14/09/2025
🌷 Pan-D: ওষুধ নয়, এক chemical cocktail !
এটা খুবই সাধারণ দৃশ্য – একটু অম্বল, ঢেকুর বা গ্যাস হলেই আমরা pharmacy থেকে Pan-D কিনে খেয়ে নিই। কিন্তু আপনি জানেন কি, এই অভ্যাসটাই আপনার শরীরের ভিতরে নীরবে মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছে? Pan-D আসলে একটি শক্তিশালী ওষুধ, যা দু’টি কম্পোনেন্ট দিয়ে তৈরি — Pantoprazole ও Domperidone। Pantoprazole একটি Proton Pump Inhibitor (PPI), যা পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপাদনের শেষ ধাপের enzyme (H⁺/K⁺-ATPase) বন্ধ করে অ্যাসিড নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে Domperidone হলো একটি dopamine D2 receptor blocker, যা পাকস্থলীর গতিশীলতা বাড়িয়ে বমি ভাব কমায়। এই ওষুধটি সাধারণত gastritis, GERD, peptic ulcer, nausea-vomiting-এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে দেওয়া হয় — কিন্তু বহু মানুষ এটিকে রোজকার অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছেন, যা ভয়াবহ পরিণতির কারণ হতে পারে।
প্রথমত, দীর্ঘমেয়াদে Pantoprazole খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় Vitamin B12, Calcium ও Magnesium-এর অভাব দেখা যায়। Vitamin B12 কমে গেলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া, মানসিক অবসাদ ও স্নায়বিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। Calcium ও Magnesium-এর অভাবে হাড় দুর্বল হয়ে যায়, ফলে osteopenia, osteoporosis এবং পেশীতে খিঁচুনি হতে পারে। দ্বিতীয়ত, পাকস্থলীতে অ্যাসিড কমে গেলে শরীরের প্রাকৃতিক সংক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, যার ফলে H. pylori, Clostridium difficile এবং এমনকি pneumonia-র মতো ইনফেকশনও দেখা দিতে পারে। তৃতীয়ত, Domperidone-এর দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে QT interval prolongation হয়, যার ফলে হঠাৎ heart rhythm disorder বা এমনকি sudden cardiac arrest-এর ঝুঁকি বাড়ে।
সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো, Pan-D ছেড়ে দিলে শরীর Rebound hyperacidity তৈরি করে, অর্থাৎ শরীর এতটাই অ্যাসিড তৈরি করতে শুরু করে যে আগের চেয়েও বেশি অম্বল হতে থাকে। ফলে রোগী আবার Pan-D খেতে বাধ্য হন — এইভাবেই তৈরি হয় drug dependency। আর তখন রোগ নয়, ওষুধটাই নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে শরীরকে।
এখন প্রশ্ন হলো — তাহলে কি Pan-D খাওয়া যাবে না? যাবে — তবে অবশ্যই চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী, নির্দিষ্ট রোগ ও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। কারণ Pan-D আসলে উপসর্গ চাপা দেয়, রোগ সারায় না। ধরুন, আপনার গ্যাসের মূল কারণ হলো gallbladder stone, H. pylori infection, pancreatic disease বা even gastric cancer — তখন Pan-D খেয়ে কিছুদিন আরাম মিললেও রোগ ভিতরে ভিতরে বাড়তেই থাকবে, আর আপনি সেটা বুঝতে পারবেন না।
এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় কী? অবশ্যই, সচেতনতা এবং জীবনশৈলীর পরিবর্তন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে Pan-D নয়, বরং চেষ্টা করুন নিজের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে — কম তেল-মশলা খাবার খান, রাতে দেরি করে খাবেন না, খাওয়ার পরেই শুয়ে পড়বেন না। ধূমপান ও অ্যালকোহল বন্ধ করুন, স্ট্রেস কমাতে মেডিটেশন বা যোগাভ্যাস করুন। প্রতিটি ওষুধের একটি লক্ষ্য থাকে — Pan-D রোগ সারানোর জন্য নয়, কিছু সময়ের জন্য আরাম দেওয়ার জন্য। তাই এর উপর নির্ভরশীলতা গড়ে তোলা মানে ধীরে ধীরে শরীরকে বিষের দিকে ঠেলে দেওয়া।
একজন চিকিৎসক হিসেবে আমি বিশ্বাস করি — ওষুধ তখনই ওষুধ, যখন সেটা প্রয়োজনমতো খাওয়া হয়। না হলে সেটাই হয়ে উঠতে পারে নীরব ঘাতক।
আপনার একটু সচেতনতা আপনাকে দীর্ঘস্থায়ী রোগ, পুষ্টির ঘাটতি এবং হঠাৎ বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। আপনি যদি প্রতিদিন Pan-D খাচ্ছেন — তাহলে এটি বন্ধ করে দ্রুত একজন Doctor -এর পরামর্শ নিন। নিজে সচেতন হোন, অন্যকেও সচেতন করুন।
✍️ Dr.Saurav Bhakat
MBBS , DNB ( Central Govt.,PGT )
Critical Care | Pain Medicine | Anesthesiologist
🙏
Collected