
30/11/2022
(নতুন ট্রান্সপ্লান্ট রেসিপিয়েন্ট দের জন্য)
ট্রান্সপ্লান্ট ডায়েট (পর্ব ১)
মানব দেহের একটা অত্যাবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বাইরের কোন মাইক্রোঅর্গানিজম বা জীবাণু আমাদের শরীরে ঢুকলে শরীর তার বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করে। সোজা ভাষায় তাকে মেরে ফেলে বা শরীর থেকে রিজেক্ট /বের করে দেয়। একেই বলে ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। যেখানে শরীর সামান্য জীবাণুকে জায়গা দেয় না তাহলে এত বড় কিডনিকে (120-160gm)কিভাবে গ্রহন করবে !!!!
হোক না সে বাবা মা নিকট আত্নীয় কিংবা শতভাগ টিস্যু ম্যাচিং করা কোন কিডনি।
হ্যাঁ, যতক্ষণ শরীরে ইনিউনিটি বেশী থাকবে ততক্ষণ শরীর বাইরের কিডনি গ্রহন করবে না। তাই ট্রান্সপ্লান্টের এর আগে শরীরের ইমিউনিটি নস্ট করে/কমিয়ে দেয়া হয়, বিভিন্ন ইমিউনিটি কমানোর ইঞ্জেকশন এবং মেডিসিন দিয়ে। যেহেতু আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়া হয় তাই বাইরের কিডনি আপনার শরীরে কাজ করছে। আর যদি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব বেশি বেড়ে যায় তাহলে কিডনি রিজেক্ট হয়ে যাবে বা আর কাজ করবে না। আর এই বাইরের কিডনিকে বলে "Graft kidney "
আর যেহেতু ইমিউনিটি কম তাই আপনার ইনফেকশন হবার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। আর এই ইনফেকশনের কারণেই বেশীরভাগ কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট রোগী মারা যায়। তাই ট্রান্সপ্লান্ট পরবর্তী প্রথম এবং প্রধান শর্ত হচ্ছে হাইজিন বা পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা। যাতে কোন ধরনের ইনফেকশন না হয়। আপনার রোগ বা ইনফেকশন হবার সম্ভাবনা আর ১০ জন থেকে হাজার গুনে বেশি,কারণ আপনার শরীরের রোগ- প্রতিরোধ ক্ষমতা জোর করে কমিয়ে রাখা হচ্ছে। তাই পারসোনাল হাইজিন যেমন মেনে চলতে হবে, তেমনি খাবারের ব্যাপারেও খুব বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ইউরোপ - আমেরিকার পরিবেশ অনেক হাইজেনিক। তাই ওদের কিডনি রিজেক্ট হলেও ইনফেকশন কম হয়, তাই মৃত্যু -হার অনেক কম ।
কিন্ত এটা বাংলাদেশ, এদেশের আবহাওয়া অন্য রকম ।তাই বাইরে বের হলে, ধুলা বালি দেখলে মাস্ক পড়া উচিত। চুল, নখ, রেগুলার ছোট রাখা বা পরিষ্কার রাখা এবং দিনে ২/৩ বার দাঁত ব্রাশ করা উচিত।
মানব শরীরে অন্ত্রের পর মুখ-গহব্বর জীবাণুর দ্বিতীয় বৃহত্তর উৎস, যেখানে প্রায় ৭ হাজারের অধিক প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া বিদ্যমান। তাই রাতে ঘুমানোর আগে অন্তত একবার মাউথওয়াশ ব্যবহার কথা উচিৎ।
যাই খান না কেন সেটা যেন পঁচা-বাসি বা বেশি দিন ফ্রিজে রাখা না হয়,Raw ফুড যেমন ধনেপাতা,লেটুস , শশা,টমেটো,গাজর,ক্যাপসিকাম,ফল এগুলোর ব্যাপারে খুব বেশি সতর্ক থাকতে হবে, খুব ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করে খেতে হবে।
ট্রান্সপ্লান্টের শুরুর দিকে খেজুর খেতে মানা করা হয়, কারণ খেজুরে আর যাই থাক না কেন বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সেটা ফ্রেশ না। এতে আপনার ডায়রিয়া হতে পারে। এমন কিছুই খাওয়া যাবে না যা আপনার পেট খারাপ করবে, তাই বাইরের খাবার, রাস্তার খাবার ১০ জন স্বাভাবিক মানুষের সইলেও আপনার সইবে না, কারন আপনার ইমিউনিটি সারা জীবন কম থাকবে,কম রাখতে হবে, আর সারা জীবন আপনাকে ইমিউনিটি কমানোর মেডিসিন নিতে হবে।
চলবে.....
(বিঃদ্রঃ এই ডায়েট প্ল্যান একজন সম্পুর্ন সুস্থ ট্রান্সপ্লান্ট রেসিপিয়েন্ট এর জন্য। বিভিন্ন জটিলতার কারণে ভিন্ন ভিন্ন TX দের ডায়েট ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে)