29/06/2022
হার্ট সুস্থ রাখার উপায়
বুকের ভিতরে যেটা ধুকপুক করে সেটা থেমে গেলেই গেল। চির শান্তির পথে, চল্লো ভোলা অজানা নির্জনে। সেই জন্য হয়ত আমরা হার্টকে হালকা ভাবে নি না। বুকে সামান্য ব্যথা বা কষ্ট হলেই আমরা অস্থির হয়ে পড়ি। আর বাম দিকে হলে তো কোন কথাই নেই। ডাক্তার বলুক বা না বলুক, আগে গিয়ে একটা ইসিজি করিয়ে দেখে নি যে যন্ত্রটা ঠিক আছে কি না। হার্ট সুস্থ রাখতে লোকে 4/5টা দামি দামি ওষুধ হাসি মুখে খাবে আর লোকের কাছে মাসে কত টাকার ওষুধ খায় তার বিবরণ দেবে। কিন্তু হার্ট সুস্থ রাখতে কিছু সহজ সরল নিয়ম মানতে নারাজ।
আপনি যদি আপনার পরিবারে কিছু নিয়ম চালু করেন তা হলে পরিবারের সকলের হার্ট ও শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
1: রাতে তাড়াতাড়ি শুতে হবে ও ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠতে হবে। অন্তত সকাল 6টায় উঠতে হবে ও রাত 10টা থেকে 11টার মধ্যে শুতে হবে।
2: সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস উষ্ণ জল, একটা গোটা পাতি লেবুর রস, ও ½ চামচ মধু মিশিয়ে খাবেন। কাঁচা ছোলা-বাদাম ভিজিয়ে খাবেন। এর পর চিনি ছাড়া লিকার চা খেয়ে 30 মিনিট হাঁটবেন বা শরীর চর্চা করবেন।
3: কার্বহাইড্রেট ও সুগার বেশি খাবেন না। একটু সহজ করে বললে ভাত ও রুটি বেশি খাবেন না। ভাত খেলে নিজের হাতের এক থেকে দেড় মুঠো। রুটি খেলে 2 থেকে 3 টি।
4: আপনাকে প্রচুর পরিমাণে সব্জি ও সালাড খেতে হবে। সব ধরনের সব্জি খাবেন। সব্জিতে ঝোলের পরিমাণ বেশি রাখবেন। লঙ্কাগুঁড়ো ও শুকনো লঙ্কা রান্নায় দেবেন না। সালাড বলতে শশা, টমেটো, পেঁয়াজ, গাজর, ধনেপাতা, লেটুসপাতা ইত্যাদি- যা আপনি পছন্দ করেন সব খাবেন। দুপুর ও রাত, দু বেলা সালাড খাবেন যাতে ভাত ও রুটি কম খেতে হয়।
5: সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল তেল। বেশির ভাগ পরিবারে রান্নার তেলের কোন হিসাব থাকে না। সাদা তেল ও সরসের তেল মিশিয়ে মাসে কত লিটার তেল দরকার অনেকেই জানেন না। প্রাপ্ত বয়স্ক 4 জনের জন্য সাদা তেল ও সরসের তেল মিশিয়ে মাসে 1 লিটার তেল দরকার। প্রতি মাসে এই এক লিটার তেলে রান্না করতে পারলে হার্টের অসুখ হবে না।
6: কার্বহাইড্রেট ও সুগারের মত তেল, ঘী, মাখন, চর্বি, চিজ ইত্যাদি ফ্যাট জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া যাবে না। এর থেকেই তৈরী হয় কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড। এই ফ্যাট গুলি ধমনীর মধ্যে জমে ধমনীকে সরু করে দেয়। যার ফলে হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ব্লকের সম্ভাবনা বেড়ে যায় ও প্রেসার বেড়ে যায়।
7: আপনাকে প্রোটিন বেশি করে খেতে হবে। প্রোটিন মানে ভেজিটেবল প্রোটিন বেশি করে খেতে হবে। ভেজিটেবল প্রোটিন বেশি থাকে ছোলা, ডাল, ও সোয়াবিন। কাজেই মাছ, মাংস, বা ডিমের পরিমাণ না বাড়িয়ে ছোলার তরকারি, ডাল, তরকা, নিউট্রিলা বা সোয়বিন বড়ির তরকারির পরিমাণ বাড়াবেন, সামান্য তেল দিয়ে রান্না হবে।
8: রেড মিট ও ডিম খাওয়া যাবে না। ছোট চারা মাছ খেতে পারেন। 1 কেজির বেশী বড় পাকা মাছ খাবেন না। সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। মাছের তেলে ওমেগা-3-ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা শরীরের পক্ষে ভালো। আপনি চিকেন খেতে পারেন। তবে কষিয়ে নয়, তেল বা বাটার দিয়ে নয়। তেল ছাড়া আদা, পেঁয়াজ, রসুন, টমেটো দিয়ে কষিয়ে রান্না করতে পারেন। চিকেন থেকে যা তেল বেরোয় তা দিয়ে রান্না হয়ে যাবে। প্রয়োজনে টক দই ও সব ধরনের মসলা দেবেন, সব্জি দেবেন।
9: রাতে সবসময় হালকা খাবার খাবেন। রাতে মাছ, মাংস, ডিম খাবেন না। অন্তত খাবার 1 ঘন্টা পরে বিছানায় শোবেন। ডায়েটের নিয়ম অনুযায়ী সকালে সবথেকে ভাড়ি খাবার খেতে হয়। দুপুরে তার থেকে হাল্কা খেতে হয়, রাতে একে বারেই হাল্কা সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে।
10: প্রচুর পরিমাণে জলীয় খাবার খেতে হবে। যেমন: ফল, ডাব, ডালের জল, সুপ, ও পানীয় জল।
11: প্রতি দিন 30 থেকে 40 মিনিট হাঁটতে হবে। আপনি যতটা তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারেন হাঁটবেন। হাত দুলিয়ে দুলিয়ে হাঁটবেন। করো সঙ্গে কথা না বলে নিজের মনে হাঁটবেন। তারপর একটু বিশ্রাম নিয়ে বাড়ী ফিরবেন। এই বিশ্রামের সময় সব পথের সাথিরা এক সঙ্গে চা, সামোসা, কচুরি, মিষ্টি, খেয়ে সব পূর্ণী গঙ্গায় বির্সোজন দিয়ে শূণ্য হাতে আত্মতুষ্টি করে হাসি মুখে ফিরে আসেন। দয়া করে এরকম করবেন না। তা হলে আপনাকেও আক্ষেপের সুরে বলতে হবে – এত করেও আমার কোলেস্টেরল কমছে না। ডাক্তার 5টা ওষুধের জায়গায় 8টা ওষুধ করে দিয়েছে, আরো দামি দামি ওষুধ দিয়েছে।
12: আপনাকে নিয়মিত প্রেসার মাপাতে হবে। প্রেসার বেড়ে গেলে ওষুধ খেতে হবে। বছরে অন্তত এক বার সুগার ও লিপিড প্রফাইল করে দেখে নিতে হবে। কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড ঠিক আছে কি না। বেশি থাকলে হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেতে হবে। সুগার, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে থাকলে হার্ট সুস্থ থাকবে।
13: দেহের ওজন বাড়তে দেবেন না। ওজন বাড়ার সাথে সাথে সুগার, প্রেসার বাড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ফলে হার্টের সমস্যা তৈরী হতে পারে। উপরে উল্লিখিত নিয়ম গুলি মেনে চলতে পারলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে, হার্ট ভালো থাকবে।
14: এখন কার দিনে যেটা না বললেই নয় তা হল মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। আজকের দিনে বেশির ভাগ মানুষ মানসিক অবসাদ ও উৎকন্ঠায় ভুগছে। অত্যধিক মানসিক পরিশ্রম উচ্চাকাঙ্ক্ষা এর মুল কারন। কাজেই আপনি যতটা প্রেসার নিতে পারবেন তাতেই খুশি থাকুন। দীর্ঘ সময় কম্পিউটারে, মোবাইলে কাজ, কাজের প্রেসার, সংসারের প্রেসার, আর্থিক অক্ষমতা, কর্মক্ষেত্রে নির্যাতন সব কিছুকেই জীবনের অঙ্গ ধরে নিতে হবে। মানসিক চাপ দূর করতে পরিবার ও বন্ধুদেরসঙ্গে রঙ্গ রসিকতা ও নাচগান করুন। মেডিটেশন করুন, রাতে শোবার আগে মাইন্ড রিলাক্শেশন এক্সাসাইজ করুন। প্রয়োজনে হোমিওপ্যাথিক মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেবেন। না হলে মানসিক সমস্যা থেকে হার্টের অসুখ তৈরী হবে।
15: দয়া করে কোন নেশা করবেন না। বিশেষ করে সিগারেট, বিড়ি, মদ, ইত্যাদি কোন নেশা করবেন না। যদি করেও থাকেন 40 বছর বয়স হলেই ছেড়ে দিন। কোন নেশার কোনও উপকার নেই। দীর্ঘ কয়েক বছর বাদে সব নেশাই হার্টের ক্ষতি করে। আপনি চাইলেই ছাড়তে পারবেন। ধীরে ধীরে কমাতে চেষ্টা করুন ছাড়তে পারবেন।
16: সুগার, প্রেসার, কোলেস্টেরল, বুক ধড়ফড় করা, থাইরয়েড ইত্যাদি সমস্যার জন্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করুন। হোমিওপ্যাথিতে খুব ভালো ভালো ওষুধ আছে। এই ওষুধ গুলির কোন স্পর্শ প্রতিক্রিয়া নেই ও সারা জীবন ধরে খেতে হয় না।
আপনার এই নিয়ম গুলি মানতে পারলে হার্টের সমস্যা হবে না। আপনার ও আপনার পরিবারের প্রত্যেকের হার্ট সুস্থ থাকবে, নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবেন।
ডা: ডি কর
8697284302
Email: dr.debdeepkar@gmail.com