04/04/2022
♥️ #শুভ_জন্মদিন অরণ্যসুন্দরী #ঝাড়গ্রাম।♥️
কিছু কল্পনা থাকে যেগুলো কখনোই ব্যক্ত করা যায় না!
এমনই কিছু উপলব্ধি থাকে যেগুলি শুধুমাত্র একাকীত্বে পূর্ণতা দান করে!
সেরকম আমরা মানুষেরাও প্রকৃতিগত দিক দিয়ে খুবই অনুসন্ধিৎসু!
আমাদের মন সদা জাগ্রত অচেনা ও অজানা জিনিসের উপর বিশেষ করে সুন্দর জিনিসের প্রতি।
কোনো মানুষের মধ্যে সেই সুন্দর জিনিসটা গ্রহণ করার ক্ষমতা না থাকে, তবে তাকে মানুষ বলাটাই বৃথা!
ঠিক যেমন মান ও হুঁশ বিনা মানুষ পূর্ণাঙ্গতা লাভ করে না!
জগৎ ও জীবনের রহস্য যেমন পরম সত্য, ঠিক তেমনই বিশ্বসৃষ্টির শক্তির সন্ধ্যানে মানুষ ঈশ্বরের শরণাপন্ন হয়েছেন!
এ কথা অনেকে বিশ্বাস করেন আবার এই বিজ্ঞানের যুগে অনেকেই বিশ্বাস করেন না!
তবুও আমি বলি, ভগবানই মানুষের সৃষ্টিকর্তা!
মানুষের অন্তর্জীবনে ভগবানেরই বাস।
"যত্র জীব তত্র শিব!"
অনেকেই হয়তো মনে করেন ভগবান কে বনে জঙ্গলে সন্ধ্যান করা বৃথা!
আজ এমনই এক দেবীর কথা বলবো, যাঁর আদেশেই বলুন বা স্বপ্নাদেশেই বলুন বা ইচ্ছাতেই বলুন এক জঙ্গলে গড়ে উঠেছে এক প্রাকৃতিক জনপদ!
কবিগুরু বলেছিলেন বটে, "দাও ফিরে সে অরণ্য লহ এ নগর!"
কিন্তু এই শহরটির অধিষ্ঠান যেন জঙ্গলের মধ্যেই!
মাঝেমধ্যেই সেখানে বিচরণ করেন জঙ্গলের গজরাজ মহাশয়!
নামে শহর হলেও, এর ভিতর লুকিয়ে আছে এক অনার্য সভ্যতা, এক অতি প্রাচীন গাঁ!
তারই মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ডুলুং নদী!
এইরকম এক দৃশ্য মনে ভাবলেই যেকোনো প্রকৃতি প্রেমিকের লোম খাড়া হয়ে যায়!
যাইহোক, এবার মূল বক্তব্যে আসি,
ইতিহাসের পাতায় লেখা আমাদের অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার ঐতিহাসিক গুরুত্ব!
এতো বড়ো জেলা যে, সেটাকে একজন ডিস্ট্রিক্ট মেজিস্ট্রেট দ্বারা শাসন কার্য চালানো খুবই কষ্ট সাধ্য ব্যাপার!
তাই, আগেই বিভক্ত হয়ে গেছিল, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর নামে!
আবার কয়েকদিন আগে অবধি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চারটি মহকুমা ছিল।
১।মেদিনীপুর সদর
২।ঝাড়্গ্রাম
৩।ঘাটাল
৪।খড়্গপুর
এ ও যেন এক বিশাল সাম্রাজ্য!
একজন ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষে পুরো চারটে মহকুমা কভার করাটাও মুখের কথা নয়!
তাই, গত ২০১৭ সালের আজকের দিনে অর্থাৎ, ৪ ঠা এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের বুকে জন্ম নিল আরো একটি জেলা,ঝাড়্গ্রাম!
এই ঝাড়্গ্রাম জেলা তৈরিরও অনেক অনেক দিন আগে এই ঝাড়্গ্রাম নামকরণ হয়ে গেছিল!
অনেকেই জানেন হয়তো!
এটি কয়েক দশক আগে ছিল শুধুমাত্র জঙ্গলে মোড়া এক বিস্তর জনপদ!
যে জনপদে মানুষ ও পশুরা প্রায় একসাথেই দিনযাপন করতো!
যে জনপদে সূর্যের আলোই ঠিকঠাক প্রবেশ করতে পারত না!
বোঝা যেত না সকাল সন্ধ্যে!
অনার্যরাই ছিল এর রক্ষক, বন্ধু!
ধীরে ধীরে আর্যদের আগমনে , দেবী সাবিত্রীর মন্ত্রে এই ঝাড়্গ্রাম জনপদের বিকাশলাভ!
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, ১৬৫৫ খ্রিস্টাব্দের ঝাড়্গাঁ ছিল পুরোপুরি এক জঙ্গলে ঘেরা গ্রাম!
বিভিন্ন আদিবাসী জাতির বাস ছিল এখানে।
শোনা যায়, রাজপুত বীর, সর্বেশ্বর সিংহ পুরী থেকে ফেরার পথে এখানকার জঙ্গলে কোনো এক কারনে থেকে যান, এবং সেখান কার মাল রাজাকে যুদ্ধে পরাজিত করে মল্লদেব উপাধি নেন এবং পরবর্তীকালে কুলদেবী সাবিত্রীর স্বপ্নাদেশে তাঁর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
আবার ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পাণির সরকারি কাগজপত্রেও ঝাড়্গ্রামের কথা জানা যায়।
আবার, বাংলার ইতিহাসে দেখা যায়, ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে,ব্রিটিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি, মিরজাফরকে নবাবের আসন থেকে সরিয়ে তারই জামাই মিরকাশিম কে দায়িত্ব দিলে, তাঁকে উপঢৌকন হিসাবে মেদিনীপুর, বর্ধমান ও চট্টগ্রাম প্রদেশের মালিকানা দান করেন।
জানা যায়, মেদিনীপুরের ১৭ টি পরগনার মধ্যে একটি ছিল ঝাড়্গ্রাম।
তৎকালীন, এই অঞ্চলটি যেহেতু প্রথমত জঙ্গলে মোড়া ও দ্বিতীয়ত,এখানকার মাটি অত্যন্ত অনুর্বর থাকায় নবাব সম্রাট রা তেমন গুরুত্ব আরোপ করেননি এর উপর!
এমনকি এখানকার রাজারা কখনো কখনো করও দিতেন না!
এখানকার প্রাচীনতম বাংলা গ্রন্থ হল, "শ্রী শ্রী রসিকমঙ্গল।"
১৬৫৫ খ্রিস্টাব্দে, অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঝাড়্গ্রাম মহকুমার গোপীবল্লভপুরের গোপীজনবল্লভ দাশ ইহা রচনা করেন।
এই কাব্যে, তৎকালীন, মল্লভূম - ঝাড়গ্রামের শিক্ষা, সংস্কৃতি, জীবন যাত্রা অনেকাংশেই বর্ণিত হয়েছে।
সামাজিক দিক দিয়েও এই ঝাড়্গ্রামের গুরুত্ব কম নয়,
এখানে এসেছেন অনেক প্রকৃতি প্রেমিক কবি, সাহিত্যিক।
শোনা যায়, এখানকার বিদ্যাসাগর বাণীভবনে এসে থাকতেন জগদীশ চন্দ্র বসুর স্ত্রী লেডি অবলা বসু।
সেই সময়কালে, তিনি, এখানে নারীশিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে মেয়েদের জন্য স্কুল স্থাপন করেছিলেন।
সেই স্কুলের মাধ্যমে তিনি বিধবাদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য নানারকম শিক্ষা দান ও করতেন।
শোনা যায়,শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের বিধবা স্ত্রী, সুপ্রভা দেবীও এখানে কিছুদিন কাটিয়েছিলেন।
আবার, শোনা যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের possibly 2nd marriage হয়েছিল, আর ওনার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর বাবা, অর্থাৎ, শ্বশুরমশাই ছিলেন ঝাড়্গ্রামের আবগারি ডিপার্টমেন্টের দারোগা, সেই সূত্রেই বিভূতিভূষণের ঝাড়্গ্রামে স্টে করা...!
হয়তো, বা তিনি এখানে থেকেই লিখেছিলেন, " জগতের যে পথে সভ্য মানুষের চলাচল কম,কত অদ্ভুত জীবনধাএয়ার স্রোত আপনমনে উপলবিকীর্ণ অজানা নদীখাত দিয়া ঝিরঝির করিয় বহিয়া চলে, তাহাদের সহিত পরিচয়ের স্মৃতি আজও ভুলিতে পারি নাই!"
রাজনৈতিক ভাবে যে এই আরণ্যক জনপদ কতটা তাৎপর্যপূর্ণ, সেটা হয়তো নেতাজী এখানে এসেছিলেন বলেই জানা যায়।
তিনি একবার ঝাড়্গ্রামের এক সভায় বলেছিলেন, "আমরা চায়, স্বাধীনতাকামী নরনারী একপ্রাণ হয়ে দেশের জন্য সেবা করুক!"
অতএব, একথা স্পষ্ট যে, শুরুটা করেছিলেন আদিম অনার্য জনগোষ্ঠীর মানুষেরা, ইতিহাসের চাকার ন্যায় ক্রমশ এই সভ্যতা ঘুরতে ঘুরতে কখনো আর্য ও অনার্যের লড়াই, আবার কখনো সাবিত্রী দেবীর আধ্যাত্মিকতায় সমৃদ্ধি লাভ আবার সামাজিক দিক দিয়ে নানান উজ্জ্বল নক্ষত্রের আবির্ভাব আবার প্রকৃতি প্রেমিক নানান কবি সাহিত্যিকদের আগমনে পূর্ণতা পেয়েছে এখানকার অরণ্যানী বনানী ও অনার্য মানুষের জীবনযাত্রা।
আবার, নেতাজীর মতো এক মহান নেতা পূর্ণ করেছে এখানকার রাজনৈতিক ভাবাদর্শকে।
বর্তমানে রূপ নিয়েছে এক ছোট্ট গোছানো শহর তথা নতুন জেলা রূপে!
সেই আদিম অনার্য জাতির ঝাড়্গাঁ আর আজকের ঝাড়্গ্রামের মাঝে রয়েছে বিস্তর ফারাক...
এখনকার নতুন জেলা ঝাড়্গ্রাম নবরূপে সুসজ্জিত!
এখানকার রাজবাড়ি, এখানকার শালমহুলের গহন অরণ্য, সাবিত্রী দেবীর মন্দির, কনকদুর্গা মন্দির, চিল্কিগড়, আদিবাসী সংগ্রহ শালাতে বহু দেশ বিদেশের পর্যটকের সমাগম ঘটে থাকে...!
সর্বোপরি, ডুলুং নদীকে কেন্দ্র করে করে বসে কবিদের কবিতার উৎসব, ইত্যাদি।
এই শাল জঙ্গল দেখে, হৃদয়ে একটা রসবোধের সৃষ্টি হয়, জাগে ওদের প্রতি অনুভূতি!
আর গাছেদের প্রতি, হাতিদের প্রতি একটু ভালোবাসা জান্মায়...!
এককথায়, #তুমি_অনন্য!
--- লাল্টু!