28/01/2021
**কোভিদ-১৯ ভ্যাকসিনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য**
ডা কামাল আহমেদ
গাইনি ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ, সুইডেন
কোভিদ-১৯ ভ্যাকসিন এর উৎস
ভারত থেকে আসা কোভিদ নাইনটিন ভ্যাকসিন হচ্ছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনিকার ই ভ্যাকসিন, যা স্থানীয়ভাবে বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (SII) দ্বারা উত্পাদিত হচ্ছে। ভারত সহ মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশে এই ভ্যাকসিনের এক বিলিয়ন ডোজ সরবরাহের জন্য অস্ট্রাজেনেকা (ব্রিটিশ-সুইডিশ মাল্টি ন্যাশনাল ফার্মাসিটিক্যাল কম্পানি) এবং সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (এসআইআই) একটি লাইসেন্স চুক্তি করেছে।[1] [2]
এই চুক্তির আওতায় অক্সফোর্ড - অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই ভ্যাকসিনটি ভারত থেকে কোভিশিল্ড নামেই মার্কেটিং হচ্ছে। এই ভ্যাকসিনটি অস্ট্রাজেনেকার অনুমোদিত প্রযুক্তিতে উৎপাদিত। তাই এই ভ্যাকসিনের বর্ণিত কার্যকারিতা নিয়ে কোনো সংশয় নেই।[3]
উদ্ভাবন
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনার ইনস্টিটিউটে ক্লিনিকাল পরীক্ষার জন্য করোনভাইরাস ভ্যাকসিনের প্রথম ব্যাচটি তৈরি করা হয়েছে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষণাকারী দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সারা গিলবার্ট, অ্যাড্রিয়ান হিল, অ্যান্ড্রু পোলার্ড, টেরেসা লম্বে, স্যান্ডি ডগলাস এবং ক্যাথরিন গ্রিন। [4] [5]
কোভিশিল্ড নামে পরিচিত এই ভ্যাকসিনটি শিম্পাঞ্জি থেকে নেয়া একটি সাধারণ ঠান্ডার ভাইরাস (অ্যাডেনোভাইরাস হিসাবে পরিচিত) এর দুর্বল সংস্করণ থেকে তৈরি করা হয়েছে। এই ঠান্ডার ভাইরাসটিকে মডিফাই করে দেখতে করোনাভাইরাস এর মত করা হয়েছে। তাই এটি করোনাভাইরাস প্ররোচিত এন্টিবডি তৈরি করে কিন্তু শরীরে কোন রোগ সৃষ্টি করতে পারে না।
যখন ভ্যাকসিনটি কোনও রোগীর মধ্যে ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়, তখন এটি শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা থেকে অ্যান্টিবডি তৈরি শুরু করে যা করোনভাইরাসের সংক্রমণকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এই ভ্যাকসিনটি এক থেকে তিন মাসের ব্যবধানে দুটি ডোজে দেওয়া হয়। এটি ঘরোয়া রেফ্রিজারেটরের মতো 2 থেকে ৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় নিরাপদে সংরক্ষণ করা যায়। এই ভ্যাকসিন এর কার্যকারিতা ৯০% পর্যন্ত। [6]
২০২০ সালের ৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকার, সিরাম ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মার মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তির অধীনে বাংলাদেশ সরকার বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যাল এর মাধ্যমে ৩০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনার জন্য অর্ডার করে। [7]
কাদের জন্য এই ভ্যাকসিন প্রযোজ্য?
এই ভ্যাকসিনটি শুধুমাত্র ১৮ বছর বয়স থেকে দেওয়ার জন্য অনুমোদিত। ১৮ বছরের নিচের রোগীদের মধ্যে এই ভ্যাকসিন এর কার্যকারিতা এখনো পরীক্ষা করা হয় নাই। [8]
কি কি ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে না অথবা দেওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে?
- রোগীর যদি জ্বর থাকে
- রোগী যদি প্রেগনেন্ট হয় অথবা শীঘ্রই বাচ্চা নেওয়ার পরিকল্পনা করে
- যদি মায়েরা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান
- আগে কোন ভ্যাকসিন থেকে এলার্জিক রিএকশন হয়ে থাকলে
- রক্ত জমাট বাঁধার কোনো রোগ থাকলে
- রক্ত পাতলা করার কোন ঔষধ খেলে
- যদি কেউ অন্য কোন কোম্পানির কোভিদ ভ্যাকসিন নিয়ে থাকে
- যদি রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে [8]
কিভাবে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয় :
০.৫ মিলি করে দুটি ডোজ চার থেকে ছয় সপ্তাহের ব্যবধানে মাংসপেশিতে দেওয়া হয়
কোভিদ ভ্যাকসিন-১৯ এর সুবিধা
চলমান ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গিয়েছে চার থেকে ছয় সপ্তাহের ব্যবধানে এই ভ্যাকসিন এর দুটি ডোজ নেওয়া হলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কম হতে পারে। এই ভ্যাকসিন কতদিন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে প্রতিরোধ করবে, তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। [8]
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
এখনো এই ভ্যাকসিন এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার পরিপূর্ণ লিস্ট করা যায় নাই। এখন পর্যন্ত পাওয়া রিপোর্ট অনুসারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই সামান্য।
প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের হতে পারে এমন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে
- ইনজেকশন দেওয়ার জায়গা ব্যথা করা, ফুলে যাওয়া, লাল হওয়া, চুলকানি হওয়া ইত্যাদি
- শরীরে জ্বর আসা অথবা জ্বর জ্বর ভাব হওয়া
- ক্লান্ত অনুভব করা
- অস্বস্তি অনুভব করা
- মাথা ব্যাথা করা
- বমি করা অথবা বমি বমি ভাব লাগা
- শরীরের মাংসপেশি কিংবা জয়েন্টে ব্যথা করা
- সাধারণ ঠান্ডা কাশির মতো উপসর্গ দেখা দেওয়া [8]
প্রতি ১০০ জনের মধ্যে একজনের হতে পারে এমন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে
- মাথা ঘুরানো, ক্ষুধামন্দা, পেট ব্যথা, লিম্ফ নোড বড় হওয়া, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, শরীর চুলকানো অথবা শরীরে গোটার মতো হওয়া ইত্যাদি।
- যেহেতু এই ভ্যাকসিনটি ট্রায়াল' পর্যায়ে আছে তাই গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও হতে পারে। [8]
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে কি করনীয়
যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রেই আপনি আপনার নিকটস্থ ডাক্তার এবং টিকা প্রদানকারী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করুন। যেকোনো এলার্জিক রিএকশন বা গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে সাথে সাথে হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
সূত্রঃ
1) Rajagopal, Divya (4 June 2020). "AstraZeneca & Serum Institute of India sign licensing deal for 1 billion doses of Oxford vaccine". The Economic Times.
2) Kumar, Mayank (7 August 2020). "Covid-19 vaccine: Serum Institute signs up for 100 million doses of vaccines for India, low and middle-income countries". The Financial Express.
3) "Already produced 40-50 million dosages of Covishield vaccine, says Serum Institute". The Hindu. 28 December 2020.
4) "Oxford team to begin novel coronavirus vaccine research". University of Oxford. 7 February 2020. Retrieved 28 November 2020.
5) "COVID-19 Vaccine Trials | COVID-19". covid19vaccinetrial.co.uk. Retrieved 11 April 2020.
6) https://www.bbc.com/news/world-asia-india-55748124
7) "Dhaka to have 330 vaccination points". The Daily Star. Retrieved 25 January 2021.
😎https://www.seruminstitute.com/pdf/covishield_fact_sheet.pdf