03/08/2025
🦠💉নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন💉🦠
বর্তমান পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় 45 কোটি মানুষ প্রতি মুহূর্তে আক্রান্ত হয়ে চলেছে নিউমোনিয়ায়। ছোট খাটো সর্দিকাশি থেকে প্রাণঘাতী সংক্রমণ - শ্বাস যন্ত্রের কার্যক্ষমতা বিঘ্নিত করে শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে মুহূর্তে প্রাণ নেওয়ার ক্ষমতা রাখে একটি জীবাণু, নাম - স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমনি (Streptococcus pneumoniae)। এটা কোনো নতুন জীবাণু নয়। এর প্রাদুর্ভাব চলে আসছে অনেক যুগ ধরে। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে প্রথম এই অণুজীবের পৃথকীকরণ ও সনাক্ত করেন স্যার লুই পাস্তুর 1881 সালে একটি র্যাবিশে আক্রান্ত রোগীর লালারস থেকে। বর্তমানে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তাতে এই জীবাণু পেনিসিলিন আবিষ্কারের পরেও মহামারী সৃষ্টি করতে পারার ক্ষমতা রাখে। মূলত: সকল বয়স্কদের( ৬৫ ঊর্ধ) ক্ষেত্রে এবং যাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম(ক্যান্সার, COPD, HIV আক্রান্ত, প্লিহাচ্ছেদ(splenectomised) , ইমিউনোসাপ্রেসান্ট ওষুধ খাচ্ছে এমন রোগী বা বিশেষ কিছু বাতের ব্যথায় আক্রান্ত রোগী যাদের স্টেরয়েড চলছে, মদ্যপায়ী( ক্রনিক আলকোহলিক) , লিভার সিরোসিস, কিডনি ফেইলিওর রোগী, আপ্লাস্টিক এনিমিয়া) - এদের শরীরে এই জীবাণুটির সংক্রমণের ফলে প্রাণঘাতী নিউমোনিয়ায় সম্ভাবনা সর্বাধিক। তাই এদের ক্ষেত্রে WHO ( বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) এখন pnemococcal ভ্যাকসিন (যাতে Streptococcus pneumoniae র ২৩ টি স্ট্রেন থাকে) নেওয়ার পরামর্শ দেয়।
এই ভ্যাকসিনটি বর্তমানে ভারতে পাওয়া যায় এবং এর একটি ডোজ 0.5 ml একবার নিতে হয়। কিছুক্ষেত্রে ৫ বছর পর রিপিট করতে বলা হয়(হাই রিস্ক গ্রুপ) কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেটার আর প্রয়োজন হয় না।
আজ আমারই চিকিৎসাধীন একজন রোগীর ভ্যাকসিনেশন করলাম।
এই ভ্যাকসিন দেওয়ার পর জায়গাটা (injection site) ব্যথা হতে পারে যা ৪-৫ দিন অব্দি থাকতে পারে , আর সাথে জ্বর আসতে পারে যা স্বাভাবিক এবং এটা আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় থাকার লক্ষণ মাত্র। ভয়ের কোনো কারণ নেই। তবে কিছুক্ষেত্রে ইনজেকশন এর জায়গায় ফুলে পুঁজ জমে গেলে সেক্ষেত্রে অতিসত্ত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর এই ধরনের ঝুঁকি যাতে না ঘটে তাই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের থেকেই ইনজেকশনটা নেওয়া উচিত।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
💉 এই ভ্যাকসিন ২ বছর বা তার নিচের বাচ্চাদের কখনোই দেওয়া যায় না। (PCV -13 দেওয়া হয়)
💉প্রেগন্যান্ট মা যারা হাই রিস্ক গ্রুপের মধ্যে পরে তাদের ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিনের কোনো ক্ষতিকারক প্রভাব জানা যায় নি।সেক্ষেত্রে খুব ইমারজেন্সি কারণ না থাকলে না দেওয়াই ভালো। একই কথা ল্যাক্টেটিং মায়েদের ক্ষেত্রেও খাটে।
💉Revaccination: এই ভ্যাকসিন হাই রিস্ক গ্রুপ ছাড়া সাধারণত রিপিট করতে বলা হয় না। আর রিপিট করলেও ২ বারের বেশি করার করার পরামর্শ দেওয়া হয় না। সেক্ষেত্রে আলাদা কোনো উপকার পাওয়া যায় না।
💉নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিনএর সাথে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন একইসাথে দেওয়া যায়। এতে ইমিউনিটির কোনো প্রভাব পড়ে না।
💉তবে pneumovax এবং zostavax (চিকেন পক্স ভ্যাকসিন) একসাথে না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে ইমুনিটি কমে যেতে পারে এবং ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। যদিও আমাদের দেশে zostavax এর সেভাবে প্রয়োজন হয়না।
💉ভ্যাকসিন নেওয়ার পর অনেকের ক্ষেত্রে অ্যালার্জিক রিয়াকশন হতে পারে যেমন হঠাৎ গা হাত চুলকানো, শ্বাসকষ্ট, হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ও কাঁপুনি , সেক্ষেত্রে আড্রেনালিনের (1:1000) ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
💉নিউমোভাক্স (Pneumovax) এ উপাদান হিসেবে ফেনল( ০.২৫%) ব্যবহৃত হয়, কারো এতে এলার্জি থাকলে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
💉 হাই-রিস্ক গ্রুপ ,এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে যারা আগে (৬৫ বছরের আগে) এই ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন এবং গত ৫ বছরে ডোজ পাননি, তাদের আরেকটি ডোজ নিতে হবে।
আশা করি এই তথ্যে অনেকে উপকৃত হবেন এবং এই ভ্যাকসিন নেওয়া সম্পর্কিত ভুল ধারণা বা পর্যাপ্ত ধারণা কেটে যাবে। সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন। 🙏 💉🩺 🙏