Variant in Homeopathy

Variant in Homeopathy Dr. Pranab Chowdhury .

A series about my practical experience ...
described with my own philosophical aspects , tried to make it simple and easy for all ...
thanks with regards .

1️⃣2️⃣এই পর্বটা শেষ। পুরো ১২ টা পর্বে  বিগত ১০০ বছরের জনজীবন, প্রকৃতি ও অরণ্যের বিভিন্ন রূপকথা সম সত্যি এডভেঞ্চার কাহিনী...
27/07/2025

1️⃣2️⃣
এই পর্বটা শেষ। পুরো ১২ টা পর্বে বিগত ১০০ বছরের জনজীবন, প্রকৃতি ও অরণ্যের বিভিন্ন রূপকথা সম সত্যি এডভেঞ্চার কাহিনী, বর্তমানে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা ও তার জীবজগতে প্রভাব নিয়ে কলম না ব্লগ কি বলেন এরকম একটা লেখা লিখে ফেলেছিলাম। সমস্ত রেফারেন্স যথাযত ভাবে উল্লেখ করে তাদের উদ্দেশ্যে পুনরায় রিপোস্ট করতে গিয়েও কৃতজ্ঞতা জানালাম।
শেষে বলি যে বন্ধু এই ১২ তম পোস্টটির শেষ লাইন অবধি দেখবেন তার জন্য জানিয়ে রাখলাম আন্তরিক উষ্ণ শুভেচ্ছা। 🙏

1️⃣1️⃣
27/07/2025

1️⃣1️⃣

🔟
27/07/2025

🔟

9️⃣
27/07/2025

9️⃣

8️⃣
27/07/2025

8️⃣

শতবর্ষে হিমালয়ের নরখাদক চিতা
----------------------------------
অষ্টম পর্ব :- তদন্ত

রুদ্রপ্রয়াগের নরখাদক যখন গারোয়ালের অধিবাসীদের সন্ত্রস্ত করে বেড়াচ্ছে তখন অত বছর ধরে সরকার কি করছিল সে প্রশ্ন আসতেই পারে । সরকারের তরফ থেকে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল । সে পুরস্কার হলো নগদ ১০০০০ টাকা এবং দুটি গ্রাম । গারোয়ালের ৪০০০ লাইসেন্সপ্রাপ্ত বনদুকধারী ছাড়াও প্রচুর মাইনে দিয়ে বাছাই করা শিকারি নিয়োগ করা হয় , এবং চেষ্টায় সফল হলে এদের বিশেষ পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি ও দেওয়া হয়েছিল ।
ল্যানসডাউনে গারোয়াল রেজিমেন্টের যে সৈন্যরা মোতায়েন ছিল , ছুটিতে বাড়ি যাবার সময়ে তাদের সাথে রাইফেল রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। প্রেসের মাধ্যমে চিতাটিকে মারতে সহায়তা করার জন্য ভারতের সর্বত্র শিকারিদের কাছে আবেদন করা হয় । নরখাদক টির চলাপথে অসংখ্য ফাঁদ পেতে রাখা হয়। মানুষের মরীতে বিষ মিশিয়ে রাখার জন্য পাটোয়ারী ও অন্য সরকারি কর্মচারীদের বিষ সরবরাহ করা হয়।
এই সমস্ত মিলিত প্রচেষ্টার ফল দাঁড়ায় সামান্য একটা বন্দুকের গুলির চোট, এরফলে চিতাটির পিছনের বাম পায়ের থাবায় ভাঁজ পড়ে এবং একটা আঙ্গুল থেকে সামান্য একটু চামড়া উড়ে যায় । আর গারোয়াল এর ডেপুটি কমিশনারের সরকারি রিপোর্টে লেখা হয় বিষক্রিয়ায় কোন কষ্ট পাওয়া দূরে থাক, চিতাটির শারীরিক অবস্থার ভালো ছাড়া কোন খারাপ খবর পাওয়া যায়নি ।
শিকারের তিনটি প্রচেষ্টার মধ্যে ১৯২১ সালে দুজন ব্রিটিশ অফিসার অলোকনন্দার ঝোলা পুল থেকে গুলি চালাতে পায়ে সামান্য একটু চামড়া উড়ে যায় । দ্বিতীয়বার চিতা টি একটি ফাঁদে ধরা পড়লেও পালিয়ে যায়, এবং তৃতীয়বার প্রায় পাঁচশো লোক চিতাটিকে তাড়া করে একটি গুহায় ঢুকিয়ে দেয় , যেখানে চিতাটি পাঁচদিন আটকে থাকার পরে বেঁচে আছে কি না দেখার জন্যে গুহা মুখের বাধাটা খুলে দেওয়ায় চিতা টি পালায় ।
রুদ্রপ্রয়াগে কর্বেট দশ সপ্তাহ ছিলেন , কখনও একা, আবার কখনও ইবটসনকে সাথে নিয়ে। রুদ্রপ্রয়াগের পুবদিকের পাহাড়টিতে উঠলে আপনি প্রায় ৫০০ বর্গমাইল এলাকা দেখতে পাবেন । অলোকনন্দা নদীটি এলাকাটিকে কমবেশি সমান দুভাগে ভাগ করেছে , তারসাথে উত্তর পশ্চিম থেকে এসে মিশেছে মন্দাকিনী । দু নদীর মাঝে ত্রিভুজাকৃতি অঞ্চলটি সমতল হওয়ায় এখানে গ্রামের সংখ্যা বেশি । আপনি যেহেতু উচুতে দাঁড়িয়ে ,তাই দূরের আবাদি জমি গুলি খাড়া পাহাড়ের গায়ে আঁকা সার সার রেখার মতো দেখতে লাগছে । জমিগুলি একগজ থেকে পঞ্চাশ গজ পর্যন্ত চওড়া । লক্ষ করে দেখুন গ্রামের বাড়িগুলি সবসময়েই আবাদী জমির ওপর সীমানায় । গরু- ছাগল চরে বেড়ানোর সময় তাদের দিকে নজর রাখতে এবং বন্যজন্তুদের হাত থেকে ক্ষেত খামার বাঁচাতে এভাবে ঘরবাড়ী তৈরি হয় ।
এই জমির নিসর্গ দৃশ্যের মধ্যে বাদামি ও সবুজ দুটি রঙের প্রাধান্য দেখা যাবে , এগুলো হলো ঘাসজমি ও বনভূমি। দেখা যাবে , কয়েকটি গ্রাম ঘাসজমিতেই রয়েছে , তেমনই কয়েকটি আবার জঙ্গলের মধ্যে । নিচে দেখলে মনে হবে পুরো দেশটাই অসমান ও বন্ধুর । অসংখ্য গভীর গিরিখাত এবং খাড়াই ঢালের পাহাড়ে রচিত । এই অঞ্চলে রাস্তা বলতে প্রধানত দুটি , একটা রুদ্রপ্রয়াগ থেকে বেরিয়ে চরাই উঠে কেদারনাথ চলে গেছে ; আরেকটি হলো বদ্রীনাথ যাওয়ার প্রধান তীর্থপথ । প্রায় একশো বছর আগে রাস্তা দুটির কোথাও গাড়ী চলেনি ,এবং রাস্তাগুলি অত্যন্ত সংকীর্ণ ও বন্ধুর ছিল ।
ঘাসজমি যুক্ত গ্রামের চেয়ে জঙ্গলে বেষ্টিত গ্রামে বেশি মানুষ মারা পড়বে এটাই স্বাভাবিক। নরখাদক টি বাঘ হলে নিঃসন্দেহে তা হত ; কিন্তু নরখাদক চিতা শুধু রাতেই শিকার করে ,তাই আড়াল - আবডাল না পেলে তার কিছু যায় আসেনা । এক গ্রামে অন্য গ্রাম অপেক্ষা বেশি মানুষ মারা পড়ার কারণ সতর্কতায় ঢিলেমি ।
অতএব , সব কিছু বিশ্লেষণ করে এবং চিতা টির থাবার ছাপ দেখে ধারণা করা হয় যে নরখাদক টি একটি অতিকায় মদ্দা চিতা । বুড়ো হলেও তার শরীরে বিশাল শক্তি । সে ভারী চেহারার মানুষকেও মারার পর সহজে অনেকদূরে বয়ে নিয়ে যেতে পারে । একটি ক্ষেত্রে সে একজন মোটাসোটা মানুষকে বাড়ির ভেতরে মেরে জঙ্গল ঢাকা এক পাহাড়ের খাড়াই ঢাল বেয়ে দুমাইল উঠিয়ে আবার ঘন ঝোপের ঢাল ধরে নামিয়ে নিয়ে যায় এবং সেখানে সে খায় ।
......... ক্রমশ।।।

7️⃣
27/07/2025

7️⃣

শতবর্ষে হিমালয়ের নরখাদক চিতা
-----------------------------------

সপ্তম পর্ব :- রুদ্রপ্রয়াগের চিতা

বাঘ মানুষখেকো হলেই তার আচার আচরণে কিছু পরিবর্তন এসে পড়ে । যার মধ্যে প্রধান হলো সে লোকালয়ের কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করে এবং মানুষকে একদমই ভয় করেনা । সাধারনত এরা সকাল বেলা অথবা সন্ধায় আক্রমণ করে এবং গ্রামের আশেপাশে , বা বনের বাইরের দিকে অথবা জঙ্গল লাগোয়া চাষ জমিতে কোন একলাপড়েযাওয়া মানুষের জন্যে তক্কেতক্কে থেকে অপেক্ষা করে । আবার কোন কোন বাঘ বেশি সাহসী হয়ে পড়ে দিনের বেলাতেও খোলামেলাভাবে বেরিয়ে পড়ে ; রুদ্রপ্রয়াগ এর চিতা এমন ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল যে , সে অঞ্চলের অধিবাসীরা রোজই স্বেচ্ছায় বিকাল থেকে সকাল পর্যন্ত কারফিউ পালন করত।
বিকেল হলেই পড়ি কি মরি করে সবাই গৃহে আশ্রয় নিত , আর দরজা জানালা বন্ধ করে রাখত । দিনের বেলা ওই এলাকায় জীবনযাত্রা স্বাভাবিকভাবেই চলত , পুরুষেরা দূরের বাজারে কেনাবেচার জন্য কিংবা পাশের গ্রামে আত্মীয় বা বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যেত । মেয়েরা পাহাড়ের গা থেকে ঘরের চাল ছাইবার বা গরুর ঘাস কাটতে যেত । বাচ্চারা স্কুলে যেত , নইলে ছাগল চড়াতে বা শুকনো কাঠ কাটতে জঙ্গলে যেত । গ্রীষ্মে তীর্থযাত্রীরা দল বেঁধে কেদারনাথ ও বদ্রিনাথের পথে তীর্থ করতে যাতায়াত করতো ।
সূর্য্য যখন পশ্চিম দিগন্তে পৌঁছত , ছায়া দীর্ঘ হত , তখন এলাকাটির সকল মানুষের গতিবিধি ,ব্যবহার একটি অতি আকস্মিক ও লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা দিত । যে পুরুষেরা ধীরেসুস্থে বাজারে অথবা কাছের গ্রামে গিয়েছিল তারা দ্রুত ফিরে আসত ঘরে । ঘাসের মস্ত বোঝা পিঠে চাপিয়ে মেয়েরা পাহাড়ের খাড়াই ঢাল বেয়ে হুড়মুড় করে নামতে থাকত। যে বাচ্চারা স্কুল থেকে ফেরার সময় পথে ,অথবা ছাগলের পাল ,অথবা শুকনো কাঠ নিয়ে ফিরতে দেরি করছে , মা ' রা গভীর উৎকণ্ঠায় তাদের ডাকাডাকি করত । পথে শ্রান্ত তীর্থযাত্রীদের সঙ্গে জে স্থানীয় বাসিন্দাদের দেখা হত , সেই তাদের তাড়াতাড়ি যাত্রী শালায় চলে যেতে বলতো । রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত এলাকায় থমথম করত এক অদ্ভুত নৈঃশব্দ্য । কোথাও কোনো গতিবিধি , কোন আওয়াজ নেই , স্থানীয় বাসিন্দারা সবাই দরজার পিছনে , বহু ক্ষেত্রে বাড়তি দরজা লাগিয়ে তারা অধিক নিরাপত্তার খোঁজ করত। বাড়ির ভিতরে ঠাঁই পাওয়ার ভাগ্য যেসব তীর্থযাত্রীর হয়নি তারা যাত্রীশালায় গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকত । কি বাড়ির ভিতর, কি যাত্রীশালায় , সবাই সেই ভয়ঙ্কর নরখাদক সাড়া পাওয়ার ভয়ে চুপচাপ থাকত। দীর্ঘ আট বছর ধরে গারোয়ালের বাসিন্দা ও তীর্থযাত্রীদের কাছে সন্ত্রাস শব্দের সংজ্ঞা ছিল এই ।

নরহত্যার কারণ : ---
-------------------------
গারোয়ালের অধিবাসীরা হিন্দু , তাই তারা মৃতদেহ দাহ করে। দাহকাজ কোন নদী বা ঝর্নার ধারে করা হয় , যাতে ছাইগুলো ভেসে গঙ্গায় গিয়ে পড়ে । গ্রামগুলি বেশিরভাগই উচুঁ পাহাড়ের ওপর এবং নদী বা ঝর্না অনেক ক্ষেত্রেই থাকে বহু নিচে , উপত্যকার মধ্যে । কাজেই ছোট্ট গ্রামে শবদাহের লোক জোগাড় করা বেশ কষ্টকর । কারণ শববাহক ছাড়াও জ্বালানি কাঠ জোগাড় করা ও বয়ে নিয়ে যাওয়ার লোক থাকা দরকার ।
স্বাভাবিক সময়ে শবকৃত্যের কাজ নিখুঁতভাবে সম্পন্ন হয় , কিন্তু মহামারীর সময়ে , যখন সদগতি করার চেয়ে অনেক দ্রুত প্রচুর লোক মরতে থাকে তখন গ্রামে একটি সহজ উপায়ে সদগতি করা হয় । মৃতের মুখে একটি জ্বলন্ত কাঠ কয়লা গুঁজে দিয়ে পাহাড়ের কিনারা অবধি বয়ে নিয়ে গিয়ে শবটি নিচের উপত্যকায় ফেলে দেওয়া হয় ।
নিজস্ব এলাকায় স্বাভাবিক শিকার খেতে অভ্যস্ত কোন চিতাবাঘ এরকম বিনা পরিশ্রমে লব্ধ খাদ্য পেতে পেতে যখন মহামারী চলে যায় তখন তার মানুষের মাংসের স্বাদ জিভে লেগে যায়। তখন এই সহজলভ্য খাদ্য আর না পেয়ে চিতা টি মানুষ মারতে শুরু করে । ১৯১৮ সালে দেশ জুড়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার মড়ক দেখা দেয় । ভারতে দশ লক্ষের বেশি মানুষ মারা পড়ে । ১৯১৮ সালের ৯ জুন গারোয়ালের বেজি গ্রামে প্রথম মানুষটি মারা পড়ে ,এবং ১৯২৬ সালের ১৪ ই এপ্রিল ভৈষয়ারা গ্রামে শেষ মানুষটি চিতাটির হাতে মারা যায় । সরকারি নথিতে এর মধ্যবর্তী সময়ে ১২৫ জনের মৃত্যুর হদিস পাওয়া গেলেও বেসরকারি ভাবে সংখ্যাটি তিনগুণ ছাড়িয়ে যাওয়া উচিত ।
মৃতের সংখ্যা যায় হোক না কেন , চিতা টি চিরকালীন সকল জীবিত প্রাণীর মধ্যে সর্বাধিক প্রচার প্রখ্যাত প্রাণী । যুক্তরাজ্য , আমেরিকা, কানাডা , দক্ষিণ আফ্রিকা , কেনিয়া , মালয় , হংকং , অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং ভারতের অধিকাংশ সাপ্তাহিক ও দৈনিক কাগজে চিতা টির কথা উল্লেখ করা হয় । এছাড়াও প্রতি বছর যে ৬০০০০ যাত্রী তীর্থে যেত , তারা এই নরখাদকের গল্প সারা দেশে ছড়িয়ে দিত ।
............... ক্রমশ ।।।

6️⃣
27/07/2025

6️⃣

শতবর্ষে হিমালয়ের নরখাদক চিতা
----------------------

ষষ্ঠ পর্ব :- পানারের নরখাদক চিতা

১৯০৫ সালের আগে সরকারি নথিপত্রে মানুষখেকো বিষয়ে কোন উল্লেখ ছিল না, সম্ভবত চম্পাবতের বাঘ ও পানারের চিতার আগে কুমায়ুনে মানুষখেকো সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলনা । এই দুটি জানোয়ার মিলিতভাবে আটশো মানুষ মারার পরে সরকারকে শিকারিদের কাছে ব্যক্তিগত আবেদনের উপর ভরসা করতে হলো । পানারের চিতাটি "হাউস অফ কমন্সে" আলোচনায় এসেছিল , সে চারশ মানুষ মেরেছে বলে বলা হচ্ছিল । রুদ্রপ্রয়াগের চিতা ১২৫ জন মানুষকে মারার সরকারি নথি থাকলেও , পানারের চিতা মূল জনপদ থেকে বহুদূরে তার কার্যকলাপ সম্পাদন করায় , সেভাবে প্রচার পায়নি । অপরপক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ৬০০০০ তীর্থযাত্রী এই চিতার কার্যকলাপ বিষয়ে সন্ত্রস্ত থাকত ,এবং সরকার দ্বারা প্রকাশিত দৈনিক বুলেটিন রুদ্রপ্রয়াগের চিতাকে বিখ্যাত করে তুলেছিল ।
করবেট ১৯০৭ সালে চম্পাবতের বাঘ মারার পর পানারের চিতা শিকারের ভার নিতে সরকারের তরফ থেকে অনুরোধ পান। এই কাজটি শুরু করতে তার কয়েক সপ্তাহ দেরি হয়ে যায় , কারণ তিনি তখন মোকামাঘাটের গুরুত্বপূর্ন কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন । উপদ্রুত এলাকায় রওনা হওয়ার মুহূর্তে তিনি নৈনিতালের ডেপুটি কমিশনার বার্থাউডের কাছ থেকে এক জরুরি তলব পেয়েছিলেন। প্রথমবার ১৯১০ সালের এপ্রিলে এবং দ্বিতীয়বার সেপ্টেম্বরে তিনি পানারের চিতাটিকে শিকারের সন্ধানে বেরিয়েছিলেন । এই দুই মাসের মধ্যবর্তী সময়ে কতজন মানুষ নিহত হন সেবিষয়ে জানতে পারা যায় নি। কারণ সরকার কর্তৃক কোন বুলেটিন প্রকাশিত হয় নি বা সংবাদপত্রের মাধ্যমেও এই ব্যাপারে কোন প্রচার ছিলনা ।
আলমোড়ার ডেপুটি কমিশনার স্টিফের কাছ থেকে চিতাটির বিষয়ে বিশদে যেনে দাবিধুরা রোডে অবস্থিত লামগারার পথটি দিয়ে তিনি এক ভৃত্য আর চারজন মালবাহক কে নিয়ে রওনা হন। চোদ্দ মাইল হেঁটে সন্ধ্যার মুখে একটা নিরালা স্কুল বাড়ির সামনে পৌঁছে স্কুলটির উঠোনে রাত টা কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন , কারণ তারা তখনও মানুষখেকো চিতাটার উপদ্রুত এলাকায় প্রবেশ করেন নি । উঠোনটিতে তিনদিক দু' ফুট পাঁচিলে ঘেরা । পিছনের জঙ্গল থেকে জ্বালানি কাঠ এনে রান্নার ব্যবস্থা হয়েছিল । ভৃত্যটি উনুনের পাশের পাঁচিলের ওপর কাগজে মুড়ে নিয়ে আসা একটি পাঁঠার ঠ্যাং রেখে উনুন টি জ্বালানোর চেষ্টা করছিল ; আর করবেট স্কুল বাড়ির দেওয়ালটায় হেলান দিয়ে বসে সোজাসুজি রান্নার দিকে তাকিয়েছিলেন । তিনি দেখেছিলেন , হঠাৎ একটা চিতার মাথা জেগে উঠল মাংসের কাছাকাছি পাঁচিলটার ওপারে , চিতাটি মাংসটা কামড়ে ধরে লাফিয়ে রাস্তা পেরিয়ে জঙ্গলে চলে গেছিল। কাগজের খসখস শব্দ পেয়ে ভৃত্যটি ঘুরে দেখে ভেবেছিল কুকুর মাংসটা নিয়ে পালাচ্ছে । সে চেঁচাতে চেঁচাতে দৌড়ে খানিকটা গিয়েই যখন বুঝেছিল যে , সে চিতার পেছনে দৌড়চ্ছে , তখন ভয়ে পড়ি কি মরি করে উল্টো দিকে ঘুরে জোরে দৌড়ে পাঁচিলের এধারে চলে এসেছিল ।
এই মানুষখেকো চিতাগুলি কতখানি হিংস্র এবং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে শিকার করত তার এক হাড় হিম হয়ে যাওয়া বর্ণনা থেকে আন্দাজ পাওয়া যাবে ।
কর্বেট দ্বিতীয় দিনে সন্ধ্যায় মানুষখেকোটির সাম্রাজ্যে ঢোল ডাকবাংলোয় পৌঁছলেন । রাতে বিশ্রাম নিয়ে পরদিন সকালে একাই মানুষখেকো টির খবরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন । সারাদিন ঘুরে সন্ধার মুখে একটি বসতি বিচ্ছিন্ন খামারের কাছে পৌঁছে তিনি সেখানে একটি স্লেটপাথরের ছাত দেওয়া একটি পাথরের বাড়ি দেখতে পেলেন । এখানে একটি বড় মদ্দা চিতার পায়ের ছাপ দেখা গেল । বাড়িটির কাছে এগোতেই সংকীর্ণ ঝুলবারাণদায় একটি লোক বেরিয়ে এসেছিল এবং কাঠের সিড়ি বেয়ে তার কাছে নেমে এসেছিল।
প্রথম পর্বে যে ছবিটি দেখছেন সেটি রেমন্ড শেপার্ড এর আঁকা , যা Temple of Tiger and More Maneaters of Kumaon এর ১৯৫৪ সালের এডিশনে প্রকাশিত হয়েছিল । কর্বেট যেদিন খামারটি তে পৌঁছন তার আগের রাতে , ওই মানুষটির স্ত্রী , যার বয়স আঠেরো বছর রাতের গরমে ঘরের বাইরে দোতলার বারান্দায় যখন ঘুমিয়েছিলেন চিতাটি নিঃশব্দে বারান্দায় উঠে তার গলায় কামড় বসায় , ধস্তাধস্তিতে মানুষটির ঘুম ভাঙ্গার সঙ্গে সঙ্গেই তার মাথায় ব্যাপারটি কি ঘটছে বুঝে নিতে দেরি হয়নি , এবং সে স্ত্রীর হাতটি ধরে উল্টো দিক থেকে টানতে থাকায় চিতা টি তার একটি থাবা দিয়ে মহিলার বুকটি চেপে ধরে টানতে থাকে । শেষমেষ চিতাটির কামড় আলগা হয়ে যায় ,কিন্তু এর ফলে মহিলার গলায় চারটি গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয় । এরপর জানালাবিহীন ছোট ঘুপসি ঘরের গরমে সারা রাত ধরে থাকায় ঘা গুলো সেপটিক হয়ে যায় । পরদিন তার শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে , লোকটি ভয়ে খামারের বাইরে বেরিয়ে পাশের গ্রাম থেকে কাউকে ডেকে আনতে পারেনি কারণ , খামারটির চারপাশে এক বড় আগাছার বন ছিল ,এবং যেখানে চিতাটি নিশ্চিত ভাবে লুকিয়ে ছিল ; আর ওই সন্ধ্যায় কর্বেটের পক্ষেও আর বাইরে বেরিয়ে পাশের গ্রাম বা কোথাও যাওয়ায় উপায় ছিল না ।
পরদিন সকালে বেড়িয়ে বাংলোর দিকে ফেরার সময় রোড ওভার্সিয়ারের সঙ্গে করবেটের দেখা হয় ,এবং তার হাতে তিনি স্টিফের কাছে ওই মহিলার জন্যে ওষুধের ব্যবস্থার আর্জি জানান ; ওষুধ যতক্ষণে এসে পৌঁছায় তার আগে ঐ মহিলার মৃত্যু হয়ে যায় । এই গল্পের ওই মহিলার অবর্ণনীয় যন্ত্রণায় কাতর আর্তনাদ, যা কোন বাঘ বা চিতার শ্বদন্ত দ্বারা কামড় থেকে ঘা হয়ে সেপটিক হয়ে যায় , এরকম যন্ত্রণা থেকে অন্য যেকোন উপায়ে মৃত্যুকে আশ্রয় করে নেওয়া অনেক সহজ বলে মনে হয় ।

.............. ক্রমশ।।।

5️⃣
27/07/2025

5️⃣

শতবর্ষে হিমালয়ের নরখাদক চিতা
----------------------------------

পঞ্চম পর্ব :- উত্তরাখণ্ডের তীর্থপথ

আপনি যদি ভারতীয় সমতল ভূমির অধিবাসী হন , এবং সকল সৎ হিন্দুর মত আপনার ও যদি কেদারনাথ এবং বদ্রিনাথের মত অতি প্রাচীন দেবপীঠ তীর্থযাত্রার ইচ্ছা থাকে তবে আপনাকে তীর্থ যাত্রা শুরু করতে হবে হরিদ্বার থেকে ।
পবিত্র হর কী প্যারী কুন্ড তে অবগাহন করে শুদ্ধ শুচি হয়ে হরিদ্বারের অসংখ্য দেবপীঠ ও মন্দির দর্শন করে,এবং সেগুলির ভান্ডারে আপনার যথাসাধ্য দক্ষিণা জমা করে আপনি সানন্দে দীর্ঘ, শ্রমসাধ্য তীর্থযাত্রা শুরু করবেন ।
হরিদ্বারের পর প্রথম যে দর্শনীয় স্থানে পৌঁছবেন সেটি হল হৃষিকেশ । এখানে কালা কমলি ওয়ালাদের ( কালো কম্বলে ঢাকা সাধু) সংগে প্রথমে পরিচয় হবে , এদের কোমরে থাকে ছাগলের লোমে বোনা দড়ি। এরা দেশজুড়ে অনেক পুণ্যকাজ করে ; এদের প্রতিষ্ঠিত দেবপীঠ ও মন্দিরে জে প্রণামি দর্শনী পেয়ে থাকেন তা দিয়ে এরা দেশজুড়ে হাসপাতাল, ওষুধ বিতরণ কেন্দ্র , তীর্থযাত্রা নিবাস স্থাপন ও পরিচালনা এবং গরিবদের খেতে পড়তে সাহায্য করেন।
হৃষিকেশ পিছনে ফেলে আপনি লছমণঝোলায় পৌঁছবেন , এখানে ঝোলাপুল পার হয়ে আপনি গঙ্গার ডানদিক পেরিয়ে বাঁদিকে গিয়ে তীরবরাবর চরাইপথে তিনদিন হেঁটে আপনি গারোয়ালের রাজধানী শ্রীনগরে পৌঁছবেন । সুউচ্চ পর্বতমালায় ঘেরা প্রশস্ত, উন্মুক্ত এক অধিত্যকায় অবস্থিত জায়গাটির সৌন্দর্য অপরিসীম । ইতিহাস, ধর্ম ও বাণিজ্যকেন্দ্র হিসাবে জায়গাটির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
শ্রীনগর থেকে ছাতিশাল চরাইপথটি অত্যন্ত খাড়াই । তবে গঙ্গা উপত্যকা এবং কেদারনাথের ওপরে চির তুষাররাজ্যের মহান সৌন্দর্য আপনার সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবে । ছাতিশাল থেকে একদিনের পথ , তারপরেই দেখুন সামনে গোলাবরাই । সার সার ঘাসের ছাউনী দেওয়া তীর্থযাত্রীদের থাকার ঘর , পাথরের তৈরি একটি এক কামরা বাড়ি , পানীয় জলের একটি আধার । একটি ছোট্ট কাকচক্ষু পার্বত্য নদী এই বিশাল , প্রকাণ্ড জলাধারে জল যোগায় । পাইন গাছের চারা দিয়ে তৈরি সার সার নালা বসিয়ে পাহাড়ের গা দিয়ে গ্রীষ্মে সন্তর্পণে নদী থেকে জল নামিয়ে আনা হয় । বছরের অন্য ঋতুতে শ্যাওলা ও মেডেন হেয়ার ফার্নে ঢাকা পাথরের ওপর দিয়ে , উজ্জ্বল সবুজের সমারোহ এবং আকাশ নীল স্ট্রবিলান্থ ফুলের ভিতর দিয়ে মহানন্দে নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁধনহারা জল ।
যাত্রী শালার একশগজ পিছনে পথের ডানদিকে দাড়িয়ে আছে একটি আমগাছ । এই গাছটি, এটির ওপরে গোলাবরাই যাত্রীশালার মালিক পণ্ডিতের দোতলা বাড়িটি মনে রাখতে হবে । আরো দু মাইল সমতল পথে হাঁটুন । এখন বহুদিনের মত এটাই আপনার সমতলপথে শেষ হাঁটা। এবার আপনি রুদ্রপ্রয়াগে পৌঁছে গেলেন ; হিন্দিতে সঙ্গম কে প্রয়াগ বলে। কেদারনাথ থেকে নেমে এসেছে মন্দাকিনী , বদ্রিনাথ থেকে অলোকনন্দা । রুদ্রপ্রয়াগে এসে নদী দুটি মিলেছে , এরপর থেকে দুটি মিলিত নদীর জলধারা সকল হিন্দুর কাছে গঙ্গা এবং পৃথিবীর অন্য সর্বত্র The Ganges বলে পরিচিত ।
আপনি এবারে অলোকনন্দা পেরিয়ে মন্দাকিনীর বাম তীর ধরে চরাইপথে কেদারনাথ যাত্রা করুন , আমি পাহাড়গুলোর ওপারে নৈনিতালে জিম করবেটের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই ।
............ ক্রমশ ।।।।।

4️⃣
27/07/2025

4️⃣

শতবর্ষে হিমালয়ের নরখাদক চিতা
----------------------------------
চতুর্থ পর্ব :- পাহাড়ি গ্রাম ও অরণ্যে অগ্নিসংযোগের একটি কাহিনী

চিনা পাহাড়ের শিখর থেকে আপনি একনজরে যেসব গ্রামগুলি দেখেছিলেন এবার আমার সঙ্গে তার একটিতে আসুন ।পাহাড়ের গায়ে এধার থেকে ওধার পর্যন্ত জে সমান্তরাল দাগের আঁচড় গুলো দেখছেন সেগুলো হলো ধাপে ধাপে তৈরি ক্ষেত । এদের মধ্যে কয়েকটি হাত ছয়েকের বেশি চওড়া নয় । তাদের ঠেকনা দেওয়া পাথরের দেওয়াল গুলো বিশ হাত উচুঁ । এই সরু সরু ক্ষেতের একধারে খাড়া পাহাড়ের গা , অন্যধারেও পাহাড় অনেক টা খাড়া নেমে গিয়েছে।চাষ করা এখানে ভারী শক্ত আর বিপদজ্জনক কাজ , সেটা সম্ভব হয় শুধু এই কারণে যে এখনকার লাঙ্গলের বাট ছোট আর হালের বলদগুলো পাহাড়িয়া বলে ছোট আর গাট্টাগোট্টা চেহারার । ছাগলের মত তাদেরও পা কখনো ফস্কায় না। যেসব সাহসী মানুষ পরিশ্রম করে এই ধাপওয়ালা ক্ষেত গুলো তৈরি করেছে তারা বাস করে স্লেট পাথরের ছাউনী দেওয়া পাথরের একসারি বাড়িতে । ভাবর অঞ্চলের ওপারের সমতলভূমি থেকে এসে যে সরু অসমান পথটি হিমালয়ের মধ্যে চলে গিয়েছে তারই ধারে এই কুঠিরগুলো রয়েছে ।
এরপরে আমরা জিম করবেটের বর্ণনায় পরবর্তী অংশ পড়তে থাকি ।
-----------------------+++++---------------------++++-------------
মোকামা ঘাটে কাজ করতে করতে আমি একটা জরুরী টেলিগ্রাম পেয়ে এই গ্রামে এসেছিলাম । ঘটনাটা ঘটেছিল ওই কুঠির গুলির ওপরের একটি ক্ষেতে। দিনের বেলায় একজন স্ত্রীলোক আর তার বারো বছরের মেয়ে ক্ষেতে গম কাটছিল , এমন সময় হঠাৎ একটা বাঘ এসে পড়েছিল , এবং বাঘটি মেয়েটিকে মেরে ফেলে । আমার টেলিগ্রাম পেয়ে আসতে একসপ্তাহ দেরি হয়, যায় মধ্যে বাঘটি আরেকজন মানুষকে হত্যা করে । গ্রামবাসীরা মড়াটা কম্বলে বেঁধে একটা গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখে , যা বাঘটা গাছ থেকে নামিয়ে আধ মাইল দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় । আমি যেদিন সন্ধ্যায় নৈনিতালে এসে পৌঁছোই সেদিন সকালে আমার লোকজন আমার জন্য আগে থেকে একটি মাচান বেঁধে রাখে , কিন্তূ একজন শিকারি বিকালের দিকে মাচা টির দখল নেয় । বাঘটি রাতে এলে তিনি গুলি চালাতে ব্যর্থ হন এবং বাঘটিকে লন্ঠন জ্বালিয়ে গাছ থেকে দেখতে গিয়ে তিনি লন্ঠন টি মাটিতে ফেলে দেন । তখন মে মাস , জঙ্গল খটখটে শুকনো, লন্ঠন এর আগুন থেকে শুকনো ঝোপঝাড়ে দাউদাউ করে আগুন লেগে যায়, এবং সরকারি বনের ক্ষতির কথা চিন্তা করে নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে ভুলে গিয়ে গাছ থেকে লাফিয়ে নেমে তিনি তার টেফ্লন এর কোটটি খুলে সেটি দিয়ে আগুন নেভাতে উদ্যোগী হন । কিছুপরে নরখাদক টির কথা মাথায় আসতেই তিনি আতঙ্কিত হয়ে অতি দ্রুত গাছে উঠে পড়েন । সৌভাগ্যবশত অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে বৃষ্টি এসে যাওয়ায় বড়সড় ক্ষতি হয়ে যায় নি , যদিও আধ মাইলের মত জঙ্গল পুড়ে গেছিল এবং বাঘটি মৃতদেহ টি ছেড়ে পালিয়ে যায় , এবং পরদিন সকালে নেমে সোজা নৈনিতালে ফিরে যান ।
............ ক্রমশ ।।।।।।

3️⃣
27/07/2025

3️⃣

শতবর্ষে হিমালয়ের নরখাদক চিতা
------------------------------------

তৃতীয় পর্ব :- উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য

আপনার সামনেই ডানদিকে নন্দকোট - ভগবতী পার্বতীর শুভ উপাধান । আরো একটু পূর্বে পঞ্চচুলির রমণীয় শৃঙ্গমালা , তিব্বতে কৈলাশ পর্বতে যাওয়ার পথে পাণ্ডবেরা নাকি এই পাঁচটি উনুনে রান্না করেছিলেন । ঊষার প্রথম আবির্ভাব কালে যখন চিনাপাহাড় থেকে তুষারাবৃত পর্বতশ্রেণী পর্যন্ত সমস্ত মধ্যবর্তী জায়গা রাত্রির আঁচলের তলায় চাপা পড়ে থাকে, ওই বরফের চুড়াগুলি তখন নীল থেকে ক্রমে গোলাপী হয়ে উঠতে থাকে ।তারপর সূর্য সবচেয়ে উচু শিখরগুলিকে স্পর্শ করে তখন সেই গোলাপী রংটা ধীরে ধীরে চোখ ঝলসানো সাদা রঙে পরিবর্তিত হয়ে যায় । বেলা বেড়ে গেলে এই পাহাড়গুলোকে দেখায় বর্ণহীন এবং নিরুত্তাপ ।যেন প্রত্যেক চূড়ার চুলে তুষারের একটি করে পালক গোঁজা হয়েছে। অস্তরবির আলোয় দৃশ্যপট টি স্বর্গের শিল্পীর খেয়ালমত গোলাপী , সোনালী কিংবা লালরঙে রঙিন হয়ে ওঠে।
এবার তুষারের দিকে পিছন ফিরে দক্ষিণ দিকে তাকান ,আপনার দৃষ্টির শেষ সীমায় দেখবেন তিনটি শহর : বেরিলি , কাশিপুর আর মোরাদাবাদ । এদের মধ্যে সবথেকে কাছে হচ্ছে কাশিপুর- নাকবরাবর ধরলে এর দূরত্ব ৫০ মাইল। যে প্রধান রেলপথ কলকাতা থেকে পঞ্জাব গিয়েছে এই তিনটি শহর ই তার উপরে ।
রেলপথ থেকে পাদ শৈলশ্রেণী পর্যন্ত যতটা জায়গা ,তাকে তিনটি ফালি তে ভাগ করা যায়। প্রথমে মাইল কুড়ি মত চওড়া একফালি চাষের জায়গা ; তারপর দশমাইল চওড়া ঘাসের রাজ্য ,তাকে বলে তরাই ; তারপর মাইল দশেক চওড়া জমিতে বড়বড় গাছ হয় ,তাকে বলে ভাবর । এ অঞ্চলটি একেবারে পাদ শৈলশ্রেণী পর্যন্ত বিস্তৃত । এর মধ্যে জায়গায় জায়গায় জঙ্গল পরিষ্কার করা হয়েছে । বহু ছোট ছোট নদীর জলে পুষ্ট এই উর্বর ভূমিতে ছোট বড় অনেক গ্রাম গড়ে উঠেছে । নিকটতম গ্রাম সমস্টি কালাধুঙ্গী হলো নৈনিতাল থেকে ১৫ মাইল দূরে । এরই উপরকার মাথায় দেখতে পাবেন তিন মাইল লম্বা এক প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছোট হলদয়ানি গ্রাম , যেখানে নৈনিতাল থেকে নেমে এসে রাস্তাটি পাদ শৈলশ্রেণীর পাশের রাস্তায় এসে পড়েছে ।
এই এলাকার পাহাড়গুলো প্রায় পুরোপুরিই লৌহ আকরিক দিয়ে গড়া । উত্তর ভারতে আকরিক গলিয়ে প্রথম লোহা তৈরি হয়েছিল এই কালাধুঙ্গীতেই ।তখন কাঠই ছিল জ্বালানি ,তাই কুমাওনের রাজা স্যার হেনরি রামসের ভয় হয়েছিল ভাবর অঞ্চলের পুরো জঙ্গলটা ই শেষ কালে চুল্লির পেটে চলে যাবে , তাই তিনি সমস্ত লোহার কারখানা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। চিনার পাহাড়ের ওপরে আপনি যেখানে রয়েছেন সেখান থেকে কালাধুঙ্গী পর্যন্ত পাহাড়গুলো নিবিড় শালবনে আচ্ছন্ন। শালগাছ থেকেই আমাদের রেল লাইনের স্লিপার গুলো তৈরি হয়।এর একেবারে কাছেই শৈলশিরার একটি ভাঁজের কোলে শুয়ে আছে ছোট খুরপা তাল হ্রদটি । তার চার পাশের ক্ষেত গুলিতে ভারতের শ্রেষ্ঠ খুরপি আলু উৎপন্ন হয়। দূরে ডানদিকে দেখতে পাবেন সূর্যের আলো গঙ্গার বুকে পড়ে ঠিকরে আসছে , বামে দেখবেন সারদার জলেও তার ঝলকানি । পাদ শৈলশ্রেণী থেকে এই দুই নদীর নির্গমের দুই জায়গার মধ্যকার ব্যবধান আন্দাজ শ' দুই মাইল হবে।
এবার পূর্বদিকে ফিরুন । আপনার সামনের দিকে কাছ থেকে খানিক দুর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডকে পুরানো গেজেট বইতে ' ষাট হ্রদের এলাকা' বলে বর্ণনা করা হয়েছে , তাদের মধ্যে অনেক হ্রদ ই মজে গিয়েছে । এখন যেক'টা আছে তাদের মধ্যে বলবার মত শুধু নৈনিতাল , সাততাল , ভীমতাল আর নাকুচিয়াতাল উল্লেখযোগ্য। নাকুচিয়াতালের ওধারে মোচার মত পাহাড়টি হলো ছোট কৈলাশ । ওই পবিত্র পাহাড়ে দেবতারা জীব হত্যা পছন্দ করেন না। ছোট কৈলাশ ছাড়িয়ে চোখে পড়ছে কালা আগার শৈলশিরা , তারও পিছনে নেপালের পর্বতশ্রেণী অস্পষ্ট হতে হতে দৃষ্টি পথের বাইরে মিলিয়ে গিয়েছে ।
এবার মুখ ফেরান পশ্চিমদিকে। কিন্তু তার আগে আপনাকে কয়েকশো ফুট নেমে চিনা পাহাড় সংলগ্ন একটি পাথর ছড়ানো উচুঁ চূড়া দেওপাটটার উপর গিয়ে জায়গা নিতে হবে। আপনার ঠিক নিচেই গভীর বিস্তীর্ণ আর ঘন বনে ঢাকা একটি উপত্যকা চিনা পাহাড় আর দেওপাটটার মাঝে থেকে শুরু হয়ে দাচৌরির ভিতর দিয়ে চলে গেছে কালাধুঙ্গি পর্যন্ত। এখানে যত ফুল ও পশুপাখি , হিমালয়ের আর কোথাও আর পাওয়া মুশকিল ।
এই অপরূপ উপত্যকাটির ওধারে পাহাড়ের পর পাহাড় একটানা গঙ্গা পর্যন্ত চলে গিয়েছে - দেখতে পাবেন যে ১০০ মাইলেরও বেশি দূরে তার জল রোদে চকচক করছে । আর গঙ্গার ওধারে রয়েছে শিবালিক পর্বতমালা। মহান হিমালয় যখন জন্মান নি , তখনও এই পর্বতমালা প্রাচীন বলেই গণ্য হতেন ।
.............. ক্রমশ।।।।।

27/07/2025

2️⃣

আজকে fb খুলতেই প্রথম পোস্ট টি এক পত্রিকায় জেমস করবেট এর সার্ধ শতবর্ষ নিয়ে একটা লেখা দেখলাম, পড়ে খুব ভালো লাগলো। আমি এই প...
27/07/2025

আজকে fb খুলতেই প্রথম পোস্ট টি এক পত্রিকায় জেমস করবেট এর সার্ধ শতবর্ষ নিয়ে একটা লেখা দেখলাম, পড়ে খুব ভালো লাগলো। আমি এই প্রসংগেই একটা লেখা লিখেছিলাম, "শতবর্ষে হিমালয়ের নরখাদক চিতা "।
কয়েকটা পর্বে লেখাটা লিখেছিলাম... পর্ব গুলো হয়তো শেষ করতে পারিনি। তবুও Corbett saheb কে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে রিপোস্ট করলাম।
1️⃣

শতবর্ষে হিমালয়ের নরখাদক চিতা ......
------------------------------------
প্রথম পর্ব :- হিমালয়

এই আলোচনার শুরুতেই হিমালয়ের কিছু বর্ণনা প্রাসঙ্গিক । সিন্ধু- ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যবর্তী এই বিশাল গিরিশ্রেনীর বর্ণনা সংক্ষেপে দেওয়া সহজ নয় , কারণ পূর্বপশ্চিমে প্রায় ১৫০০ মাইল লম্বা এবং উচ্ছতা ৫০০ ফুট থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ মাইল খাড়াই এই পর্বতমালা । ফলে এক অঞ্চলে আবহাওয়া , গাছপালা, এমনকি নৈসর্গিক দৃশ্যও অন্য অঞ্চল থেকে আসমান জমিন ফারাক । যেমন ১৩০০০- ১৭০০০ ফুট থেকে আরম্ভ হয় চির তুষার অঞ্চল, যা সারা বছরই বরফে ঢাকা থাকে ; যেজন্য সেখানে কোন উদ্ভিদ ই জন্মাতে পারে না। পূর্বাঞ্চলের হিমালয়ে , যা দ্রাঘিমা অনুযায়ী বেশি দক্ষিণে ( অসম, বাংলা, পূর্বনেপাল, সিকিম, ভুটান ইত্যাদি অঞ্চলে ) সেখানে হিমরেখা পাওয়া যাবে ১৭০০০ ফুটের কাছাকাছি , যা কুলু বা বদ্রিনাথে ১৩০০০ ফুটে দেখা যাবে । কাশ্মীরের অমরনাথ গেলে আরো নিচে হিমরেখা মিলবে , কারণ এই অঞ্চল টি হিমালয়ের অনেক উত্তর দ্রাঘিমায় অবস্থিত । হিমরেখার নিচে অনেক খানি পরিসর জুড়ে একটি অঞ্চল দেখা যাবে, যা প্রকৃতিদেবির খাস বাগিচা । বসন্তের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে এই ১২০০০-১৬০০০ ফুট উচ্চতায় বর্ণাঢ্য ফুলের মেলা বসে যায় , সেজন্য এই অঞ্চলকে বিখ্যাত ইংরেজ পর্বতারোহী Smythes বলেছেন, Valley of Flowers । মনে হবে প্রকৃতি যেন আপন খেয়ালেই সেখানে সবুজ জমির ওপর নানা রং দিয়ে আগাগোড়া হিমালয়ের বুক জুড়ে বিচিত্র রঙে আর নক্সায় বিরাট এক কার্পেট বিছিয়েছেন , যা আবার ফুষমন্তরে হেমন্ত কালে উধাও হয়ে যায় । এই অবিশ্বাস্য ফুলবাগানের নিচ থেকে শুরু হয় গুলম ও বৃক্ষ রাজ্য । বৃক্ষের মধ্যে প্রধান হলো ভূর্জপত্র এবং গুল্মের মধ্যে রডোডেনড্রন , যার নেপালি নাম গুরিশ। এখান থেকে নেমে ১০০০০ - ১২০০০ ফুটে নেমে গেলে নানা প্রকার সরল বর্গীয় গাছ দেখা যাবে , যারা হল ফার, স্প্রুস, দেওদার ও পাইন । ফার হল সর্বোচ্চ স্তরের গাছ , আর পাইন নেমে যায় ৪০০০ - ৫০০০ ফুট পর্যন্ত । কাশ্মীরে অবশ্য ১০০০ ফুটের নিচেও পাইন দেখা যাবে । পূর্ব হিমালয়ে,। বিশেষত কোশী নদীর পূর্বে পাইন আর দেওদার দেখা যায়না , আর স্প্রুস ও সেখানে কম হয় । তার বদলে নানা জাতের ওক এবং নানারঙের রডোডেনড্রন দেখা যায়। এই উচুঁ পাহাড়ের বনে যেসব জীবজন্তুর দেখা মেলে তা হল জংলী ছাগল বা থর , জংলী ভেড়া , ভলুক, গেছো ভাম, তুষার চিতা , কাকার হরিণ , বাঘ ও কখনো সখনো দেখা যায় , যদিও তাদের প্রধানত নিচের বনে থাকে, যেখানে শাল ও বাঁশ বন , প্রচুর জল এবং শরঘাস রয়েছে । বাঘের প্রধান খাদ্য বনবরাহ , চিতল, সম্বর, বারশিঙ্গা , কাকার ইত্যাদি জাতের হরিণ । বাঘ ছাড়া আছে শ্লথ ভালুক , আর হাতি পূর্বাঞ্চলে বেশি দেখা যায় ।

**** ফটোটি রেমন্ড শেফার্ড এর আঁকা , জিম করবেটের The Temples of Tiger and More Maneaters of Kumaon বইতে ১৯৫৪ সালের প্রকাশনায় ব্যবহৃত হয়েছে ।
......... ক্রমশ ।।।

Address

Kolkata
700048

Telephone

+919831128809

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Variant in Homeopathy posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Practice

Send a message to Variant in Homeopathy:

Share

Share on Facebook Share on Twitter Share on LinkedIn
Share on Pinterest Share on Reddit Share via Email
Share on WhatsApp Share on Instagram Share on Telegram