World Homoeopathic Wellness

World Homoeopathic Wellness Consultant Homoeopath/Electrohomoeopath With Wellness. By Appointment only.

24/05/2024

মানবদেহের মস্তিষ্ক (মেধা,বুদ্ধি ও মননক্রিয়া) ও নিউরোট্রান্সমিটার এবং এর বিপর্যয়জনিত রোগসমূহ
*************************************************
Practical Scientific Approach to Chemical Analytical Processes of Plant Medicines in the Light of Physiological Disorders- এর গবেষক ও চিন্তাবিদ পন্ডিত ডাঃ সমরেশ চন্দ্র রায় মানবদেহের মস্তিষ্ক (মেধা,বুদ্ধি ও মননক্রিয়া) ও নিউরোট্রান্সমিটার এবং এর বিপর্যয়জনিত রোগসমূহ নিরাময়ে উদ্ভিদজাত ঔষধের রাসায়নিক বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় প্রায়োগিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন।
মানব মস্তিষ্কের মূল গাঠনিক উপাদান হল স্নায়ুকোষ। মস্তিষ্কে মোট ১০০০ কোটি স্নায়ুকোষ বা নিউরন থাকে। এই কোষগুলো বৈদ্যুতিক সংকেতের আকারে অনুভূতি পরিবহন করতে পারে। এদের দুই প্রান্তে যে শাখা প্রশাখার মত প্রবর্ধক থাকে তারা হল ডেন্ড্রাইট, আর মূল তন্তুর মত অংশের নাম অ্যাক্সন। ডেন্ড্রাইট হল অ্যান্টেনার মত সংকেত গ্রাহক,যা অন্য নিউরন থেকে সংকেত গ্রহণ করে। অ্যাক্সন সেই সংকেত পরিবহন করে অপর প্রান্তের ডেন্ড্রাইটে নিয়ে যায়। দুটি বা ততোধিক স্নায়ুকোষের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান ঘটে দুই স্নায়ুকোষের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা দিয়ে। এই ফাঁকা জায়গাকে বলা হয় সিন্যাপ্স। যদিও একে ফাঁকা জায়গা বলা হচ্ছে, কিন্তু এই জায়গাটা বস্তুশূন্য বা বায়ুশূন্য নয়। সিন্যাপ্সের ভিতরে থাকে তথ্য পরিবাহী কিছু রাসায়নিক তরল পদার্থ।অর্থাৎ বিভিন্ন উপাদানসমূহ স্নায়ুকোষের মধ্যে ফেরীর কাজ করে থাকে। রাসায়নিক পদার্থ সিন্যাপসের মধ্য দিয়ে এক নিউরন থেকে অন্য নিউরন বা পেশি বা গ্রন্থিতে স্নায়ু উদ্দীপনা বহন করে তাকে নিউরোট্রান্সমিটার বলে। এ পদার্থ প্রিসিন্যাপটিক নিউরনের ভেসিকলে জমা থাকে ও প্রয়োজনে সিন্যাপটিক ক্লেফটে মুক্ত হয়। মানুষের করটেক্সে মোটামুটি ১০,০০০ এর মত সিন্যাপস থাকে।১০০ টিরও বেশি নিউরোট্রান্সমিটার মস্তিষ্কে রয়েছে।অধিকাংশ আমিনো এসিড থেকে সহজেই নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি হয়।

#নিউরোট্রান্সমিটার রাসায়নিক উপাদানসমূহঃ
(১)Acetylcholine(এসিটাইলকোলিন)।
(২)Glutamate( গ্লুটামেট)
(৩)GABA (γ-aminobutyric Acid)(গামাঅ্যামাইনোবিউটাইরিক এসিড)
(৪)Glycine(গ্লাইসিন)
(৫)Catecholamines(ক্যাটেকোলামাইন)
এরা হচ্ছে-
(ক)Dopamine(ডোপামিন)
(খ)Norepinephrine(নরএপিনেফ্রিন)
(গ)Epinephrine(এপিনেফ্রিন)
(৬)Histamine(হিস্টামিন)
(৭)Serotonin(5-Hydroxytrytaine)
(সেরোটোনিন(৫হাইড্রোক্সিট্রিপটাইন)

#স্নায়ুতন্ত্রের উদ্দীপনার ভিত্তিতে প্রকারভেদ ও রাসায়নিক উপাদানসমূহঃ
(১)কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের নিউরোট্রান্সমিটার (Neurotransmitter of central nervous system) : রাসায়নিক উপাদানসমূহ- ডোপামিন, GABA, গ্লাইসিন, গ্লুটামেট প্রভৃতি।
(২)প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রের নিউরোট্রান্সমিটার (Neurotransmitter of peripheral nervous system) : রাসায়নিক উপাদানসমূহ -অ্যাসিটাইল কোলিন, অ্যাড্রেনালিন, নর অ্যাড্রেনালিন, হিস্টামিন প্রভৃতি।

#কাজের উপরে ভিত্তি করে নিউরোট্রান্সমিটার ৩ ধরণেরঃ
(১)এক্সাইটেটোরি (Excitatory)- এক স্নায়ু থেকে অন্য স্নায়ুতে কেমিক্যাল সিগন্যাল চলতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না গন্তব্যে পৌছায়।
(২)ইনহেবিটরি (Inhibitory)- কোনো একটি কেমিক্যাল সিগন্যালকে বন্ধ করে দেয়।
(৩)মডিউলেটরি (Modulatory) - এরা অন্য নিউরোট্রান্সমিটারকে প্রভাবিত করতে পারে।

#রাসায়নিক গঠনের উপর ভিত্তি করেও এটি ৩ প্রকারঃ
(১)এমাইনো এসিড জাত (Amino acids Neurotransmitter)
(২)মনোএমাইন জাত (Monoamine Neurotransmitter)
(৩)পেপটাইড জাত (Peptide Neurotransmitter)

#নিউরোট্রান্সমিটার রাসায়নিক উপাদানসমূহঃ
(১)Acetylcholine(অ্যাসিটাইলকোলিন)
#অ্যাসিটাইলকোলাইনের কাজঃ
অ্যাসিটাইলকোলিন কেন্দ্রীয় এবং পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্র উভয় ক্ষেত্রেই একটি গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার। এই রাসায়নিক উপাদান বিভিন্ন কার্য প্রক্রিয়ার সাথে সংযুক্ত তাহল-
(১)পেশী সক্রিয়করণঃ পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রে পেশী সংকোচনের জন্য অ্যাসিটাইলকোলিন অপরিহার্য। এটি নিউরোমাসকুলার জংশনে প্রকাশিত হয়, যেখানে এটি পেশী কোষে রিসেপ্টরগুলির সাথে আবদ্ধ হয়, যার ফলে সেগুলি সংকুচিত হয়।
(২)স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্রঃ অ্যাসিটাইলকোলিন স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্রে, বিশেষ করে প্যারাসিমপ্যাথেটিক শাখায় মূল ভূমিকা পালন করে। এটি হৃদস্পন্দন হ্রাস, পাচনতন্ত্রকে উদ্দীপিত করা এবং অন্যান্য অনিচ্ছাকৃত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণের সাথে জড়িত।
(৩)কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রঃ মস্তিষ্কে অ্যাসিটাইলকোলিন মনোযোগ, উত্তেজনা এবং স্মৃতি সহ বিভিন্ন কার্য প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। এটি জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া এবং শেখার জন্য সমালোচনামূলক বলে মনে করা হয়।
(৪)নিউরোট্রান্সমিশন মডুলেশনঃ অ্যাসিটাইলকোলিন অন্যান্য নিউরোট্রান্সমিটার সিস্টেমের কার্যকলাপকে মডুলেট করে, তাদের মুক্তি এবং ক্রিয়াকে প্রভাবিত করে, এইভাবে মস্তিষ্কের কার্যকারিতার সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে।
সামগ্রিকভাবে, অ্যাসিটাইলকোলিন শরীরের স্বেচ্ছাসেবী এবং অনিচ্ছাকৃত উভয় কাজের জন্য অত্যাবশ্যক, পেশী চলাচল থেকে জ্ঞানীয় ক্ষমতা পর্যন্ত সবকিছুকে প্রভাবিত করে।

#অ্যাসিটাইলকোলাইন কমে যাওয়ার লক্ষণসমূহঃ
অ্যাসিটাইলকোলাইন (Acetylcholine) কমে যাওয়ার লক্ষণসমূহ সাধারণত স্মৃতিশক্তি, জ্ঞানীয় কার্যকলাপ এবং মোটর কার্যকলাপে প্রতিক্রিয়া দেখায়। নিম্নলিখিত কিছু লক্ষণ উল্লেখ করা যায়
(১)স্মৃতিশক্তির দুর্বলতাঃনতুন তথ্য শেখার অসুবিধা এবং পুরানো স্মৃতি মনে করতে সমস্যা।
(২)জ্ঞানীয় দুর্বলতাঃ চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হ্রাস, মনোযোগ ও কনসেন্ট্রেশন ধরে রাখতে সমস্যা।
(৩)মেজাজ পরিবর্তনঃবিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং মেজাজের পরিবর্তন।
(৪)শরীরের নিয়ন্ত্রণের সমস্যাঃ মোটর কার্যকলাপ ও সমন্বয়ের সমস্যা, যেমন চলাফেরার অক্ষমতা বা কম্পন।
(৫)ঘুমের ব্যাঘাতঃঅনিদ্রা বা অন্যান্য ঘুমের সমস্যা।
অ্যাসিটাইলকোলাইন কমে যাওয়ার কারণে আলঝাইমার্স রোগের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পেতে পারে।

#অ্যাসিটাইলকোলিন বৃদ্ধিজনিত সমস্যাঃ
অ্যাসিটাইলকোলিন (Acetylcholine) একটি গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার যা মস্তিষ্ক এবং শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। অ্যাসিটাইলকোলিন বৃদ্ধিজনিত সমস্যাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সমস্যা নিম্নরূপঃ
(১)কগনিটিভ ওভারস্টিমুলেশনঃ অতিরিক্ত অ্যাসিটাইলকোলিন স্নায়ু কোষগুলিকে অতিরিক্ত উত্তেজিত করে, যার ফলে উদ্বেগ, প্যানিক আক্রমণ, মানসিক বিভ্রান্তি, স্মৃতিভ্রংশ এবং অন্যান্য কগনিটিভ সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এবং অনিদ্রার মত সমস্যা হতে পারে।

(২)মাসল ক্র্যাম্প এবং টুইচিংঃ অ্যাসিটাইলকোলিন পেশীর সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে। অতিরিক্ত অ্যাসিটাইলকোলিন পেশী ক্র্যাম্প, টুইচিং বা অতিরিক্ত সংকোচন ঘটাতে পারে।

(৩)অতিরিক্ত স্যালিভেশন এবং ঘামঃ অ্যাসিটাইলকোলিন স্যালিভারি গ্রন্থির সক্রিয়তা বাড়ায়। এর ফলে অতিরিক্ত স্যালিভেশন বা মুখে অতিরিক্ত লালারস সঞ্চিত হতে পারে। ঘামের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।

(৪)হৃদপিণ্ডের গতি কমে যাওয়াঃ অ্যাসিটাইলকোলিন হৃদপিণ্ডের গতি নিয়ন্ত্রণ করে। অতিরিক্ত অ্যাসিটাইলকোলিন ব্রাডিকার্ডিয়া (হৃদপিণ্ডের গতি কমে যাওয়া) সৃষ্টি করতে পারে, যা মাথা ঘোরা বা সংজ্ঞাহীনতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

(৫)প্যারাসিম্প্যাথেটিক ওভারঅ্যাক্টিভিটিঃ প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকলাপ বাড়াতে পারে, যার ফলে হজম সমস্যা, বমি বমি ভাব, এবং পেটের ব্যথার মত সমস্যা হতে পারে।

(৬)ব্রঙ্কোকনস্ট্রিকশন: শ্বাসনালীর সংকোচন ঘটতে পারে, যা শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

(২)গ্লটামেট (Glutamate)
গ্লুটামেট হল মানুষের সবচেয়ে মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটার যা মানুষের মস্তিষ্কের প্রায় অর্ধেক নিউরনে ব্যবহৃত হয়। এটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রাথমিক উদ্দীপনামূলক ট্রান্সমিটার।
# গ্লুটামেট -এর কার্যাবলীঃ
(১)রাসায়নিক বার্তাবাহকঃ গ্লুটামেট একটি স্নায়ু কোষ থেকে অন্য স্নায়ুকোষে বার্তা পৌঁছে দেয়
(২)মস্তিষ্কের কোষের শক্তির উৎসঃ গ্লুকোজের মজুদ, কোষের শক্তির প্রধান উৎস, কম হলে গ্লুটামেট ব্যবহার করা যেতে পারে
(৩)শেখার এবং স্মৃতিশক্তি নিয়ন্ত্রণঃ গ্লুটামেট শেখার এবং স্মৃতিশক্তি গঠনের জন্য সময়ের সাথে সাথে নিউরনের মধ্যে সংকেতগুলিকে শক্তিশালী বা দুর্বল করতে সহায়তা করে
(৪)ব্যথা ট্রান্সমিটারঃ
গ্লুটামেটের উচ্চ মাত্রা ব্যথার বর্ধিত সংবেদনগুলির সাথে যুক্ত।
(৫)ঘুম এবং জাগ্রত মধ্যস্থতাকারীঃ গবেষণায় দেখা গেছে যে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে গ্লুটামেট মাত্রা REM ঘুমের সময় এবং যখন ঘুম থেকে জেগে উঠছেন
(৬)মেজাজ নিয়ন্ত্রণঃ গ্লুটামেট ডিসফাংশন কিছু মেজাজের ব্যাধিতে অবদান রাখতে পারে,যেমন প্রধান বিষণ্নতাজনিত ব্যাধি এবং সিজোফ্রেনিয়া।

#মস্তিকে খুব বেশি ও কম মাত্রায় গ্লুটামেট থাকলে শারীরিক ও মানসিক ক্ষেত্রে যে সমস্যা সৃষ্টি করে তাহলঃ
মস্তিষ্কে খুব বেশি গ্লুটামেট স্নায়ু কোষগুলিকে অতিরিক্ত উত্তেজিত করে তুলতে পারে। অতিরিক্ত উত্তেজনা মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি অথবা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এমতাবস্থায়,গ্লুটামােটকে একটিএক্সিটোটক্সিন(excitotoxin) বলে।
√মস্তিষ্কে খুব বেশি গ্লুটামেট থাকলে যে সমস্যা সৃষ্টি করে তাহলঃ
(১)অ্যামিওট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস (লু গেহরিগের রোগ)।
(২)একাধিক স্ক্লেরোসিস।
(৩)আলঝেইমার রোগ।
(৪)পারকিনসন রোগ।
(৫)হান্টিংটনের রোগ।
(৬)স্ট্রোক।
(৭)ফাইব্রোমিয়ালজিয়া।
(৮)দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি সিন্ড্রোম।

√অতিমায় গ্লুটামেট মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থার যে সমস্যা সৃষ্টি করে তাহলঃ
(১)মেজাজ এবং উদ্বেগ ব্যাধি।
(২)অটিজম।
(৩)বিষণ্ণতা।
(৪)অবসেসিভ-বাধ্যতামূলক ব্যাধি।
(৫)সিজোফ্রেনিয়া।

#মস্তিষ্কে খুব কম গ্লুটামেট থাকলে এর ফলাফলঃ
(১)মনোনিবেশ করতে সমস্যা।
(২)মানসিক ক্লান্তি।
(৩)অনিদ্রা.
(৪)কম শক্তি।

(৩)GABA(Gamma-Aminobutyric Acid)
মেরুদন্ডের প্রধান আণবিক নিউরোট্রান্সমিটার ও মস্তিষ্কের একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা ক্রান্তিলগ্নে মস্তিষ্কের প্রাথমিক নিষ্ক্রিয় ট্রান্সমিটার।
#গামা-অ্যামিনোবুট্রিক অ্যাসিডের কাজসমূহঃ
গামা-অ্যামিনোবুট্রিক অ্যাসিড হল কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রাথমিক প্রতিরোধক নিউরোট্রান্সমিটার।এর প্রধান কাজ হচ্ছে -
(১)নিউরাল ক্রিয়াকলাপের বাধাঃ গামা-অ্যামিনোবুট্রিক অ্যাসিড এর প্রাথমিক ভূমিকা হল স্নায়ুতন্ত্র জুড়ে নিউরোনাল উত্তেজনা হ্রাস করা। এটি স্নায়ু সংক্রমণকে বাধা দিয়ে অতিরিক্ত উদ্দীপনা রোধ করতে সহায়তা করে। এইভাবে শিথিলতা প্রসারিত করে এবং উদ্বেগ হ্রাস করে।
(২)পেশীর টোন নিয়ন্ত্রণ: গামা-অ্যামিনোবুট্রিক অ্যাসিড মেরুদণ্ডের মোটর নিউরনকে বাধা দিয়ে পেশীর টোন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি অতিরিক্ত পেশী সংকোচন প্রতিরোধ করে এবং পেশী নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
(৩)উদ্বেগ এবং স্ট্রেস হ্রাসঃ অতিরিক্ত নিউরাল ক্রিয়াকলাপকে বাধা দিয়ে, উদ্বেগ এবং চাপের মাত্রা হ্রাস করতে মূল ভূমিকা পালন করে। এটি প্রায়শই মনের উপর একটি শান্ত প্রভাব তৈরির সাথে যুক্ত থাকে।
(৪)স্লিপ রেগুলেশনঃঘুমের উদ্রেক জন্য অপরিহার্য। এটি ঘুম শুরুর সুবিধার্থে সাহায্য করে এবং স্নায়বিক উত্তেজনা হ্রাস করে এবং মস্তিষ্ককে শান্ত করে ঘুমের মান উন্নত করে।
(৫)মেজাজ নিয়ন্ত্রণঃ গামা-অ্যামিনোবুট্রিক অ্যাসিড এর ইনহিবিটরি প্রভাব মেজাজ স্থিতিশীলতায় অবদান রাখে। এর নিম্ন স্তরের মেজাজ ব্যাধি যেমন বিষণ্নতা এবং উদ্বেগের সাথে যুক্ত।

(৬)খিঁচুনি প্রতিরোধঃ খিঁচুনি প্রতিরোধের জন্য পর্যাপ্ত গামা-অ্যামিনোবুট্রিক অ্যাসিড মাত্রা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। GABAergic কার্যকলাপ নিউরাল হাইপারঅ্যাক্টিভিটির বিস্তার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে যা খিঁচুনি হতে পারে।

(৭)ব্যথার মডুলেশনঃ গামা-অ্যামিনোবুট্রিক অ্যাসিড স্নায়ুতন্ত্রের ব্যথা সংকেত বাধা দিয়ে ব্যথা উপলব্ধি সংশোধন করতে পারে, এর ব্যথানাশক প্রভাবগুলিতে অবদান রাখে।সামগ্রিকভাবে, সঠিক মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করে নিউরাল উত্তেজনা এবং বাধার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য অত্যাবশ্যক।

#গামা-অ্যামাইনোবিউটাইরিক এসিড এর মান কম হলে লক্ষণসমূহঃ
(১) উদ্বেগঃ গামা এর মাত্রা কমে গেলে মানুষ সাধারণত উদ্বেগ বা অ্যাংজাইটি অনুভব করতে পারে।
(২)নিদ্রাহীনতাঃভালো ঘুম পেতে গামা গুরুত্বপূর্ণ,এর অভাবে নিদ্রাহীনতা হতে পারে।
(৩)মেজাজের পরিবর্তনঃ গামা কমে গেলে মেজাজ খারাপ হওয়া, বিষণ্নতা, বা হঠাৎ রেগে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে।
(৪)মাসল টেনশানঃ মাংসপেশীতে টেনশান বা সংকোচন অনুভূত হতে পারে।
(৫)আকাঙ্ক্ষা এবং আসক্তিঃ বিশেষ করে অ্যালকোহল বা অন্যান্য পদার্থের প্রতি আসক্তি বাড়তে পারে।
(৬)কগনিটিভ ডিফিসিটসঃ মনোযোগ, স্মরণশক্তি বা অন্যান্য কগনিটিভ কার্যক্রমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

#গামা-অ্যামাইনোবিউটাইরিক এসিডের মান বৃদ্ধিজনিত লক্ষণসমূহঃ
গামা-এর মান বৃদ্ধি পেলে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যেতে পারে।এই লক্ষণগুলো সাধারণত পরিমাপের সাথে সম্পর্কিত এবং ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।
(১)মানসিক প্রশান্তিঃ গামা-এর মান বৃদ্ধির ফলে সাধারণত মানসিক প্রশান্তি ও শান্তি অনুভূত হয়।
(২)অতিমাত্রায় ঘুম বা নিদ্রালুতাঃ গামা -এর উচ্চ মাত্রা ঘুমের প্ররোচনা দিতে পারে।
(৩)সামান্য স্নায়বিকতাঃ অল্প পরিমাণে স্নায়বিকতা বা অস্থিরতা হতে পারে।
(৪)কেন্দ্রীভূত করার সমস্যাঃ মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সমস্যা হতে পারে।
(৫)দুর্বলতা বা অলসতাঃ শরীরে দুর্বলতা বা অলসতা অনুভূত হতে পারে।
(৬)স্মৃতিশক্তি দুর্বলতাঃস্মৃতিশক্তি কিছুটা কমে যেতে পারে।
(৭)পেশী শিথিলতাঃ পেশী শিথিল হতে পারে, যা কিছু ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে যেমন খিঁচুনির চিকিৎসায়।

(৪) Glycine(গ্লাইসিন)
যে সব ইনহেবিটরি নিউরোট্রান্সমিটার সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। তার একটি হল গ্লাইসিন, যা থাকে মেরুরজ্জুতে। নিউরোট্রান্সমিটার যা মানুষের মস্তিষ্কের প্রায় অর্ধেক নিউরনে ব্যবহৃত হয়।শ্রবণ, মেটাবলিজম, ব্যথার অনুভূতি ইত্যাদির সাথে এই কেমিক্যাল মেসেঞ্জারটি জড়িত।
#গ্লাইসিনের কার্যাবলীঃ
গ্লাইসিন হল একটি নন অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড যার মানবদেহে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে।
(১)প্রোটিন সংশ্লেষণঃ একটি অ্যামিনো অ্যাসিড হিসাবে গ্লাইসিন প্রোটিনের একটি বিল্ডিং ব্লক। এটি প্রোটিন সংশ্লেষণের সময় প্রোটিন কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
(২)নিউরোট্রান্সমিটারঃ গ্লাইসিন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের একটি প্রতিরোধক নিউরোট্রান্সমিটার হিসাবে কাজ করে, বিশেষ করে মেরুদণ্ডের কর্ড, ব্রেনস্টেম এবং রেটিনায়। এটি স্নায়ু আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং মোটর এবং সংবেদনশীল পথের সাথে জড়িত।
(৩)ডিটক্সিফিকেশনঃ গ্লাইসিন লিভারের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। এটি কম ক্ষতিকারক যৌগ তৈরি করতে বিষাক্ত পদার্থের সাথে একত্রিত হয় যা নির্গত হতে পারে।
(৪)কোলাজেন গঠনঃ গ্লাইসিন হল কোলাজেনের একটি প্রধান উপাদান, ত্বক, টেন্ডন এবং লিগামেন্টের মতো সংযোগকারী টিস্যুতে প্রাথমিক কাঠামোগত প্রোটিন। এটি এই টিস্যুগুলিতে শক্তি এবং স্থিতিস্থাপকতা সরবরাহ করে।
(৫)বিপাকীয় ফাংশনঃ গ্লাইসিন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বায়োমোলিকুলের সংশ্লেষণে ভূমিকা পালন করে, যার মধ্যে হেম (হিমোগ্লোবিনের একটি উপাদান), ক্রিয়েটিন (যা পেশীতে শক্তি সরবরাহ করতে সহায়তা করে) এবং পিউরিন (ডিএনএ এবং আরএনএ বিল্ডিং ব্লক)।
(৬)ইমিউন ফাংশনঃ গ্লাইসিন ইমিউন প্রতিক্রিয়া মডুলেট করতে পারে এবং প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি সাইটোকাইনস এবং অন্যান্য ইমিউন অণু উৎপাদনে সাহায্য করে।
(৭)অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃ গ্লাইসিন গ্লুটাথিয়নের একটি অগ্রদূত, একটি প্রধান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ফ্রি র‌্যাডিক্যাল ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

#গ্লাইসিনের মান কমে গেলে লক্ষণসমূহঃ
গ্লাইসিনের স্তর কমে গেলে শরীরে বেশ কিছু লক্ষণ এবং সমস্যা দেখা দিতে পারে। গ্লাইসিন একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যামিনো অ্যাসিড যা প্রোটিন গঠনে এবং অন্যান্য বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় ভূমিকা পালন করে।
(১)পেশী দুর্বলতা এবং ক্লান্তিঃ গ্লাইসিন পেশীর কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই এর অভাবে পেশী দুর্বল এবং ক্লান্ত অনুভব হতে পারে।
(২)ঘুমের সমস্যাঃ গ্লাইসিন স্নায়ুতন্ত্রে শিথিলতা আনার জন্য সহায়ক, এর অভাবে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
(৩)জ্ঞানীয় সমস্যাঃ গ্লাইসিনের অভাবে মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে পারে।
(৪)অতিরিক্ত প্রদাহঃ গ্লাইসিন প্রদাহ নিবারণের কাজ করে।এর অভাবে শরীরে প্রদাহ বৃদ্ধি পেতে পারে।
(৫)তীব্র মানসিক চাপ ও উদ্বেগঃ গ্লাইসিন মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এর অভাবে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ বৃদ্ধি পেতে পারে।
(৬)ত্বকের সমস্যাঃ গ্লাইসিন কোলাজেন তৈরিতে সহায়ক, যা ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাবে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে যেতে পারে এবং ত্বক শুষ্ক ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
(৭)রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের সমস্যাঃ গ্লাইসিন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর অভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ওঠানামা করতে পারে।
(৮)স্নায়ুর সমস্যাঃ গ্লাইসিন স্নায়ুতন্ত্রে নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে, তাই এর অভাবে স্নায়ুর কার্যক্রমে সমস্যা হতে পারে।
(৯)মানসিক অবসাদঃ গ্লাইসিন মন ও মস্তিষ্কের সঠিক কার্যকারিতায় সহায়ক,তাই এর অভাবে মানসিক অবসাদ ও উদ্বেগ দেখা দিতে পারে।
(১০)ত্বকের সমস্যাঃ গ্লাইসিন কোলাজেন উৎপাদনে সহায়ক, তাই এর অভাবে ত্বক শুষ্ক ও অনুজ্জ্বল হতে পারে।

#গ্লাইসিনের বৃদ্ধিজনিত লক্ষণসমূহঃ
(১)অতিরিক্ত ক্লান্তি ও ঘুমঃ গ্লাইসিন স্নায়ুতন্ত্রকে শিথিল করে, তাই এর অতিরিক্ততা ক্লান্তি ও অতিরিক্ত ঘুমের কারণ হতে পারে।
(২)হজমের সমস্যাঃ গ্লাইসিনের অতিরিক্ততা পেটে অস্বস্তি ও হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
(৩)রক্তচাপের পরিবর্তনঃ গ্লাইসিন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, তাই এর অতিরিক্ততা রক্তচাপের হ্রাস ঘটাতে পারে।
(৪)হৃদযন্ত্রের সমস্যাঃ গ্লাইসিনের অতিরিক্ততা হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম প্রভাবিত করতে পারে।

(৫)Catecholamines(ক্যাটেকোলামাইন)
ক্যাটেকোলামাইন হ’ল ক্যাটিকোল বর্গের অ্যামাইনজাত কতকগুলি রাসায়নিক যৌগ, যারা নিউরোট্রান্সমিটার বা হরমোন রূপে কাজ করে এবং অ্যাড্রিনালিন, নর-অ্যাড্রিনালিন ও ডোপামাইন সহযোগে গঠিত। উহারা অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির মেডালা অঞ্চলে সঞ্চিত হয়।
(ক)Dopamine(ডোপামিন)
ডোপামিন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার যা মস্তিষ্ক এবং শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জড়িত।
#ডোপামিনের কাজসমূহঃ
ডোপামিন একটি গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার যা মস্তিষ্ক এবং শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জড়িত।
(১)মোটর নিয়ন্ত্রণঃ ডোপামিন পেশী নিয়ন্ত্রণ এবং গতির সমন্বয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পার্কিনসন রোগে এই নিউরোট্রান্সমিটারের ঘাটতির ফলে পেশী নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়।
(২) এবং প্রেরণাঃ ডোপামিন আনন্দ ও প্রশান্তি অনুভূতির সাথে জড়িত। এটি মস্তিষ্কের প্রশান্তি ব্যবস্থার অংশ এবং বিভিন্ন আনন্দদায়ক কার্যকলাপের পরে এর মুক্তি ঘটে।
(৩)স্মৃতি এবং শিক্ষণঃ ডোপামিন শিক্ষণ ও স্মৃতির প্রক্রিয়ায় অবদান রাখে। এটি মস্তিষ্কের নিউরোনগুলির মধ্যে যোগাযোগ উন্নত করে।
(৪)মনোযোগ এবং কগনিশনঃ ডোপামিন মনোযোগ ও কগনিটিভ কার্যক্রমে সাহায্য করে, যেমন পরিকল্পনা, সমস্যা সমাধান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
(৫)মেজাজ নিয়ন্ত্রণঃ ডোপামিনের স্তর মেজাজ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

#ডোপামিনের মান কম হলে লক্ষণসমূহঃ
(১)মোটিভেশন ও এনার্জি কমে যাওয়াঃ কোনো কাজে উদ্যম বা আগ্রহের অভাব হতে পারে।
(২)দুঃখবোধ ও বিষণ্নতায়ঃ বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে।
(৩)কেন্দ্রবিন্দু ও মনোযোগের সমস্যাঃ মনোযোগ ধরে রাখা বা কোনো কাজে ফোকাস করতে সমস্যা হতে পারে।
(৪)শারীরিক ক্লান্তিঃ শারীরিকভাবে সবসময় ক্লান্ত বোধ করা।
(৫)মেমোরি সমস্যাঃ মনে রাখার ক্ষমতা কমে যাওয়া বা ভুলে যাওয়া সহজ হয়ে যেতে পারে।
(৬)অবসাদগ্রস্ততাঃ জীবনের প্রতি আগ্রহ হারানো বা নিজেকে অবসাদগ্রস্ত মনে হওয়া।
(৭)মোটর কার্যকলাপের সমস্যাঃ শরীরের চলাফেরায় সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

#ডোপামিনের মান বৃদ্ধি পেলে লক্ষণসমূহঃ
(১)উচ্চ উত্তেজনা এবং উচ্ছ্বাসঃ ডোপামিন বৃদ্ধি সাধারণত মনের উত্তেজনা এবং উচ্ছ্বাস বাড়াতে পারে।
(২)বাড়তি আত্মবিশ্বাসঃ অতিরিক্ত ডোপামিনের কারণে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বা অহংকার দেখা যেতে পারে।
(৩)বর্ধিত উদ্দীপনা এবং উদ্যমঃঅনেক সময়ে ডোপামিন বৃদ্ধি উদ্দীপনা এবং উদ্যম বাড়িয়ে দিতে পারে, যা অতিরিক্ত সক্রিয়তা বা বেশি পরিশ্রমের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
(৪)মনোযোগের অভাবঃ ডোপামিনের অতিরিক্ত মান মনোযোগ এবং কনসেন্ট্রেশনের অভাব সৃষ্টি করতে পারে।
(৫)অনিদ্রাঃ ডোপামিন বৃদ্ধি সাধারণত ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে, যা অনিদ্রার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
(৬)মস্তিষ্কে অতিরিক্ত উত্তেজনাঃ অতিরিক্ত ডোপামিনের কারণে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে, যা অনেক সময়ে মানসিক অসুস্থতার দিকে নিয়ে যেতে পারে, যেমন সিজোফ্রেনিয়া।

(খ) Epinephrine(এপিনেফ্রিন)
এপিনেফ্রিন যার অপর নাম হচ্ছে এড্রেনালিন (Adrenalin)। প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রের নিউরোট্রান্সমিটার। ভয়, ক্লান্তির মতো ব্যাপারগুলো সাথে মোকাবেলা করার জন্য উদ্দীপনা, সাহস যোগায় এই নিউরোট্রান্সমিটার। হার্ট রেট, ব্লাড স্যুগার, রক্ত সংবহন ইত্যাদি ব্যাপারগুলোর সাথে এটি সম্পর্কিত।
#এপিনেফ্রিনের কাজঃ
এপিনেফ্রিন (এড্রেনালিন) একটি শক্তিশালী হরমোন এবং নিউরোট্রান্সমিটার যা অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড দ্বারা নিঃসৃত হয়। এটি শরীরে বিভিন্ন ধরনের শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এপিনেফ্রিনের প্রধান কাজগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
(১)হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ বৃদ্ধিঃ এটি হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, যা শরীরে রক্ত প্রবাহ বাড়াতে সহায়তা করে।
(২)শ্বাসপ্রশ্বাসের উন্নতিঃ এপিনেফ্রিন ব্রঙ্কাইল মাংসপেশীগুলিকে শিথিল করে, যার ফলে শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ হয়।
(৩)গ্লুকোজ লেভেল বৃদ্ধি করাঃ এটি লিভার থেকে গ্লাইকোজেন ভেঙে গ্লুকোজ তৈরি করে এবং রক্তে গ্লুকোজ লেভেল বাড়ায়, যা শরীরকে তাৎক্ষণিক শক্তি প্রদান করে।
(৪)মাংসপেশী এবং হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি: এটি মাংসপেশী এবং হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, যা শারীরিক পরিশ্রমের সময় সহায়তা করে।
(৫)ফাইট-অর-ফ্লাইট প্রতিক্রিয়াঃ এপিনেফ্রিন শরীরের 'ফাইট-অর-ফ্লাইট' প্রতিক্রিয়া সক্রিয় করে, যা বিপদ বা চাপের পরিস্থিতিতে শরীরকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া করতে সহায়তা করে।এপিনেফ্রিন সাধারণত চাপ, উত্তেজনা, বা শারীরিক পরিশ্রমের সময় নিঃসৃত হয়।

#এপিনেফ্রিনের মান কম হলেঃ
এপিনেফ্রিন (এড্রেনালিন) হল একটি হরমোন এবং নিউরোট্রান্সমিটার যা শরীরের "ফাইট-অর-ফ্লাইট" প্রতিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এপিনেফ্রিনের মান কম হলে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে:
(১)লো ব্লাড প্রেসার (হাইপোটেনশন): এপিনেফ্রিন রক্তচাপ বাড়াতে সহায়তা করে, তাই এর অভাব রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে।
(২)দুর্বলতাঃএপিনেফ্রিন শক্তি ও সজাগতা বৃদ্ধি করে, তাই এর অভাবে দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
(৩)ডিপ্রেশন ও উদ্বেগঃমস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে এপিনেফ্রিনের ভূমিকা থাকে মুড নিয়ন্ত্রণে, তাই এর মান কম হলে ডিপ্রেশন ও উদ্বেগ বৃদ্ধি পেতে পারে।
(৪)ব্লাড সুগার লেভেল কম হওয়াঃ এপিনেফ্রিন ব্লাড সুগার বাড়াতে সহায়তা করে, তাই এর মান কম হলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।
(৫)স্ট্রেসে প্রতিক্রিয়া কম হওয়াঃ স্ট্রেসের সময় এপিনেফ্রিন শরীরকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে সাহায্য করে। তাই এর মান কম হলে স্ট্রেসে প্রতিক্রিয়া দুর্বল হতে পারে।

(গ)Norepinephrine(নরএপিনেফ্রিন)
নরএপিনেফ্রিনের অপর নাম নরএড্রিনালিন।প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রের নিউরোট্রান্সমিটার (Neurotransmitter of peripheral nervous system)।
#নরএপিনেফ্রিনের কাজঃ
নরএপিনেফ্রিন হল একটি নিউরোট্রান্সমিটার এবং হরমোন যা মানসিক চাপের প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়া এবং বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে এর প্রাথমিক ফাংশন রয়েছে:
(১)ফাইট-অর-ফ্লাইট রেসপন্সঃ হল শরীরের লড়াই-বা-ফ্লাইট প্রতিক্রিয়ার একজন মূল খেলোয়াড়, যা একটি অনুভূত হুমকির প্রতিক্রিয়া জানাতে শরীরকে প্রস্তুত করে। এটি তীব্র চাপের সময় অ-প্রয়োজনীয় সিস্টেমে রক্ত প্রবাহ হ্রাস করার সময় পেশীগুলিতে হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ এবং রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে।

(২)মেজাজ নিয়ন্ত্রণঃ মস্তিষ্কে,নরএপিনেফ্রিন মেজাজ এবং উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণের সাথে জড়িত। এটি সতর্কতা, শক্তির মাত্রা এবং ফোকাস করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। নরএপিনেফ্রিন স্তরের ভারসাম্যহীনতা মেজাজ ব্যাধি যেমন বিষণ্নতা এবং উদ্বেগের সাথে যুক্ত।

(৩)জ্ঞানীয় ফাংশনঃ নরএপিনেফ্রিন,শিক্ষা এবং স্মৃতিতে ভূমিকা পালন করে। এটি ফোকাস এবং স্মৃতির একত্রীকরণ বাড়াতে সাহায্য করে, বিশেষ করে চাপযুক্ত বা আবেগগতভাবে চার্জ করা ইভেন্টের সময়।

(৪)স্লিপ-ওয়েক সাইকেলঃ এটি জাগরণ এবং সতর্কতা প্রচার করে ঘুম-জাগ্রত চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। উচ্চ মাত্রার নরএপিনেফ্রিন জাগ্রত এবং সতর্ক থাকার সাথে যুক্ত, যখন নিম্ন স্তরগুলি ঘুমের সাথে যুক্ত থাকে।

(৫)ব্যথার মডুলেশনঃ নরএপিনেফ্রিন ব্যথার ধারণাকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি শরীরের প্রাকৃতিক ব্যথা-ত্রাণ প্রক্রিয়া উন্নত করতে পারে, এটি নির্দিষ্ট ব্যথা ব্যবস্থাপনা থেরাপির জন্য একটি লক্ষ্য করে তোলে।

(৬)স্বায়ত্তশাসিত ফাংশনঃ স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের অংশ হিসাবে নরএপিনেফ্রিন হার্ট রেট, রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রার মতো ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
সংক্ষেপে স্ট্রেসের প্রতিক্রিয়া, মেজাজ নিয়ন্ত্রণ, জ্ঞানীয় ফাংশন বৃদ্ধি, ঘুম পরিচালনা, ব্যথার মডুলেটিং এবং স্বায়ত্তশাসিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য নোরপাইনফ্রাইন অপরিহার্য।

#নরএপিনেফ্রিনের মাত্রা কম হলেঃ
(১)বিষণ্নতাঃ নির্দিষ্ট মস্তিষ্কের অঞ্চলে নরএপিনেফ্রিন নিম্ন স্তরের হতাশাজনক লক্ষণগুলির সাথে যুক্ত। Norepinephrine reuptake inhibitors (NRIs) এবং অন্যান্য antidepressants লক্ষ্য করে নরএপিনেফ্রিন পথগুলি বিষণ্নতার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
(২)মনোযোগ ঘাটতি হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD): হ্রাসকৃত নরএপিনেফ্রিন কার্যকলাপ ADHD এর লক্ষণগুলিতে ভূমিকা পালন করে বলে মনে করা হয়।
(৩)হাইপোটেনশন (নিম্ন রক্তচাপ): রক্তচাপ বজায় রাখার জন্য নরএপিনেফ্রিন গুরুত্বপূর্ণ। হ্রাস হাইপোটেনশনের দিকে নিয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে সেপটিক শকের মতো পরিস্থিতিতে।

(৪)পারকিনসনের রোগঃ লোকাস কোরুলিয়াসে নিউরন অবক্ষয়ের কারণে পারকিনসন রোগে নরএপিনেফ্রিনের মাত্রা প্রায়ই কমে যায়। এটি রোগের মোটর এবং নন-মোটর উভয় উপসর্গে অবদান রাখে।
(৫)ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম (সিএফএস): এমন প্রমাণ রয়েছে যে পরিবর্তিত নরএপিনেফ্রিন সিগন্যালিং গভীর ক্লান্তি এবং জ্ঞানীয় অসুবিধা সহ সিএফএসের লক্ষণগুলিতে অবদান রাখতে পারে।

(৬)Histamine(হিস্টামিন)
হিস্টামিন প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রের নিউরোট্রান্সমিটার
এটি আমাদের জেগে থাকা, খাওয়া-দাওয়া, কাজ করার আগ্রহ ইত্যাদির সাথে সম্পর্কযুক্ত। একই সাথে এটির সম্পর্ক রয়েছে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন এজমা (Asthma), ব্রঙ্কোস্পাজম (Bronchospasm), মিউকোসাল এডিমা (Mucosal Edema)
#হিস্টামিনের কাজসমূহঃ
হিস্টামিন একটি জৈব যৌগ যা বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে কিছু প্রধান কাজসমূহ হল-
(১)প্রদাহ প্রতিক্রিয়া (Inflammatory Response): হিস্টামিন শরীরের প্রদাহ প্রতিক্রিয়ায় একটি মূল ভূমিকা পালন করে। এটি আঘাত বা সংক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় মুক্তি পায় এবং প্রদাহ সৃষ্টিকারী সেলগুলিকে সক্রিয় করে।

(২)অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া (Allergic Reaction): হিস্টামিন বিভিন্ন এলার্জেনের প্রতিক্রিয়ায় মুক্তি পায় এবং এটি এলার্জি উপসর্গ যেমন হাঁচি, চোখে পানি আসা, এবং ত্বকে ফুসকুড়ি সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।

(৩)গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড নিঃসরণ (Gastric Acid Secretion): হিস্টামিন পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড নিঃসরণে সহায়ক হয়, যা খাবার হজমে সাহায্য করে।
(৪)স্নায়ুতন্ত্রে কার্যকলাপ (Neurological Functions): হিস্টামিন মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে এবং এটি ঘুম, জাগরণ এবং ক্ষুধার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে।
(৫)রক্তনালীর প্রভাব (Vascular Effects): হিস্টামিন রক্তনালীর প্রাচীর প্রসারণে সাহায্য করে, যা রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

#হিস্টামিনের মান কমে যাওয়ার লক্ষণসমূহঃ
হিস্টামিনের মাত্রা কমে যাওয়ার লক্ষণসমূহ বেশ ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, হাইস্টামিন শরীরে একাধিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকে, তাই এর কমে যাওয়া বিভিন্ন লক্ষণে প্রকাশিত হতে পারে। এখানে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেওয়া হল-
(১)অতিরিক্ত ঘুমানো প্রবণতাঃ হাইস্টামিন ঘুম নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, তাই এর কমে যাওয়া ঘুমের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
(২)হাইপোথার্মিয়াঃ শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া।
(৩)হ্রাস পাওয়া মানসিক উদ্দীপনাঃ মনোযোগ, একাগ্রতা ও স্বতঃস্ফূর্ততায় সমস্যা হতে পারে।
(৪)মাংসপেশির দুর্বলতাঃশারীরিক শক্তি ও ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
(৫)খাদ্য হজমের সমস্যাঃ পেট ফাঁপা, গ্যাস, বমি বমি ভাব হতে পারে।
(৬)অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া কমে যাওয়াঃ হাইস্টামিন অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ায় সহায়তা করে, তাই এর মাত্রা কমে গেলে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া কম হতে পারে।
(৭)ত্বকের শুষ্কতাঃ ত্বকের আর্দ্রতা কমে যেতে পারে।
(৮)মানসিক অবসাদঃ মন খারাপ, বিষণ্নতা বা দুশ্চিন্তার প্রবণতা বাড়তে পারে।

#হিস্টামিনের মান বৃদ্ধিজনিত লক্ষণসমূহঃ
হিস্টামিনের মান বৃদ্ধির কারণে শরীরে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সাধারণত,এই লক্ষণগুলো এলার্জির সঙ্গে সম্পর্কিত হয়। কিছু সাধারণ লক্ষণ হল-
(১)ত্বকের সমস্যাঃ চুলকানি,ফুসকুড়ি এবং ত্বক লাল হওয়া।
(২)শ্বাসকষ্ট: হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, এবং নাক বন্ধ হওয়া।
(৩)চোখের সমস্যাঃ চোখ চুলকানো, লাল হওয়া, এবং চোখ দিয়ে পানি পড়া।
(৪)পেটের সমস্যা: পেট ব্যথা, ডায়রিয়া এবং বমি।
(৫)মাথাব্যথাঃ মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেন।
(৬)হৃদরোগঃ হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যাওয়া।
(৭)অন্যান্য লক্ষণঃ ক্লান্তি, মাথা ঘোরা এবং রক্তচাপ কমে যাওয়া।
(৭)Serotonin:
সেরোটোনিন (Serotonin) একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে সংকেত প্রেরণ করে। এটি প্রধানত মস্তিষ্কে, অন্ত্রে এবং রক্ত প্লেটলেটগুলিতে পাওয়া যায়

23/05/2024

ল্যাকেসিসের পরের পার্ট আলাদা করে না দিয়ে আগের রচনাটির সাথেই মিশিয়ে এখানে পুনরায় পোস্ট করলাম।

ল্যাকেসিস

এই ওষুধটি শুরুকুকু নামক সাপের বিষ থেকে তৈরি হয়েছে। এই সাপ দক্ষিণ আমেরিকার অরণ্যে পাওয়া যায়। এটি একটি অত্যন্ত বিষধর সাপ। ডাঃ হেরিং নিজে এই সাপের বিষ সংগ্রহ করে নিজ শরীরে পরীক্ষা করেছিলেন।

ল্যাকেসিসের বেশ কয়েকটি লক্ষণ সাপের গতিবিধি এবং চরিত্রের সাথে মিল আছে।

একটি সাপের প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য খেয়াল করেছো কি সবাই? আমি খেয়াল করেছি। সাপের সেইসব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাথে ল্যাকেসিসের কয়েকটি চারিত্রিক লক্ষণ বেশ ভালই মিলে যায়।

যেমন -------

১) শরীরের বাম দিকে রোগের শুরু হয়, তারপর শরীরের ডান দিকে রোগটি যেতে পারে, কিংবা দুই দিকেই রোগটি আছে তবে তূলনামূলকভাবে বামদিকেই বৃদ্ধি।

আমি দেখেছি সাপুড়েরা খেলা দেখানোর সময় তাদের তৈরি গোলাকার ঝাঁপি থেকে সাপটি বের করে খেলা দেখানোর পরে আবার যখন ঝাঁপিতে ঢুকায় সাপ কখনো ডান দিক দিয়ে ঘোরে না, সবসময় বাম দিক দিয়ে ঘুরে কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকে। সাপের এই বাম দিকে বাঁক নেওয়ার বা ঘোরার সাথে ল্যাকেসিসের বাম দিকের বৃদ্ধির মিল পাওয়া যায়, কারণ ল্যাকেসিসের সব রোগলক্ষন বাম দিকে বৃদ্ধি পায়।

২) ল্যাকেকিস রোগীর মধ্যে হিংসা প্রবল। ভীষণ হিংসা তার মনে। অন্যের টাকা পয়সা, গাড়ি বাড়ি, প্রভাব, ঐশ্বর্য, সবকিছুতে তার হিংসা। মহিলারা তার থেকে সুন্দরী নারী দেখলে হিংসায় জ্বলে যায়, তারা চায় না তার স্বামী কোন সুন্দরী মহিলার দিকে তাকায়। এই হিংসা বা ঈর্ষা থেকে তাদের অনেক রোগের উৎপত্তি হয়, তবু হিংসা বা ঈর্ষা পরিত্যাগ করতে পারে না ।

সাপের চরিত্রও তাই। সাপ খুব হিংসুটে, এত হিংসা তাদের মনে যে সামান্যতম সুযোগ পেলেই তারা কাউকে কামড় দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করে না। অনেকে বলেন সাপ হিংসায় কামড়ায় না, ভয়ে কামড়ায়। কিন্তু এই কথাটা মানতে আমার মন চায় না, ভয় পেলে সে নিচু হয়ে সব সময় পালানোর চেষ্টা করবে, ফনা তুলে উদ্ধতভাবে কামড়াবে না। সুতরাং সাপের চরিত্রের সাথে হুবুহু মিলে যায় ল্যাকেসিসের চরিত্র, বড় হিংসা তাদের মনে।

৩) ল্যাকেসিস রোগীর মনে অতিশয় সন্দেহ । মহিলারা মনে করে তার স্বামী অন্য মহিলার সাথে প্রেম করে, অসুস্থ অবস্থায় মনে করে তার ঔষধের মধ্যে কেউ বিষ মিশিয়ে দিয়েছে, ইত্যাদি।

সাপের মনে অত্যন্ত সন্দেহ, তাই দেখা যায় সাপুড়েরা যখন বাঁশি বাজায়, সাপটি বাঁশির মাথা যেদিকে ঘোরে, তাদের ফনা তোলা মাথাটা বাঁশির তালে তালে সেই দিকেই নিয়ে যায়, তার মানে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে সাপ অতি সতর্কভাবে সাপুড়ের বাঁশিটাকে শত্রু মনে করে খেয়াল রাখে, তার দিকে এগিয়ে আসলই ছোবল মারবে। অসম্ভব সন্দেহের বহিঃপ্রকাশ এটা। ল্যাকেসিস রোগীদের মনে আমরা এমন সন্দেহের প্রকাশ দেখতে পাই ।

৪) ল্যাকেসিসের ঘুমের মধ্যে, বা ঘুমের পরে সব রোগের বৃদ্ধি হয় ,

বেশিরভাগ সাপ কামড়ায় তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে। সাপেরা সাধারণত ঘুমায় নির্জন ঠান্ডা জায়গায়, যেমন কলা গাছের গোড়ায়, পুকুরের ঘাটের ফোকরে, ঝাঁপ মেরে রাখা গাছের ডালপাতা বা ফসলের মাঝে, ঘুঁটে জমিয়ে রাখার গুদামের ফাঁকে, খড়ের গাদার নীচে, বা যে কোন ফাঁক ফোঁকড়ে। সেই সময় আচমকা কেউ তার শরীরের কোন অংশে বা লেজে পা ফেললে সাপ মুহূর্তের মধ্যে কামড়ায়। সুতরাং ঘুমের ডিসটার্বে বৃদ্ধি, বা ঘুমের মধ্যে বৃদ্ধি, বা ঘুমের পরে বৃদ্ধি সাপের যে সাধারণ বৈশিষ্ট্য, তা ল্যাকেসিসের সর্ব ক্ষেত্রে প্রবলভাবে পাওয়া যায়।

৫) ল্যাকেসিসের বসন্তকালে রোগের বৃদ্ধি,

সাপেরা শীতকালে খুব একটা বেরোয় না, মাটির নিচে গর্তের মধ্যে, বা পোড়ো বাড়ির ফাটা দেওয়ালের ফোকরে লুকিয়ে থাকে, কিন্তু যেই শীত শেষ হয়ে, বসন্তের আগমন হয়, এরা কিলবিল করে বাইরে বেরিয়ে পড়ে। তাই সাপের তেজি মনোভাব নিয়ে বসন্ত কালে বেরুনোর সাথে ল্যাকেসিসের বসন্তকালে রোগ বৃদ্ধির মিল পাওয়া যায়।

৬) ল্যাকেসিস রোগীকে জিভ দেখাতে বললে দেখা যায় জিভটা কাঁপে, বা জিভটা প্যারালিসিসের মতন হতে দেখা যায়, মুখ থেকে জিভটা ঠিক মতন বের করতে পারে না।

সাপের জিভও অনুরূপভাবে কাঁপতে থাকে, একবার মুখগহবরে ঢোকায়, আবার বের করে। সুতরাং এক্ষেত্রেও সাপের বৈশিষ্ট্যের সাথে ল্যাকেসিসের মিল আছে।

ল্যাকেসিসের এই কয়েকটি সিমপটমস একটা সাপের জীবনচক্রের সাথে বেশ ভালোই মিল আছে। কিন্তু এছাড়াও আরো অনেক চরিত্রগত লক্ষণ আছে।

যেমন ---

৭) ভীষণ শারীরিক স্পর্শকাতরতা

জামা প্যান্ট বা পরনের কাপড় টাইট ফিটিং একেবারেই পছন্দ করে না, কারণ কাপড়চোপড় শরীরে আঁটোসাঁটো হয়ে থাকলে বড্ড অস্বস্তি বোধ হয়, সব রকম অন্তর্বাস, পায়ের মোজা, ইত্যাদি টাইট হলে ভীষণ অস্বস্তি বোধ করে, পুরুষরা তাদের জামার গলার কাছের বোতাম লাগাতে পারে না।

শারীরিক স্পর্শকাতরতা অত্যন্ত বেশি থাকার জন্য ল্যাকেসিস রোগীরা তাদের শরীরে ফোঁড়া,কার্বাঙ্কল, বা কোন ক্ষত, বা ঘায়ে সামান্যতম স্পর্শ সহ্য করতে পারে না।

৮) জিভ কাঁপে

জিভের লক্ষণ অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য, জিভ বের করে দেখাতে বললে দেখা যায় জিভ কাঁপতে থাকে বা সম্পূর্ণ বের করতে পারে না, কারণ জিভে প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতের মতন অবস্থার সৃষ্টি হয়।

৯) অত্যন্ত বেশি কথা বলে, চলতি বাংলায় যাকে বলা হয় বাচালতা।

ল্যাকেসিস রোগীরা কোন জিনিস বলতে আরম্ভ করলে ঘন্টার পর ঘন্টা বলতে থাকে, এক বিষয়ে বলতে বলতে অন্য বিষয়ে চলে যায়, তার থেকে আবার অন্য বিষয়ে, এইভাবে সে তার বক্তব্যের খেই হারিয়ে ফেলে এবং ক্রমাগত বকেই চলে।

১০) গরম বেশী,

এদের গরম বেশী, গরম একেবারেই সহ্য করতে পারে না। আগেই বলেছি ল্যাকেসিস যেহেতু সাপের বিষ থেকে তৈরি হয়েছে তাই সাপের অনেকগুলি সাধারণ লক্ষণ এর মধ্যে বর্তমান। সাপ মোটেই গরম সহ্য করতে পারেনা, সব সময় ঠান্ডা জায়গায় থাকতে ভালোবাসে, ল্যাকেসিসের রোগীদের ক্ষেত্রেও আমরা তাই দেখি । ঠান্ডা হাওয়া খুব পছন্দ করে।

১১) রক্তস্রাবের প্রবনতা
( হেমারেজিক ডায়াথেসিস )

সাপে কামড় দিলে আমরা দেখতে পাই কাটা জায়গা দিয়ে যে রক্ত ঝরতে থাকে তা জমাট বাঁধে না। কারণ, সাপের বিষে এক ধরনের অ্যান্টি-কোএ্যাগুলেন্ট থাকে যা রক্তের মধ্যে থাকা রক্তকে জমাট বাঁধাকে সাহায্য করা কেমিক্যাল হেপারিনকে ভেঙে দেয় ফলে রক্ত যে স্বাভাবিকভাবে জমাট বাঁধে সেই প্রক্রিয়া ব্যহত হয়। ফলে ল্যাকেসিস সহ সব রকম সাপের বিষ থেকে তৈরি হওয়া ঔষধগুলিতে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা থাকে না, এবং সামান্য ক্ষত থেকে প্রচুর পরিমাণে রক্ত বেরুতে থাকে। নাক দিয়ে বা দাঁতের গোড়া দিয়ে, মলদ্বার দিয়ে, পুরুষদের পুরুষাঙ্গের বহিঃপথ দিয়ে, মেয়েদের যোনিপথ দিয়ে প্রায় কারণে অকারণে রক্তস্রাবের প্রবণতা থাকে।

১২) মহিলাদের মাসিক চক্র শেষ হওয়ার সময় অনেক রোগের সৃষ্টি হয়,

চিকিৎসা শাস্ত্রে এই সময়ের এই ধরনের রোগগুলিকে একত্রে বলা হয় --ক্লাইমেকটারিক ডিসঅর্ডার, বা মেনোপজাল সিনড্রোম। কিছু হরমোন কাট অফ হওয়ার জন্য বহু মহিলারা এই সময়ে নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হন, যেমন --- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, ঘুম হতে চায় না, শরীরে সব সময় গরম ভাব লাগে, মাঝে মাঝে মনে হয় শরীরের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে গরম হলকা বেরুচ্ছে, বা শরীরে এই গরম, এই ঠান্ডা লাগছে, ইত্যাদি। ল্যাকেসিস এইসব উপসর্গ দমনে যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে, যেমন -- অর্শ, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা, হার্টের রোগ, মানসিক রোগ, ইত্যাদি।

( এই রোগলক্ষণের অন্যান্য কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঔষধ হচ্ছে --- এ্যামিল নাইট্রেট, গ্রাফাইটিস, স্যাংগুনেরিয়া ক্যান , সিপিয়া, সালফার, ইত্যাদি )।

১৩) সকল রকম নর্মাল শারীরিক অর্থাৎ ফিজিওলজিক্যাল ডিসচার্জ বা স্রাবে আরাম ----

ল্যাকেসিস এবং জিঙ্কাম মেট ঔষধ দুইটিতে একটা অদ্ভুত লক্ষণ পাওয়া যায় -- শরীরের নর্মাল স্রাব যাকে আমরা ফিজিওলজিক্যাল ডিসচার্জ বলি, এমন ডিসচার্যে সব রকম কষ্ট কমে যায়। যেমন নাক থেকে প্রচুর পরিমাণে সর্দি বেরুতে থাকলে, গলা থেকে প্রচুর পরিমাণে কফ বেরুতে থাকলে, প্রচুর পরিমাণে প্রস্রাব হয়ে গেলে, পায়খানা ক্লিয়ার ভাবে হয়ে গেলে , দরদর করে ঘাম বেরুতে থাকলে এবং মেয়েদের মাসিকস্রাব হয়ে গেলে তাদের সকল কষ্ট বা রোগ যন্ত্রণার অবসান হয়।

( ডিসচার্জে কষ্ট বাড়ে --- ক্যাল্কেরিয়া, সিমিসিফুগা, গ্রাফাইটিস, ফসফরাস, ফসফরিক এ্যাসিড, ভিরেট্রাম, ইত্যাদি )

১৪) গোল বলের মতন কিছু যেন শরীরের কোথাও আটকে আছে।

ল্যাকেসিসের একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হচ্ছে গলার মধ্যে বা পেটের মধ্যে, বা প্রস্রাবের থলির মধ্যে, বা মেয়েদের জরায়ু বা যৌনাঙ্গের মধ্যে গোল বলের মতন কিছু যেন আটকে আছে এবং তা ঘোরাঘুরি করছে। এই অদ্ভুত লক্ষণে এবং তার সাথে ল্যাকেসিসের আর দুই চারটা লক্ষণ মিলে গেলে ল্যাকেসিস দিয়ে আমরা অনেক রোগ আরোগ্য করতে পেরেছি।

( এই অদ্ভুত লক্ষণটি অন্যান্য আর যেসব ঔষধের মধ্যে আছে
তারা হচ্ছে --- এ্যাসারাম, এ্যাসাফিটিডা, সিপিয়া, স্টাফিসেগ্রিয়া, ইত্যাদি ),

( মনে হয় পেটের মধ্যে জীবন্ত কিছু ঘুরছে --- ক্রোকাস, সালফার, থুজা, ভিরেট্রাম ) ,

১৫) মাসিক প্রতিমাসে ঠিক সময়ে অর্থাৎ নির্দিষ্ট তারিখে হয়, বেশিদিন আগে পরে হয় না ( নাকস ),

( মাসিক ঠিক সময়ে হয় না সব সময় দেরী করে অর্থাৎ দিন পিছিয়ে হয় -- গ্রাফাইটিস, নেট্রাম মিউর, পালসেটিলা, ইত্যাদি ) ,

১৬) ঘুমের মধ্যে, বা ঘুম থেকে উঠার অব্যবহিত পরে যে কোনো রোগের সূচনা হয়, বা বৃদ্ধি হয় -- যেমন --কাশি, শ্বাসকষ্ট, কনভালশন, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, শরীরের অবশ ভাব, কোন ব্যথা বেদনা, বা মানসিক অস্বস্তি, রাগরাগ ভাব, ইত্যাদি ।

( ঘুমের মধ্যে রোগ বৃদ্ধি ---বিউফো, ক্যামো, লাইকো, মার্ক সল, ওপিয়াম, সাইলিসিয়া, ইত্যাদি )

১৭) সাপের ভয়, সাপের স্বপ্ন দেখে

১৮) মনে করে তার উপরে কোন ঠাকুর বা দেবতা ভর করেছে,

১৯) বৃদ্ধি --- শরীরের বাম দিকে বাড়ে দীর্ঘমেয়াদি রোগ হলে প্রত্যেক বসন্তকালে বাড়ে, রৌদ্রে গেলে সব রোগ বাড়ে, ঘুমের মধ্যে বাড়ে, ঘুমের পরে বাড়ে,

( আরও অল্প কিছু যোগ করবো পরে )

Address

"Natural Homoeo Pharmacy"/A Division Of Natural Health Care, Senhati Colony, Near Fire Brigade, Post+P. S./Bishnupur, Dist/Bankura, Pin-.
Bishnupur
722122

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when World Homoeopathic Wellness posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Share on Facebook Share on Twitter Share on LinkedIn
Share on Pinterest Share on Reddit Share via Email
Share on WhatsApp Share on Instagram Share on Telegram

Category