22/08/2025
নিরাময়
মহা জ্বালা, বুঝলেন!
কী করে যে সব সময়মত সামলাই।
কিন্তু ঠিক সময়ে জয়েন্ট এন্ট্রান্স দিয়ে, ঠিক সময়ে বেরনো রেজাল্ট নিয়ে, ঠিক সময়ে ক্যাপিটেশন ফি ছাড়াই মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়ে কাউকে এক পয়সা ঘুষ না দিয়েই আমরা ডাক্তার হতাম।
তখন লোডশেডিং হতো খুব, কিন্তু মাস্টারমশাইদের চাকরি কখনো চুরি হতো না। তাঁরা রাস্তায় পুলিশের লাঠি বা লাথি খেতেন না।
আর সত্যি বলতে কি, সহপাঠিনীর হত্যার বিচার চেয়ে আমাদের কখনও রাত-দখল বা অনশন করতে হয় নি ।
তাই এসব অভ্যাসও ছিল না।
আচ্ছা বলুন তো এই সব বিক্ষোভ প্রতিরোধ কি ডাক্তারদের কাজ?
কোথায় চেম্বার করবো, পেশেন্ট দেখব, অপারেশন করব, তা নয়, মাঝেমধ্যেই আমাদের রাস্তায় বেরিয়ে হাঁটতে হচ্ছে।
একটা গোপন কথা বলে রাখি, আমরা ডাক্তাররাও মানুষ, আমাদেরও বয়েস হয়।
আমাদের অনেকের আবার হাঁটু বা কোমরে ব্যথা,(যদিও মেরুদণ্ড টা সিধে এবং শক্ত), হার্ট ভালো নয়(হৃদয় রক্তাক্ত), ঈষৎ নিঃশ্বাসের অসুবিধা(যা পরিবেশ)। পা আর গলা মেলানো তো পরের কথা, এসব মিটিং মিছিলে সময় মত পৌঁছনোই মহা হ্যাপা!
কিন্তু আমাদের রাস্তায় যেতেই হবে। মিছিল করতেই হবে।কেন জানেন ?
আসলে আমাদের একজন মারা গেছে। মারা গেছে বললে ভুল হবে, খুন করা হয়েছে। খুন করা হয়েছে বললে ভুল হবে, ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বললেও ভুল হবে। ভয়াবহভাবে পিটিয়ে মেরে খুন করা হয়েছে। এত কিছুর পরেও তার খুন এবং অন্যান্য সমস্ত তথ্য লোপাট করার চেষ্টা করা হয়েছে। চেষ্টা করেছে বেশ কিছু ক্ষমতাশালী কিছু মানুষ।
সময়মত এসবের প্রতিবাদ তো করতেই হবে তাই না বলুন?
তাই আমরা রাস্তায়। প্রতিবাদে, রাত দখলে,
সেই এক বছর আগে থেকে ।
আমাদের সন্তানসম ডাক্তারি ছাত্র আর জুনিয়ার রা যখন অনশন করেছিল, তাদের অনশন মঞ্চে।
বললে বিশ্বাস করবেন, আজ প্রায় একবছর পর, কিছু
জুনিয়র ডাক্তার, ডাক্তারি ছাত্র আর সিনিয়র ডাক্তারদের কলকাতা পুলিশ ডেকে পাঠিয়েছে।
কেন জানেন?
মনে হয় একটু গল্পগাছা করতে। বড্ড হতাশায়, একাকীত্বে ভোগেন তো মানুষগুলো!
-ডাক্তারবাবু ভালো আছেন? চা খাবেন?
-ভালো খুব একটা নেই। তবে চা খাওয়া যেতেই পারে। লাল চা হবে?
-লাল চা তো নেই স্যার! একটু নীল চা দেবো! ব্লু টি, বড়বাবু খান। খেয়ে দেখুন!
-না থাক!
-আপনাকে সেদিন দেখলাম। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। গাড়ি ছিল না ?
-সেদিন মানে?
-ওই গত অক্টোবরের…
-গত অক্টোবর? অতদিনের কথা মনে আছে নাকি! ভাগ্যিস ১৯১৭ সালের অক্টোবরের কথা জিজ্ঞেস করেন নি! তা ওই সময়ে ডাকেন নি কেন? সময়ে কি কিছুই হয় না আজকাল?
-রাস্তায় হাঁটছিলেন কেন?
-কী মুশকিল, হাঁটা নিষেধ নাকি?
-না নিষেধ ঠিক নয়! কিন্তু আইনশৃঙ্খলার ব্যাপারটা তো আমাদের দেখতে হয়! (আরে এই সময় আবার কে ফোন করছে…)
-তার মানে? আমরা হাঁটলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটবে?
-ছি ছি! কী যে বলেন ডাক্তারবাবু! তা হাঁটছিলেন কেন? মিছিল করছিলেন নাকি?
-হ্যাঁ, কোনো অবরোধ না করে রাস্তার একপাশ দিয়ে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ভাবে!
-ও আচ্ছা আচ্ছা! তা কিসের মিছিল?
-মনে করিয়ে দিতে হবে? আমাদের ডাক্তার বোনটি ধর্ষিতা হয়ে খুন হলো, আপনারা আসল অপরাধী না ধরে সব ধামাচাপা দিয়ে দিলেন, তার প্রতিবাদে!
-হে হে, তাই বলে আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন?
-আমরা তো নিই নি! আমাদের হাতে তো আইন নয় স্টেথোই ছিল, আজও আছে ! আইন তো আপনাদের হাতে, তার সঠিক প্রয়োগ তো আপনারাই করেন নি।তো তার বিরুদ্ধে আবার আমরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ তো করবোই । এটা তো আমাদের অধিকার!
-কিন্তু স্যার আপনাদের এটা তো কাজ নয়? এই মিছিল করা, স্লোগান দেওয়া!
-আপনাদের কী এটা কাজ? অপরাধীদের আড়াল করা? ভুয়ো মামলায় প্রতিবাদী ডাক্তারদের জড়ানো ?
-স্যার বোঝেনই তো! আমাদেরও তো ঘরে মা বোন আছে। মাস গেলে মাইনে টা… (উহ! কে যে এতো ফোন করছে, হ্যাঁ বলো কী হয়েছে!অ্যাঁ! সে কী! ) ডাক্তারবাবু আমার বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেনা, উল্টোপালটা বলছেন! কী করবো স্যার? কোথায় ভর্তি করি বলুন তো !
-তো আমার হেঁটে আইন ভাঙার ব্যাপারটা কী হবে?
- ডাক্তারবাবু, আমার বাবা…কাউকে চিনতে পারছেন না!
-না চিনতে পারারই কথা! কোথায় আছেন? কাছাকাছি কোন হাসপাতাল?
-নিরাময় নিকেতন?
-আরে আমিই তো আছি ওখানে।
-আমার, বাবাকে বাঁচান ডাক্তারবাবু। আপনি প্লিজ ভর্তি করে নিন আপনার আন্ডারে! সময়মত চিকিৎসা না পেলে…
-সময়মত চিকিৎসা? আর সময়মত তদন্ত?
-ডাক্তারবাবু আর লজ্জায় ফেলবেন না আমাকে!
-লজ্জা! আপনাকে? আপনাদের নতুন করে কী আর লজ্জায় ফেলব বলুন? আচ্ছা, নিয়ে যেতে বলুন নিরাময়ে।আমি বলে দিচ্ছি।
তিন দিন পর।
মেসোমশাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
এক বছর পরেও, অভয়া ফেরে নি।
(লেখক অজ্ঞাত, ছবি AI)