
14/04/2025
১.হোমিওপ্যাথির বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও ওষুধ তৈরির ধাপ সমূহ:
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মূল ভিত্তি তিনটি:
ক. ‘সদৃশ দ্বারা সদৃশ নিরাময় (Similia Similibus Curentur)’
যে উপাদান একটি সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে কোনো উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে, সেটি খুব ক্ষুদ্র ও নিরাপদ শক্তি মাত্রায় দিলে রোগী সেই উপসর্গ থেকে নিরাময় পেতে পারেন।
খ. পোটেন্সাইজেশন (Potentization)
ওষুধকে বারবার “dilute” এবং “succuss” (ঝাঁকানো) করার মাধ্যমে ওষুধের ‘শক্তি’ বাড়ানো হয়। যদিও এতে মূল রাসায়নিক উপাদান প্রায় অনুপস্থিত হয়ে যায়, তবে বলা হয় এই প্রক্রিয়া ওষুধের ‘শক্তি’ বা ‘তরঙ্গ’ (vibrational energy) তৈরি করে।
গ. দেহের vital force বা জীবনীশক্তির ওপর কাজ
হোমিওপ্যাথি বিশ্বাস করে, মানুষের দেহে একটি “vital force” আছে যা আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। রোগ হলে এই শক্তি ব্যাহত হয় এবং হোমিওপ্যাথি এই শক্তিকে পুনর্জাগরিত করে।
হোমিওপ্যাথি ওষুধ তিন প্রকারের পোটেন্সি বা শক্তিতে তৈরি হয়, যেমন:
1. সেন্টেসিম্যাল পোটেন্সি (C বা CH)।
2. ডেসিম্যাল পোটেন্সি (X বা D)।
3. ৫০ সহস্রভাজিক পোটেন্সি (LM বা Q পোটেন্সি)।
এবার আসুন, এই তিন প্রকার ওষুধ কীভাবে তৈরি হয়, বিশেষ করে উদ্ভিদ বা খনিজ উৎস থেকে ধাপে ধাপে পোটেন্সাইজেশন বা শক্তিকরণ প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করি।
১. সেন্টেসিম্যাল পোটেন্সি (C বা CH):
প্রতি ধাপে ১ ভাগ মূল দ্রবণ ও ৯৯ ভাগ দ্রবণ মিলিয়ে ১:১০০ অনুপাতে তৈরি হয়। 6C, 30C, 200C, 1M ইত্যাদি এই শ্রেণির।
ধাপে ধাপে তৈরি প্রক্রিয়া:
1. উদ্ভিদ বা খনিজ উপাদান থেকে Mother Tincture (Q) তৈরি হয়।
2. Q থেকে ১ ফোঁটা নেওয়া হয়।
3. এতে ৯৯ ফোঁটা অ্যালকোহল বা জল মেশানো হয়।
4. এটি ১০০ বার ঝাঁকানো (Succussion) হয়—এভাবে 1C তৈরি হয়।
5. আবার ১ ফোঁটা 1C দ্রবণ নিয়ে নতুন ৯৯ ফোঁটা দ্রবণে মিশিয়ে একইভাবে Succussion করলে 2C হয়।
6. এই প্রক্রিয়া বারবার করে বিভিন্ন শক্তি—6C, 30C, 200C, 1M ইত্যাদি তৈরি হয়।
২. ডেসিম্যাল পোটেন্সি (X বা D):
এখানে ১:১০ অনুপাতে পোটেন্সি তৈরি করা হয়। 1X, 2X, 6X, 30X ইত্যাদি এই শ্রেণির।
ধাপে ধাপে তৈরি প্রক্রিয়া:
1. মাদার টিঙ্কচার (Q) থেকে ১ ফোঁটা নেওয়া হয়।
2. এতে ৯ ফোঁটা দ্রবণ (অ্যালকোহল বা জল) মেশানো হয়।
3. ১০ বার Succussion করা হয়—এভাবে 1X পাওয়া যায়।
4. একইভাবে 1X থেকে 1 ফোঁটা নিয়ে ৯ ফোঁটা নতুন দ্রবণে মিশিয়ে Succussion করলে 2X পাওয়া যায়।
5. এভাবে 6X, 30X ইত্যাদি তৈরি হয়।
বিশেষ ব্যবহার: খনিজ ও কঠিন পদার্থের ক্ষেত্রে প্রথমে ট্রাইটুরেশন (গুঁড়ো করে পেষণ) করা হয়, তারপর X পোটেন্সি বানানো হয়।
৩. ৫০ সহস্রভাজিক পোটেন্সি (LM বা Q পোটেন্সি)
এটি সবচেয়ে নতুন এবং সূক্ষ্ম পোটেন্সি, যা হোমিওপ্যাথির জনক ডাক্তার হ্যানিম্যানের শেষ জীবনকালে উন্নত করা হয়। প্রতি ধাপে ১:৫০,০০০ অনুপাতে শক্তিকরণ হয়।
ধাপে ধাপে তৈরি প্রক্রিয়া:
1. গাছ বা খনিজ থেকে Mother Tincture তৈরি করা হয়।
2. সেটিকে 1 গ্রেইন (grain) of triturated substance আকারে ১:১০০ ল্যাকটোজ সুগার দিয়ে ৩ ধাপে ১ ঘণ্টা করে ঘষা হয় (1C trituration পর্যন্ত)।
3. এরপর এতে অ্যালকোহল ও জল মিশিয়ে LM1 (1Q) তৈরি হয়।
4. ১ ফোঁটা LM1 মিশ্রণ ১২০ ফোঁটা অ্যালকোহলে মিশিয়ে Succussion করে ডোজ তৈরি হয়।
5. প্রতিবার খাওয়ার আগে কিছু ঝাঁকিয়ে ব্যবহার করা হয়।
6. পরবর্তী ডোজে LM2, LM3... LM30 এভাবে ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়।
উপরের তথ্যগুলো থেকে আপনি উপকৃত হয়ে থাকলে, "Hahnemann life care"
এই পেজটিকে ফলো করে লাইক কমেন্ট এবং শেয়ার করতে পারেন।