19/05/2025
সানন্দা তে আমার একখান লেখা বেরিয়েছিল। কিন্তু লেখা টা পড়ে দেখবো কি,আগের পাতা গুলো যে রোমহর্ষক।
উত্তম বাবুর স্ত্রী গৌরী দেবী, প্রথমে সাবিত্রী দেবী কে খুব একচোট গালি দিয়েছেন, তারপর উত্তম বাবু যখন সুপ্রিয়া দেবীর বাড়ি চলে গেছেন, তখন আবার সাবু সাবু করে সে কি কান্না।
রাজ কাপুর নার্গিস র বিয়ে র খবরে মুহ্যমান হয়ে নেশার পাত্র হাতে নিয়ে বাথটাব এ প্রায় ডুবে যান আর কি। খেলার জগতে shane warne র বৌ হাতে নাতে তাঁকে প্রেমিকা র সাথে পাকড়াও করবেন বলে দাঁড়িয়ে আছেন।
এই সব গল্পের মাঝে আমার সাদা মাটা ডাক্তারী বিষয়ে জ্ঞান খাবি খেতে খেতে ডুবেই মরেছে।
সে যাক গে, এই যে এই কর করে প্রচ্ছদ যার নাম "পরকীয়া ", সেই নিয়ে এক বড়ই অদ্ভুত অভিজ্ঞতা র সম্মুখীন আমি হই বছর দুই আগে।
শীতকাল তখন, সেদিন বেশ ঠান্ডা, ঝুপ করে বিকেল বেলায় ই সন্ধ্যে নেমে পড়েছে। শেক্সপীয়ার সরণি র আমার যে চেম্বার সেও প্রায় শেষের পথে, আর গোটা দু জন কে দেখলেই আমার ছুটি।
এমন সময় সেই ভদ্রমহিলা এলেন, বাড়ি তাঁর ঢাকা পেরিয়ে কোনো শহর এ। (বছর দুই আগে শেক্সপীয়ার সরণি র ওই চেম্বার এ আসতেন বেশ কিছু বাংলাদেশ র মানুষ জন, নানা রোগ ভোগ নিয়ে )
ভদ্রমহিলার বয়স ত্রিশের মধ্যেই, মুখটার মধ্যে বেশ একটি লাবণ্য মাখানো আছে, চোখ দুটি দীঘল।
বলতে থাকলেন তাঁর নানা অসুবিধা র কথা, মাথায় ব্যাথা, ঘাড়ে ব্যাথা, প্রভৃতি। আমাদের একটি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় এই ব্যাপার এ বড়ই সচেতন, রোগী যখন কিছু লুকাতে নানা রোগের অছিলা দেন, আমরা ঠিক বুঝতে পারি। মিনিট দশেক পর পেন টা রেখে, ওনার চোখের দিকে সটান তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ব্যাপার টা কি, আসলে হয়েছে কি আপনার, কেন এসেছেন।
সাথে সাথে তিনি সরে এসে আমার কাছাকাছি চলে এলেন। ফিস ফিস করে বললেন, জামাই আমার দেখাতে আসবে আপনার কাছে (জামাই বলতে ওরা কিন্তু বোঝায় স্বামীকে -সেটা আমার জানার পেছনে আরেকটি গল্প আছে, সে হবে অন্যদিন ক্ষণ )কিন্তু আসবে অন্য মেয়ে কে বৌ সাজিয়ে, ওর affair চলছে আমি ধরে ফেলেছি। সে India এসেছে, girlfriend রে নিয়ে, আমিও পিছু পিছু গোয়েন্দা নিয়ে এসেছি। (ওনার ভাষার dialect টা আমি ঠিক তুলে ধরতে পারলুম না )। কথা টা শুনে সম্বিৎ ফিরে পেতে কয়েক সেকেন্ড লাগলো, তারপর বললাম, আপনার স্বামী কে আপনি ধরবেন এর মধ্যে আমি কি করবো?
উনি বললেন না না ম্যাডাম পুরো টা শুনুন। ওনার মৃগী রোগ আছে, উনি আপনারে দেখাইতে আসবেন, সাথে girlfriend র মাথায় ব্যাথা ও দেখিয়ে নিয়ে যাবেন।
আমি বললাম উনি এতো জন neurologist এই ক্লিনিক এ থাকতে আমাকেই দেখাবেন আপনি কি করে জানলেন?
ভদ্রমহিলা বলেন তখন ম্যাডাম আমি না, আমি গোয়েন্দা লাগাইসি, সে ও সাথে আছে, সে বলসে।
ডাকবো ওনারে?
বাংলাদেশী আধুনিক গোয়েন্দা যিনি পরকীয়া র ওপর কাজ করেন কখনো দেখিনি। কৌতূহল হলো বৈকি। বললাম ডাকুন।
গোয়েন্দা আসবে বলতে ভাবছিলাম, ফেলুদা, ব্যোমকেশ মার্কা না হোক, নিদেন পক্ষে একেনবাবু তো হবেনি। যিনি এলেন তাঁকে দেখে ছেলের কাছে শোনা একটি গান র কথা মনে পড়ে গেলো -"ফড়িং বাবু র বিয়ে, চমচিকিতে বাজনা বাজায় টোপর মাথায় দিয়ে "। গোয়েন্দা দেখে হতাশ হওয়াটাকে যতদূর সম্ভব চেপে রেখে ফড়িং বাবু কে বললাম, যে দেখুন এই বিষয় টি তো আমার speciality তে পরে না, ওনার স্বামী র এই আচরণে ওনার ডিপ্রেশন বা anxiety জাতীয় symptoms হলে উনি বরং psychiatrist দেখান। ফড়িং বাবু বললেন, ওনার ওসব কিছুই হয়নি, আমরা এসেছি অপরাধীকে হাতে নাতে ধরবো বলে। ওনার স্বামী ছবি আপনাকে দেখাচ্ছি, ইনি হয়তো আজ ই আপনার কাছে আসবেন অন্য এক মহিলাকে স্ত্রী বলে নিয়ে। এনারা ঢুকলেই আপনি আমার নম্বর এ একটা কল দিবেন, আমরা খপাৎ করে এসে ধরবো।
এরম অদ্ভুত প্রস্তাব আমি জীবনে আগে পাইনি।
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি, এবার ভদ্রমহিলা এগিয়ে এসে বললেন আপু এই কাজ খান আপনারে করতেই হইবো, দয়া করেন আপনি। আমরা ওই ঘরের ভিতরে ওনাকে ধরবো, তারপর ওই ঢলানি মেয়ে মানুষের দেখবেন একটা একটা করে চুল আমি ছিঁড়ে নেবো।
শুনেই তো আমার ভয় এ গলা শুকিয়ে গেলো। মানে ওই দুই মহিলা চুলো ছুলি করবেন, collateral damage হিসেবে যে কোনো মুহূর্তে আমার পিঠেও একটি কিল বসিয়ে দিতে পারেন।
আমি বললাম দেখুন আমার চেম্বার আজ এখানেই সমাপ্ত। আপনারা এই ব্যাপার এ কর্তৃ পক্ষে র সাথে যোগাযোগ করুন, অথবা কলকাতা পুলিশ র সাহায্য চান। আমি আমার বিষয় ছাড়া আর কোনো ব্যাপার এ সাহায্য করতে অপারগ, আর গোয়েন্দাগিরি টা মোটেই আসেনা।
ফড়িং বাবু তখন বললেন ঠিকাছে ম্যাডাম আজকের মতো আমরা আসছি, তবে উনি যদি আসেন একটা দয়া করে কল দেবেন, আমরা চেম্বার র বাইরেই ওনারে ধরবো।
হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম, কিন্তু এ ও বুঝলাম ভদ্রমহিলা চুলের মুঠি ধরার প্রতিজ্ঞা য় অনড়, তারপর কি হয়েছিল আর জানিনা, তবে ভদ্রলোকের ছবি যা দেখেছিলাম ওনার চুল নেই, অতএব চুল ধরে ওনাকে টানতে পারবে না।
পরকীয়া র সেই রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা আর হয়নি, তবে অনেক রোগীর কাছে নানা কাহিনী তো শুনেইছি।
কিছুদিন আগেই Murakami মহাশয় র একটি বই যার নাম "Men without women"পড়লাম, তাতে উনি একটি গল্প লিখেছেন, এক সফল জাপানি ডাক্তার, ৫২ বছরে এক অত্যাশ্চর্য পরকীয়া র টানে কিভাবে মৃত্যু র কোলে ঢোলে পড়লেন।
Murakami প্রায় নোবেল জয়ী, তার প্রতিটি গল্পেই এক আশ্চর্য টান, কিন্তু এই বিশেষ কাহিনী টি আপনাকে অন্যভাবে নাড়িয়ে দেবে।
নিষিদ্ধ যা সামাজিক ভাবে তার টান হয়তো সব জীবনেই অশান্তি আর পরিশেষ এ হতাশা নিয়ে আসে।
আমার রোগী কথা অসমাপ্ত রয়ে গেলো, কারণ আমি জানতে পারিনি শেষে ভদ্রমহিলা প্রতিশোধ পেলেন না পুনর্মিলন।
#রোগীকথা #রূপকথা