22/07/2025
জীবনযুদ্ধে ছোট্ট এক যোদ্ধার জয় | A Victory Over the Silent Killer
কালাচ, যাকে ইংরেজিতে Common Krait বলা হয়, একটি অত্যন্ত বিষাক্ত neurotoxic সাপ। এর বিষ সরাসরি আমাদের স্নায়ুতন্ত্রে আঘাত হানে। সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হলো—কালাচ কামড়ালে অনেক সময় কোনো দাগ বা চিহ্ন থাকে না, তীব্র ব্যথাও অনুভব হয় না, এমনকি কোনো রক্তপাতও হয় না। ফলে অনেকেই বুঝতেই পারেন না যে এক নীরব মৃত্যু ধীরে ধীরে শরীরকে গ্রাস করে ফেলছে।
প্রাথমিক লক্ষণ শুনলে অবাক হবেন—কামড়ানোর পর অনেক সময় শুধু পেটে হালকা ব্যথা হয়। তবে সময়ের সঙ্গে এই ব্যথা বাড়তে থাকে এবং পেট শক্ত বা টাইট হয়ে যায়। এই সাধারণ একটি উপসর্গই পরবর্তীতে হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক সংকেত।
সেদিন সকাল ১১টা –
মাত্র ১০ বছরের একটি মেয়ে হঠাৎ তার মাকে জানায় যে তার পেটে ব্যথা করছে। মা ভাবেন, এটা বোধহয় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা—সাধারণ ঘরোয়া ওষুধ দিয়ে দেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পেটব্যথা কমার বদলে ভয়ঙ্কর রূপ নিতে থাকে। বিকেল ৪টা নাগাদ মেয়েটির শুরু হয় গলা ব্যথা ও মুখ থেকে অতিরিক্ত লালা ঝরতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে শ্বাসকষ্টে ভুগতে শুরু করে।
শ্বাসকষ্ট দেখে আতঙ্কিত পরিবার তাকে নিকটবর্তী একটি হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে প্রাথমিকভাবে স্যালাইন দেওয়া হলেও অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। তখনই চিকিৎসকরা লক্ষ্য করেন মেয়েটির চোখ ভারী হয়ে যাচ্ছে, ঢুলু ঢুলু লাগছে (যাকে Ptosis বলা হয়), মুখও ঝুলে পড়ছে—এ যেন স্নায়ুতন্ত্রের স্পষ্ট বিপর্যয়।
চিকিৎসকরা তখনই সতর্ক হয়ে যান—এটা গ্যাস্ট্রিক নয়, এটা neurotoxic snakebite, সম্ভবত কালাচ। এরপর দ্রুত রোগীকে Galaxy Hospitals-এ আমার ( Dr Arpan Saha -Pediatrician/Child Specialist ) অধীনে ভর্তি করা হয়।
প্রাণবাঁচানোর যুদ্ধ শুরু –
Galaxy Hospital-এ ভর্তি হওয়ার সময় মেয়েটির অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক ছিল। আমাদের দক্ষ মেডিকেল টিম বুঝে যায়—এটা এক সেকেন্ডও দেরি করার সময় নয়। তখনই শুরু হয় সাপের বিষের জন্য Anti-venom, Atropine, Neostigmine-এর মত গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের প্রয়োগ, এবং মেয়েটিকে রাখা হয় ভেন্টিলেশনে।
এইসব ওষুধ স্নায়ুতন্ত্রকে সচল রাখতে সাহায্য করে এবং শ্বাসযন্ত্রের কার্যক্ষমতা রক্ষা করে।
জীবনের জয় –
আমাদের টিমের নিরলস প্রচেষ্টা এবং সময়মতো চিকিৎসার ফলেই মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মেয়েটির দেহ সাড়া দিতে শুরু করে। পরের দিনই সে ভেন্টিলেশন থেকে বেরিয়ে আসে। ধীরে ধীরে সে ফিরে পায় মুখের হাসি, কথা বলার শক্তি এবং স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস।
ছবিতে দেখুন—আজ সে হাসিমুখে, শক্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে পরিবারের পাশে।
এই গল্প শুধু তার নয়—এই গল্প আমাদের সবার।
এটা এক নীরব মৃত্যুর ছায়া থেকে জীবনের ফিরে আসা, এক সতর্কবার্তা—যা আমাদের শেখায়,
👉 “ভয় নয়, সচেতনতাই বাঁচাতে পারে জীবন।”
আমরা, Galaxy Hospital-এর চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টিম, গর্বিত যে আমরা এই জীবনযুদ্ধে একজন নীরব সৈনিক হিসেবে লড়াই করতে পেরেছি।
✍️ Dr. Arpan Saha
MBBS, MD (Pediatrics)