29/10/2025
🩺 ওষুধ সম্পর্কে সচেতনতা – একটি আলোচনা
প্রতিদিন রোগী দেখার সময় একটি প্রশ্ন প্রায়শই শোনা যায় —
“ডাক্তারবাবু, এই যে ওষুধটা লিখলেন, এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (side effect) নেই তো?”
এই প্রশ্ন একদমই স্বাভাবিক। কিন্তু চলুন, একটু সময় নিয়ে ওষুধ সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক ধারণা জেনে নিই।
(লেখাটি একটু দীর্ঘ, তাই ধৈর্য নিয়ে পড়ার অনুরোধ রইল।)
ডাঃ অরুণাভ বিশ্বাস
---
💊 ওষুধ বলতে কী বুঝি?
আমরা দৈনন্দিন জীবনে নানা সময় “ওষুধ” শব্দটি ব্যবহার করি।
আসলে ওষুধ হলো এমন একটি রাসায়নিক বা জৈব উপাদান যা—
মানুষের শরীরের কোনো অসুস্থ অবস্থা পরিবর্তন করতে পারে,
শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে,
রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে, অথবা
রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
এই পদার্থ অবশ্যই বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত, নিরাপদ ও কার্যকর হতে হবে।
বহু পর্যায়ের গবেষণা ও পরীক্ষার পরই কোনো পদার্থ “ওষুধ” হিসেবে অনুমোদিত হয় এবং তা ওষুধবিজ্ঞান (Pharmacology) অনুযায়ী পাঠ্যবই ও স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় বাজারে আসে।
---
⚙️ একটি পদার্থকে ‘ওষুধ’ হতে হলে তার কিছু গুণ থাকতে হয়:
1️⃣ রোগ উপশমের ক্ষমতা — যেমন Paracetamol জ্বর বা ব্যথা কমায়।
2️⃣ রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা — যেমন ভ্যাকসিন নির্দিষ্ট সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
3️⃣ রোগ নির্ণয়ে সাহায্য — যেমন Iodine thyroid স্ক্যানে, Barium Sulfate এক্স-রে পরীক্ষায় ব্যবহৃত হয়।
4️⃣ শারীরবৃত্তীয় কাজের পরিবর্তন ঘটানোর ক্ষমতা — যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি শরীরের হরমোনে প্রভাব ফেলে।
5️⃣ রোগ সম্পূর্ণ সারানোর ক্ষমতা — যেমন Antibiotics জীবাণু মারে, Albendazole কৃমি দূর করে।
---
🔬 ওষুধ শরীরে কীভাবে কাজ করে?
আমাদের শরীর হলো অসংখ্য রাসায়নিক বিক্রিয়া ও ভারসাম্যের এক চলমান ব্যবস্থা।
যখন এই ছন্দে বিঘ্ন ঘটে, তখনই অসুস্থতা দেখা দেয়।
ওষুধ সেই ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে শরীরের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে।
একটি ওষুধ শরীরে প্রবেশের পর চারটি ধাপ অনুসরণ করে—
1️⃣ শরীরে প্রবেশ (Route of administration) — মুখে খাওয়া, ইনজেকশন, ইনহেলার ইত্যাদি মাধ্যমে।
2️⃣ রক্তে শোষণ (Absorption)
3️⃣ নির্দিষ্ট অঙ্গে গিয়ে কাজ করা (Target action)
4️⃣ শরীর থেকে নির্গমন (Excretion)
প্রতিটি ধাপেই শরীরের রাসায়নিক প্রক্রিয়া ও ওষুধের উপাদান পরস্পর ক্রিয়া করে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল তৈরি করে।
---
⚠️ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side Effects)
প্রকৃতির এক অমোঘ নিয়ম — যে বস্তু উপকার করতে পারে, সেটি কিছু ক্ষতি করতেও পারে।
তাই বুঝতে হবে,
➡️ কম মাত্রায় বিষও ওষুধ হতে পারে,
➡️ আর বেশি মাত্রায় ওষুধও বিষে পরিণত হতে পারে।
প্রত্যেকটি ওষুধেরই কিছু না কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে —
কিছু সাময়িক ও সহনীয়, আবার কিছু গুরুতর ও অগ্রহণযোগ্য।
সুতরাং “পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ওষুধ” বলে যদি কোনো বিজ্ঞাপন (এলোপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক, ইউনানি বা অন্য কোনো) দেওয়া হয় — তা বিভ্রান্তিকর এবং বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল।
তবে মনে রাখা দরকার —
ওষুধ নয়, বরং অনিয়মিত জীবনযাপনই অনেক সময় শরীরের সবচেয়ে বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
তেলে ভাজা খাবার, অতিরিক্ত মিষ্টি, ধূমপান, অনিয়মিত ঘুম —
এসবই প্রতিদিন শরীরে এমন ক্ষতি করে যা কোনো ওষুধ দিয়েই পুরোপুরি মুছে দেওয়া যায় না।
---
🌿 সুস্থ থাকার সহজ নিয়ম
🍎 প্রতিদিনের খাবারে ভারসাম্য রাখুন
🚶♀️ প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন
💧 পর্যাপ্ত জল পান করুন
😴 নিয়মিত ঘুমান
এই সামান্য পরিবর্তনগুলোই ওষুধের কার্যকারিতা বাড়ায় ও শরীরকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে সুস্থ রাখে।
---
❤️ শেষ কথা
ডাক্তারের উদ্দেশ্য সবসময়ই আপনার সুস্থতা, কখনোই ক্ষতি নয়।
একজন MBBS চিকিৎসক ন্যূনতম ৫ বছর ৬ মাসের কঠোর পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের পরেই চিকিৎসা করার অনুমতি পান।
প্রত্যেক ওষুধেরই নির্দিষ্ট মাত্রা (dose) ও ঝুঁকি–সুবিধার ভারসাম্য (risk–benefit ratio) রয়েছে, যা ডাক্তার বিচার করে প্রেসক্রাইব করেন।
তাই সবসময় মনে রাখবেন —
👉 ওষুধ কেবলমাত্র রেজিস্টার্ড ও যোগ্য চিকিৎসকের পরামর্শে এবং নির্দিষ্ট মাত্রায় গ্রহণ করুন।
নিজের শরীরের যত্নই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ ও চিকিৎসা। 🌼
- ডাঃ অরুণাভ বিশ্বাস