27/07/2025
আজকে fb খুলতেই প্রথম পোস্ট টি এক পত্রিকায় জেমস করবেট এর সার্ধ শতবর্ষ নিয়ে একটা লেখা দেখলাম, পড়ে খুব ভালো লাগলো। আমি এই প্রসংগেই একটা লেখা লিখেছিলাম, "শতবর্ষে হিমালয়ের নরখাদক চিতা "।
কয়েকটা পর্বে লেখাটা লিখেছিলাম... পর্ব গুলো হয়তো শেষ করতে পারিনি। তবুও Corbett saheb কে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে রিপোস্ট করলাম।
1️⃣
শতবর্ষে হিমালয়ের নরখাদক চিতা ......
------------------------------------
প্রথম পর্ব :- হিমালয়
এই আলোচনার শুরুতেই হিমালয়ের কিছু বর্ণনা প্রাসঙ্গিক । সিন্ধু- ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যবর্তী এই বিশাল গিরিশ্রেনীর বর্ণনা সংক্ষেপে দেওয়া সহজ নয় , কারণ পূর্বপশ্চিমে প্রায় ১৫০০ মাইল লম্বা এবং উচ্ছতা ৫০০ ফুট থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ মাইল খাড়াই এই পর্বতমালা । ফলে এক অঞ্চলে আবহাওয়া , গাছপালা, এমনকি নৈসর্গিক দৃশ্যও অন্য অঞ্চল থেকে আসমান জমিন ফারাক । যেমন ১৩০০০- ১৭০০০ ফুট থেকে আরম্ভ হয় চির তুষার অঞ্চল, যা সারা বছরই বরফে ঢাকা থাকে ; যেজন্য সেখানে কোন উদ্ভিদ ই জন্মাতে পারে না। পূর্বাঞ্চলের হিমালয়ে , যা দ্রাঘিমা অনুযায়ী বেশি দক্ষিণে ( অসম, বাংলা, পূর্বনেপাল, সিকিম, ভুটান ইত্যাদি অঞ্চলে ) সেখানে হিমরেখা পাওয়া যাবে ১৭০০০ ফুটের কাছাকাছি , যা কুলু বা বদ্রিনাথে ১৩০০০ ফুটে দেখা যাবে । কাশ্মীরের অমরনাথ গেলে আরো নিচে হিমরেখা মিলবে , কারণ এই অঞ্চল টি হিমালয়ের অনেক উত্তর দ্রাঘিমায় অবস্থিত । হিমরেখার নিচে অনেক খানি পরিসর জুড়ে একটি অঞ্চল দেখা যাবে, যা প্রকৃতিদেবির খাস বাগিচা । বসন্তের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে এই ১২০০০-১৬০০০ ফুট উচ্চতায় বর্ণাঢ্য ফুলের মেলা বসে যায় , সেজন্য এই অঞ্চলকে বিখ্যাত ইংরেজ পর্বতারোহী Smythes বলেছেন, Valley of Flowers । মনে হবে প্রকৃতি যেন আপন খেয়ালেই সেখানে সবুজ জমির ওপর নানা রং দিয়ে আগাগোড়া হিমালয়ের বুক জুড়ে বিচিত্র রঙে আর নক্সায় বিরাট এক কার্পেট বিছিয়েছেন , যা আবার ফুষমন্তরে হেমন্ত কালে উধাও হয়ে যায় । এই অবিশ্বাস্য ফুলবাগানের নিচ থেকে শুরু হয় গুলম ও বৃক্ষ রাজ্য । বৃক্ষের মধ্যে প্রধান হলো ভূর্জপত্র এবং গুল্মের মধ্যে রডোডেনড্রন , যার নেপালি নাম গুরিশ। এখান থেকে নেমে ১০০০০ - ১২০০০ ফুটে নেমে গেলে নানা প্রকার সরল বর্গীয় গাছ দেখা যাবে , যারা হল ফার, স্প্রুস, দেওদার ও পাইন । ফার হল সর্বোচ্চ স্তরের গাছ , আর পাইন নেমে যায় ৪০০০ - ৫০০০ ফুট পর্যন্ত । কাশ্মীরে অবশ্য ১০০০ ফুটের নিচেও পাইন দেখা যাবে । পূর্ব হিমালয়ে,। বিশেষত কোশী নদীর পূর্বে পাইন আর দেওদার দেখা যায়না , আর স্প্রুস ও সেখানে কম হয় । তার বদলে নানা জাতের ওক এবং নানারঙের রডোডেনড্রন দেখা যায়। এই উচুঁ পাহাড়ের বনে যেসব জীবজন্তুর দেখা মেলে তা হল জংলী ছাগল বা থর , জংলী ভেড়া , ভলুক, গেছো ভাম, তুষার চিতা , কাকার হরিণ , বাঘ ও কখনো সখনো দেখা যায় , যদিও তাদের প্রধানত নিচের বনে থাকে, যেখানে শাল ও বাঁশ বন , প্রচুর জল এবং শরঘাস রয়েছে । বাঘের প্রধান খাদ্য বনবরাহ , চিতল, সম্বর, বারশিঙ্গা , কাকার ইত্যাদি জাতের হরিণ । বাঘ ছাড়া আছে শ্লথ ভালুক , আর হাতি পূর্বাঞ্চলে বেশি দেখা যায় ।
**** ফটোটি রেমন্ড শেফার্ড এর আঁকা , জিম করবেটের The Temples of Tiger and More Maneaters of Kumaon বইতে ১৯৫৪ সালের প্রকাশনায় ব্যবহৃত হয়েছে ।
......... ক্রমশ ।।।