07/01/2025
নাহ্ শুরুটা হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস দিয়ে করব না। শুরুতেই যার কথা বলব তার নাম মুকেশ চন্দ্রকর, পেশায় সাংবাদিক। চার টুকরো লিভার, ভাঙা পাঁজর, মটকানো ঘাড়, খুবলে বের করা হৃৎপিণ্ড এই হলো তার ময়না তদন্ত রিপোর্ট। কী সম্পর্ক এই ঘটনার সাথে এই ভাইরাসের? সম্পর্ক আছে।
সে ছিল ছত্তিসগড়ের এক সাংবাদিক, কিছু অসাধু ব্যক্তির কয়েকশ কোটিটাকার দুর্নীতি নিয়ে খবর করায় প্রাণ হারাতে হলো। আদিবাসীদের উপর হওয়া অত্যাচার নিয়েও সরব ছিলেন তিনি। প্রবীর পুরকায়স্থ যিনি নিউজ ক্লিক (Newsclick) চালান, মহম্মদ জুবেইর যিনি অল্ট নিউজের সহপ্রতিষ্ঠাতা(Alt News), এঁরাও সাংবাদিক, সত্যি কথা বলতেন, সেই অপরাধে জেল হয়েছিল, এখন ছাড়া পেয়েছেন কোর্টে কেস লড়ছেন। গৌরী লঙ্কেশকেও সত্যি কথা বলার দাম দিতে হয়েছে, খুন করেছে হিন্দুত্ববাদীরা।
হ্যাঁ, ভারতবর্ষ সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়ানক, সবচেয়ে খতরনাক দেশ, এখানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে মেরে দেওয়া হয়েছে। এখানে যাঁরা সৎ সাহসী সাংবাদিক তাঁদের পরিণতি মৃত্যু অথবা জেল। এখানকার মিডিয়া কেবল বিভ্রান্তি ছড়ায়, ফেক নিউজ ছড়ায়। এখানে যেভাবে মেটানিউমোভাইরাস নিয়ে খবর করা হচ্ছে গোটা বিশ্বের সমস্যা হয়েছে সেই নিয়ে, ভারত সরকার তো বটেই অন্যান্য স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, চীনের সেন্টার অফ ডিজিজ কন্ট্রোলের অফিস সকলেই বিবৃতি দিয়েছে এটা স্বাভাবিক সর্দি কাশি জ্বর, যা শীতকালে চীনের উত্তরভাগে যেখানে বেশি ঠান্ডা পরে সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই হয়ে থাকে। ICMR কে বিবৃতির পর বিবৃতি দিতে হচ্ছে ওরে বাবা রে কিছু নয় রে, সর্দি কাশি জ্বর এটা। এতে সুস্থ স্বাভাবিক লোকেদের ফুসফুসের তীব্র সংক্রমণ ঘটিয়ে প্রবল শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। পাঁচ বছরের কম বয়সের বাচ্চা, অথবা বয়স্ক মানুষদের, বা ক্যান্সার পেশেন্টদের একটা অংশের সিম্পটম গুলো কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে, যা যেকোনও ভাইরাল সর্দিকাশির জন্যই প্রযোজ্য। এটি ইনফ্লুয়েঞ্জা বা কোভিডের মতো নয়, এমনকি এটা কোনও নতুন ভাইরাসই নয়। মেটানিউমোভাইরাস আমাদের দেশেও আছে, আমরা যেসব সর্দিকাশিকে ভাইরাল বলে কাটিয়ে দিই, এন্টিবায়োটিক পর্যন্ত দিই না এটা সেরকম।
কিন্তু মিডিয়া কী করলো? যে মিডিয়া চীন নিয়ে ভয়ানক সব খবর করছিল সেই এখন আবার বলছে ভয়ের কিছু নেই। বলতে বাধ্য হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজে এসে বলছেন। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের মতো দেশের কাছে ভারতের মিডিয়া কে লজ্জিত হতে হয়েছে এতোটা হাস্যকর ভুলভাল তথ্য পরিবেশন করায়। আপনি WHO লিখে Human Metapneumovirus Update লিখে গুগলে সার্চ করুন শুধু ভারতের খবরের চ্যানেলের লিংক পাবেন। এতো কঠিন একটি ভাইরাসের নাম মনে রাখতে হবে না। মিডিয়ার নাম নিয়ে যে ভাইরাসগুলো আমাদের বিভ্রান্ত করছে, পারলে তাদের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করুন।