
11/09/2023
সমস্যা তো অনেক রয়েছে। এগুলোর অনেকগুলো সমাধানও হয়ে যেত। শুধু মাত্র যদি ঐক্য থাকতো। মদিনার ঘরগুলোর কথা ভাবুন, আওস-খাজরায গোত্রের মাঝে যে শত্রুতা ছিল, ইসলাম তা পরিবর্তন করে দিলো। মুহাজির আর আনসারদের মধ্যে ভাতৃত্ব গঠন হলো। আল্লাহ তাদের অন্তরে পরস্পরের প্রতি যে ভালোবাসা দান করেছিলেন, তার উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, একজন আনসার ভাই তাঁর মুহাজির ভাইকে নিজের সম্পত্তিও উত্তরাধীকার সূত্রে দিয়ে দিচ্ছে। নিজের গোটা সম্পদ ভাগ করে অর্ধেক মুহাজির ভাইকে দিয়ে দিতে চাচ্ছিল।
রাসূলের কাছে প্রতিদিনই নানান উপহার আসতো। সেগুলো সাহাবীদের সাথে ভাগ করতেন। একজনের ক্ষুধা লাগলে ভাইদের মাঝে একজন নিজের ভেড়া জবাই করে নিয়ে আসতো, সকলের সামনে খাবারের জন্য পরিবেশন করতো। অভাবগ্রস্থ ভাইদেরকে নিজের ঘরে নিজের পরিবারের সদস্যদের মতো রাখতো। মুহাজিরদের কেউ অনুভবই করতো না তারা বাহিরের কেউ। সবাই মিলেমিশে একটা পরিবার। সকলে সালাতে উপস্থিত হতেন, কেউ উপস্থিত না হতে পারলে সকলে তাঁর খোজ নিতেন। সেটা ছিল একটা ঐক্যবদ্ধ পরিবার। রাসূলের হাদিসের যথাযথ প্রয়োগ, "সমগ্র মুসলিম উম্মাহ একটি দেহের মতো।"
শিল্পায়ন, নগরায়ন, আধুনিকায়ন আর জাতীয়তাবাদী নানান চেতনায় তা আজ ধ্বংসই হয়ে গেছে। একজন মুসলিম জানে না তাঁর পাশের ঘরে/ফ্ল্যাটের মুসলিম ভাইয়ের কী অবস্থা। একজন ভাইয়ের বিপদে অন্যজন ভাইকে খুঁজে পাওয়া যায় না। চোখের সামনেই কত কত ভাইকে ঋণে জড়জড়িত অবস্থায় শেষ হতে দেখা যাচ্ছে। এতো এতো দ্বীনি ভাই, অথচ অবিবাহিৎ ভাইরা এখনো বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজে পাচ্ছে না। চিকিৎসার জন্য আর্থিক সংকটে একজন ভাইকে একাই সংগ্রাম করতে হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে সিন্ডিকেটে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না, খাবারের জন্য আধুনিক ভিখারীর মতো রেশন কার্ড বানিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়ে নামমাত্র স্বল্পমূল্যে খাদ্যপন্য কিনতে হচ্ছে।
এই অবস্থা কেন? হাজার খানেক সাহাবী এতোটা সুন্দর জীবন কাটাতে পেরেছিলেন, আর আমরা কোটি কোটি মুসলিমরা কুকুর-বেড়ালের মতো মরছি কেন? গোড়ার উত্তর একটাই- আমাদের মাঝে অনৈক্য। নিজেদের মাঝে হিংসা, বিদ্বেষ, মতানৈক্য দিয়ে ওয়ালা-বারাআ সেট করে ফেলা, দায়িত্বহীনতা, দ্বীন সম্পর্কে গাফেল থাকা আমাদেরকে শেষ করে দিচ্ছে। এটা মূলত আল্লাহর পক্ষ থেকেই একটি আযাব, যদি আপনারা অনুভব করতে পারতেন- ‘(হে নবী!) আপনি বলে দিন- তিনি এ ব্যাপারে ক্ষমতাবান যে, তোমাদের ওপর কোনো আজাব তিনি উপর থেকে বা তোমাদের পায়ের নীচ থেকে অথবা বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত করে তোমাদের সবাইকে মুখোমুখি করে দিবেন এবং পরস্পরকে আক্রমণের স্বাদ আস্বাদন করাবেন।’ [সুরা আনআম: ৬৫]
যদি আয়াতটির অর্থ বুঝতেন, তবে এই আযাব থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠতেন। সমাধান কোথায়? অনৈক্য ভুলে যান, নিজের ভাইদের প্রতি রহমশীল হোন, দায়িত্ববোধ আনুন। নিজ ভূখন্ডেই নিজের ভাইদের দায়িত্ব নেওয়া শিখেন নি, আর আপনি কি না দূর দূরান্তের ভাইদের ব্যাপারে ভাবছেন? কিছু সমাধান থাকতে পারে-
১) এক্সট্রোভার্ট হোন। প্রতিটি এলাকায়, অ্যাপার্টমেন্টে কমিউনিটি তৈরী করুন। একজনের বিপদে যেন সকলে একটা আকটু আর্থিক, শারিরী কিংবা মেধা দিয়ে কন্ট্রিবিউশন রাখতে পারেন।
২) সুদ ভিত্তিক অর্থনীতি সিস্টেম থেকে বের হয়ে যাকাত ভিত্তিক অর্থনীত সিস্টেমকে শক্ত করুন। আপনার সম্পদ আল্লাহর জন্য, সামর্থের মাঝে দান সাদাকা আপনাকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে না, বরং আপনাকে উপকৃত করবে।
৩) দেশে এতো এতো আলেম ওলামা, বয়ান করেই লাখ টাকা ইনকাম করছে। এতো এতো ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, লাখ লাখ লাখ টাকা উপার্যন করছে। কিংবা মধ্যেবিত্ত, তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা রয়েছে। একটি এলাকায় হাজার খানেক মানুষ থাকে, ১০০০ মানুষ যদি একজন বিপদগ্রস্থ অভাবী ভাইয়ের জন্য ১০০ টাকা করেও আলাদা করে, এমনিতেই এক লাখ টাকা উঠে যায়। একটা স্ট্রং কমিউনিটি বিল্ডাপ করুন। নিজেদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব গঠন করুন, দাওয়াহের কাজ বাড়িয়ে দিন, মানুষকে কাজ করে দেখিয়ে দিন। অভিভাবকদের নিয়ে সভা সেমিনার করুন। প্রতিটি এলাকায় দায়িত্বশীল একজন রেখে, বিভিন্ন দিকনির্দেশনা মেইনটেইন করে জায়গায় জায়গায় মদিনার গ্রাম তৈরী করুন।
সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে এগোতে পারলে আশা করা যায়, আল্লাহ আমাদের মধ্য থেকে "অনৈক্যের" আযাবকে তুলে নিবেন। লাঞ্ছনা চরম লেভেলে পৌছেছে। আর সহ্য করা যাচ্ছে না। আর গায়ের চামড়া যদি মোটা হয়ে থাকে, এখনো যদি কিছু অনুভব করতে না পারেন, তবে যেমন চলছে তেমনই চলুন, আর অপেক্ষা করুন আরো কঠিন আযাবের।
Cp- https://www.facebook.com/info.mir.mumin?mibextid=2JQ9oc