18/04/2024
আচ্ছা আপনাদের মধ্যে কতজন শুনেছেন বা দেখেছেন ‘পিররিয়ড, এন্ড অফ্ সেনন্টেন্স’। এটি একটি ‘অস্কার’ প্রাপ্ত ডকুমেন্টারি।
ওহো! আমি জানি আপনাদের মধ্যে অনেকেই দেখে থাকলেও এখন এটি প্রকাশ্যে বলতে পারবেন না, কারণ ‘পিরিয়ড’ বা ‘রজঃচক্র’ যেন ভারতীয় সমাজের কাছে আজও নিষিদ্ধ ব্যাপার। এ নিয়ে ভারতীয় সমাজের ছুঁৎমার্গ ই প্রধান কারণ।
যদিও বর্তমানে খুব অল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যে হলেও, এই বিষয়ে চেতনা উত্থাপন হয়েছে। চলচ্চিত্র নির্মাতা রায়কা জেহাতবাচি ভারতের গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে মাসিক চক্রের উপর একটি চলচ্চিত্র পরিচালনার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে মাসিক রজঃচক্র নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব ও গুজবের অবসান ঘটাতে চেয়েছিলেন।
নিউক্র্যাড হেলথের সংবাদ ডেস্কও নারীদের মধ্যে সচেতনতা বিস্তারের জন্য মাসিক রজঃচক্র নিয়ে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কিছু আলোকপাত করার চেষ্টা করল।
মাসিক কি?
মেয়েরা যখন বয়ঃসন্ধিকাল পৌঁছানোয়, তখন তাদের শরীর সম্ভাব্য গর্ভধারণের জন্য শরীর প্রস্তুত হতে থাকে। শরীরকে পূর্ণতা দান করতে মস্তিস্ক প্রয়োজনীয় হরমোন (এস্ট্রোজেন, লুইটিনিজিং হরমোন এবং প্রজেস্টেরোন) ক্ষরণ করার সংকেত দেয়। এই হরমোনগুলি অতিরিক্ত রক্ত এবং টিস্যু দিয়ে গর্ভাশয়ের আস্তরণকে পুরু করে তোলে। একই সময়ে, নিষেকের জন্য 2টি ডিম্বাশয়ের মধ্যে একটি ওভুল্যেলন পদ্ধতিতে একটি ডিম্বাণু নিঃসরণ করে। কিন্তু যখন শুক্রাণুর অভাবে বা অন্যান্য কারণে যখন নিষেক (শুক্রাণুর সাথে ডিম্বানুর মিলন) সম্পন্ন হয় না, তখন গর্ভাবস্থার জন্য তৈরী গর্ভাশয়ের ভিতরের গাএটি ভেঙ্গে যায় এবং শরীরের থেকে যোনিপথে বের হয়। এটিই মাসিক হিসাবে পরিচিত।
যেহেতু এই চক্রটি প্রতিমাসে নিয়মিত ঘটতে থাকে তাই এই চক্র কে বলা হয় ঋতুচক্র বা মাসিক বা পিরিয়ড ইত্যাদি।
রজঃচক্র মোট চারটি ধাপ দেখা যায়:-
প্রথম ধাপ শুরু হয় ১দিন থেকে থেকে এবং ছয় দিন পর্যন্ত কারো কারো ক্ষেত্রে পাঁচ দিন পর্যন্ত চলতে থাকে। নিষেক না হলে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরোনের মাত্রা কমে যায়, এবং গর্ভাশয়ের পুরু হয়ে যাওয়া আস্তরণ খসে পড়ে এবং মাসিক আকারে বেরিয়ে যায়।
ফলিকিউলার ফেজ বা দ্বিতীয় পর্ব:-
এটি 6 নম্বর দিন থেকে 14 দিন পর্যন্ত চলে।এই সময় ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
ওভুলেশন বা তৃতীয় পর্যায়:-
সাধারণত 14 নং দিন থেকে ঘটে যখন ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণ হয়।
লুট্যিয়াল ফেজ বা শেষ পর্যায়:-
15নং দিন থেকে 28 দিনের মধ্যে দেখা যায়। এই সময় ডিম্বাণুটি, শুক্রাণুর সাথে মিলনের জন্য তৈরি থাকে এবং জরায়ুর অন্তর গাত্রের গঠন সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকে। এই সময়ের মধ্যে যদি নিষেক সংগঠিত না হয়, তাহলে দেহে ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা ক্রমশই কমে যেতে থাকে। আর, দেহ আবার পরবর্তী রজঃচক্রের জন্য নিজেকে তৈরি করতে শুরু করে দেয়।
কোন বয়সে মহিলাদের মাসিক শুরু হয়?
মূলত বয়সন্ধি সময় অর্থাৎ 12 বছর বয়সী কিশোরীদের দেহে রজঃচক্র শুরু হয়ে যায়। যখন থেকে একটি নারী স্তনের গঠন ও বৃদ্ধি শুরু হয়ে থাকে, তার দুই-তিন বছরের মধ্যই রজঃচক্র শুরু হয়ে যায়।
আমেরিকান কলেজ অফ অবস্ট্রেটিসিয়ানস এবং গাইনোজোলজিস্টরা জানিয়েছেন- যদি 15 বছর বয়সী কিশোরীর ঋতুস্রাব শুরু না হয়, তবে অভিভাবকদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রতিটি মাসিক চক্র কতদিন স্থায়ী হয়?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাসিক চক্র প্রায় 28 দিন ধরে চলতে থাকে। মাসিক বন্ধ হওয়ার পরবর্তী দিনটিকে এই চক্রের প্রথম দিন হিসেবে ধরা হয় এবং পরবর্তী মাসিক শুরু অবধি চলতে থাকে। 21 থেকে 35 দিনের চক্রকে স্বাভাবিক বলে মনে করা হয় এবং রজঃস্রাব প্রায় দুই থেকে সাত দিন ধরে চলতে থাকে। প্রাথমের দিকে কম বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি দিন স্রাব চলতে থাকে। এমনকি কিছু মহিলাদের মধ্যে 45 দিনের দীর্ঘস্থায়ী রজঃস্রাবের রিপোর্ট রয়েছে।
মাসিকের লক্ষণঃ গুলি কি কি?
এটা স্বাভাবিক; ঋতুস্রাবের আগে কিছু লক্ষণীয় উপসর্গ
দেখা যায়। যেমন তলপেটে পেটে ব্যথা বা খিঁচ ধরা। প্রথম এক বা দুই দিনের ঋতুস্রাবের সময় ও এই উপসর্গ গুলো দেখা যায়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি সাধারণ ব্যথা কমার ঔষধগুলির ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে, যদি ব্যথা তীব্র হয়, তবে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করা যুক্তিযুক্ত। কখনও কখনও, উরু এবং কোমরেও ব্যাথা ছড়িয়ে পড়ে। কিছু ক্ষেত্রে এই সময়ে বমি বমি ভাব, মাথা ব্যাথা, মাথা ঘোরা, পেটখারাপের মতো নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়।
অনিয়মিত মাসিক চক্রের কারণ কী?
স্বাভাবিক মাসিক চক্রের মধ্যে নখনা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এর পিছনে নানা কারণ রয়েছে। নীচের তাদের কয়েকটি আলোচনা করা হলো।
গর্ভাবস্থা:-
মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া গর্ভাবস্থা বা গর্ভাবস্থার সূচনা দেয়। যাইহোক, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা আগে মহিলাটি সত্যিই গর্ভবতী কিনা পরীক্ষা করে তবেই সিদ্ধান্ত নেবার পরামর্শ দেষ।
প্রসব পরবর্তী সময়ে স্তনদানের কারনেও মাসিক চক্রের সূচনাও বিলম্বিত হয়।
খাওয়াদাওয়া সমস্যা:-
অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসের মতো কিছু খাওয়ার ব্যাধি বা খুব ওজন কমে যাওয়া, অত্যধিক ব্যায়াম এসবের ফলেও ঋতুস্রাবের ঘটনা স্থগিত হয়ে যেতে পারে।
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম ((PCOS)
পলিসিস্টিক ডিম্বাশয় সিন্ড্রোমে বিশ্বের অনেক মহিলাই আক্রান্ত। এর অনেক লক্ষণের মধ্যে, অনিয়মিত স্রাবের সমস্যা বেশি দেখা যায়। এই ব্যাধির ফলে কখনো দীর্ঘ সময় রক্তপাত, অতিরিক্ত রক্তপাত, সংক্ষিপ্ত মাসিক চক্র, এমনকি চক্র বন্ধও হয়ে যাওয়ার মতো নানা সমস্যার সৃষ্টি করে।
ইউটারাইন ফাইব্রয়েড:-
অনেক অনেক মহিলার জরায়ুতে অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি দেখা যায় যদিও এটি ক্যানসারের নয়। এই কে বলা হয় ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড।
আপনি যদি আপনার স্বাভাবিক চক্র থেকে কোনও অনিয়ম লক্ষ্য করেন, তবে সবসময়ই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।
কপিরাইট - www.neucradhealth.in
Please follow Facebook Bangla page www.fb.com/neucradhealthbengali
Please subscribe YouTube Channel https://www.youtube.com/channel/UCkVXzA6E_SvkvaSUdbd73hg
"একজন গবেষক বিজ্ঞানী হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে বিজ্ঞান, গবেষণা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে আসতে বদ্ধপরিকর - আপনার স্বাস্থ্য সচেতনতা আপনাকে বিপদের সময় পথ দেখাবে" - বিশ্বরূপ ঘোষ, নিউক্র্যাড হেলথ ফাউন্ডার । আমেরিকা প্রবাসী বাঙালি গবেষক বিজ্ঞানী বিশ্বরূপ ঘোষ তার স্টার্ট আপ প্রচেষ্টা করছেন বাংলা তথা ইন্ডিয়াতে। নিউক্র্যাড হেলথ হাব এর ডিজিটাল ডাক্তার প্লাটফর্ম শুরু । আপনাদের আশীর্বাদ কামনা করি।