16/03/2023
এস্ট্রোলজি বনাম এস্ট্রোনমি
আমরা যাঁরা জ্যোতিষ চর্চা করি তাঁদের প্রায় শুনতে হয় এই জ্যোতিষশাস্ত্র বানোয়াট বা মিথ্যে৷ যার কোন ভিত্তি নেই৷ বিগত বেশ কিছু বছর যাবত যখন এই জ্যোতিষ আর বিজ্ঞান নিয়ে চর্চা করতে করতে কিছু একটা ব্যপার মাথায় এল গ্রহরা কী করে আমাদের জীবনযাত্রাকে ম্যান্টেইন করে সেটা নিয়ে কিছু চিন্তা করি, লিখি৷ সেখান থেকেই কলম ধরা৷
আমরা আল্ট্রাভয়োলেট রে সম্পর্কে জানি তাই তো? দেখুন প্রধান আমাদের গ্রহ ৭ টা রাহু কেতু তে ছায়া গ্রহ ধারণা করা হয়৷ অপর দিকে দেখুন astronomy তে সূর্য নক্ষত্র এবং প্রাণ কারক জ্যোতিষে সূর্য বা রবি আত্মকারক৷ মানে প্রাণ সম্বন্ধিত সকল প্রশ্নের উত্তর রবি থেকে পাই৷ চাঁদ জলের জোয়ার ভাটা ও আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রন করে৷ জ্যোতিষ শাস্ত্রে জলের কারক চন্দ্র, মনের কারক চন্দ্র৷ তেমনি বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহষ্পতি, শনি এই মূল গ্রহ সাথে রইল রবি শক্তির আধার ও চন্দ্র উপগ্রহ৷ এবার গ্রহগুলোকে দেখুন, সূর্য থেকে যে যত কাছে তার হরস্কোপের পূর্ণাবর্তের সময় মানও কম৷
১৷ বুধ বা Mercury - সূর্য থেকে সব চেয়ে কাছে এবং স্পিডি গ্রহ যার দূরত্ব 54.893 million km এবং ঘূর্ণণ গতি যা তাতে ৮৮ দিনে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিন করে৷ অপরদিকে দেখুন রাশিচক্রে প্রথম রাশি মেষ থেকে ঘুরে আবার মেষে ফিরতে বুধের লাগে 18 দিন৷
শুক্র বা Venus - বুধের পরেই শুক্র৷ এটি সূর্য থেকে দূরত্ব 107.76 million km এবং সূর্যকে একবার পূর্ণাঙ্গ প্রদক্ষিন করতে তার সময় লাগে 243 দিন৷ এবার রাশি চক্রে এনার মেষ থেকে মেষে ফিরতে সময় লাগে 28 দিন৷
মঙ্গল বা Mars - যেহেতু পৃথিবীতে আমরা বসবাস করি তার জন্যে শুক্রের পরে মঙ্গলকে বিবেচনা করি৷ এটির সূর্য থেকে দূরত্ব 401 million km. এবং সূর্যকে আবর্তন করতে এঁর সময় লাগে 687 দিন ৷ রাশি চক্রে যা হয়ে দাঁড়ায় 45 দিন৷
বৃহষ্পতি বা Jupiter - বৃহষ্পতির দূরত্ব সূর্য থেকে 740.79 million km এবং সূর্যকে প্রদক্ষিণে এঁর সময় লাগে 4333 দিন৷ রাশি চক্রে এটি হয় 1 বছর৷
শনি বা Saturn - সূর্য থেকে শনির দূরত্ব 1.4667 billion km আর আবর্তণগতি 10,856 দিন আর রাশিচক্রে এটি 2¹/2 বা আড়াই বছর৷
এবার দেখুন চন্দ্র উপগ্রহ এবং সে সূর্যকে প্রদক্ষিন না করে প্রদক্ষিন করে পৃথিবীকে যার জন্যে সময় লাগে 27 দিন 7 ঘন্টা 43 মিনিট এবং রাশিচক্রে এটি সবচেয়ে কম সময়ে পুরো চক্র প্রদক্ষিন করে যার সময় হল 2¹/2 বা আড়াই দিন৷
এবার আসা যাক রঙের কথায় কসমিক সারফেইসে নাসা বলছে-
বুধের রঙ dark Grey যা তার atmosphere এর জন্যে হালকা সবুজাভ দেখায়৷ আর পৃথিবীতে বুধের রত্নের রঙও সবুজাভ৷ রত্ন - পান্না, পেরিডট, ওনেক্স
শুক্রের রঙ হল Shiny white আমাদের পৃথিবীতে শুক্রের রত্ন ট্রান্সপারেন্ট হোয়াইট৷ রত্ন - ডায়মন্ড, জারকন৷
মঙ্গলের রঙ rusty red মানে মরচে পড়লে যেমনটা রঙ হয় তেমন৷ মানে গৌরিক কিন্তু বেশিরভাগ লালচে ৷ জ্যোতিষে মঙ্গলের রত্ন লালচেই৷ রত্ন - রক্ত প্রবাল৷
বৃহষ্পতির রঙ light yellowish tan বলেয়ের জন্যে হালকা Brown রঙও দেখায় আর জ্যোতিষে এটির রঙ হলুদাভ৷ রত্ন - পোখরাজ, হলুদ টোপাজ৷
শনির রঙ হল Sharon blue বলয়ের জন্যে এটি হয়ে যায় কিছুটা hue হয় যায়৷ জ্যোতিষে এটি নীলাভ৷ রত্ন - নীলা, নীলি৷
এবার সূর্য আর চন্দ্রের রঙ দেখি
সূর্যের রঙ জলন্ত পিণ্ডের মত৷ সেটা দেখলে জ্যোতিষে বোঝা যায় রবির রত্নের রঙ উজ্জ্বল লাল৷ রত্ন - রুবি, মানিক৷
চন্দ্রের রঙ হল yellowish white কখনো bluish white যেটার জন্যে জ্যোতিষে দেখুন চন্দ্রের রত্ন হলদেটে বা হালকা নিলচে সাদা৷ রত্ন - মুক্তো, মুনস্টোন৷
এই প্রতিটি গ্রহের রঙ কিন্তু astronomy এবং জ্যোতিষ দুই মতেই reflection এর মাধ্যমে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে ৷ আর এই ভাবেই সূর্যের আলোর প্রতিফলনের সাথে সাথে আমাদের শরীরে এই রঙের প্রবেশগুলো আমাদের নানান ভাবে ব্যালেন্স করছে৷
মানে বেদে উল্লেখিত মহাজাগতিক তথ্য ও পৃথিবী অনুপাতে তার ব্যাখ্যা, বিশ্লেষন আধুনিক যুগের astronomy এর সাথে একেবারে মিলে যায়৷ জ্যোতিষের মধ্যে যে মহাজাগতিক আকর্ষণ বল আছে তার পরিমাপের ওপর ভিত্তি করেই কিন্তু আমরা জাতক/জাতিকা কে খোঁড়া হবে, কে দৌড়বিদ হবে, কে প্রতিভাবান হবে বা কে হবে মাস্টারমাইন্ড কিলার এরকম নানান বিষয় নির্ণয় করি৷
এই লেখাটি আমার চর্চা ও বিচারলব্ধ৷ নাসার নানান তথ্য ও জ্যোতিষশাস্ত্রের তথ্যের সামঞ্জস্যতা নিয়ে আরো স্বাধ্যায় করবো৷ চেষ্টা করবো আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে৷
লেখনে -
জ্যোতিষ সরস্বতী বর্ণীল মনীষা শাস্ত্রী
উপাধ্যক্ষা - জ্যোতিষ কথা বিদ্যানিকেতন
প্রতিষ্ঠাতা - ওমকার ডিভাইন ভিশন৷