26/06/2022
লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে চলেছেন প্রচারের আলো থেকে হাজার মাইল দূরে থাকা একটি মানুষ!
আজ সেই মানুষটির স্বপ্ন জয়ের গল্প বলতে এসেছি।
এই মানুষটির খবর ছড়িয়ে দেওয়া একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা। অন্তত এ খবর যাঁদের অজানা।
তাই এই লেখা।
" ORS " অর্থাৎ ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট।
আরো সোজা বাংলায় নুন, চিনির জল।
সারাজীবন আমরা সবাই এক আধবার খেয়েছি নিশ্চয়।
ডায়েরিয়া, কলেরা প্রভৃতি ঐ ধরণের রোগে যখন মানুষের শরীরে জলের ভাগ কমে যায়( ডিহাইড্রেশন ) তখন ইমিডিয়েট এই পাউডার জলে গুলে পান করলে সুস্থতা ফিরে আসে।
এবার সেই মানুষটির কথা।
যিনি এই মহান আবিষ্কারটি করেছেন।
১৯৭১ সালের শেষভাগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় দলে দলে শরনার্থী পশ্চিমবাংলায় আসতে শুরু করল।
যশোর রোডের দু'পাশে তখন উদ্বাস্তু শিবিরে মানুষ গিজগিজ করছে।
এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তখন কলেরা মহামারী দেখা দিল।
কয়েক লক্ষ মানুষ সেদিন আক্রান্ত হল।
প্রতিদিন অনেক মানুষ মারা যেতে লাগল।
এত বিপুল মানুষের চিকিৎসা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল সেদিন।
এই দিশেহারা অবস্থায় একজন শিশু চিকিৎসক আবিষ্কার করলেন আজকের " ORS " পাউডার।
সঙ্গে ছিলেন তাঁর কিছু সহযোগী।
প্রথমে চিকিৎসক মহল বিশেষ করে বিদেশের চিকিৎসক মহল, ও আর এস কে গুরুত্ব দেয়নি।
কিন্তু এর প্রয়োগে যখন দেখা গেল হাজার হাজার মানুষ সুস্থ হয়ে উঠছে তখন একে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হল।
১৯৮০ সালে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা ও আর এস কে স্বীকৃতি জানাল।
এরপর দেশে বিদেশে এই চিকিৎসা বিজ্ঞানীর নাম ছড়িয়ে পড়ল।
দেশ বিদেশ থেকে প্রচুর সম্মান পেলেন।
১৯৯৪ সালে তিনি রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সে আমন্ত্রিত হলেন।
এই কমিটিই নোবেল পুরস্কার দেওয়ার বিষয়ে কোন ব্যক্তিকে নির্বাচন করে।
তাবলে ওনাকে সাহেবরা নোবেল দেবে এতটা আশা না করাই ভাল।
আজ "O R S" আবিষ্কারের ফলে প্রতিদিন বিশ্বের নানা প্রান্তে লক্ষ লক্ষ মানুষ বিশেষ করে গরীব ও উন্নয়নশীল দেশের মানুষরা উপকৃত হচ্ছেন।
আশি পেরিয়ে যাওয়া এই নির্লোভ মানুষটি আজও বেলেঘাটা আই ডি হাসপাতালের একটি ছোট ঘরে তাঁর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দেশ তাঁকে প্রাপ্য সম্মান দেয়নি কিন্তু কোন আক্ষেপ নেই তাঁর।
এবার সেই ডাক্তারবাবুর নামটা বলি।
তিনি হলেন ডাক্তার দিলীপ মহলানবিশ ।
ডাক্তারবাবু! আপনাকে জানাই শ্রদ্ধা ও প্রণাম।