21/03/2024
বক্ষবিভাজিকা নিয়ে এত হুজ্জুতি স্রেফ মনুষ্যসমাজেই দেখা যায়। হামলে দেখা হোক, নিন্দে করা হোক বা দেখানো। সে অবশ্য মনুষ্যপ্রজাতি অনেক ক্ষেত্রেই একমেবাদ্বিতীয়ম। এর আগে কেউ জামাকাপড়ও পরেনি, পরমাণু বোমও বানায়নি। কিন্তু তার পরেও জিনিসটা জৈবিকভাবেই রহস্যজনক। কারণ দুখানা জিনিস কোন যুক্তিতে এরকম, কেউ জানেনা। এক হল পুরুষের যৌনাঙ্গ। সেটা এতটাই বাইরে, এতটাই অরক্ষিত যে আক্রমণের লক্ষ্য। ওই জন্যই খেলতে গেলে আলাদা করে গার্ড নিতে হয়, '... তে ক্যাঁত করে লাথি মারব' এই সব প্রবাদের জন্ম হয়েছে। জায়গাটাকে এতটাই দুর্বল করে রেখে বিবর্তনের নিরিখে পুং দের কী লাভ হয়েছে কে জানে। কিন্তু সেটা আপাত কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের না। আজকের বিষয় হল মহিলাদের বুক। সেটাও সম্পূর্ণ উদ্ভট অপ্রয়োজনীয় একটা ব্যাপার। দুগ্ধগ্রন্থির জন্য অত জায়গা লাগেনা। শিম্পাঞ্জি কি গরিলা, কারো স্তন অত বড় না। গরু তো লিটার-লিটার দুধ দেয়। অনুপাতে তারও আকার বেশ কম। তাহলে কি শারীরিকভাবে কোনো সুবিধে আছে? তাও না। স্তন থাকার জন্য মহিলাদের সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি তুলনায় একটু উপরে এবং সামনের দিকে, মানে নড়বড়ে। সেটাকে সামলাতে গিয়ে মহিলাদের হাঁটার কায়দা বদলাতে হয়েছে। সব মিলিয়ে পুরো জিনিসটাই অসুবিধেজনক। একমাত্র সুবিধে হল সব মিলিয়ে নারীশরীর রাম্পে হাঁটলে দৃষ্টিসুখের জন্ম দেয়। কিন্তু স্রেফ সেই কারণেই লাখ-লাখ বছর ধরে বিবর্তনের নকশা তৈরি হয়েছে, ভাবা খুব কঠিন।
এইগুলো নিয়ে লেখাপত্তর হয়েছে। কিন্তু নারীবাদ হোক কি নৃতত্ত্ব, কোথাও কোনো সূত্র পাবেননা, কেন এরকম। কারণ পিতৃতন্ত্র, মাতৃতন্ত্র, সমাজ, সংসার সব তৈরির আগেই এসব হয়ে গেছে। ফলে ওসব জলপুলিশ, অর্থাৎ কিনা বিবর্তনের আন্ডারে। তা, বিবর্তনে কেন এরকম, সে নিয়ে বিবর্তন এবং সমাজ নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন, সেই ঘরানায় কিছু চিন্তা আছে। এই নিয়ে একাধিক লেখা হয়ে থাকতে পারে, অল্পবিদ্যায় আমি কেবল একটি কেতাবেই বিষয়টা নিয়ে লেখা পড়েছি। তার নাম 'প্রভাতকালীন যৌনতা', সেক্স অ্যাট ডন। উত্তেজিত হবেননা, সাত-সকালে কী করে যৌনতা করতে হবে, ওয়েব-পোর্টালের মতো তার বিবরণ না, প্রভাত মানে এখানে মানব-প্রজাতির ঊষাকাল। সেখানে যৌনতা কেমন ছিল, সে নিয়ে চাট্টি তত্ত্ব বা হাইপোথিসিস, বা পর্যবেক্ষণ, সব মিলিয়ে-মিশিয়ে আছে সেই বইতে। তাতে এই স্তনের ব্যাপারটাও আছে। সেটা কীরকম? না, মানুষ যখন প্রায়-মানুষ ছিল, তখন সে চার-পায়ে হাঁটত। সবাই সবার দুটো জিনিস স্পষ্ট করে দেখতে পেত, এক মুখ, আর দুই পশ্চাদ্দেশ। তা, পুংরা নারীর পশ্চাদ্দেশ দেখে যৌন আকর্ষণ, তাড়না, এইসব বোধ করত (মুখ দেখে করত কিনা বইয়ে লেখেনি)। তা, চার-পা থেকে দুই-পায়ে উত্তরণের পর পুরো সিস্টেমটাই ঘেঁটে ঘ হয়ে গেল। পুংরা আর মেয়েদের পাছা দেখতে পায়না। ব্যস, যৌন তাড়না গায়েব। তখন ঘরে ঘরে হাহাকার। মানবপ্রজাতি উঠে যায় যায় প্রায় ( এই শেষ তিনটে বাক্য আমার গুলবাজি, কিন্তু ফুর্তি এসে গেল, ন লিখে পারলামনা)। তো তখন, পুংকে আকৃষ্ট করার জন্য নিতম্বের একট বিকল্পের প্রয়োজন হল, যেটা সামনে থেকে দেখা যাবে। সেটাই আস্তে আস্তে ভারি বুকের আকার নিল। নিতম্ব-বিভাজিকার আদলে তৈরি হল বক্ষ বিভাজিকা, তার জন্য বড় স্তন। সোজা বাংলায় পাছার ছাপ এনে বুকে বসিয়ে দেওয়া হল। একদিনে হয়নি, কেউ চেষ্টা করেও করেনি, বিবর্তনের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হয়েছে। সেসব হবার পর পুংরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল, তাদের জীবনে আবার উত্তেজনা ফিরে এল। এই শেষ বাক্যটা আবারও নাটকীয় করে বলা হল, কিন্তু সে তো বোঝাই যাচ্ছে, এবং মোদ্দায় এই হল পুরো গপ্পো। লেখকর রীতিমতো গবেষণা করে ছবিছাব্বা দিয়ে বইতে লিখেছেন, আমার মতো ছ্যাবলা লোকেরা সেসব ছবি দিলে ফেবু লেখা বন্ধ করে দেবে, তাই দিলামনা। বইটা অবশ্য খুঁজেও পাচ্ছিনা, ওইসব হারারে-মারারে না পড়ে ইচ্ছে হলে নেটে খুজে পড়ে নিন।
তা, এ যদি সত্য হয়, তো এর থেকে আমরা কী শিখি? ভাঁজ দেখিয়ে সিডাকশন অতি প্রাচীন জিনিস, লাখ-লাখ বছরের পুরোনো। আর তা দেখে উত্তেজিত হওয়া, অর্থাৎ কিন অবজেকটিফিকেশানও অতি প্রাচীন। ইতিহাস, পিতৃতন্ত্র, মানবসভ্যতা এসবের আওতার বাইরে। কিন্তু এ ভেবেই আনন্দে নাচবেননা। অন্য অংশটাও ভেবে দেখুন। আসলে আপনি যা দেখে বা দেখিয়ে এত ফুর্তি পাচ্ছেন, সেটা কিন্তু আসলে যা ভাবছেন তা নয়. প্রক্সি মাত্র। কীসের? না, ছিছি পশ্চাদ্দেশের। সুন্দরীদের স্বপ্নসুন্দরী হরবখৎ বলা হয়ে থাকে, ফলে এখানে একটু ফ্রয়েড ঝাড়া যেতেই পারেন, যে, এখানে আপনার চিন্তায় ডিসপ্লেসমেন্ট হয়েছে। পশ্চাদ্দেশের জায়গায় এসেছে বিভাজিকা। নেহাৎই নাকের জায়গায় নরুণ। দুঃখ পাবেননা, কী করবেন, সবই কপাল থুড়ি বায়োলজি।
বলাবাহুল্য এর সত্যমিথ্যা আমার জানা নেই। কারোরই থাকার কথা না, কিন্তু সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হিসেবে অন্য কিছু নেই মনে হয়। ফেবু খুলে মমতাশঙ্কর আর এই বিভাজিকাসমুদ্র দেখে বইটার কথা মনে পড়ল। লিখে ফেললাম।
লিখেছেন- সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়