27/09/2025
ফেসবুক ইন্দ্রনীল
' পেসেন্ট ইনফরমেশন লিফলেট ',শব্দটার সাথে প্রথম পরিচয় যখন ইংল্যান্ডে কাজ করার জন্য PLAB পরীক্ষা দিতে যাই। ' পেশেন্ট কাউন্সিলিং' প্রশ্নের উত্তরে বলতে হতো পেশেন্টকে সব কিছু বুঝিয়ে একটা ইনফরমেশন লিফলেট দেওয়া হবে যেখানে তার রোগ সম্বন্ধে তথ্য থাকবে। এটাই পেশেন্ট ইনফরমেশন লিফলেট। দেখা গেছে চেম্বারে যা বলা হয় তার মাত্র ১০% রোগীর মাথায় থাকে, বাকি সব ভুলে যান। তাই তাকে যদি এই লিফলেট দেওয়া হয় সে বাড়ি ফিরে এই লিফলেট পড়ে আরো অনেক কিছু জানতে পারবে বা যে প্রশ্নগুলো তার মাথায় আসেনি সেগুলো করতে পারবে। ইংল্যান্ডের প্রায় সব বিষয়ে পেশেন্ট ইনফর্মেশন লিফলেট থাকত যা কনসালটেশনের শেষে রোগীকে দেওয়া হতো। দেশে ফিরে ভাবলাম বাংলাতে এরকম পেসেন্ট ইনফরমেসন লিফলেট করব। কষ্ট করে বাংলায় লেখালেখি করলাম, নিজের পয়সায় ছাপালাম, চেম্বারে রেখে দিলাম যেখানে রোগীরা বসেন ।আমাদের চেম্বারে সকালে নন্দিতা বসে বাচ্চাদের দেখতো। একদিন সকালবেলায় গিয়ে দেখি এক বাচ্চা চেম্বারে পায়খানা করেছে আর তার মা পেশেন্ট ইনফরমেশন লিফলেটগুলো দিয়ে নিয়ে সেই পায়খানা পরিষ্কার করছে। বুঝতে পারলাম এভাবে বেশি দিন এগোতে পারা যাবে না ।😀
তারপর সোশ্যাল মিডিয়া এলো ।ফেসবুকে প্রেগনেন্সি আর ইনফার্টিলিটির নানা সমস্যা নিয়ে লিখতে লাগলাম। একদিন সুন্দরবনে এক সমাজসচেতন মূলক কাজ করতে গিয়ে বুঝলাম যা লেখালেখি করছি তা অত্যন্ত গ্রামে মেয়েদের কাছে পৌঁছতে পারছে না, কারণ তারা পড়তেই জানে না। কিন্তু তারা ফোনে অনেকক্ষণ সময় কাটায়। শুরু হলো আমাদের ইউটিউব চ্যানেল আর কারো কিছু বছর বাদে রীলস তৈরি করা। এই ভিডিওগুলো আমাদের বক্তব্যকে অবশেষে আমাদের 'টার্গেট অডিয়েন্স' এর কাছে পৌঁছে দিলো। পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের ভিডিও দেখে গ্রামের মেয়ে বুঝতে পেরেছি তারই মন খারাপ, আত্মহত্যার ইচ্ছা, কান্নাকাটি স্বাভাবিক নয় তাকে ডাক্তার দেখাতে হবে। যে মেয়েটা কাজের সূত্রে আরও প্রবাসী কিন্তু সেখানকার ভাষা ভালো বুঝতে পারে না সেও রিলিজ দেখে প্রেগনেন্সি নানা সমস্যা আমাদেরকে জিজ্ঞেস করে।অনেকেই অনেক প্রশ্ন করেন যেগুলো ডাক্তারের সামনে মুখোমুখি করতে পারেন না বা লজ্জাবোধ করেন। কেউ আবার জিজ্ঞেস করে প্রেগনেন্সির সময় শাশুড়ি খেতে দিচ্ছে না তাকে কিভাবে জব্দ করা যায়। যেহেতু রিলসে একদম মিনিটে খুব বেশি কিছু বলা যায় না তাই আমরা শুরু করেছি আমাদের নিজেদের বটকাস্ট। প্রথমে ইনফিনিটি আর প্রেগনেন্সি নিয়ে ছিল এখন আমরা মানসিক রোগ নিয়েও বলতে শুরু করেছি যা সাধারণত লোকে এড়িয়ে যায়। ডাক্তারি ছাড়াও সাধারণ মানুষ হিসেবে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়েও সাহস করে সামাজিক মাধ্যমে বলা যায়। এইভাবেই চলছে ফেসবুক, ইউ টিউব, ইনস্টার সংসার ।কেউ ডাক্তারবাবু বলে, কেউবা দাদা, কখনো কখনো ডাক্তার দাদুও শুনতে হয়। এরাই জন্মদিনে উইশ করে, বাইরে যাবার আগে ভুল বানানে লিখে দেয় হ্যাপি জার্নি। বানান যাই হোক ভালোবাসা অফুরান।
অনেকে ভাবেন সমাজমাধ্যমের এই কাজকর্ম "রোগী বাড়াবার ধান্দা।' ভগবানের আশীর্বাদে এটা করার আমার কোন প্রয়োজন নেই। আর একটা অভিযোগ আসে ফেসবুক করছেন কিন্তু পেশেন্টদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না ।পেশেন্ট এর প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা আমার কাজের মধ্যে পড়ে এবং দিনে মনে হয় না ১৪ ঘণ্টার বেশি কাজ করা সম্ভব নয় তাই এই সময়ের মধ্যে যতটা সম্ভব উত্তর আমরা দিয়ে দি। প্রত্যেকটা ব্যক্তির পেশার বাইরে একটা ব্যক্তিগত জীবন আছে যেটা সে নিজের মতো করে যা ভালো লাগে তাই করে কাটাবে। আপনাদের ভালোবাসায় কিছুটা পরিচিতি বেড়েছে। তাই একই নামের দুজন ডাক্তার ইন্দ্রনীলকে তফাৎ করতে গিয়ে সিনিয়র ডাক্তার উপাধি দিয়ে দেন ' ফেসবুক ইন্দ্রনীল'। আর এখানেই আমার কাজের সার্থকতা। যখন সহকর্মীদের নজরেও এই প্রচেষ্টা চোখে পড়ে 😜
নিচের পডকাস্টের লিংক প্রথম কমেন্টে দেওয়া রইলো।
#ইন্দ্রনীল