26/07/2025
রাহুলের রঙ বদলের রহস্য
---------------------------------
নিউটাউনের “সানশাইন হেলথ হাসপাতালে”-এ এক সকালে হুড়োহুড়ি করে এলেন মিসেস সেন, কোলে সদ্যোজাত পুত্র রাহুল। শিশুটি তখন কাঁপছে না, কাঁদছেও না, ঘুমুচ্ছে নিশ্চিন্তে, কিন্তু মুখটা একেবারে নীলচে!
ডিউটি ডাক্তার শিশুটিকে দেখে চিন্তিত। মনিটরে কম saturation দেখাচ্ছে, অথচ রক্তে গ্যাসের রিপোর্ট বলছে—সব ঠিকঠাক, বরং কার্বন ডাই অক্সাইড একটু কমের দিকে! এই দুই রিপোর্ট যেন একে অপরের সাথে কথা বলতেই রাজি না।
একদিকে মা উদ্বিগ্ন, অন্যদিকে নার্সরাও চিন্তিত। কেউ ফোড়ন কাটলেন,
— “স্যার, এটা তো যেন মোবাইলের নেটওয়ার্ক—বারগুলো পূর্ণ, কিন্তু কল যায় না!”
ডাক্তারবাবু শুরু করলেন একের পর এক পরীক্ষা। শেষমেশ রহস্যভেদের সূত্র মিলল—
রাহুলের শরীরে দেখা গেছে একটি বিরল অবস্থা—মেথহিমোগ্লোবিনেমিয়া।
এই অবস্থায় রক্তে থাকা হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন বহন করতে পারে না, আর তার ফলেই শিশুটির মুখে নীলাভ ভাব। কিন্তু lungs এর কোনো সমস্যা না থাকার কারণে কার্বন ডাই অক্সাইড ঠিক বের করে দিচ্ছে শরীর থেকে।
চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করা হলো মিথিলিন ব্লু, স্ট্যান্ডার্ড চিকিৎসা, এক নীল কাটাতে আরেক নীল।
কিন্তু চিকিৎসা শুরু হওয়ার পরই বিপর্যয় দেখা দিল—রাহুলের রঙ নীল থেকে বদলে ফ্যাকাসে হয়ে গেল আর ডায়াপার ভিজে উঠল গাঢ় লালচে প্রস্রাবে।
মিসেস সেন আতঙ্কিত,
— “একি ইস্টম্যান কালার! কখনো নীল কখনো সাদা”
ডাক্তার দ্রুত রক্তপরীক্ষা করিয়ে খুঁজে পেলেন সমস্যার আসল মূলে— মেথহিমোগ্লোবিনেমিয়া এর সাথে রাহুলের ‘G6PD এনজাইম’-এর ঘাটতি রয়েছে।
এই অবস্থায় মিথিলিন ব্লু ওষুধ শরীরের মধ্যে লোহিত রক্ত কণিকা ভেঙে দেয়, যার ফলেই হয়েছিল হিমোগ্লোবিনুরিয়া (রক্তের রঙ বের হওয়া) ও তীব্র ফ্যাকাশে ভাব।
সঠিক পরিচর্যা ও চিকিৎসায় কিছুদিনের মধ্যেই রাহুল সুস্থ হয়ে উঠল।
পরে discharge-এর দিন মিসেস সেন হেসে বললেন,
— “আমার ছেলে একদম আর্টিস্ট! প্রথমে নীল, পরে সাদা, মাঝখানে একটু লাল রঙ—সব মিলিয়ে রংতুলির খেলা।”
ডাক্তার, নার্স, সবাই হেসে ফেললেন। ছোট্ট রাহুল তখন ঘুমোচ্ছে, শান্ত-নিরীহ মুখে, যেন কিছুই ঘটেনি!
⸻
এই গল্প থেকে আমরা কী শিখি?
প্রতিটি শিশুই আলাদা। চিকিৎসা দেওয়ার আগে তার দেহের বিশেষ বৈশিষ্ট্য জানা জরুরি। কখনো কখনো খুব সাধারণ ওষুধও বিরল সমস্যার sp কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই চিকিৎসা শুধু প্রেসক্রিপশনে নয়, ভালবাসা, পর্যবেক্ষণ ও সতর্কতায় লুকিয়ে থাকে।