
11/05/2025
পূণ্যে পাপে দুঃখে সুখে পতনে উত্থানে
মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে
হে স্নেহার্ত বঙ্গভূমি— তব গৃহক্রোড়ে
চিরশিশু ক’রে আর রাখিয়ো না ধরে।
দেশদেশান্তর-মাঝে যার যেথা স্থান
খুঁজিয়া লইতে দাও করিয়া সন্ধান।
পদে পদে ছোটো ছোটো নিষেধের ডোরে
বেঁধে বেঁধে রাখিয়ো না ভালো-ছেলে ক’রে।
প্রাণ দিয়ে, দুঃখ সয়ে, আপনার হাতে
সংগ্রাম করিতে দাও ভালোমন্দ-সাথে।
শীর্ণ শান্ত সাধু তব পুত্রদের ধ’রে
দাও সবে গৃহছাড়া লক্ষ্মীছাড়া ক'রে।
সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছ বাঙালি ক’রে, মানুষ কর নি।
🔹 “পূণ্যে পাপে দুঃখে সুখে পতনে উত্থানে / মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে”
👉 সন্তান যেন নিজে পূণ্য-পাপ, দুঃখ-সুখ, ভুল-সঠিক সবকিছুর মধ্য দিয়ে গিয়ে মানুষ হয়ে উঠতে পারে।
📌 আজকের মায়েরা সন্তানদের কষ্টে পড়তে দেন না, ভুল করতে দেন না, সবকিছু আগেভাগে গুছিয়ে দেন – এতে তারা জীবন শেখার সুযোগ হারায়।
🔹 “হে স্নেহার্ত বঙ্গভূমি— তব গৃহক্রোড়ে / চিরশিশু ক’রে আর রাখিয়ো না ধরে।”
👉 শিশুদেরকে যদি চিরকাল বাচ্চা হিসেবেই আগলে রাখো, তবে তারা কখনো পরিণত হতে পারবে না।
📌 যে মা নিজের সন্তানকে সর্বদা 'baby' ভাবে, তার স্বার্থে সব করে দেয়, সে মা আসলে সন্তানকে দুর্বল করে দিচ্ছেন।
🔹 “দেশদেশান্তর-মাঝে যার যেথা স্থান / খুঁজিয়া লইতে দাও করিয়া সন্ধান।”
👉 সন্তানকে তার নিজের পথ খুঁজে নিতে দাও। সে কোথায় নিজের জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পাবে, সেটা তাকে জানতে দাও।
📌 মা যদি সব সিদ্ধান্ত নিজেই নেয়—ছেলে কোথায় যাবে, কি পড়বে, কোথায় চাকরি করবে—তবে সে নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারায়।
🔹 “পদে পদে ছোটো ছোটো নিষেধের ডোরে / বেঁধে বেঁধে রাখিয়ো না ভালো-ছেলে ক’রে।”
👉 বেশি বেশি নিষেধ করে ভালো ছেলে বা ভালো মেয়ে বানানো মানে তাদের স্বাধীনতা হরণ করা।
📌 আজকের মা রা সবকিছুতে “না” বলেন – ওটা খেয়ো না, এটা কোরো না, ওখানে যেয়ো না – এতে সন্তানরা স্বাধীন চিন্তা করতে শেখে না।
🔹 “প্রাণ দিয়ে, দুঃখ সয়ে, আপনার হাতে / সংগ্রাম করিতে দাও ভালোমন্দ-সাথে।”
👉 সন্তান নিজে সংগ্রাম করে জীবন বুঝুক, তবেই সে শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
📌 যখন মা সব করে দেয়, তখন সন্তান কিছুই শেখে না – জীবনের চ্যালেঞ্জে সে অক্ষম হয়ে পড়ে।
🔹 “শীর্ণ শান্ত সাধু তব পুত্রদের ধ’রে / দাও সবে গৃহছাড়া লক্ষ্মীছাড়া ক'রে।”
👉 শিশুকে ঘরের লক্ষ্মীছেলে বা শান্ত ছেলে বানিয়ে রাখলে সে জগতের বাস্তব চেহারা জানে না। তাকে বাইরে পাঠাও, বাস্তবের সঙ্গে লড়তে শেখাও।
📌 মায়েদের এই ভুল ধারনা যে 'ভালো ছেলে মানেই সবসময় ঘরোয়া, শান্ত, সুশীল', সন্তানকে দুর্বল ও নির্ভরশীল করে তোলে।
তারপর সন্তান নিজের সংসার জীবনে প্রবেশ করে অসীম যন্ত্রণার সম্মুখীন হয়। একজন সন্তান ছেলে বা মেয়ে সে যেমন ঘরের সব কাজ করতে জানবে ঠিক তেমনি বাইরের কাজ করতেও জানবে।
🔹 “সাত কোটি সন্তানেরে... মানুষ কর নি”
👉 সন্তানকে মানুষ করতে হলে তাকে দুঃখ, সংগ্রাম, স্বাধীনতা ও দায়িত্বের সাথে বড় হতে দিতে হয়।
📌 শুধু খাওয়া, পড়া, ভালো নম্বর, চাকরি – এগুলো দিয়েই মানুষ হওয়া যায় না। আত্মনির্ভরশীল, সাহসী, সংবেদনশীল, দায়িত্ববান মানুষ করে তোলাই একজন মায়ের প্রকৃত কাজ।
সত্যিকারের মা হওয়া মানে:
সবকিছু করে দেওয়া নয়,
বরং নিজে শেখার সুযোগ করে দেওয়া,
সন্তানকে জীবনযুদ্ধে নামতে দেওয়া,
ভুল করতে দেওয়া এবং ভুল থেকে শিখতে দেওয়া।