11/09/2025
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS): আধুনিক প্রজন্মের এক নীরব মহামারি
বর্তমান সময়ে মেয়েদের স্বাস্থ্য সমস্যার তালিকায় যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসছে, তা হলো পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম বা PCOS। একসময় এটি সীমিত সংখ্যক নারীর সমস্যা মনে হলেও, এখন পুরো একটি প্রজন্ম এই সমস্যার শিকার হচ্ছে।
PCOS কী?
========
PCOS হলো নারীদের একটি হরমোনজনিত সমস্যা, যেখানে শরীরের স্বাভাবিক হরমোন ব্যালান্স নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয় এবং মাসিক চক্রসহ নারীর প্রজনন ও শারীরিক নানা দিক প্রভাবিত হয়।
PCOS-এর সাধারণ লক্ষণসমূহ
======================
মাসিক অনিয়মিত হওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া
ওজন কমতে না চাওয়া বা অকারণে বেড়ে যাওয়া
অতিরিক্ত চুল পড়া বা মুখে অস্বাভাবিক লোম গজানো
হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে ঘনঘন মুড সুইং
ব্রণ, ত্বকের কালচে দাগ বা অন্যান্য ত্বক সমস্যা
কেন এত বাড়ছে PCOS?
==================
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের জীবনযাপনের ধরনই এই সমস্যার মূল কারণ।
সারাদিন বসে থাকা ও শরীরচর্চার অভাব
ফাস্ট ফুড, চিনি ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি নির্ভরতা
রাত জাগা ও ঘুমের অভাব
অতিরিক্ত মোবাইল, ল্যাপটপ ও স্ক্রিন টাইম
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
এসব অভ্যাস শরীরের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে হরমোন সিস্টেম নষ্ট হয় এবং মেয়েদের পিরিয়ড ও প্রজনন স্বাস্থ্যে গুরুতর প্রভাব ফেলে।
মানসিক প্রভাবও কম নয়
শুধু শারীরিক দিকেই নয়, PCOS মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
ঘনঘন মুড সুইং
ডিপ্রেশন
আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া
এসব কারণে একজন নারীর ব্যক্তিগত জীবন, সম্পর্ক ও ক্যারিয়ারেও সমস্যা দেখা দেয়।
কেন এটিকে সামাজিক স্বাস্থ্য সমস্যা বলা হচ্ছে?
==================================
কারণ এটি শুধু একজন নারীর সমস্যা নয়। নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সঙ্গেও জড়িত। আজকের তরুণীরা যদি ব্যাপক হারে PCOS-এ আক্রান্ত হয়, তাহলে আগামী প্রজন্ম আরও ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়বে।
করণীয়
=======
নিয়মিত শরীরচর্চা করা
অন্তত ঘরে বসে যোগা করা
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, বিশেষ করে শাকসবজি ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাদ্য
পরিমিত ঘুম নিশ্চিত করা
মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করা
প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
উপসংহার
========
PCOS এখন আর কোনো ব্যক্তিগত রোগ নয়; এটি পুরো সমাজের জন্য একটি বড় হেলথ ক্রাইসিস। তাই এখনই সচেতন হওয়া, জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় পরবর্তী প্রজন্মকে এর চরম মূল্য দিতে হতে পারে।