক্ত পরীক্ষা, ইসিজি, এক্স-রে করা জরুরি।
🔹ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সেটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
🔹ধূমপান ও মদ্যপান কমপক্ষে কয়েকদিন আগে থেকে বন্ধ করতে হবে।
কারণ, সুস্থ শরীর মানেই নিরাপদ সার্জারি।
২. মনের প্রস্তুতি:
অধিকাংশ মানুষ সার্জারির নাম শুনেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। কিন্তু মানসিক শক্তি থাকলে সুস্থ হতে অনেকটা সুবিধা হয়। মনে রাখতে হবে—
🔹সার্জারি এখন আর পুরনো দিনের মতো ভয়ঙ্কর নয়।
🔹আধুনিক চিকিৎসা অনেক নিরাপদ।
🔹ডাক্তাররা সবসময় আপনার ঝুঁকি কমানোর দিকটাই আগে ভাবেন।
৩. পরিবারের সাপোর্ট:
একজন রোগীর পাশে যদি পরিবার থাকে, তাহলে ভয়ের অর্ধেকটা কমে যায়। সার্জারির সময় শুধু শরীর নয়, মনকেও সাহসী করে তুলতে হয়।
৪. ডাক্তারকে প্রশ্ন করা:
অনেক সময় রোগীরা চুপচাপ সব শুনে নেন, কিন্তু প্রশ্ন করেন না। অথচ প্রশ্ন করা খুবই জরুরি। যেমন—
👉 আমার সার্জারিটা ওপেন হবে নাকি ল্যাপারোস্কোপিক?
👉 কতদিন হাসপাতালে থাকতে হবে?
👉 কতদিনে হাঁটাচলা করতে পারব?
👉 খরচ কেমন হবে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আগে থেকেই জানলে ভয়ের জায়গাটা অনেকটাই কেটে যায়।
🔍 ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি আসলে কী?
ধরুন, আগে যখন একটা বাড়ি তৈরি করতে হতো, তখন বড় বড় গর্ত খুঁড়ে ভিত তৈরি করতে হতো। কিন্তু এখন আধুনিক যন্ত্র দিয়ে অনেক ছোট গর্ত করেই একই কাজ হয়ে যায়।
ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারিও ঠিক তেমন।
এখানে বড় কেটে খোলার বদলে ছোট ৩–৪টা ছিদ্র করা হয়।
এক ছিদ্র দিয়ে ঢুকানো হয় ক্যামেরা, যা ভেতরের ছবি বড় পর্দায় দেখায়।
অন্য ছিদ্রগুলো দিয়ে ঢোকানো হয় সুক্ষ্ম যন্ত্র, যেগুলো দিয়ে অপারেশন করা হয়।
এজন্য একে অনেকে বলেন 'কি-হোল সার্জারি'—যেন চাবির ছিদ্র দিয়ে ভেতরের কাজ দেখা যায়।
কেন ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি ওপেন সার্জারির থেকে ভালো?
▫️ছোট ক্ষত, ছোট দাগ:
ওপেন সার্জারিতে যেখানে বড় দাগ থেকে যায়, সেখানে এখানে মাত্র ৫–১০ মিলিমিটারের ছোট ছোট ছিদ্র হয়। কয়েক মাসের মধ্যেই এগুলো প্রায় অদৃশ্য হয়ে যায়।
▫️কম ব্যথা
ক্ষত ছোট হওয়ায় ব্যথাও অনেক কম হয়। রোগী দ্রুত স্বাভাবিক হতে পারেন।
▫️কম রক্তক্ষরণ
ছোট কাটাছেঁড়ায় রক্তক্ষরণও খুব কম হয়। ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে না।
▫️দ্রুত সুস্থ হওয়া
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা ২৪–৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই হাঁটাচলা শুরু করে দেন। অনেকে তো কয়েক দিনের মধ্যেই কাজে ফিরে যান।
▫️সংক্রমণের ঝুঁকি কম
বড় ক্ষত না থাকায় ইনফেকশনের সম্ভাবনাও অনেকটাই কমে যায়।
▫️সৌন্দর্যের দিক থেকে ভালো
বিশেষ করে মেয়েরা বা তরুণ রোগীরা পরে খুব খুশি থাকেন, কারণ শরীরে বড় কোনো দাগ থেকে যায় না।
🩺 কোন কোন ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি করা যায়?
👉 গলব্লাডার পাথর
👉 অ্যাপেন্ডিসাইটিস
👉 হার্নিয়া
👉 মহিলাদের জরায়ু বা সিস্ট অপসারণ
👉 কোলন বা পাকস্থলীর কিছু সার্জারি
তবে সব ক্ষেত্রেই ল্যাপারোস্কোপি সম্ভব নয়। জটিল বা অতি গুরুতর ক্ষেত্রে ওপেন সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।
তাই যদি কখনও ডাক্তার আপনাকে বলেন যে সার্জারি করতে হবে, ভয়ের কিছু নেই। আপনার ডাক্তারই সিদ্ধান্ত নেবেন কোন পদ্ধতি আপনার জন্য নিরাপদ।
মনে রাখবেন — সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা জীবনকে রক্ষা করে।
Dr. Abhik Sil
MBBS, MS, FMAS, DMAS
(Laparoscopic and General Surgeon)
আপনি চাইলে আমাদের সাথেও যোগাযোগ করতে পারেন ~
📞 আমাদের ফোন নাম্বার - 7005693277
📍 আমাদের ঠিকানা - মঠ চৌমুহনী, আগরতলা, পশ্চিম ত্রিপুরা