27/05/2025
📌📌 মিস্টির ক্রেভিং কন্ট্রোল করবেন কিভাবে⁉️
একটু লম্বা পোস্ট। সময় নিয়ে পড়ুন নয়ত সেভ করে, শেয়ার করে রাখুন, কাজে লাগবেই। 🙏🙏
মিস্টি খাবার ক্ষতিকর দিক টা এখন সবাই জানেন। অতিরিক্ত গ্লুকোজ কিভাবে আমাদের সেল এবং অরগ্যান কে ড্যামেজ করে, মেটাবলিক ডিসফাংশন ঘটায়, ফ্যাটি লিভার, ডায়াবেটিস এর মতন রোগ তৈরী করে সেই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা অন্য আর এক দিন করব। তবে আজ বলব মিস্টি খাওয়ার অ্যাডিকশন এবং ক্রেভিংস কে কিভাবে আটকাবেন। লেখাটা ভালো লাগলে প্লিজ শেয়ার করবেন।
মিস্টি বা চিনি খাওয়া একদম ই বন্ধ করে দিলে শরীরের বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয় না বরং লাভ হয় হাজারগুন। আমি কিন্তু কার্ব অফ করতে বলছি না, বলছি শুধুমাত্র রেডিমেড মিস্টি, চিনি এগুলো টোটাল বন্ধ করতে। ডেইলি অন্যান্য খাবারের মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় কার্বহাইড্রেট পেয়েই যাই। কার্ব এমন একটা জিনিস যেটা খুব কম পরিমানে হলেও আমাদের শরীরে প্রতিদিন অত্যন্ত প্রয়োজন।
যাদের মিস্টি খাওয়াটা একটা নেশা হয়ে গেছে বা যাচ্ছে আজকের লেখাটা তাদের জন্য। হ্যাঁ শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি যে মিস্টি স্বাদের ও নেশা বা মারাত্মক অ্যাডিকশন হয়। কিছু ক্ষেত্রে কিছু মানুষের এই নেশা এমন পর্যায়ে চলে যায় যেখান থেকে কন্ট্রোল করা খুব চাপ। তাই ততদূর পৌঁছনোর আগেই এটাকে থামান। মিস্টির ক্রেভিং আর অ্যাডিকশন আলাদা। অল্প ক্রেভিংস থাকলে সেটাকে কন্ট্রোল করা যায় কিন্তু একবার অ্যাডিক্টেড হয়ে গেলে সেটাকে কন্ট্রোল না করে পুরোপুরি স্টপ করা উচিত। তখন কন্ট্রোল করা খুব চাপের। তাই ব্যাপার টা লিমিটের মধ্যে থাকাকালীন কন্ট্রোল করুন। নইলে এটা দিন দিন বাড়তেই থাকবে আর মারাত্মক সমস্যা তৈরী করবে।
✅ এবার বলি উপায়...
আগেই বলেছি অ্যাডিকশন এবং ক্রেভিংস আলাদা। ক্রেভিংস কন্ট্রোল করতে না পারলে সেটা অ্যাডিকশনে পৌঁছায়। তাই প্রথম ধাপ হিসেবে ক্রেভিংস কে কন্ট্রোল করা উচিত।
🔴 অ্যাডিকশন কে আটকানোর একটাই উপায় হঠাৎ বন্ধ করা এবং তার সাথে কিছু হ্যাবিট চেঞ্জ। প্রত্যেক মানুষের কিছু নিজস্বতা থাকে, সেই অনুযায়ী হ্যাবিট গুলো চেঞ্জ করতে হয়। নইলে যে কোনো জিনিস হঠাৎ বন্ধ করলে তার আফটার এফেক্ট গিয়ে পরে অন্য কিছুর উপর।
আমি বলব না এই ব্যাপারটা নেহাত খুব সহজ। এটা বেশ কঠিন একটা স্টেপ তবে ভবিষ্যতে যে সমস্যা গুলো আসত তার ভোগান্তির থেকে সহজ।
কারোর এই অ্যাডিকশনের সমস্যা থাকলে আমায় জানাতে পারেন আমি তার প্রবলেম শুনে গাইড করে দেবো কি কি তিনি ফলো করবেন।
🔴 এবার আসি ক্রেভিংস কন্ট্রোল বা নরমাল যে কোনো মিস্টি খাবার থেকে দূরে থাকার উপায়।
এটা ধীরে ধীরে করতে পারেন।
⛔ সবার প্রথমেই যেটা করতে হবে নিজেকে প্রশ্ন। যখনি মিস্টি খেতে ইচ্ছে হবে তখনি নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে যে সত্যিই খিদে পেয়েছে নাকি এটা শুধুই জিভের খিদে? কি খেতে ইচ্ছে করছে? খিদে হলে আপনি যে কোনো কিছু খাবারেই শান্ত হবেন আর যদি সুগার ক্রেভিংস হয় দেখবেন মাথায় শুধু মিস্টি জাতীয় জিনিসের নাম ই আসছে। আপনি যদি বুঝতে পারেন এটা আপনার খিদে নয় ক্রেভিংস তাহলে অবশ্যই এটাতেই ৮০% কাজ হবে।
⛔ বুঝে ফেলার পর তৎক্ষনাৎ নিজেকে অন্য কাজে ডাইভার্ট করা বা সময় দেওয়া। যখন ক্রেভিং হচ্ছে তখন নিজেকে বোঝান ঠিক আছে এখন এক গ্লাস জল খাই, একটা কাজ করি তারপর পনেরো মিনিট বাদে দেখব। একটা ছোটো কাজ যেমন পড়া, লেখা বা ঘরের কোনো কাজ শেষ করা এগুলো হতে পারে, আপনার হবি হতে পারে এগুলো করে নিজেকে ডাইভার্ট রাখুন, সময় দিন পনেরো মিনিট মত। যদি তার পরেও খিদে থাকে তাহলে কিছু খান। এবার সেই খাবারের অপশন গুলো মিস্টি জিনিস বাদ দিয়ে এরকম হতে পারে, ছোলা ভাজা, বিভিন্ন বাদাম, রোস্টেড সিডস, ফল, রোস্টেড মাখানা বা বিভিন্ন ধরনের কড়াই বা বিনস ইত্যাদি। কখনো এক কাপ গ্রিন টি বা ব্ল্যাক টি/কফিও হতে পারে। অবশ্যই মিস্টি যে কোনো কিছু ছাড়া। প্রথম পনেরো মিনিট যদি এইভাবে নিজেকে আটকাতে পারেন এবং মিস্টি বাদে অন্য যে খাবার গুলো বললাম সেগুলো বডিকে দিতে পারেন দেখবেন এতেই ক্রেভিংস অনেক টা কন্ট্রোল হয়ে গেছে।
⛔ মিড নাইট ক্রেভিংস আটকানোর অন্যতম উপায় আর্লি স্লিপিং। বেস্ট এটা। ডিনার কমপ্লিট করার দু ঘন্টার মধ্যে ঘুমোনোর চেস্টা করুন এবং সেটা অবশ্যই মাঝরাত যেন না হয়। যত বেশি জেগে থাকবেন ব্রেন তত অ্যাক্টিভ থাকবে এবং এনার্জির প্রয়োজন হবে। সব থেকে ইজি এনার্জি যেটা ব্রেন চাইবে সেটা হচ্ছে গ্লুকোজ। যা আসবে যে কোনো সিম্পল কার্ব থেকে। সোজা কথায় মিস্টি জাতীয় জিনিস। বডি সেটার ই সিগন্যাল দেবে। তাই ঘুমের সময় নো স্ক্রিন টাইম। আর্লি ডিনার এবং জলদি ঘুমানো প্র্যাকটিস করুন।
✅ এবার যে গুলো লিখছি সেই ধাপ গুলো প্রথম তিনটে ধাপ কে পার করতে সাহায্য করবে।
1️⃣ বাড়িতে কোনোপ্রকার মিস্টি জাতীয় জিনিস রাখা যাবে না। আনা বন্ধ করুন প্রথমেই। চিনি পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। চকলেট, লজেন্স জাতীয় কিচ্ছু না, এমনি পাওডার মিল্ক ও না। অলটারনেটিভ রাখুন।
পাওডার মিল্কের বদলে নরমাল মিল্ক, চকলেট বা লজেন্সের বদলে খেঁজুর বাদামের লাড্ডু, কিসমিস এগুলো রাখতে পারেন।
2️⃣ যদি চিনি দেওয়া চা খাওয়ার অভ্যাস থাকে তা পুরোপুরি বন্ধ করুন। প্রথমে চা কফি খাবার ফ্রিকোয়েন্সি কমান, তারপরে পরিমান কমান। এরপরে ছাড়ুন। চিনির বদলে গুড় দিয়ে খেয়ে কোনো লাভ হয়না। নরমাল গুড়ে যে নুন্যতম আয়রন পেতেন, চায়ের সাথে খেলে সেটিও পাবেন না।
3️⃣ চিনি দেওয়া চা বন্ধ করে গ্রীন টি খাওয়া অভ্যাস করুন। অনেক উপকার ও পাবেন। প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও পরে অভ্যাস হয়ে যাবে। চিনি বা মিস্টি জিনিসের অভ্যাস কাটানোর জন্য এটা দারুন উপকারী।
4️⃣ বাইরে বেরিয়েও কোনোভাবেই চিনি দেওয়া চা বা মিস্টি জিনিস খাওয়া যাবে না। অন্য হেলদি স্ন্যাক্স, ব্ল্যাক কফি বা চা চিনি ছাড়া খাওয়া যেতে পারে।
5️⃣ যখনই মিস্টির ক্রেভিংস হবে কিছু একটা মুখে দিতে চেস্টা করুন। সেটা লবঙ্গ, দারচিনি, জোয়ান, আমলকি এরকম কিছুও হতে পারে। অল্প জাস্ট এক টুকরো বা চিমটি। তবে সেক্ষেত্রেও কন্ট্রোল রাখতে হবে। দেখা গেল চিনি ছাড়তে গিয়ে মারাত্মক জোয়ানের নেশা হয়ে গেল। তাহলে সে এক অন্য মুশকিল।
6️⃣ প্রোটিন রিচ খাবার খান এবং ফ্রিকোয়েন্ট স্মল মিল প্র্যাক্টিস করুন। প্রতিটা মিল যেন ব্যালেন্সড হয়। প্রোটিন যেন যথেস্ট পরিমানে থাকে প্রতিটা মিলে। প্রোটিন আমাদের ফুলনেস এবং স্যাটাইটি ফিলিং দেয় ফলে বাড়তি ক্রেভিংস কম হয়।
7️⃣ স্লিপ রুটিন মেইনটেইন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বডিতে অক্সিজেন লেভেল ঠিক রাখলে, প্রপার রেস্ট নিলে মেটাবলিক ফাংশন, হরমোন ব্যালেন্স ঠিক থাকে। ইন্টারনালি সব ঠিক থাকলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই ব্রেন ফলস সিগন্যাল দেবেনা।
8️⃣ পরিমান মত জল খান আর প্রতিদিন মিনিমাম ৩০ মিনিট এক্সারসাইজ করুন। অ্যারোবিক এক্সারসাইজ সপ্তাহে দু তিন দিন করতে পারেন আপনার হেলথ ইস্যু অনুযায়ী। এক্সারসাইজ আমাদের ব্লাড সার্কুলেশন কন্ট্রোল করে, সেলে অক্সিজেন সাপোর্ট বাড়ায় ফলে সেল গুলো অ্যাক্টিভ থাকে। ফলস এনার্জি রিকয়ারমেন্ট আটকায়।
মেডিটেশন মাস্ট। নিজের ইমোশন কন্ট্রোল করতে হেল্প করে, একাগ্রতা, ধৈর্য্য আনতে সাহায্য করে।
9️⃣ ওবেসিটি বা ওভার ওয়েট থাকলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন কারণ এর সাথে সব জড়িত। একদম সহজ কথায় বললে আপনার এক্সট্রা ফ্যাট সেল গুলোর জন্য আপনার বডি অরগ্যান গুলোকে বেশি বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে। ফলে মেটাবলিক ডিসফাংশন থেকে শুরু করে হরমোনাল ইমব্যালেন্স, ডিসলিপিডেমিয়া, ইন্সুলিন রেজিস্ট্যান্সের মতন সমস্যা বাড়ছে। আর ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়া মানে শরীরে যথেস্ট ইনসুলিন থাকা সত্ত্বেও সেলের কাছে গ্লুকোজ পৌঁছাচ্ছে না। এদিকে ব্লাডে যথেস্ট গ্লুকোজ রয়েছে। সেই অতিরিক্ত গ্লুকোজ আবারো প্যানক্রিয়াস কে আরো স্টিমুলেট করছে ফলে হাইপারিনসুলেনেমিয়া বাড়ছে এবং আল্টিমেটলি ব্রেনের কাছে ভুল সিগন্যাল যাচ্ছে। বডিতে সুইট ক্রেভিংস মোদ্দা কথায় গ্লুকোজ ক্রেভিংস বাড়ছে।
তাই অতিরিক্ত ওজন কমাতেই হবে নইলে ঘুরেফিরে সুইট ক্রেভিংস আসবেই এবং আবার ও ঘুরে ফিরে সে আপনার ওজন বাড়াতেই থাকবে।
🔟 সর্বশেষ নিজেকেই এগুলো পারতে হবে। প্রথম প্রথম খুব কস্ট হবে। হয়ত পারবেন না। কিন্তু মনে জোর রাখলে, নিজেকে টার্গেট দিলে, ডেডিকেশন থাকলে এক সপ্তাহেই মিস্টি খাওয়া জিরো তে পৌঁছবে। ছোটো ছোটো টার্গেট নিতে হবে। যেমন আমি দুদিন একটাও মিস্টি খাবো না, মিস্টি জাতীয় কিচ্ছু খাবো না। মানে নিজের টেস্ট বাড গুলোকে মিস্টির কোনো টেস্ট ই দেবো না। দুদিন পার হলে নিজেই খুশি হবেন তখন নেক্সট দুদিনের টার্গেট করবেন। এভাবে এক সপ্তাহ পর দেখবেন আর মিস্টি খেতেই ইচ্ছে হচ্ছে না। তখন আপনি ব্যাপার টা কন্ট্রোলে রাখতে পারবেন।
লেখাটা ভালো লাগলে শেয়ার বা নাম সমেত কপি পেস্ট করতে পারেন। নাম বাদ দিয়ে সংগৃহীত লিখে নিজের নীচ রুচির পরিচয় দেবেন না। 🙏🙏
✅✅ যে কোনো ক্লিনিক্যাল প্রবলেমের জন্য অনলাইন কনসালটেশন নিতে চাইলে হোয়াটসঅ্যাপ করতে পারেন - 7278427152
Foodies Diet
Dietician Labani Das
Consultant Clinical Dietician & Lifestyle Counselor
M . Sc in DCNM (1st Class)
PG Diploma in Dietetics (AIIH&PH)
Certified Diabetes Educator (NDEP)
Life Member of IAPEN
©Dietician Labani Das
🌿 Page link - https://www.facebook.com/Labani.foodiesdiet?mibextid=ZbWKwL