04/11/2025
আমি কিছু বছর আগে দামেস্কে (সিরিয়ায়) থাকতাম। আমার এক প্রতিবেশী ছিলেন।
প্রতিদিন সকালে আমি তার দরজায় নক করতাম—বলতাম, “চলো, কফি খেতে আসো।”
তিনি সাথে সাথে ওড়না আর চাবি হাতে নিয়ে বলতেন, “চলো, কফি কোথায়? আমার সময় নেই!”
আমি তাড়াতাড়ি কফি বানাতাম, আমরা একসাথে খেতাম। তারপর তিনি আবার উঠে যেতেন, মুখে সেই একই কথা—
“আমার সময় নেই!”
প্রতিদিন তার এই ব্যস্ততা আমাকে অবাক করতো। আমি প্রায়ই তাকে ডাকতাম, কারণ আমি তখন একা থাকতাম, একটু সঙ্গ চেয়েছিলাম।
আর আশ্চর্যের বিষয়—তিনি আমার থেকেও বয়স্ক ছিলেন, আর তারও ছিল শুধু এক বৃদ্ধ স্বামী। তবুও তার মুখে সবসময় একই কথা—“আমার সময় নেই!”
কখনও আমি নিজেই হুট করে তার বাসায় চলে যেতাম। তিনি হাসতেন, বলতেন—“ভেতরে আসো, কফি বসাই... আমার সময় নেই!”
আমি কফি খেয়ে তাড়াতাড়ি চলে আসতাম, যেন তাকে বিরক্ত না করি।
একদিন মজা করে বললা —“আচ্ছা, তোমার এই ‘সময় নেই’ কাজটা আমি-ও করতে চাই! কী কাজ করো তুমি?”
তিনি হাসিতে ঝলমল করে উঠলেন, বললেন—
“তুমি এই প্রশ্ন করেছো শুনে আমি খুশি। কাল সকালেই আমরা একসাথে কাজ শুরু করবো ইনশাআল্লাহ।”
পরদিন গেলাম।
তিনি কফি বসালেন, আমরা খেলাম। তারপর বললেন— “চলো, সময় নেই!”
তারপর তিনি আলমারি খুলে দুইটা কুরআন বের করলেন।
বললেন— “চলো, একটা আয়াত পড়ি, তাফাক্কুর করি (ভাবি),
আর নিজেদের জিজ্ঞেস করি—আমরা এই আয়াতের সাথে কতটা মিল রাখি?”
আমি অবাক হয়ে গেলাম!
একটা আয়াত? তাদাব্বুর? নিজেকে যাচাই?
এইতো সেই কাজ—যার জন্য তিনি সবসময় বলেন “সময় নেই”?
তিনি হাসলেন আর বললেন—
“হ্যাঁ! কারণ আসলে আমাদের সত্যিই সময় নেই।
আমরা জীবনের সময়ের সাথে দৌড়াচ্ছি—মিনিট আর সেকেন্ডগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। একদিন সময় ফুরিয়ে যাবে, আমরা চলে যাবো সেই অন্ধকার কবরে—যেখানে শুধু কুরআনের আলোই আলো দিবে,
যদি আমরা দুনিয়ায় এই কিতাবের সাথে সত্য থাকি।”
সেই মুহূর্তে আমি নিজেকে খুব বৃদ্ধ মনে করলাম।
বোঝলাম—আমারও সময় নেই! আমার মনে হলো যেন আমি কবরে দাঁড়িয়ে আছি,
মাটির নিচে নেমে যাচ্ছি, হৃদয়ের প্রতিটি ধপধপ শব্দ গুনে গুনে শেষ হয়ে যাচ্ছে... আমি কুরআন আঁকড়ে ধরলাম—
তৃষ্ণার্তের মতো, কিন্তু এই তৃষ্ণা শেষ হয় না।
হে আমার প্রাণ!
তুমি কিভাবে আল্লাহর বাণী থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিলে! আজ থেকে আমি সময়ের সাথে দৌড়াবো,
জীবনের সাথে দৌড়াবো, মৃত্যুর আগেই জেগে উঠবো ইনশাআল্লাহ।
গল্প শেষ...
আমি ক্ষমা চাই, কারণ—আমার সময় নেই!
_ সংগৃহীত