04/02/2023
রাগ আমাদের প্রত্যেকের হয় । রাগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে চিৎকার চেঁচামেচি মারধর হয় । যেখানে বহিঃপ্রকাশ হয়না সেখানে অন্তঃক্ষরণ হয় । যদি কোন রাগের পরিস্থিতিতে কেউ খুব উত্তেজিত হয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে ফেলে তাহলে সেই ঘটনা থেকে পরে সে কী কী শিখতে পারে ?
¤ যে ঘটনা বা যে পরিস্থিতি আমার মনে বিরক্তি বা রাগের সৃষ্টি করছে সেই ঘটনা বা পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষমতা ওই মুহূর্তে আমার ছিল না । আমার ব্যক্তিত্বের মধ্যে যতটা চাপ নেবার ক্ষমতা আছে, তার থেকেও ওই পরিস্থিতি আরও খানিকটা বেশি ক্ষমতা দাবী করছিল ।
¤ বোঝার চেষ্টা করতে পারে কেন ওই পরিস্থিতিটা আমার মনে চাপ সৃষ্টি করছে । এটার জন্য বোঝা দরকার আমার মন automatically ওই ঘটনাটাকে কী ভাবে ব্যাখ্যা করছে তা জানা ।
¤ -"ও এরকমটা করেছিল বলেই তো আমি রেগে গেছিলাম" বা " ও এইরকম করবে আর আমি মুখ বুজে সহ্য করব - কেন ? আমি কি তবে ....!!!!!!. " এই রকম ভাবে যদি আমার মন ওই পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করে, তবে আমি আমারই চরম ক্ষতি করব । কারন অন্য একটা মানুষ কেমন আচরন করবে সেটা নির্ভর করছে সেই মানুষের ব্যক্তিত্বের গঠনের ওপর । সে আমার বাবা, মা, ভাই , বোন, স্বামী , স্ত্রী বা বন্ধু যেই হোক না তার ব্যক্তিত্বের একটা নিজস্ব system আছে । সে সেই system অনুযায়ী চালিত হয় । সেই system টা আমার মনের মত নাও হতে পারে । তাই - " ও কেন এমন করবে ? " - এই কথাটা শুধুমাত্র আমারই বিরক্ত বাড়াবে । কোন সমাধান হবেনা ।
¤ তাহলে কী ভাবে ব্যাখ্যা করব ? যদি কারোর কোন আচরন আমার রাগের কারণ হয় তাহলে এটাও ভাবতে হবে সে কেন এই আচরণ করতে বাধ্য হচ্ছে । তার ব্যক্তিত্বে বা মনে কি সমস্যা আছে যার ফলে এই আচরণ হচ্ছে ?
একটা উদাহরণ দেওয়া যাক -
ঘটনা - বাচ্চাকে বার বার পড়াবার পরও পরীক্ষায় ভুল করে এসেছে । আমি মা, যখন দেখলাম বাচ্চা সেই একই ভুল করেছে আমি রেগে গিয়ে বাচ্চাকে খুব মারলাম ।
পরে ঘটনার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রথমে ভাববো আমি রেগে গেলাম কেন ? 'বাচ্চা লিখতে পারল না' ঘটনাটা আমার মনের মধ্যে কী কী অস্বস্তি তৈরি করছে । উত্তর হতে পারে যে - আমি মানতে পারছি না যে আমার সন্তান এই রকম ভুল করবে বা এরকম ভুল করলে লেখাপড়া শিখবে কি করে ! বা এর ভবিষ্যত কি হবে বা এর সমাধান আমি কি করে করব জানি না বা আরো এরকম কিছু ।
এই রকম চিন্তা আমার মনে চাপ তৈরি করছে আর আমার রাগ সেই রকম চাপেরই বহিঃপ্রকাশ । কিন্তু এই বহিঃপ্রকাশে বাচ্চার লেখাপড়া শেখার ক্ষমতাতে কোন উন্নতি হবে না ।
¤ তার বদলেএটা ভাবতে হবে যে আমার বাচ্চার মনের মধ্যে বা বুদ্ধিতে কি সমস্যা হচ্ছে যে বাচ্চা বার বার শিখিয়ে দেবার পরেও ভুল করছে । কোথায় সমস্যা হচ্ছে সেটা নির্ণয় করতে হবে ।
¤ আরেকটা উদাহরণ- ধরা যাক আমার মা কে আমি আমার একটা জামা প্যান্ট কেচে পরিস্কার করে রাখতে বলেছিলাম । মা করেনি । ভুলে গেছেন । আজ বিয়ে বাড়ি । আমি ভেবেছি ওই জামা প্যান্টটাই পরব । জামা খুঁজতে গিয়ে দেখি আ-কাচা কাপড়ের ব্যাগে আমার সাধের জামা প্যান্টটা পরে আছে । এখন আমি কি পরব ? ব্যাস মাথা গরম । আর ওমনি মাকে যা নয় তা উল্টোপাল্টা বলে দিলাম ।
¤ কেন এতটা রেগে গেলাম ? আমি আমার পরিবেশ থেকে আশা করেছিলাম যে সে আমার চাহিদা মতো কাজ করবে । কিন্তু সে তা করেনি । ফলে আমি আশাহত হলাম । কাজটার ওপর নির্ভর করে আমি যে পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম তা মাঠে মারা গেল ( ওই জামা প্যান্ট পরে বিয়ে বাড়িতে যে মাঞ্জা দেব ভেবেছিলাম) ফলে double আশাহত । আবার আমি যে আশাহতও হতে পারি এটাও আমার ভাবনার বাইরে ছিল । ফলে এখানে tripple আশাহত । এই tripple হতাশা এবং হতাশা কে সহ্য করতে না পেরে রাগ ও খারাপ ব্যবহার ।
¤ অথচ তখন যদি মা সঙ্গে সঙ্গে কেচেও দেন তাহলে সে ভিজে জামা পরে তো আর বিয়ে বাড়ি যাওয়া ঘটবে না । ফলে রাগ তো সমাধান করল না বরং মন খারাপের চোটে বিয়ে বাড়ি হয়তো যাওয়াই আর হল না ।
¤ তাহলে কি করা উচিত? প্রথমত আমার সব আশা পূর্ণ হবে এমনটা নাই হতে পারে । যার কাছ থেকে আশা করছি তার ক্ষমতার ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে ।
এরপর ভাবতে হবে কেন আশা পূর্ণ হল না । অর্থাৎ মা কেন ভুলে গেল । এখানে একটা উত্তর আসতে পারে মা আমার ক্ষেত্রেই এমন করে । কিন্তু সত্যিই কি তাই ? নাকি অন্য কোন কারন ? আচ্ছা এটাতো হতে পারে যে মা কাজের চাপে সবটা সামলে উঠতে পারেনি ।
তাহলে কি শিখলাম, পরিবেশ থেকে শুধু আশা করলেই হবেনা । পরিবেশ আমার আশাটাকে পূর্ণ করার ক্ষমতা রাখে কিনা সেটাও বুঝতে হবে ।
রেগে খারাপ ব্যবহার করে তাকে পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে ব্যাখ্যা করাটা নিজের মনের দুর্বলতা । তার চেয়ে একটু সময় করে নিজের মনের সামনে আয়না ধরুন । ভাবুন । ভাবা প্র্যাকটিস করুন ।
তাহলে রাগ কমাতে পারবেন ।
Written by : Sonali Chattopadhyay