
29/05/2022
#শ্বেতী_বা_ধবল ( Vitiligo /leucoderma) রোগ কী?
শ্বেতী ত্বকের একটি রোগ।
আমাদের ত্বকের মধ্যে মেলানোসাইট কোষে থাকে মেলানিন, যা ত্বকের স্বাভাবিক রঙে ( pigment) র ভারসাম্য রক্ষা করে। মেলানিনের ক্রিয়াকলাপে বাধা সৃষ্টি হলে বা ভারসাম্য নষ্ট হলে দেখা দেয় শ্বেতী। অথাৎ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার গোলযোগের জন্য
রক্তে এক ধরনের শ্বেত কণিকা টি-লিম্ফোসাইট বেড়ে যায়, এরাই মেলানোসাইট কোষ কে ধ্বংস করে।
মেলানিন শরীরে কী কাজ করে?
আপনার চুল, ত্বক এবং চোখের রঙ নির্ধারণে মেলানিন একটি বড় ভূমিকা পালন করে। আপনার জিনগুলি, আপনার পিতামাতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত, আপনি কতটা মেলানিন তৈরি করেন তা মূলত নির্ধারণ করে; ফর্সা (হালকা বর্ণের) ত্বকের লোকের চেয়ে কালো ত্বকের লোকেরা বেশি মেলানিন পান।
মেলানোজেনেসিস নামে পরিচিত বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে দেহ মেলানিন তৈরি করে।
বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ১০ কোটি মানুষ শ্বেতীতে আক্রান্ত। প্রয়াত শিল্পী মাইকেল জ্যাকসনও এই রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তাই প্রতি বছর ২৬ জুন তাঁর প্রয়াণ দিবসে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় ‘ওয়ার্ল্ড ভিটিলিগো ডে’ বা বিশ্ব শ্বেতী দিবস হিসেবে।
সাধারণত মুখমণ্ডল, কনুই, বুকের ত্বক প্রথমে আক্রান্ত হতে শুরু করে। কখনো কখনো শ্বেতী চোখের পাশ দিয়ে, নাকের দুই পাশে বা ঠোঁটের কোণ বা ওপরের ত্বকেও শুরু হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে শ্বেতী খুব একটা ছড়ায় না, একটা বিশেষ জায়গাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। আবার কারও এমনভাবে মুখে, বুকে, হাতে, পায়ে ছড়িয়ে পড়ে যে বোঝাই যায় না একসময় শরীরের রং কী ছিল।
সাধারণত দেখা যায় ১০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে প্রথম শুরু হয়,আবার মহিলাদের মেনোপজের সময়ও দেখা দিতে পারে।
এই রোগ কেন হয় ঃ-
একটাই উত্তর অটো ইমিউন ডিজঅর্ডার।
এখন প্রশ্ন অটোইমিউন ডিজঅর্ডার কি
যেখানে একজন লোকের ইমিউন সিস্টেম ভুলবশত তার শরীরকে আক্রমণ করে। আরো সহজ ভাবে বললে, বাইরের কোনো ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর প্রভাব ছাড়াই রোগ সৃষ্টি হয় কারণ শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনো সুস্থ কোষকে ক্ষতিকর মনে করে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
সাধারণত ইমিউন সিস্টেম ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের মতো জীবাণু থেকে আমাদেরকে সুরক্ষা দেয়- যখন ইমিউন সিস্টেম বুঝতে পারে যে শরীরে আক্রমণকারী প্রবেশ করেছে, তখন এটি এসব শত্রুকে আক্রমণ করতে অ্যান্টিবডি নিঃসরণ করে। সাধারণত ইমিউন সিস্টেম শত্রু কোষ ও সুস্থ কোষের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে পারে।
কিন্তু অটোইমিউন রোগের ক্ষেত্রে ইমিউন সিস্টেম শরীরের কোনো অংশকে শত্রু ভেবে ভুল করে এবং অটোঅ্যান্টিবডি নামক প্রোটিন নিঃসরণের মাধ্যমে সুস্থ কোষকে আক্রমণ করে।
ইমিউন সিস্টেম সেনাবাহিনীর মতো
ইমিউন সিস্টেম অ্যান্টিবডি নিঃসরণ করে রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব থেকে আমাদেরকে সুরক্ষিত রাখে। অ্যান্টিবডি হলো রক্তের প্রোটিন যা আক্রমণকারীকে নিষ্ক্রিয় করে। এটিকে বলা হয় ইমিউন রেসপন্স। সুস্থ কোষের ওপর এ আক্রমণ শরীরের যেকোনো স্থানে হতে পারে । শ্বেতির ক্ষেত্রে ত্বকের মেলানোসাইট কোষ নিস্ক্রিয় হয়ে গিয়ে মেলানিন তৈরি হতে বাধা সৃষ্টি করে। তাই ত্বকের স্বাভাবিক রঙ ( pigment) না হয়ে সাদা দেখায়।
অটো ইমিউন ডিজঅর্ডার কেন হয়?
আধুনিক বিশ্বে যে আহার করি তা অধিকাংশ কেমিক্যাল যুক্ত এমনকি বহুল প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি র ঔষধগুলো কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি। পরিবেশ দূষণকারী পদার্থের সংস্পর্শে আসা, জীবন শৈলী সঠিক ভাবে পালন না করা।
শ্বেতি র ক্ষেত্রে দেখা যায় প্লাস্টিকের জুতো পড়ার জন্য, কোমরে জোড়ে বেল্ট বা দড়ি বাঁধার জন্য বা কেটে যাওয়ার জায়গা বা পুড়ে যাওয়ার বা কেমিক্যাল যুক্ত সিঁদুর পড়া, গলা ও হাতে খারাপ রাসায়নিকের দিয়ে গহনা পড়ার জায়গায় মেলামিন তৈরি হচ্ছে না। এগুলো থেকে বিরত থাকলে কোন ঔষধ ছাড়াই ঠিক হয়ে যায়। এটা করে শরীরের ইমিউন সিস্টেম। আবার দেখা যায় বিছিন্ন ভাবে কয়েকটি জায়গায় হলো কিন্তু আর বাড়ছে না, আবার কিছু লোকের ক্ষেত্রে ত্বকের দুই একটি জায়গায় প্রথমে দেখা দিয়ে আস্তে আস্তে সমস্ত শরীরের ছরিয়ে পরলো।
এর কারন ইমিউন সিস্টেম ঠিক ঠাক কাজ করছে না।
প্রথমে ইমিউন সিস্টেম কে ঠিক করতে হবে।
*★*★*★হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সমন্ধে বলার আগে করনীয় পরামর্শ ঃ-★*★*
১).আপনার আহারে পরিবর্তন করতে হবে মাছ,মাংস, ডিম সহ দুধ বা দুধের তৈরি কোন খাবার বন্ধ করতে হবে। যেমন টক দই,ছানা বা পনির। যে সব্জিতে আপনার এলার্জেন আছে তা বন্ধ করতে হবে। এলার্জেন মানে, যে সব্জিতে আপনার এলার্জি হয়, তা বন্ধ করবেন।
২). প্রচুর পরিমানে সতেজ শাকসব্জী, পাকা ফল খেতে হবে।
৩). কোন রকম সংরক্ষণ করা খাবার বা কেমিক্যাল যুক্ত খাবার আহার করা উচিত নয়।
৪). খাবার সময় এবং ঘুমানোর সময় নির্দিষ্ট করতে হবে।
৫). প্রতিদিন ১২ ঘন্টা উপবাস ( Firsting) দরকার
৬) মাসে এক বার পূর্ণ দিবস উপবাস দরকার যাতে।যাতে শরীর নিজের শরীর কে মেরামত করতে পারে।
৭).শ্বেতি রোগীরা কখনও কোন সবান, পেট্রোলিয়াম জেলি, কসমেটিক ব্যবহার করবেন না, প্রয়োজনে নিম পাতা জলে ফুটিয়ে, জলের মিশিয়ে স্থান করুন।
৮) টমেটো সহ কোন টক জাতীয় ফল বা টক কোন খাবার খাবেন না।
৯).মানসিক কোন উৎকন্ঠা রাখবেন না
১০). নিজেকে নিজে বেশি বেশি করে ভালোবাসতে হবে।নিজেকে গর্বিত মনে করুন,এটা কোন সংক্রমণ রোগ নয়।একজন থেকে আরেক জনের আক্রান্ত হবে।
১১). পানীয়জল ১২ ঘন্টা কোন তাপার পাত্রে রেখে সারাদিন জল পান করবেন।
১২).যে খাবার গুলো প্রতি দিন খাদ্য তালিকায় রাখবেন ঃ-
ক). ৫০ গ্রাম ছোলা ( চানা বা বুট) আগের দিন রাতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন খাবেন। অঙ্কুরত হলে আরো ভালো।
খ). ৫-৬ কাঠ বাদাম ( Almond) খাবেন।
গ). ৫-৬ মিষ্টিকুমড়ার বিচি,তা কাচা বা অল্প ভেজে খাবেন।
ঘ). পাকা পেঁপে ২০০ গ্রামের মতো খাবেন, বা জুস করেও খেতে পারেন। অথবা কাঁচা লাউের ২০০ গ্রাম জুস খেতে পারেন।
১৩). শ্বেতি একটি চর্মরোগ। আর চর্ম, শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় দেখা যায়, শরীরের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীরা সম্পুর্ণ ভাবে এই রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে থেকে। সারা জীবনের আর আক্রান্ত হয় না।
★*★★*বিশেষ কথা জেনে রাখা ভালো। ★* ★★* ঃ-
শরীর কে রোগ মুক্ত করতে প্রতিদিন আহারে ৫০% খাবার ফল এবং স্যালাট খান অথাৎ কাঁচা পাকা ফল কাঁচা সব্জি খান এতে শরীরে পটাসিয়াম ও সোডিয়াম পরিমাণের সমতা বজায় রাখে। পটাসিয়াম ও সোডিয়াম ১ঃ১ থাকলে কোন রোগ আক্রান্তের হওয়া র সম্ভাবনা কম থাকে ।
★★নযাবাজার হোমিও হল★★