07/01/2025
** HMPV ভাইরাস সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিন। এই ভাইরাস নিয়ে কেউ আতঙ্কিত হবেন না আতঙ্ক ছড়াবেন না।**
# # কতটা ভয়ের এই ভাইরাস?
এই ভাইরাস নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। কারণ HMPV ভাইরাস বিজ্ঞানীদের আগে থেকেই পরিচিত। ২০০১ সালে প্রথম এর আবিষ্কার হয়েছিল। এই আবিষ্কারেরও ৬০ বছর আগে থেকে ভাইরাসটি মানবজগতে রয়েছে। ফলে কোভিডের মতো নভেল বা নতুন ধরনের ভাইরাস HMPV নয়। তাই অহেতুক আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। যাদের কোমর্বিডিটি অর্থাৎ অতিরিক্ত সুগার, শ্বাসকষ্টের সমস্যা বা হার্টের রোগ রয়েছে, তাদের একটু সতর্ক থাকতে হবে। কারণ তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা ভয়ের হতে পারে এই ভাইরাস।
** চিনে কেন উপচে পড়ছে রোগী?
কোভিডের পর থেকে চিনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনেকটা পাল্টা গিয়েছে। পাল্টেছে মনিটরিং অর্থাৎ রোগের উপর নজরদারির পদ্ধতি। অল্প সংক্রমণ হলেও ওই দেশের সরকার রোগ মোকাবিলায় জোরদার ব্যবস্থা নিচ্ছে। টেস্ট করাচ্ছে সকলের। প্রতিরোধমূলক নির্দেশ জারি করছে।এসবের ভিডিয়ো দেখে মানুষ ভয় পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনই এতটা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।
# ওষুধ, টিকা কিছুই নেই?
হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য কোনও টিকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। অন্যদিকে এতে সংক্রমিত হলে চিকিৎসার জন্য ওষুধও নেই। এই পরিস্থিতি কি ভয়ের নয়?
পৃথিবীতে বিজ্ঞানীদের পরিচিত লাখ লাখ এমন ভাইরাস রয়েছে যার কোনও টিকা বা ওষুধ নেই। তা বলে সেই ভাইরাসের সংক্রমণে মানুষ মারা যাচ্ছেন, এমন কিন্তু নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংক্রমণ নিজে থেকে সেরে যায়। পোলিও, মিসলসের মতো কিছু ভাইরাসের সংক্রমণে যথেষ্ট শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়। তাই এগুলির টিকা আগে থেকে দেওয়া হয়। নয়তো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিয়ম হল সংক্রমণের বহর দেখে টিকা তৈরি করা। ব্যাপক অঞ্চল জুড়ে যদি ভাইরাস ছড়াতে শুরু করে, তখনই ওষুধ ও টিকা তৈরির কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন বিজ্ঞানীরা।’
অধিকাংশ ভাইরাসেরই নেই টিকা বা ওষুধ
অ্যান্টিভাইরাল সবসময় কাজ করে না
HMPV ভাইরাসের সংক্রমণ নিজে থেকেই সেরে যায়। সবসময় অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দিলেই কাজ হবে তা কিন্তু নয়। এই ড্রাগ সবরকম ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে না। নির্দিষ্ট কিছু শক্তিশালী ভাইরাসের বিরুদ্ধেই এরা কার্যকরী । সাধারণত এই ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ নিজে থেকে সেরে যায়।
# চিকিৎসা হবে কীভাবে তাহলে?
এই সব ভাইরাসের সংক্রমণে সাধারণত উপসর্গের চিকিৎসা করা হয় (HMPV Virus Treatment)। অর্থাৎ সিম্পটমস ট্রিটমেন্ট। যেমন ধরা যাক, সংক্রমণের ফলে কারও সর্দি হল, তখন সর্দির চিকিৎসা হবে। কারও হয়তো কাশি হচ্ছে, তখন কাশির চিকিৎসা হবে। আপাতত এভাবেই চিকিৎসা করতে হবে। এবং এতে রোগী সেরেও যায়।
** ভাইরাস প্রতিরোধে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কার্যকরী?
ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা জরুরি। তাই বলে একজনের ইমিউনিটি রাতারাতি বাড়ানো সম্ভব নয়। পুষ্টিকর খাবার খেলে, পর্যাপ্ত ঘুমোলে ও শরীরচর্চা করলে একজনের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে। তবে কোভিডের সময় আমরা দেখেছি, যাদের ইমিউনিটি বেশি, ভাইরাসের বিরুদ্ধে তাদের ইমিউন রেসপন্সও বেশি। অর্থাৎ তাদের শরীরে ভাইরাস প্রতিক্রিয়া বেশি দেখা দেয়। তাই ইমিউনিটি বাড়ালে খুব একটা যে উপকার হবে, তাও কিন্তু নয়।
@ কী করণীয় তাহলে এখন?
এখন প্রথমেই জরুরি সংক্রমণ প্রতিরোধ। আর তার জন্য কোভিডকালের মতোই কিছু অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে হবে (HMPV Virus Prevention)।
সাধারণত হাঁচি কাশির মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। এছাড়া সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেও ছড়াতে পারে। তাই নিয়মিত হাত ধুতে হবে হ্য়ান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে। হাত না ধুয়ে নাকে, মুখে হাত দেওয়া যাবে না।
বাইরে বেরোলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। হাঁচি, কাশির সময় মুখ ঢেকে নিতে হবে।
বাচ্চাদের সর্দিকাশি হলে তাদের কিছুদিন স্কুলে না পাঠানোই ভালো। এতে অন্য বাচ্চারাও অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রচণ্ড জ্বর, শ্বাসকষ্ট, তীব্র কাশির মতো সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
চিকিৎসকের কথায়, মূলত আপার ও লোয়ার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্টে (অর্থাৎ শ্বাসনালীর উর্দ্ধাংশ ও নিম্নাংশে) সংক্রমণ ছড়ায় HMPV ভাইরাস। কিন্তু কিছুক্ষেত্রে ফুসফুসেও পৌঁছে যেতে পারে এই ভাইরাস। তাই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা হলে ফেলে না রাখাই ভালো।
বাইরে বেরোলে মাস্ক পরুন ।
* HMPV ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ *
1)হাঁচি, কাশি, কিছুক্ষেত্রে জ্বর (HMPV Virus Signs)
2)গলা ব্যথা, নাক টানা, নাক দিয়ে জল পড়া
3)শ্বাসকষ্টের সমস্যা
4)নিউমোনিয়া, অ্যাজমার মতো সমস্যা