
10/09/2024
মাথার চুল আজীবন কালো থাকবে এই ইচ্ছে সকলেরই। সমস্যা শুরু হয় কালো চুল সাদা হতে শুরু করলে। চুল পাকলে প্রকৃত বয়সের তুলনায় বেশি বয়স্ক দেখায়! চুল পাকার সমস্যায় খুব ভালো সমাধান রয়েছে হোমিওপ্যাথিতে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথির প্রাক্তন অধিকর্তা প্রফেসর ডাঃ গৌতম আশ জানাচ্ছেন, চুল পাকতে পারে নানা কারণে। সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়স হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই একটা-দু’টো করে চুল পাকতে শুরু করে। এমনকী এই বয়সের পরে, পরবর্তী ১০ বছর অন্তর ২০ শতাংশ চুল ধূসর হতে থাকে। চুল সাদা হওয়ার কারণ হল, হেয়ার ফলিকলে মেলানিনের মাত্রা কমে যাওয়া। প্রশ্ন হল হেয়ার ফলিকল কী? আর মেলানিন কী? মাথার ত্বকের নীচে থাকে চুলের শিকড়। এই মূলকে ঘিরে থাকে বীজ কোষ। বীজ কোষে থাকে বিশেষ ধরনের কোষ যার নাম মেলানোসাইট কোষ। মেলানোসাইট কোষ তৈরি করে মেলানিন নামে রঞ্জক। এই রঞ্জকের কারণে চুলের রং হয় কালো। আমাদের ত্বকের রঙের জন্যও দায়ী এই মেলানিন। মেলানোসাইট কোষগুলি স্বাভাবিক মাত্রায় মেলানিন তৈরি করতে না পারলে চুলের রং সাদা হতে শুরু করে। নানা কারণে এমন হতে পারে। কারণগুলির মধ্যে রয়েছে, বংশগতি, কঠিন কোনও অসুখ, ভিটামিনের অভাব, দীর্ঘসময় ধরে চুলে রোদ পড়া, চুলে তাপ প্রয়োগ করা, হেয়ার স্ট্রেটনিং, মেডিকেটেড শ্যাম্পু ব্যবহার, কলপ করা, অতিরিক্ত ধূমপানের অভ্যেস ইত্যাদি।
সুতরাং প্রথমেই দেখতে হবে চুল পাকতে শুরু করেছে কেন! সেই বুঝে ওষুধ খেতে হবে। চুল পাকতে শুরু করার প্রাথমিক অবস্থা থেকেই হোমিওপ্যাথির সাহায্য নিলে চুল সাদা হওয়ার অগ্রগতি অনেকটাই রোধ করা সম্ভব! বংশগতির কারণে চুল পাকলে সেই বুঝে কিছু ওষুধ খেতে হবে। আবার কিছু রোগ যেমন থাইরয়েডের গণ্ডগোল হলে, শ্বেতীর মতো অটোইমিউন ডিজিজ হলে, মানসিক চাপে ভুগলে ও ধূমপানে আসক্তি থাকলে আগে রোগ বা মূল কারণটি সারানোর ওষুধ দিতে হবে। তাহলেই চুল সাদা হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। আবার ভিটামিন বি৩, বি৬, বি৭, বি১২, ই, এ, সি এর মতো ভিটামিন, জিঙ্ক-সেলেনিয়ামের মতো খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অভাবেও দ্রুত পাকতে পারে চুল। সেক্ষেত্রে ওষুধের সঙ্গে শরীরে যাতে পুষ্টি উপাদানের জোগান বজায় থাকে তাও নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে কলপে থাকে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড নামে রাসায়নিক। পারঅক্সাইড চুলের মেলানিন ধ্বংস করে। ফলে দ্রুত চুল সাদা হতে থাকে। অতএব, চুল কেন পাকছে তার প্রধান কারণ চিহ্ণিত করা আগে দরকার। সেই বুঝে দেওয়া যায় ওষুধ। হোমিওপ্যাথিতে লাইকোপোডিয়াম, সালফার, সোরাইনাম, ক্যালকেরিয়া কার্ব, সেলিনিয়াম, ফসফরাসের মতো ওষুধগুলি চুল পাকা রোধে খুব ভালো কাজ করে। তবে কোন রোগীর ক্ষেত্রে কোন ওষুধ ভালো কাজ করবে তা একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকই নির্ণয় করতে পারেন। অবশ্য আর্নিকা মাদার টিংচার, জাবোরান্ডি মাদার টিংচার, আমলকী মাদার টিংচার নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে মাথার চুলে ব্যবহার করা যায়। তবে সমস্যার প্রকৃত সমাধান চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বাঞ্ছনীয়।