04/08/2025
#তন্ত্র সাধনা এর সঙ্গে যৌনতা কে কুরুচি মূলক ভবে জড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তন্ত্র সাধনা হল এক প্রকার আধ্যাত্মিক অনুশীলন যা তন্ত্রশাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এর মূল লক্ষ্য হল আত্ম-উপলব্ধি এবং পরম সত্যের অনুসন্ধান করা। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা বিভিন্ন স্তরের সাধন এবং পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
তান্ত্রিক সাধনার মূল ধারণা:
তন্ত্রশাস্ত্র:
এটি একটি প্রাচীন ধর্মীয় ও দার্শনিক গ্রন্থ, যা বিভিন্ন দেব-দেবী, মন্ত্র, যন্ত্র, এবং পূজা-অর্চনা পদ্ধতির মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ দেখায়।
শ্মশান সাধনা:
তন্ত্রসাতে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ হচ্ছে শ্মশান সাধনা এবং শ্মশান জাগ্রত করা। এই অধ্যায়টিকে সঠিকভাবে শেষ করতে পারলে তন্ত্র শাস্ত্রের মূল অধ্যায় আপনি উপবিষ্ট হতে পারবেন।।
শব সাধনা:
এটি তন্ত্রের একটি বিশেষ অঙ্গ, যেখানে মৃতদেহের উপর বসে ধ্যান করা হয়। এটি একটি কঠিন এবং গোপনীয় আচার, যা ভৈরব ও ভৈরবী রূপে করা হয়।
চিতা সাধনা:
তন্ত্র শাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে চিতা সাধনা, চিতায় বসে আপনাকে জাগতিক সমস্ত মোহমায়া ভুলে ইষ্ট দেবীকে আরাধনা করে তার আশীর্বাদ লাভের একটি অংশ হচ্ছে চিতা সাধনা।।
ভৈরবী সাধনা:
এটি যৌন শক্তিকে আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য ব্যবহার করার একটি পদ্ধতি। তবে এর একটি ভুল ধারণা হল যে, এটি কেবল যৌন কার্যকলাপের সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু ভৈরবী সাধনা হলো স্বয়ং আদি শক্তির সাধনা।
তান্ত্রিক পদ্ধতি:
শ্বাস-প্রশ্বাস, যোগব্যায়াম, এবং ধ্যানের মতো বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে শক্তি বৃদ্ধি করা যায় এবং মনকে একাগ্র করা যায়।
গুরু-শিষ্য পরম্পরা:
তান্ত্রিক সাধনার জন্য গুরুর পথনির্দেশনা অপরিহার্য। গুরু তার শিষ্যের আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতি এবং জ্ঞান প্রদান করেন।
বিভিন্ন প্রকার তান্ত্রিক আচার:
বিভিন্ন ধরণের তান্ত্রিক আচার রয়েছে, যেমন কালী পূজা, যা তন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
তান্ত্রিক সাধনার গুরুত্ব:
তান্ত্রিক সাধনা আত্ম-উপলব্ধি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য একটি পথ। এটি মানসিক এবং শারীরিক উভয় দিক থেকেই ব্যক্তির উন্নতি ঘটায়।
তান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে মানুষ তাদের শক্তি এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। তান্ত্রিক সাধনা জীবনের গভীর অর্থ এবং উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করে। তান্ত্রিক সাধনা একটি রহস্যময় এবং গভীর প্রক্রিয়া। এর জন্য সঠিক জ্ঞান, গুরুর পথনির্দেশনা এবং নিষ্ঠা প্রয়োজন।
দিব্যাচার, বীরাচার,পশ্বাচার:
তান্ত্রিক সাধনায় তিনটি অধিকারভেদ আছে। উত্তম, মধ্যম ও অধম অধিকারভেদে দিব্যাচার, বীরাচার ও পশ্বাচার। ভোগ না হলে, ত্যাগ আসে না, সেজন্যই তান্ত্রিক সাধনার প্রথম ধাপ পশ্বাচার। এই ধাপে সাধক কামকে সম্পূর্ণভাবে জয় করেন। পশ্বাচারের পর সাধক বীরাচারে প্রবৃত্ত হয় । এই সাধনায় ভয়ের ভাব মন থেকে দূর হয়ে যায়। অমাবস্যার নিশায় শবের ওপরে বসে সাধনায় প্ৰবৃত্ত হয় । পাশমুক্ত হওয়াই এই সাধনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। যখন সকল পাশগুলিকে সাধক মন থেকে সমূলে উৎপাটিত করে, তখন সে দিব্যাচারে প্রবৃত্ত হয়। তখনই সে প্ৰকৃত শক্তির অধিকারী হয় । তান্ত্রিক সাধনায় মৈথুন কামমার্গ নয়। মৈথুন সম্বন্ধে শিবের মুখ দিয়ে তন্ত্রে বলা হয়েছে :
‘মৈথুনং পরমং তত্ত্বং সৃষ্টিস্থিত্যন্তকারণম ।
মৈথুনাজায়তে সিদ্ধি ব্ৰহ্মজ্ঞানং সুদুর্লভম্ ৷।
রেফন্তু কুণ্ডমাভাস: কুণ্ডমধ্যে ব্যবস্থিতঃ ।
মকারাশ্চ বিন্দুরূপে মহাযোগৌ স্থিতঃ প্রিয়ে ৷।
আকারহংসমারুহ্য একতা চ যদঃ ভবেৎ ।
তদা জাতং মহানন্দং ব্ৰহ্মজ্ঞানং সুদৰ্লভম ।।