21/08/2025
উদীয়মান সূর্যের দেশে ।
পর্ব - ৬
অনেকদিন পর আবার লিখতে বসলাম । কিছু ক্ষুদ্র জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে আমাকে অসুস্থ করে তোলে । তাদের থেকে পরিত্রাণ পেয়ে আবার আমার লেখা শুরু । রাজাদার কাজ দুপুর দুটোর মধ্যে হয়ে যাওয়ায় আমরা ঠিক করলাম একটু বিশ্রাম নিয়ে চারটে নাগাদ উচিয়ারা যাব । উচিয়ারা মিতো থেকে মাত্র দুটো স্টেশন । আমরা যাব AEON মলে । এই মলটি উন্নত দেশে শহরের মধ্যে থাকে না । শহরের বাইরে একটু গ্রামের দিকেই থাকে । জাপানের গ্রাম অসম্ভব শান্তিপূর্ণ জায়গা । এখানকার গ্রাম ও শহরের মধ্যে বাছতে হলে আমি গ্রামকেই অগ্রাধিকার দেব ।
হোটেলের ঘরে ফিরে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আমরা চারটে নাগাদ মিতো স্টেশনে চলে এলাম । আমরা উচিয়ারা যাব লোকাল ট্রেনে । এই ট্রেনগুলো ছোট , মাত্র তিন কামরার । কিন্তু সব ট্রেনই শীততাপনিয়ন্ত্রিত । লোকাল ট্রেনে আধ ঘন্টার মত সময় লাগল উচিয়ারা পৌঁছতে । স্টেশনে হাতে গোনা কয়েকজন নামলাম । ফাঁকা স্টেশন । স্টেশনের বাইরে বার হবার জন্য ওভারব্রিজের কাছে এলাম । হেঁটে ওঠা যাবে । লিফট ও আছে । মিনিট তিনেক হেঁটে স্টেশনের বাইরে এলাম । এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে । সন্ধ্যা হব হব । চমৎকার পরিবেশ । কোথাও কোন আওয়াজ নেই । কোন ময়লাও নেই । স্টেশনের পাশের রাস্তা দিয়ে আমরা মলের দিকে এগিয়ে চললাম । আমাদের পেছনে সাত আটজন লোক আসছে । সবার গন্তব্যস্থল AEON মল । মিনিট দশেক হেঁটে আমরা AEON মলের প্রবেশদ্বারের কাছে পৌঁছে গেলাম ।
শহরের বাইরে এতবড় মল ভাবতেই পারিনি । পাঁচতলা বিশাল জায়গা জুড়ে মল। । প্রবেশদ্বারের বাইরে গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা । সাইকেল রাখার আলাদা জায়গা । যেটা চোখে লাগল তা হল সারমেয় ও অন্যান্য চারপেয়েদের বেঁধে রাখার জন্য আলাদা স্থান । যেখানে আপনি আপনার পোষ্যকে বেঁধে রেখে মলে যেতে পারেন । পোষ্যকে পর্যবেক্ষণের লোক অবশ্যই আছে । টোকিও বা মিতো শহরের লোকেরা একান্তে কিছু সময় কাটানোর জন্য এই AEON মল । অবশ্যই কেনাকাটা , খাওয়াদাওয়া তো আছেই ।
মলের ভিতরে ঢুকতেই একতলায় পেটস্ কাউন্টার । পোষ্যদের খাবার , যাবতীয় সাজসামগ্রী এখানে পাওয়া যায় । নানা রকমের কুকুরছানা এখানে বিক্রি হচ্ছে । দাম আড়াই লক্ষ ইয়েনের কাছাকাছি । ভারতীয় মুদ্রায় এক লক্ষ টাকার বেশী । একতলায় আরো অনেক জিনিস । বেশীর ভাগই ইলেকট্রনিক সামগ্রী ।
দোতলা তিনতলায় জামাকাপড় , খেলনা o সাজসামগ্রীর সম্ভার । ঘুরে দেখলাম । কিছু কেনাও হলো । দাম ভারতবর্ষের মতোই ও যুক্তিসঙ্গত । একদিকে KFC , McDONALD দেখলাম । যা আমার চোখ টানলো তা হল মলের একপাশে একটা বিশাল পাঠশালা । অসংখ্য বই । বইপ্রেমীরা বসে বই পড়তে পারেন । কিনতেও পারেন । আমি অবশ্য পড়ার চেষ্টা করিনি । কারণ সব বই জাপানী ভাষায় লেখা । আর আমি জাপানী ভাষা জানি না । অনুবাদক ও নেই ।
রাজাদা এর মধ্যে KFC থেকে কফি ও চিকেন ফ্রাই টাইপের কিছু একটা নিয়ে এসেছে। এক জায়গায় বসে আরাম করে কফিটা পান করা গেল । নিজেদের মধ্যে একটু গল্পগুজব করলাম । আমাদের সাউথ সিটি মল ভালো । কিন্ত বড্ড ভিড় । সবই আছে , কিন্ত্ত পাঠাগার নেই । এবার মিতোতে ফেরার পালা । মিতোতে যখন পৌঁছলাম তখন রাত নটা হবে । এরপর পরের পর্বে ।