10/11/2025
**শিক্ষা না কুসংস্কার – আমরা আসলে কোন পথে হাঁটছি?**
আজ একটা কথা বলতেই হবে — কষ্ট লাগলেও বলব।
আমাদের সমাজ দিন দিন উন্নত হচ্ছে, প্রায় প্রত্যেকেই তথাকথিত শিক্ষিত।
কিন্তু সত্যিই কি আমরা *শিক্ষিত*?
শিক্ষিত মানে কি কেবল ডিগ্রি থাকা, বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ে আসা? নাকি সেই মানুষই প্রকৃত শিক্ষিত, যিনি যুক্তিবাদী, মানবিক, এবং উন্নত চিন্তাভাবনার অধিকারী?
আমাদের সমাজ উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে যেন আরও গভীর কুসংস্কারের অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে।
একটা শিশু অটিজম হলে বাবা-মা ছুটে যাচ্ছেন তন্ত্র-মন্ত্রওয়ালার কাছে — এই ভয়ে যে কেউ তাদের সন্তানের ক্ষতি করে ফেলেছে, আর সে যদি "মন্ত্রে" তা সরিয়ে দেয়, সব ঠিক হয়ে যাবে!
একজন মেয়ে স্কিজোফ্রেনিয়ায় ভুগছে, আর তার পরিবার ভাবছে — ওষুধে কিছু হবে না, কোনো “বাবা” নিশ্চয়ই ওকে ভালো করে দেবে।
কেউ কেউ আবার বিশ্বাস করছেন — ঘরে অশান্তি মানেই কোনো গ্রহের দোষ!
একটা “তাবিজ” বা “কবচ” কিনলেই সব মিটে যাবে।
আর আশ্চর্যের কথা, কেউ কেউ দাবি করছে সেই তাবিজ *কাজ করছে*!
তাহলে কি বিজ্ঞান ভুল? চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনো মানে নেই?
একজন রেইকি প্রশিক্ষক একদিন আমায় বলেছিলেন — “আমি চাইলে আমার স্বামীর গলব্লাডারের পাথর হিল করে দিতে পারি, কিন্তু করব না, কারণ মেডিকেল সায়েন্স আছে।”
আমি ভাবি — যদি সত্যিই অলৌকিক শক্তি এত কার্যকর হয়, তবে আমরা হাসপাতাল, ডাক্তার, থেরাপিস্ট — সবাইকে বন্ধ করে বসে থাকি না কেন?
আজ ইউটিউব খুললেই দেখা যায় ভূতের গল্প, তন্ত্র, কিংবা নতুন ব্যবসা — **“পাস্ট লাইফ রিগ্রেশন থেরাপি”**!
মানুষকে বোঝানো হচ্ছে তোমার বর্তমান দুঃখ আসলে আগের জন্মের কর্মফল।
তাহলে এই জীবনে চেষ্টা করার প্রয়োজনই বা কী? সব দায় চাপিয়ে দাও “পাস্ট লাইফে”!
এভাবে মানুষ নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে।
নিজের ভুল, নিজের প্রচেষ্টার অভাব — কিছুই স্বীকার করতে চায় না।
বরং ভিকটিম হয়ে থাকা, আর “মিরাকল কিউর” খোঁজা যেন এখন নতুন ট্রেন্ড।
আর এখানেই আসে আরেকটা বড় ভুল ধারণা —
অনেকে ভাবে **কাউন্সেলিং মানে শুধু গল্প করা**।
“গল্প করেই বা কী হবে? তার জন্য আবার টাকা দেব কেন?”
কিন্তু তারা বোঝে না — কাউন্সেলিং মানে শুধু কথা বলা নয়, বরং গভীরভাবে *মন বোঝা, চিন্তা গঠন করা, নিজের অচেতন মানসের দরজা খুলে দেওয়া।*
একজন থেরাপিস্টের ভূমিকা গল্প বলার সঙ্গী নয় — বরং এমন এক পথপ্রদর্শক, যিনি ধীরে ধীরে তোমাকে নিজের ভেতরের অন্ধকার চিনতে শেখান।
প্রত্যেকটি সেশন মানসিকভাবে প্রস্তুতি, বিশ্লেষণ, সহমর্মিতা, এবং নৈতিক দায়িত্বের ফল।
যে কেউ গল্প শুনতে পারে — কিন্তু সবাই থেরাপিস্ট হতে পারে না।
তাই যখন কেউ ভাবে — “থেরাপিতে যাব কেন, বন্ধুর সাথেই তো কথা বলা যায়!”
তখন মনে রাখবেন — বন্ধু সান্ত্বনা দেয়, কিন্তু থেরাপিস্ট পরিবর্তনের পথ দেখায়।
তাহলে প্রশ্ন রয়ে যায় —
**আমরা কি সত্যিই উন্নত হচ্ছি, নাকি কুসংস্কারকে নতুন সাজে সাজিয়ে নিজেদের অন্ধকারে টেনে নিচ্ছি?**
✨ *চলুন, যুক্তি, সচেতনতা আর সহানুভূতির পথে হাঁটি। প্রকৃত শিক্ষিত সমাজ গড়ি — যেখানে বিশ্বাসের চেয়ে জ্ঞানের স্থান বড়।*
---
✍️ – Psychologist & Special Educator Susmita Dutta
>